হারেনি বাঙালি কোন কালে জেনো বাঙালি বীরের জাতি
যুদ্ধ জিতেছে ঝড়-জল রুখে দাঁড়ায়েছে বুক পাতি।
বর্গীর হানা মঙ্গল সেনা মানেনি বাঙালি হার
বুকের রক্তে এ মাটি ভিজিয়ে বাঙালি যে দুর্বার।
বলদের সাথে জোয়াল জুড়েছে যুগপথ টেনে হাল
তোমার আমার পূর্ব-পুরুষ গড়েছে এ সমতল।
রাঢ়-সমতট-হড়িকেল হয়ে দীর্ঘ-দুরুহ চলা
হাজার বছর হাপরে-হাভাতে মা-মাটি-মানুষ-তলা।
রত্নগর্ভা জননী আমার স্নেহ-মাখা ও আঁচল
দ্রোহ আর প্রেমে কঠোরে কোমলে সমান-সমুজ্জল।
কত বীর ছেলে কত কবি-ঋষি জন্ম দিয়েছো তুমি
পায়ে ঠাঁই দাও জননী আমার পবিত্র এই ভূমি।
এ মাটিতে দেখি অজেয় অমর ঈসাখাঁ-মানসিংহ
প্রতিরোধ গড়ে লড়ে গেল এঁকে বীরের পদচিহ্ন।
হারেনি বাঙালি পলাশীর বুকে ইতিহাস কথা কয়
মথিত মৃত্যু বুকে টেনে নিল মান দিল নাতো হায়।
ক্ষুদিরাম বসু-সিঁদু-কানু-আর ইলামিত্রের কথা
সালাম-রফিক-বরকত-কত শত-শহীদের গাথা।
আরো আগে যাই গাঙুরের জলে বেহুলা ভাসালো ভেলা
প্রথম-দ্রোহের অবিনাশী পায়ে শুরু হল পথ-চলা।
প্রেম-পূজা-পাল বুকে বয়ে এনে পাঁজিতে-পুরাণে চেপে
আমরা এসেছি নদীতে-নায়েতে বেনো-জল মেপে মেপে।
ক্ষ্যাপাটে লালন অভেদ মন্ত্রে খুঁজিছে মানব-মূল
কত আউলিয়া ফকির-সাধুরা ফোটাল এখানে ফুল।
এ-মাটি পেয়েছে ঋষি কবি এক রবী-ঠাকুরের ছোঁয়া
মঙ্গল-দ্বিপ জ্বেলে দিয়ে যিনি চির নিদ্রায় শোয়া।
এখানে ঘুমায় বিদ্রোহী-ভৃগু চুপ্ হানাদার-কুল
জেগে যেতে পারে স্রষ্টা-সুদন অভিমানী নজরুল।
দাঁড়-কাক হয়ে ভোরের বাতাসে ও-কার দ্বীর্ঘশ্বাস
আহত-অশোক বেদনার কবি জীবনানন্দ দাস।
যুগান্তরের এত দ্রোহ প্রেম এক-দেহে ধরে নিয়ে
পটুয়া-পুরুষ শেখ মুজিবুর স্বাধীনতা গেল দিয়ে।
এক আঙুলের উব্ধত ঘা'য়ে বজ্রকন্ঠে তারি
কালের কলমে ইতিহাস দিল শোষণের বুকে দাঁড়ি।
দ্রোহ আর প্রেমে সাত-ঘাটে-ভেলা নিয়তির জল কাটে
মৃত্যু-অশোক পুরাণ-পুঁথিতে ভিরে ইন্দ্রের ঘাটে।
আর্য-রক্ত পলি-মাটি-দেহ সৌর্য অপরিমেয়
শত ঝাপটায় শত আঘাতেও বাংলা অপরাজেয়।।
২৮/১০/১০
বেতাগী, বরগুণা।
বিঃদ্রঃ- এই কবিতাটি বইমেলা/১৫ তে প্রকাশিত "বাউণ্ডুলে কবি আর তার খাতা" কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।