সে পাথর কাটার শ্রমিক
কাটতো পাথর সারা দিন ধরে।
ভাগ্যকে সে ধিক্কার দিতো
অন্য জীবন পাওয়ার ইচ্ছে জাগতো
অনুযোগ ছিল তার বিধাতার পরে।
যাওয়ার পথে হঠাৎ একদিন দেখে
সোনার মুকুট পরে চলছেন এক রাজা
মহা সমারোহে
সৈন্য সামন্ত পাইক পেয়াদার বহর
ঢাক বাদ্যের তালে রাজপথ
যেন প্রকম্পনে করছিল থর থর।
শ্রমিক ভাবলো মনে মনে
এই জীবন থেকে কি হবে?
যদি হতাম এই রাজার মত রাজা
জীবন আমার উঠতো সুখে ভরে।
তার প্রার্থনা মঞ্জুর হলো
শেষ হলো পাথর কাটার কাজ
বিধাতার ইচ্ছায় পেলো সে
মুহুর্তে এক সুখী রাজার সাজ।
যাচ্ছিলো সে মধ্যমনী হয়ে বহরে
দুপুর গড়ালে প্রকান্ড এক সূর্য
উঠলো ঠিক মাথার উপরে।
ক্লান্ত রাজার কপালের ঘাম
পড়তে থাকলো দর দর করে।
ভাবলো রাজা,
আমার আর কি রইলো ক্ষমতা!
তার চেয়ে সূর্য হওয়া ছিল ভালো
দিতাম তবে তেজ ভরা কত আলো!
বিধাতাও যেন মুচকি হাসলেন
এক পলকে তাকে সূর্য বানালেন।
তেজ নিয়ে সে জ্বলতে লাগলো
অনিচ্ছাতেও পৃথিবীর যত
নদী সমুদ্রের জল শুকাতে লাগলো
বাষ্প জমে জমে হলো অতিকায় মেঘ।
নিজ সৃষ্ট সেই মেঘের কারনে
পড়লো বাধা আলো বিকিরনে
ভাবলো সে, তবে সূর্যের চেয়ে
মেঘ হলে নিশ্চয় ভালো হতো
ইচ্ছে মতন সে বৃষ্টি নামাতো।
বিধাতা বললেন, ঠিক আছে বাছা।
পূরন করলাম তোমার এই ইচ্ছেটাও
এবার থেকে তুমি মেঘ হয়ে যাও।
খুশিতে সে এবার বৃষ্টি নামালো
তুমুল প্রবল ঝড় হয়ে এলো
মাঠ ঘাট নদ নদী সব জলে ডুবে গেল
গবাদী পশুরা বাণে ভেসে গেল।
শুধু ভাসলো না একটি পাহাড়
অটল অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
এই অটলতা তাকে মুগ্ধ করলো
মনে মনে বলে সে এবার
মেঘের জীবন চাই না যে আর
হতাম যদি অতিকায় ঐ পাহাড় ।
বিধাতা বললেন, বেশ। বেশ।
স্বপ্ন তব সত্যি হোক
তবে এটাই কিন্তু শেষ।
সে ছিলো তখন খুব ক্লান্ত
পাহাড় হয়ে হলো নিশ্চিন্ত
বেঘোর ঘুমে ঢলে পড়লো।
খুট খুট আওয়াজে
তার ঘুম ভাঙলো।
কে রে কেড়ে নেয় পাহাড়ের সুখ?
আ রে এ তো সেই?
পাথর কাটার শ্রমিক!
সব চেয়ে শক্তিশালী
কেটে নেয় কেমন কঠিন পাথর
পাহাড়ের বুক।
বিধাতার চাওয়াই যে ঠিক।
রাজা বা সূর্য নয়ত পাহাড় মেঘ
হলো সে আবার আগের মত
সামাণ্য পাথর কাটার শ্রমিক।
নোট: কবিতাটি বিখ্যাত "Stone Cutter " গল্প অবলম্বনে রচিত।