একবার আমরা তিন বন্ধু
সমুদ্রে গিয়েছিলাম-
সমুদ্রে মানে, সমুদ্রের ভেতরে যাবার যোগ্য "সাধুসঙ্গ"
ছিল না আমাদের।
কুয়াকাটায় তখন না শীত না বৈপ্লবিক ; এমন
একটা আকাশ।
সে রাত্রে ভরাসমুদ্র-পূর্ণিমা
উপচে উঠে এসেছিল বেলাভূমির বাজুবন্ধ পর্যন্ত।
রাত্তিরে আমরা
সমুদ্র ঘেঁষে ঘন্টাচুক্তিতে ভাড়ার গোল
ছাতার নিচে বসে ছিলাম।
জোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি চাঁদ জলের ওপর
লিখে রাখছিল যে,
নগরবিদদের জন্য সে একটি কর্মশালা আয়োজনে
আগ্রহী ; যেহেতু নগরে
গোরস্থানের ক্রমবর্ধমান চাহিদা- ভাবাচ্ছে নাগরিক হরিয়ালদের।
আমার মনে হয়েছিল-
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আসন্ন বাজেটে
জোস্নাদের জন্য জলাশয় বরাদ্দ রাখবেন না- এমন
খবরাখবর কী করে যেন রটে গিয়েছিল
বেলাভূমির ঝিনুকে ঝিনুকে ।
আরেকটা প্রাণের পানসিতে টান দেয়া সামুদ্রিক
বাতাস শোরগোল করে কইছিল যে,
মানুষের হৃদপিণ্ডের মাত্রা ছাড়ানো শিশার পাঠোদ্ধার-
তারা আগেভাগেই নির্ভুল ভাবে করে নিয়েছিল।
বেলাভূমি ছুঁইছুঁই অস্থির জলরাশি তখন-
"বলবো কী সেই প্রমের কথা/ প্রেম হয়েছে
কামের লতা" ;
সভ্যতায় সাঁইজির এই সহজিয়া চরণদ্বয়ের যথার্থ
তর্জমা না হওয়ায়-
"অতিবেগুনি রশ্মির" অতিরঞ্জনে গোলার্ধের খরা আরো
প্রলম্বিত হবে এমন ধারণা দৃঢ় ভাবে
ঘোষণা করছিল।
একজন গোধূলি বয়স্ক বৃদ্ধের হাত ধরে
একটি প্লাবন বয়সি মেয়ে একহাতে একতারা নিয়ে-
"কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু/ ছেড়ে
যাইবা যদি" ;
উজানধলের লোককবি
শাহ আব্দুল করিমের এই গানটি গাইতে গাইতে
এগিয়ে আসছিল- আমাদের বায়ুগর্ভ
ভাড়াটে ছাতার কাছে।
গাতক মেয়েটির কণ্ঠে যেন একচাক মধুমাছি
মৌয়ালদের থেকে
লুকিয়ে আড়াল করে রেখেছিল
ব্যখাতীত সুরবিদ্যা।
হলফ করে বলতে পারি,
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখায়ও জাদুবাস্তবতার
এমন ইন্দ্রজাল ছিল না;
যতটা জল সে রাত্রে উঠে আসছিল মেয়েটির একতারা থেকে।
আর এই গোটা চিত্রকল্পটিকে
কবিতার যোগ্য চাষাবাদ করে তুলছিল-
আমার একহাতে ধরা-
প্রায় খালি হয়ে আসা রাখাইন রমণীর থেকে নেয়া
একবোতল সদ্য নামানো মহুয়া। এবং এই চিত্রকল্পটির কাছে আমি ঋণী।
কেননা চিত্রকল্পটি আমাকে শিখিয়েছিল-
যথার্থ চিত্রকল্পের অভাবে-
বিশ্বময় ঈশ্বরের কবিতাগুলো কিভাবে হয়ে উঠছে ভঙ্গুর আর হিংসাপরায়ণ।।
>>>>>>>>>>>>>>>>>> ঝালকাঠী।।
>>>>>>>>> ০১/০৭/২০১৫ খ্রিঃ।।