'না' ও 'নি' নিয়ে কিছু কথা
আজকে আমি সাধারণ কিন্তু একটি অপপ্রয়োগ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো । সাধারণ বললাম এই কারণে যে, বিষয়টি আমরা অসাবধানতাবশতঃ অথবা লিখতে যেয়ে হয়ে গেছে কিন্তু আর সংশোধন করিনি বিষয়টি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন। কিন্তু যে কারণেই লিখি না কেন বিষয়টি অপপ্রয়োগ। আর এই অপপ্রয়োগের কারণে কবিতাটিতে একটি ক্ষত থেকে যাচ্ছে। যা আমরা একটু সচেতন হলেই পরিহার করতে পারি। পারি আমার কবিতাটিকে শুদ্ধতা প্রদান করতে।
এখন আসা যাক মূল বিষয়ে। বিষয়টি হচ্ছে আমরা অনেকেই ’না’ শব্দটি ক্রিয়ারূপের সঙ্গে মিশিয়ে লিখি; যেমন : করেনা, করছিনা, চাইনা, চায়না, পাইনা, পারেনা, পারছিনা, যাচ্ছেনা, খাচ্ছেনা, শেখেনা, দেখেনা, লেখেনা, যায়না, বলেনা, লিখবনা, গেলামনা, দেখলনা, পড়েনা, ধরেনা, শোনেনা, হচ্ছেনা, হলোনা, ছিলনা ইত্যাদি। এটি একটি গুরুতর অপপ্রয়োগ।
নঞর্থক ’না’ ক্রিয়ারূপ বা অন্য শব্দের পরে সেঁটে লেখা যাবে না। কারণ এটি একটি পৃথক শব্দ; ইংরেজিতে যেমন ‘No/Not’ এবং হিন্দি বা উর্দু ভাষায় ‘নেহি’। অন্য সব শব্দের মতোই বাক্যে না শব্দটি পূর্ববর্তী শব্দ থেকে আলাদা রাখতে হয় ; যেমন: করে না, করছি না, করব না, বলে না, বলছে না, বলব না, দেখে না, দেখছ না, দেখল না, শুনল না, চাই না, খাই না, খাবে না, যায় না, যাচ্ছে না, যাবে না, ছিল না, হচ্ছে না, হচ্ছিল না, হলো না, সম্ভব না, সস্তা না, ভালো না, মন্দ না, ভীত না, ভুল না, সন্তুষ্ট না, কাব্য না, রাজনীতি না, রাজা না, মন্ত্রী না, রাম না, রহিম না, শহর না, বন্দর না ইত্যাদি ।
কিন্তু নেতিবোধক বা শূন্যতাবাচক উপসর্গ হিসেবে ’না’-এর ব্যবহার হলে সেক্ষেত্রে শব্দের সাথে সেঁটে লিখতে হবে। যেমন :
বিদেশাগত শব্দের সঙ্গে :
নারাজ, নাখোশ, নাছোড়, নাপাক, নালায়েক, নাহক, নাদাবি, নাবালক, নামঞ্জুর, না-জায়েজ, না-দুরস্ত, না-মরদ, ইত্যাদি।
তৎসম বা তদ্ভব শব্দের সঙ্গে :
না-বাচক, না-ধর্মী, না-বোধক, না-বলা, না-শোনা, না-ফেরা, না-জানা, না-গোনা ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে ‘নি’ কোনও শব্দ নয়, পরাশ্রিত ধ্বনি মাত্র। এটি সংশ্লিষ্ট ক্রিয়ারূপের সাথে সেঁটে লিখতে হয়; যেমন : করিনি, বলিনি, দেখিনি, দেখেননি, খাওনি, কাঁদোনি, ধরেনি, যায়নি, আসোনি, আসেননি, বসেননি ইত্যাদি। প্রমিত রীতিও তাই বলে।
সকলকে ধন্যবাদ।
(কৃতজ্ঞতা : আবুল কাইয়ুম, ভাষা ও ব্যাকরণবিদ, কবি, সাহিত্যিক, অনুবাদক)