নীল সিয়া আসমান, লালে লাল দুনিয়া,-
‘আম্মা! লা’ল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া!’
কাঁদে কোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে,
সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে!
রুদ্র মাতম্ ওঠে দুনিয়া-দামেশ্ কে-
‘জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে?’
‘হায় হায় হোসেনা’, ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,
তল্ ওয়ার কেঁপে ওঠে এজিদেরো পঞ্জায়!
উন্ মাদ ‘দুল্ দুল্’ ছুটে ফেরে মদিনায়,
আদি-জাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়!
মা ফতেমা আস্ মানে কাঁদে খুলি কেশপাশ,
বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস!
রণে যায় কাসিম ঐ দু’ঘড়ির নওশা,
মেহেদীর রঙটুকু মুছে গেল সহসা!
‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পূরবী ও দখিনা--
‘কঙ্কণ পঁইচি খুলে ফেল সকীনা!’
কাঁদে কে রে কোলে ক’রে কাসিমের কাটা-শির?
খান্ খান্ হয়ে ক্ষরে বুক-ফাটা নীর!
কেঁদে গেছে থামি’ হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,
বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা এ ক্ষুদ্র!
গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা,
‘আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা!’
নিয়ে তৃষা সাহারার, দুনিয়ার হাহাকার,
কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার!
দুই হাত কাটা তবু শের-নর আব্বাস,
পানি আনে মুখে, হাঁকে দুশ্ মনও ‘সাব্বাস্’!
দ্রিম্ দ্রিম্ বাজে ঘন দুন্দুভি দামামা,
হাঁকে বীর ‘শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!’
কলিজা কাবাব সম ভুনে মরু-রোদ্দুর,
খাঁ-খাঁ করে কারবালা, নাই পানি খর্জ্জুর,
মা’র স্তনে দুধ নাই, বাচ্চারা তড়্ পায়!
জিভ চুষে’ কচি জান থাকে কিরে ধড়্ টায়?
দাউ দাউ জ্বলে শিরে কারবালা-ভাস্কর,
কাঁদে বানু-- ’পানি দাও, মরে যাদু আস্ গর!’
পেলো না তো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন,
ডাকে মাতা, পানি দেবো ফিরে আয় বাছা শুন্!
পুত্রহীনার আর বিধবার কাঁদনে
ছিঁড়ে আনে মর্ম্মের বত্রিশ বাঁধনে!
তাম্বুতে শয্যায় কাঁদে একা জয়নাল,
‘দাদা ! তেরি ঘর্ কিয়া বরবাদ্ পয়মাল!’
‘হাইদরী-হাঁক-হাঁকি দুলদুল-আসওয়ার
শম্ শের চম্ কায় দুষমনে ত্রাস্ বার।
খ’সে পড়ে হাত হ’তে শত্রুর তরবার,
ভাসে চোখে কিয়ামতে আল্লার দরবার!
নিঃশেষ দুষমন্; ও কে রণ-শ্রান্ত
ফোরাতের নীরে নেমে মুছে আঁখি-প্রান্ত?
কোথা বাবা আস্ গর? শোকে বুক-ঝাঁঝরা
পানি দেখে হোসেনের ফেটে যায় পাঁজরা!
ধুঁকে ম’লো আহা তবু পানি এক কাৎরা
দেয় নি রে বাছাদের মুখে কম্ জাত্ রা!
অঞ্জলি হ’তে পানি প’ড়ে গেল ঝর্-ঝর্,
লুটে ভূমে মহাবাহু খঞ্জর-জর্জ্জর!
হল্ কুমে হানে তেগ ও কে ব’সে ছাতিতে?--
আফ্ তাব ছেয়ে নিল আঁধিয়ারা রাতিতে।
‘আস্ মান’ ভ’রে গেল গোধূলিতে দুপুরে,
লাল নীল খুন ঝরে কুফরের উপরে!
বেটাদের লোহু-রাঙা পিরাহান-হাতে, আহ্--
‘আরশের’ পায়া ধরে, কাঁদে মাতা ফাতেমা,
‘এয়্ খোদা বদ্ লাতে বেটাদের রক্তের
মার্জ্জনা কর গোনা পাপী কম্ বখতের।’
কত মোহর্ রম এলো, গেল চ’লে বহু কাল--
ভুলিনি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল!
মুস্ লিম ! তোরা আজ ‘জয়নাল আবেদীন্’,
‘ওয়া হোসেনা-- ওয়া হোসেনা’ কেঁদে তাই যাবে দিন!
ফিরে এলো আজ সেই মোহর্ রম মাহিনা,--
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না!
উষ্ণীষ কোরানের, হাতে তেগ্ আরবীর,
দুনিয়াতে নত নয় মুস্ লিম কারো শির,--
তবে শোন ঐ বাজে কোথা দামামা,
শম্ শের হাতে নাও, বাঁধো শিরে আমামা!
বেজেছে নাকাড়া, হাঁকে নকীবের তুর্য্য,
হুঁশিয়ার ইসলাম, ডুবে তব সূর্য্য!
জাগো ওঠ মুস্ লিম, হাঁকো হাইদরী হাঁক।
শহীদের দিনে সব লালে-লাল হ’য়ে যাক্!
নওশার সাজ নাও খুন-খচা আস্তীন,
ময়দানে লুটাতে রে লাশ এই খাস্ দিন!
হাসানের মতো পি’ব পিয়ালা সে জহরের,
হোসেনের মতো নিব বুকে ছুরি কহরের;
আস্ গর সম দিব বাচ্চারে কোর্ বান,
জালিমের দাদ নেবো, দেবো আজ গোর জান!
সকীনার শ্বেতবাস দেবো মাতা কন্যায়,
কাসিমের মত দেবো জান রুধি’ অন্যায়!
মোহর্ রম্! কারবালা! কাঁদো ‘হায় হোসেনা!’
দেখো মরু-সূর্য্যে এ খুন যেন শোষে না!
উৎস: অগ্নিবীণা