আমার গ্রাম

জাহিদ হোসেন রনজু।
----------------------------------------®

কোথাও খুঁজে পাই না যে আজ
আমার প্রিয় গ্রামখানাকে,
যতই ঘুরি এদিক ওদিক
পাই না তো আর কোথাও তাকে।

বন-বনানী গাছের তলায়
বাঁশ বাগানের ঝাড়ের ফাঁকে,
জ্যোৎস্না যেমন ঝরতো পড়ে
কোথায় এখন? পাই না তাকে।

কেমন জানি ধূসর আজি
আম কাঠালের জ্যৈষ্ঠ মাস,
হারায় গেছে পৌষ-পার্বন আর
যাত্রা পালার সেই আবাস।

কোথায় গেলো জেলে পাড়া?
কোথায় এখন কুমোর বাড়ী?
কোথায় এখন তরতাজা মাছ?
কোথায় এখন মাটির হাড়ি?

গরু চড়াতে সবুজ মাঠে
যায় না তো আর রাখাল বালক,
হারায় গেছে কোথায় যেন
জারী-সারির পল্লী গায়ক।

নববধু ঘোমটা মাথায়
পড়ে রাঙা বিয়ের শাড়ী,
আসে না আর মেঠো পথে
গরুর গাড়িতে শ্বশুর বাড়ী।

নানান রঙের হাজার পাখি
পাই না খুঁজে গ্রামের মাঝে,
শুনি না সেই কিচির-মিচির
শুনেছি যা  সকাল সাঁজে।

মন হারাতো নীল আকাশে
চোখ মেলে রোজ সাঁঝের বেলা,
যতই খুঁজি পাই না যে আজ
বিনে সূতোর সেই হংস মালা।

কোথায় গেলো জোনাক জ্বলা
রাত্রী আমার ভাললাগার,
খেঁকশিয়ালের হুক্কাহুয়া
রাত নিশিথে শুনি না আর।

পাই না খুঁজে মাটির প্রদীপ
খুঁজে পাই না সে নিঁঝুম রাত,
কোথায় জানি হারায় গেছে
পাখি ডাকা সেই মধু প্রভাত।

খেঁজুর রসের পিঠে পুলি
পাই না এখন শীতের ভোরে,
পাই না খুঁজে খেঁজুর গাছই
সারাটি গ্রামের কোথাও ওরে।

বর্ষাকালেও পাই না খুঁজে
জল থই থই গ্রাম আমার,
কোথায় জানি হারায় গেছে
সেই অপরূপ রূপ যে তার।

পালের নৌকায় পালটি তুলে
ভাটিয়ালি গান গায় না কেউ,
দেখি না আর গাঙের ধারেও
কাঁশফুলের ঐ শুভ্র ঢেউ।

পাই না খুঁজে লক্ষ প্রাণের
মধুর মিলন-গ্রামীন মেলা,
খই-মুড়কি, কাঁচের চুঁড়ি আর
পুতুল নাচ ও নাগরদোলা।

হারায় গেছে প্রাণ জুড়ানো
আদর মাখানো মধুর ধাম,
পাই না খুঁজে কোথাও আমি
হারিয়ে যাওয়া সেই পল্লী-গ্রাম।

--------------------------------------
পরিমার্জন, ২ জুন, ২০১৮, মিরপুর, ঢাকা।