"""""""
সাত থেকে ষোল
জাহিদ হোসেন রনজু --------------------------------------------------®
তারিখটা ছিল সাতই মার্চ
উন্নিশ শ একাত্তুর,
রেসকোর্স ময়দান ছিল সেদিন
লোকে লোকে ভরপুর।
বাঁধ ভাঙা দুর্বিনীত দুর্বার
বানের স্রোতের মত,
এসেছিল আবাল-বৃদ্ধ
মানুষ শত শত।
শহর-গঞ্জ-গ্রামের থেকে
নিয়ে বুকে বিশ্বাস,
সেদিন এসেছিল মানুষ
পেতে মুক্তির আশ্বাস।
অধীর প্রতীক্ষায় সারা দেশ
সাত কোটি জনগণ,
মুক্তির বার্তা নিয়ে আসবে
বীর সেনানী কখন।
অবশেষে প্রতীক্ষার পর
কাঙ্ক্ষিত সূর্যোদয়,
রেসকোর্স ময়দান হয়ে উঠে
আলোকে আলোকময়।
মহাকালের মহানায়ক
নির্ভীক দৃঢ় পায়ে,
এসেছিলেন স্বাধীনতার
নামাবলি গায়ে।
এসেছিলেন যে বাঙালির
সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান,
গেয়েছিলেন তিনি বাংলার
সর্বশ্রেষ্ঠ সেই গান-
"এবারের সংগ্রাম
মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
রচিলেন দিয়ে বরাভয়
অসুর বিনাশী গান,
মহাকালের অমোঘ বানী
ঐ সৃষ্টির আহ্বান।
এ আহ্বান স্বর্গ মর্ত্য
ত্রিভুবন কাঁপিয়ে,
ছুটলো বেগে বিদ্যুৎসম
সব কিছু ছাপিয়ে।
কর্ণ থেকে কর্ণে বহে
কণ্ঠ থেকে কণ্ঠে,
বাংলা এবার স্বাধীন হবে
খবরটি যায় রটে।
দিকে দিকে চারিদিকে
যেন এক লহমায়,
পৌচ্ছে গেল এ আওয়াজ
সারা পূর্ব বাংলায়-
"এবারের সংগ্রাম
মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
ঘরে ঘরে মাঠে ঘাটে
মানুষের কি উল্লাস,
গ্রাম গঞ্জ শহরের বুকে
উর্মিমুখর উচ্ছাস।
মিছিলে মিছিলে উত্তাল
পূর্ব বাংলার রাজপথ,
ঘরে ঘরে গড়ে দূর্গ
করে রক্ত শপথ।
চারিদিকে বেজে চলে
শিকল ভাঙারই গান,
দিকে দিকে গর্জে উঠে
লাখো বজ্র শ্লোগান-
"তুমি কে? কে আমি?
বাঙালি। বাঙালি।"
"জাগো জাগো বাঙালি জাগো"
"পদ্মা মেঘনা যমুনা
তোমার আমার ঠিকানা"
"বীর বাঙ্গালি অস্ত্র ধরো
বাংলাদেশ স্বাধীন করো"
এভাবেই শুরু হয়ে যায়
স্বাধীনতার সংগ্রাম,
দিকে দিকে চারিদিকে
শোনা যায় একটি নাম-
'তোমার নেতা, আমার নেতা
শেখ মুজিব শেখ মুজিব'
মেঘে ঢাকা বাংলার আকাশ
থমথমে পরিবেশ,
কানাঘুষা কানাকানি
গুজবের নাহি শেষ।
বাহিরেতে সংলাপ চলে
গোপনে কুমন্ত্র,
চলে বাঙালি নিধণের
গভীর ষড়যন্ত্র।
এলো এরপর পচিশে মার্চ
'অপারেশন সার্চ লাইট',
নিরস্ত্র মানুষকে মারে
ভেঙে সব 'হিউম্যান রাইট'।
নর পিচাশ শুকুনিদের
পরিকল্পনাতে,
নির্মম গণহত্যা চলে
কালিমাময় রাতে।
ভয়ঙ্কর সেই ক্রান্তিকালে
জীবন বাজি রেখে,
বঙ্গবন্ধু দিলেন মুক্তির
চরমপত্র লেখে-
'আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন'
ঘোষণাটি আসে,
ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে
ইথারেতে ভাসে।
শুনে সেই অমিয় বানী
ফুসে উঠে বাংলা,
কে যাবে মুক্তিবাহিনীতে
দিকে দিকে পাল্লা।
মৃত্যু উপত্যকায় গড়ে
বাঙালি প্রতিরোধ,
কার সাধ্য আছে যে করে
বাঙালির গতিরোধ।
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া
বাংলার সব প্রান্তরে,
সম্মুখ যুদ্ধে দামালেরা,
মরণপণ যায় লড়ে।
শত্রু সেনাদের আক্রমন
দুপায়েতে ঠেলে,
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
মৃত্যু পিছে ফেলে
ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী
নয় মাস যুদ্ধ শেষে,
বাঙালি ছিনিয়ে আনে
বিজয় অবশেষে।
সেদিনটা ষোলই ডিসেম্বর
উন্নিশ শ একাত্তুর,
দিকে দিকে চারিদিকে
বাজে বিজয়ের সুর,
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
আসে স্বাধীনতা,
এক সমুদ্র রক্তের মূল্যে
ঘুচে অধীনতা।
এভাবেই পূর্ব পাকিস্থান
হয়ে যায় বাংলাদেশ,
এভাবেই বাংলাদেশ আমার
হয়ে উঠে স্বদেশ।
-----------------------------------------------
২০ আগস্ট,২০১৭, মিরপুর, ঢাকা