তিলে তিলে গড়া এই ছোট্ট সংসার, স্মৃতির আধার।
মিঠে তেতো কত হাজারো শখ ও সুখের সমাহার।
সুখ ছিল ছোট-বড়, শখের মত,
শখের পূর্ণতায় কত সুখ বয়ে যেত!
কিছু কিছু শখ ছিল শুধুই তোমার,
আর কিছু কিছু ছিল মিলে দুজনার।
সুখ, হায় সেই সুখ!
আমাদের ছোট ঘরে যেদিন প্রথম ফ্রিজ এলো,
কলাপাতা রঙের ডাবল ডোর কেলভিনেটর,
সুখ উপচে পড়েছিল তোমার মুখে,
খুব শখের একটি জিনিস পেয়ে।
কতনা যত্ন করে হাতলগুলোতে ঢাকনা লাগিয়েছিলে।
কখনো কখনো শাড়ীর আঁচল দিয়েও মুছে রাখতে।
সুখ, হায় সেই সুখ!
সাদাকালো ফেলে এদেশে প্রথম যখন রঙ্গিন টিভি এলো,
বন্ধুদের অনেকের আগেই একটি রঙ্গিন টিভি
আমাদের এই ছোট্ট সংসারে স্থান করে নিল।
টিভির সাথে সাথে পুরো ঘরটাই যেন,
এক রঙ্গিন উৎসবে মেতে উঠেছিলো।
সেই সাথে রঙ্গিন হয়েছিলো তোমার হাসিমুখ।
সুখ, হায় সেই সুখ!
তখন দেশে কেবল্ নেটওয়ার্ক ছিলনা।
একটা চ্যানেলেই দিনরাত দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকতো।
ভাল অনুষ্ঠান না থাকলেও দুজনে বসে যেতাম
শুধুই রঙ্গিন ছবি দেখার জন্য।
নব্য পজেশন লাভের সে গর্বিত হাসি,
আমাকেও গর্বিত করে তুলতো।
সুখ, হায় সেই সুখ!
বাচ্চাদের পোষাক-আশাক, খেলনা ইত্যাদি
খুবই শখ করে কিনতে। মাঝে মাঝে আমাকেও
হীরো বানাবার চেষ্টা করতে।
আমিও সানন্দে সায় দিতাম, সুখটুকু ভাগ করে নিতে।
প্রথম ক্যামেরা কিনে কিভাবে লাঞ্চের কথা ভুলে
সারাদিন ধরে ছবি তুলেছিলাম, বোটানিকাল গার্ডেনে।
সুখ, হায় সেই সুখ!
প্রথম যেবার বিদেশ ভ্রমণে গেলাম,
তোমার শখের কথা জেনে কিনেছিলাম কিছু ব্র্যান্ড প্রসাধনী।
শখের সে জিনিসগুলো দেখে অনেকেই ঈর্ষান্বিত হতো।
আরো কিনেছিলাম একটি ব্যাতিক্রমী স্বর্ণলতিকা, যা তোমার
কন্ঠে শোভা পেয়ে তোমাকে খুশীতে আপ্লুত রেখেছে বহুদিন!
অনুগত থেকেছো আমার ন্যায্য-অন্যায্য সকল দাবীর কাছে।
সুখ, হায় সেই সুখ!
ছোট্ট বেলায় তোমার খুব শখের ছিল 'ডল-পুতুল'।
কতইনা শখ করে গুছিয়ে রাখতে তোমার পুতুলের বাক্স।
বৃষ্টি এলেই সাথীদের নিয়ে আসর বসাতে পুতুলের বিয়ের।
আর খুব প্রিয় ছিল তোমার 'ভিজে চানাচুর',
মুখচেনা ফেরীওয়ালা বিকেল হলেই ডাক দিয়ে যেত।
সুখের এসব স্মৃতির কথা কতদিন তোমার মুখে শুনেছি!
সুখ, হায় সেই সুখ!
পাদটীকাঃ ২০১৩ সালের বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে কবিতাটি লেখা, আমার অর্দ্ধাঙ্গিণীর সকল অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করে।
ঢাকা
০৮ মার্চ ২০১৩
কপিরাইট সংরক্ষিত।