বৃদ্ধঃ
ক’দিন ধরে দৃষ্টিটা আরো হয়েছে ঝাপসা
বুকের ব্যথাটাও বেড়েছে অনেকটা-
বুঝলি দাদু ভাই,
আর বোধহয় থাকবো না বেশীদিন।
তোর দাদীকে একটু ডেকে দে তো,
ওপাশের ঘরেই আছে হয়ত।
বৃদ্ধাঃ
তোমার কি খুব খারাপ লাগছে?
নাতনীটাকে কি যা-তা বলেছ-
ঐ ঘরে গিয়ে কাঁদছে,
তুমি এখনও সেই আগের মতই রয়ে গেছ-
একটু যদি না থাকি পাশে,
আবোল তাবোল যাও বকে।
বৃদ্ধঃ
সময় কিভাবে চলে যায়, তাই না-
তোমার কি মনে আছে, কবে সেইনা
বড় আপা তোমায় প্রথম দেখে বলেছিল-
‘তুমি ভাই বাচ্চা মেয়ে; একটু মানিয়ে নিও’।
আমি বলেছিলাম ‘এ আমার টুনটুনি’
তুমি তো একেবারে লাল হয়ে গিয়েছিলে।
জানো?
তুমি কিন্তু সেই টুনটুনিটার মতই আছো আজও,
একটুতেই পেয়ে যাও ভয়। এবার একটু শক্ত হও,
একটা জীবন কাটিয়ে দিলে আমার হয়ে
তোমার কখনও হতে পেরেছি কিনা জানিনা-
আমার না থাকাতে একা ভেবো না নিজেকে।
বৃদ্ধাঃ
ওগো, তুমি এসব বলছ কেন? আমার কান্না পাচ্ছে-
বুকের ব্যথাটা কি বেড়েছে? ডাক্তার আনি ডেকে,
আসাদ, বাবা শুনে যাতো এদিকে-
তোর আব্বু কি সব বলছে শোন,
এই, আমাকে কাঁদাতে কি তোমার ভালো লাগে?
বৃদ্ধঃ
আহা, আসাদকে ডাকছ আবার কেন?
ওর কাজ আছে কত,
শুধু শুধু ছেলেটাকে আর কত হয়রান করবো বল-
বিয়ে করেছে বাচ্চা কাচ্চা হয়েছে
আজও চোখ উচিয়ে কথা বলেনি ছেলেটা,
সেবা যত্নেও করেনি হেলা।
আর কত কষ্ট দিব ছেলেটাকে!
আজ নাহয় ছুটি দিলাম, একটু বাঁচুক ওর মত।
আহা, তুমি কান্না থামাও-
কান্নার ঢেউ সামলাবার মতো বয়স নেই তোমারও।
দেখো, আমি কি কাঁদছি?
শীতল গলায় যাচ্ছি বলে, যেন স্পষ্ট শুনতে পাও।
আসাদঃ
আব্বু, আব্বু কি হয়েছে তোমার, ব্যথা করছে বুকে?
ময়না, একটু গরম তেল নিয়ে আসোতো-
আর সাথীকে বল ওর দাদার ‘ইনহিলার’টা খুঁজতে
আমি যাই ডাক্তার আনি ডেকে।
বৃদ্ধঃ
আসাদ, বোস বাবা, বোস-
হবে না ডাক্তার ডাকতে।
আমি ঠিক আছি। জানিস একটা কথা-
তোর আব্বু ডাকে আমার ব্যথা গেছে কমে।
তখন তুই অনেক ছোট,
বাজার থেকে ফিরেছি মাত্র, তোর মা বলল-
জানো আমার ছেলে আমাকে মা বলে ডেকেছে।
সে’কি তার গর্ব।
আমি বললাম আমাদের ছেলে।
তোর মা বলল ‘হুম’, বলল;
‘তবে যখন আমাকে মা বলে, তখন কেবলি আমার’।
এই সেই মা, দেখে রাখিস তোর মাকে।।
ময়না, মা; এখন একটু বন্ধ করো মালিশ করাটা
তোমার মতো পুত্রবধু পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্য।
নববধু থেকেই নিজের বাবা মায়ের মতই করছো সেবা।
দোয়া করি মা, সুখী হও সারাজীবন।
সাথী, কাঁদে না দাদু ভাই, কাছে আয়
নিজ চোখেই তো দেখছিস তোর বাবা-মা
আমাদের দুজনের কত খেয়াল রাখে।
কথা দে দাদু, জীবনে যত বড়ই হোস বাবা-মা’কে ফেলে দিবি না।
আসাদ, বাবা এখন তোরা যা, কোন চিন্তা করিস না-
আমার এখন ভালো লাগছে।
বৃদ্ধাঃ
“সত্যি তোমার ভালো লাগছে, বল তুমি ভালো হয়ে যাবে তো?
মাথাটা বালিশে ঠিক মতো রাখো,
আমি চুলে বিলি করে দিই, তুমি একটু ঘুমোও”।
বৃদ্ধঃ
জানো, সব পুরনো হয়ে যায়, এটা সব সময়ই নতুন-
তুমি চুলে বিলি করে দিলে মনে হয় আজও সেই যুবকটিই আছি
আর আমার পাশে সেই ‘টুনটুনি’ বয়সের তুমি।
তোমার ডান হাতটা দিবে?
হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থেকো, আমি রেখেছি সে ‘প্রতিশ্রুতি’
‘ততদিন ধরে রাখব যতদিন বাঁচি, ধরেছি যেই হাতটি’।
***** ***** ***** ***** *****
সে রাতেই চলে গেল বৃদ্ধ, শিয়রে এক বৃদ্ধা
সাথীকে ডাকেনি, ময়নাকে ডাকেনি, ডাকেনি আসাদকেও
শুধু নীরবে বসে একটু কাঁদল সে একাই
কি দরকার? সারা দিনের শেষে ওরা ক্লান্ত
আজকের রাতটা একটু আরাম করুক।
কাল হতেই তো তার বিশ্রাম-
কিন্তু ওদের যে এখনও অনেক কাজ বাকী!
সস্তাপুর, নারায়ণগঞ্জ।
২১ এপ্রিল, ২০১৪ ঈসায়ী।