মেয়ের জিজ্ঞাসা
জাহিদ হোসেন রনজু।
-------------------------------------------®
ও মা আমায় তুমি বলো
আমার দিকে চেয়ে,
বাবা কেন পুরুষ হলো
তুমি হলে মেয়ে?
তুমিই কেন রোজ সকালে
রান্নাঘরে যাবে?
বাবা কেন তোমার কাছে
রোজই নাস্তা চাবে?
একটু দেরি হলে কেন
বাবা বকে তোমায়?
তিনি তো বেশ আরাম করেই
চুপটি করে ঘুমায়।
রোজ সকালে উঠে তুমি
কত কাজ যে করো,
সবার জন্য নাস্তা বানাও
টেবিলে করো জড়ো।
যত জিনিস ময়লা থাকে
সারাদিনের পরে,
সেসব তুমি ধৌত করো
উঠে অনেক ভোরে।
আমায় তুমি ঘুম ভাঙ্গিয়ে
ব্যস্ত হাতে সাজাও,
এ কাজটা তো ভালবেসে
করতে পারে বাবাও।
স্কুলেতে রোজই তুমি
কেন নিয়ে যাবে?
ঝড়-জল-বৃষ্টি-রৌদ্রে কেন
তুমিই কষ্ট পাবে?
ফুল বাবুটি সেজে কেন
থাকবে বাবা বাসায়?
বাবাও তো মা মাঝে মাঝে
নিতে পারে আমায়।
স্কুল থেকে ফিরে তুমি
করো কত কাজই,
বাজারটাও যে সেরে আসো
ফিরতি পথে রোজই।
ঘর গোছানো,কাপড় ধোয়া,
রান্না-বান্না যত,
কাজ যে তোমার ফুরায় না মা
কত শত শত।
এর ফাঁকেতে যেয়ে তুমি
আমায় নিয়ে আসো,
স্নান করিয়ে দাও খাওয়ায়ে
কত ভালবাসো।
ঘুম পাড়িয়ে আমায় তুমি
ফের লেগে যাও কাজে,
কখন যে খাও কখন ঘুমাও
এত কাজের মাঝে।
অনেক রাতে বাবা যখন
ফিরে আসে ঘরে,
তুমি তখন খাবার বেড়ে
রাখো টেবিল পরে।
বাবা তো মা জানতে চায় না
তোমার কাছে এসে,
কেমন তুমি আছো মাগো
সারাদিনের শেষে।
'কাজের পরে কোথায় ছিলেন'
জানতে যদি তা চাও,
রাগে কেন বাবা ওমন
কষ্ট তুমি যে পাও।
তবু কেন বলো না কিছু
খেয়ে বাবার বকা?
বুকের মাঝে দুঃখ রেখে
সব সয়ে যাও একা।
সবার খাওয়া হলে পরে
সব গুছিয়ে রেখে,
দরজা জানলা বন্ধ কিনা
তুমিই আসো দেখে।
এসব করে শুতে তোমার
হয় যে অনেক রাত,
ক্লান্তি তোমার মুছার আগেই
চলে আসে প্রভাত।
তবু কেন কোন কাজই
করে না বাবা ঘরের?
সব দায় কি মা তোমার একা?
নাই তাঁর দায় সংসারের?
বাবার বুঝি চাকুরী বড়?
তাইতো এমন করে?
নাকি বাবা পুরুষ বলে
এমন রূপটি ধরে?
বাবা আমায় আদর করে
কেন যেন তবু,
কষ্ট তোমার দেখে ওতে
মন ভরে না কভু।
বাবা কেন আমায় মাগো
ভালবাসে শুধু?
তোমার তরে রচে কেন
মরুভূমি ধূধূ?
আমিও যে মেয়ে মাগো
কেমন হবে তবে?
একদিন কি মা মোর কপালও
এমনতর হবে?
--------------------------------------------
০৯ মার্চ, ২০১৬, মিরপুর, ঢাকা।