মৃত্যুর উপাচার পেরিয়ে
একদিন কোথায় চলে যাব আমি কোন
অমরায়
অথবা জীবাশ্মের মতো
মিশে যাব পলি-ধোয়া মাটির প্রাণে
জানিনা আমি
সন্ধ্যা-সুগন্ধা-বিষখালী এইসব রমণীর উদ্ভিন্ন
যৌবনের মতো নদী
আমারে
কী ভুলে যাবে
কত বৈকুন্ঠী বিকেল এইসব মৎস্য-গন্ধি নদী'র
কূলে কূলে
ইলিশের প্রণয়ের মতো
কারে যেন খুঁজে খুঁজে সুর্যাস্তকে করেছি
প্রণাম
এইসব আহত নদী
শরবিদ্ধ বিকেল আর এইসব নমণীয়
নারী
সব ভেসে যাবে ; স্রোতে ভাসা টগরের মতো- মোহনায়
এইসব
নদীগ্রস্থ জীবন পরিভ্রমণে
আমি দেখেছি
কত আতুর-যন্ত্রণা সুনামির মতো মৃত্যু
ডানায়
চন্দ্রাঘাত নিয়ে উড়ে যাওয়া কালিমের ছাও
এইসব পথে পথে
আমি রুয়ে গেছি কত পাপী-ভ্রূণ
দেখেছি হায়েনার
লালসার মতো মানুষের চকচকে চোখ
মানুষকে-ই করেছে নিশানা
খুবলে
খেয়েছে সবুজ হৃদপিন্ড-মগজ
আমি দেখেছি
জারজ রাজনীতি বেণিয়ার মতো
পণ্য করেছে
ধর্ম-ক্ষুধা আর অজ্ঞতাকে
আমি দেখেছি
পিতার পাষাণ হাতে অক্ষম পুত্র স্বামীর হাতে
ভরসা-কাতর স্ত্রী নারী-ছেঁড়া
সন্তানের হাতে জঠর-জননী মায়ের পৈশাচিক
মৃত্যু
এইসব দেখেছি আমি ইবনে বতুতার
মতো
জীবন-গন্ধি এইসব জলাধারে হেঁটে হেঁটে ; রাত্তিরে-
মেপে মেপে
এইসব বেনো-জলের গভীরতা
কামুক কইতরের মতো ক্লান্তি আসে
অতঃপর
কোনো এক তুমুল-রাস্তায় ছিনালি নারীর মতো
জীবনানন্দীয়-মৃত্যু এসে চুমু খাবে
অকস্মাৎ
অথবা যাত্রীর দুষ্প্রাপ্যতায় লেটে আসবে
অনিবার্য ট্রাম
আজন্ম বুকে-বেঁধা মমতাময়ী
বাদলগাছি'র কূলে
আসন্ন রাত্রির নৈঃশব্দের মতো ঘুমাবো আমি
চালতে ফুল
ঝরে পড়বে আমার বিছানায়
দু'টি রাত-চরা পাখি
এসে গেয়ে যাবে ঘুম পাড়ানিয়া গান
শিশিরের মৌনতার মতো
দু'টি চোখে তখনও জীবনানন্দীয় স্বপ্নের শব
আহারে
ঘুম আমার
এইসব মৎস্য-গন্ধি নদীরা তখন কোথায় র'বে সব
আমারে কী ভুলে যাবে !
(ঝালকাঠী)
১২/১০/১৪ খ্রিঃ