অপাংক্তেয় আমি

যদি দু- হাত ভরে ফুল চাই !
           ফুল বলে -----
আমার অলির সাথে হয়েছে মিতালী ,
পাখির সাথে আমার উচ্ছ্বাস,
আকাশের সাথে করি চোখাচোখি ,
আর শাখার সাথে করি সহ-বাস ।

তবুও কোন এক বসন্তে একবার পলাশ হতে চেয়েছিলাম !
       পলাশ বললো -----
তুমি কি কখনও রঙিন আবেগে হোলি খেলেছো ?
তুমি কি পড়ন্ত-বিকেলে আকাশপারের আবির মেখেছো ?
তখন আমার অপয়া-জীবনে রক্তের হোলি ভেসে যায় !
মনের মধ্য-দুপুরে পুড়ন্ত সূর্য শুধু উঁকি দেয় !

বিনিদ্র রাতে তাই একবার চাঁদ হতে চেয়েছিলাম !
         চাঁদ বললো ------
আমি মনোহর সুখ-নিদ্রার পাশে অঘোরে ঘুমায় ,
আমার বুকে হাসে হাসনা-হেনার সুবাস ।
নিঝুম রাতে আমি পরীর সাথে খেলা করি ,
তোমার অতৃপ্ত-মননে কি করে গান ধরি ?

দুখের দরিয়া পার হয়ে একদিন সুখী হতে চেয়েছিলাম !
        সুখ বললো ------
তুমি পাহাড়ি বাঁশিতে গান বেঁধেছো কোনদিন ?
নদীর গেরুয়া-জলের সিল্ক দেখেছো কোনদিন ?
আমি নবান্নের সোনাধানের স্বর্ণালী ক্ষেত্র ,
আমার পরশে মুছবে না তোমার দুখের নেত্র !

কিছু না পেয়ে এবার চৈত্রের সূর্য হতে চেয়েছিলাম !
        সূর্য বললো ------
তুমি-তো কোনদিন তপ্ত মরুদ্যানে ঝিনুক খোঁজনি !
তৃষ্ণার্ত চাতককে জলও-তো দাওনি যেচে !
মাঠ ফাটা দুপুরের সাথে বুকও-তো ফাটাও-নি কোনদিন !
তবে কি করে পুড়বে আমার সাথে নেচে নেচে ?

অবসাদে বিষাদ হয়ে তাই রাত হবো বললাম !
         রাত বললো ------
অমানিশির গহীন বুকের  কালো কাপড় নেই তো তোমার !
অন্ধ পথিকের হাতও ওঠেনি কোনদিন তোমার কাঁধে !
তুমি তো কালো জগতের সাথে কখনও করোনি মন বিনিময় !
তাই তুমি অপাংক্তেয়--অযোগ্য--আমার অভিঘাতে ।

শেষ জীবনে এসে তাই, অবশেষে বর্ষা হবো ভাবলাম !
        বর্ষা বললো -------
তুমি-তো পাহাড়ি ঝরনার বোবা কান্না দেখোনি !
মেঘের পাষাণ-বুকে বৃষ্টির চাপা আর্তনাদ শোনোনি !
তুমি তো সারাজীবন শুধু নীরবেই কেঁদে গেলে !
তাই আমাদের সবারই আবেদনে তুমি অপাংক্তেয় বিবেচিত হলে ।