পরিত্যক্ত কবিতার শহর
লেখাঃ জহিরুল ইসলাম
আমি যখন নিজেকে পৃথিবীর মুক্ত আকাশে মেলে ধরতে চাই,
তখন আমাকে আকাশ দেখায় বজ্রপাতের ভয়;
জমিন দেখায় ক্ষেপনাস্ত্র কিংবা মিসাইলের আতঙ্ক!
আমি ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাই চড়ূইয়ের মতো স্বপ্নের ছোট্ট নীড়ে।
আমি যখন নিজেকে ভাবি এক স্বাধীন মানুষ অথবা মুক্ত পাখি,
তখন দেখি চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার মায়ের অসুস্থ মুখ;
বাবার ক্লান্তি মাখা ঘামে ভেজা শার্ট,ভাইয়ের ছোট্ট স্বপ্নের নৌকা ডুবে চোখের জলে;
আর বোনের চাতক দৃষ্টি আমার হৃদয় করে বিদীর্ণ।
আমি স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিই আমার স্বাধীনতা নিজেকে বন্দি করি দায়িত্বের খাঁচায়,
ইচ্ছে ঘুড়ির সুতা কেটে ভাসিয়ে দিই ভাসমান বাতাসের প্রবল বেগে;
তখন আমি হয়ে যাই গাছ অথবা কোন বিশাল আশ্রয়স্থল।
নিজেকে ভেঙেচুরে মনের গহীনে গড়ে তুলি স্বপ্নের রোম সাম্রাজ্য অথবা মেসোপটেমিয়া,
আমি তখন হয়ে যাই বীর আলেকজান্ডার অথবা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা।
আমাকে ভাঙ্গতে আসে প্রতিদিন কতশত সমালোচনার ঝড় অথবা নিন্দুক সৈন্যরা,
তবু আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি এই বাস্তবতার মঞ্চে যেমন করে দাঁড়িয়ে আছে পিরামিড।
আমি শাহাজাহানের মতো হৃদয়ে নির্মাণ করি তাজমহল অথবা মজনুর মতো অপ্রতিরোধ্য প্রেম নগর,
কালের সাক্ষী হয়ে এখানে এসে ভীড় জমায় প্রেম অবশেষে স্মৃতির চিহ্ন লেপ্টে দিয়ে;
প্রেম অতিথি পাখির মতো গোপনে পালায় বহুদূর অন্য কোন স্থানে অন্য কোন নীড়ে।
আমি কোনকালেই নিজেকে প্রেমিক বলে সম্বোধন করতে পারি না,
আমি কেবল সময়ের স্তরে স্তরে রেখে যাই অনুভূতি আর কবিতার অক্ষর!
এই ভেবে যে একদিন কোন এক প্রেমিক অথবা পাঠক এসে পড়বে এসব কথা;
জানবে এই পৃথিবী কতটা নির্দয় নির্মম কতটা প্রেমহীন এই কৃত্রিমতায় ঢাকা সবুজ পৃথিবী।
তোমাদের অভিবাদন আজ যারা এসেছিলে নবজাতকের বেশে,
তোমাদের অগ্রিম স্বাগত জানাই আমার পরিত্যক্ত কবিতার শহরে।
হে অনাগত নতুন পাঠক তোমাদের জন্য রইলো এই আমার বেদনার কালিতে লেখা;
পৃথিবীর শেষ কবিতা আমার বিষাদে অঙ্কিত রক্তাক্ত অক্ষরে লেখা এই কবিতা।