”আমি জীবনানন্দ দাশকে বলছি ”
-আব্দুর রউফ মিয়া (সম্পর্কে আমার ছোটমামা হন)
তোমার বাংলা এখানে নেই
এখানে চালতা ফুলেরা ভেজে না রাতের শিশিরে,
কাঁঠাল পাতারা ঝরে না ভোরের বাতাসে,
একটা মরে গেছে বন্যায়, আর অন্যটাকে মোরা কেটেকুটে পুড়ায়েছি চিতার আগুনে।।
এ বাংলার ‘পরে, তোমার মতো আর কেউ রয়ে যেতে চায় না,
এখানে বসন্ত শেষের পথে,
তাই বসন্তের কোকিলেরা চলে যাচ্ছে দূরে, সাত সাগরের পাড়ে।।
এ বাংলার ললনা আর কলকেপেড়ে শাড়ি পড়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়ায় না,
সে শাড়িতে এখন অনেক তালি,
বৃষ্টিভেজা এক আঁচলা পড়ে, অন্য আঁচলা রৌদ্রে ধরে দাঁড়িয়েছে সে নারী।।
কচি তালশাঁস আর চিনি-চাঁপা এখানে উপরতলার খাবার,
চাঁদা-সরপুঁটিদের ঘ্রাণ, ম্লান হয়ে গেছে তোমার বংশধরদের মরাদেহের পঁচা গন্ধে।
এখানে কলমিলতার কলমি ফুল আর নেই,
নেই বেতের আগা, আর কলাগাছের কচি পাতা,
ওগুলোকে মোরা সিদ্ধ করে খেয়েছি লবণ ছাড়া।।
এখানে ভাষা নেই, গান নেই, আছে সস্তা প্রেমের ছড়া,
এখানে চাল-ধোয়া ভিজে হাত নেই, আছে নটিনী নারীর চামড়ার মহড়া,
আছে মা-হারা ছেলের, ভাই-হারা বোনের দীর্ঘশ্বাস,
আর জঠরজ্বালায় কুমারী বধূর গলায় দড়ি বা এনড্রিন পানের ইতিহাস।।
এখানে সাদা হাঁসের ঝাঁক ভাসে না নদী জলে,
সেখানে এখন শবের মিছিল,
তাইতো দু’পায়ে থ্যাংলো কুকুর ছুটে চলে পিছুপিছু,
যেখানে শকুন-শকুনী মেতেছে জলসায়।।
এখানে তোমার সাতটি তারা ফোটে, চাঁদ ওঠে,
তাই বলে জোৎস্না মায়ায় গা এলিয়ে দেই না নেশায়,
ঐ বাঁকা চাঁদ আর তারার মাঝে,
আমার খোকাখুকুর পাঁজরের হাড় আর ক্ষূধার্ত চোখ দেখে আঁতকে উঠি বারেবারে।
এ রাত আমাকে যন্ত্রণা দেয়,
তাই বলছি জীবনানন্দ, তোমার বাংলা আর এখানে দেখি না।।
– (‘৭৪ এর দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে লিখা)