বাংলা ভাষায় 'কবির আধিক্য ' নিয়ে বিরক্তি......

ইদানিং বহু কবিকে দেখছি 'বাংলা ভাষায় কবির আধিক্য' নিয়ে নানান সরেস(?) ভাষায় বিরক্তি প্রকাশ করছেন। এমন কি হেয় করার যত রকম উপায় আছে তা করারও চেষ্টা করছেন। এমন ভাষা প্রয়োগ করছেন যে যেগুলো শুনতেও কানে বাজে। রুচিতে তো বাজেই। একটি উদাহরণ এই বাংলা-কবিতার আসর থেকেই দিচ্ছি-

'চারদিকে কবির ছবি
আঁতেল পাতেল বিতেল কবি
জাতে পাতে হাভাতে কবি
তেলের সাথে ঝোলের ভবি
ক্লাস ক্লাসে হচ্ছে শেখা
গেলাস ভরা জলো লেখা
আলোচনায় যাচ্ছে তাই
পশুপাখি কাকও কবি 
বাঘ ছাগ ভেঁড়া তবে
বাদ আর যায়ইনি কিছু
ওই পথে হাঁটবো কবে
কাব্য লেখার সুধার পিছু!'

(কোন এক বিখ্যাত কবির করা মন্তব্য - যেটি তিনি এই আসরের কোন এক কবির  কবিতার মন্তব্যে লিখেছেন)

জি আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এবং আমি মুক্ত মনে স্বীকারও করছি আমার মত বহু লিখিয়েরই লেখা কবিতা হয়ে উঠে না। তবুও লিখি, লিখে। প্রাণের টানে লিখে, শখের বশে লিখে। আবার অনেকে শেখার জন্যও লিখে। এই আসরের বহু স্বজন শ্রদ্ধেয় কবি আছেন যারা আমার মতন নবীন লেখকদের নানানভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। ভুল ধরে শুধরে দেন।
এমন কয়েক জনের নাম এখানে না বললেই নয়- সর্বজন শ্রদ্ধেয়-
ড. সুজিত কুমার বিশ্বাস
রহমান মুজিব
সহিদুল হক
যাদব চৌধুরী
সমীর প্রামানিক(অম্বরীষ কবি)
লক্ষণ ভান্ডারী
কবীর হুমায়ূন
অনিরুদ্ধ বুলবুল।
সঞ্জয় কর্মকার
মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
প্রবীর চ্যাটার্জি
মুলচাঁদ মাহাত
সরদার আরিফ উদ্দিন
এবং
আরো অনেকেই

ফলে বহু অকবিও ধীরে ধীরে কবি হয়ে উঠার পথে এগিয়ে যান। তাঁদের শেখানোর আন্তরিক চেষ্টা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। তখনই মনে ধ্বনিত হয়ে উঠে-
'A man is created by many hands.'

এছাড়াও বাংলা-কবিতা ডট কমের ওয়েব পেজে যে বাক্যটি লেখা আছে সেটি হলো- 'আপনি যদি সৌখিন কবি, আবৃত্তিকার, কবিতা প্রেমী যে কেউ হয়ে থাকেন, তবে জানবেন এই ওয়েব সাইটটি আপনার জন্যই তৈরি  হয়েছে।'
এখানে তো লেখা হয়নি যারা শুদ্ধতম মহাকবি শুধু উনারাই এখানে লিখবেন।
তাহলে এখানে অকবি যাঁরা লিখছেন তাঁদেরকে এমনভাবে হেয় করার মানেটা কি?

আচ্ছা সেই মহান লেখকরা যারা কবির আধিক্য দেখে বিরক্ত হচ্ছেন তাঁরা বলবেন কি- কবিতা, ছড়া লিখিয়ের সংখ্যা বাড়লে সমস্যাটা কোথায়?

কবিতা লেখা বা লেখার চেষ্টা একটি মানুষের মনের গহীনের পবিত্র অনুভূতি থেকেই সৃষ্টি হয়। তখন সে সুন্দরের মাঝেই হারিয়ে যান। হয়তো তাঁর লেখা মানে সে মাত্রায় পৌছায় না। কিন্তু অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, তাঁর এই লেখার মধ্যে তাঁর প্রাণের সুন্দরতম ভাললাগাটাও ভীষণভাবে জড়িয়ে থাকে।
তাই বলছি-

কেন কবি করো তুমি দুশ্চিন্তা এত?
এত কবি ভেবে কেন বেদনাহত?

শত শত ফুটে পুষ্প এই ধরাতে
নানা বর্ণে নানা গন্ধে দিনে ও রাতে
সব ফুলে হয় নাকো বিশুদ্ধ পুজা
কিছু পুষ্প বাড়াতে সু খোঁপায় গুজা
কিছু পুষ্প লাগে কাজে ভালবাসাতে
কিছু পুষ্প লাগে ফের গৃহ সাজাতে।
বহু পুষ্প লাগে নাকো কোনই কাজে
তবু ফুটে নিজ সুখে ধরার মাঝে।

সেই ভবে পুজ্য হয় শ্রেষ্ঠ যেজন
নির্দিষ্ট সময় শেষে অন্য ক'জন
বৃক্ষ থেকে ঝরে যায়  নিত্য বাগানে
জানে সেটা তবু লিখে মনের টানে।

তবে কেন দ্বিধা মনে? কেন বিরক্তি?
অবহেলা, অবজ্ঞায় করো কুটুক্তি।

আমি যদি নাহি লিখি সমস্যা তবে
তুমি কবি শ্রেষ্ট এটা কিভাবে কবে?

(১৪ আগস্ট ২০১৮, মিরপুর, ঢাকা)

তাই সবার কাছে সবিনয় অনুরোধ লিখতে দিন, সবাইকে লিখতে দিন। কেননা শিশু যখন প্রথম প্রথম অক্ষর লিখতে যায় তখন সেটা অশুদ্ধ, বাঁকাই হয়। কিন্তু মা-বাবা-ভাই-বোন-শিক্ষকের সহযোগিতায় একদিন সে সুন্দর করে অ-আ-ক-খ লিখতে শিখে যায়। অনেক সময় সেই শিশু তাঁর মাস্টারকেও ছাড়িয়ে যায়। তাই সহযোগিতা করুন।

পরিশেষে বলছি কাউকে আঘাত করার নিমিত্তে আমি এই আলোচনার অবতারণা করিনি। করেছি সেই সব লেখক যাঁরা প্রাণের টানে লিখেন তাঁদের সেটা লেখার অধিকার আছে এই কথাটি স্মরণ করে দেয়ার জন্য।

সবাই ভাল থাকুন।
সবার সহযোগিতায় মঙ্গলময় হয়ে উঠুক এই ধরা।