চলিষ্ণু জীবনের একেবারে শেষ স্টপেজটায় দাঁড়িয়ে বলছি আজ।
যেখান থেকে স্পষ্ট দেখাযায় মৃত্যুর কালোমুখ।
এখান থেকেই তো ক'দিনের ব্যবধানে হারিয়েছি আমার চার সহযোদ্ধাকে।
কুয়েতের উষর মরুতে শুয়ে আছে যাদের প্রাণহীন নিথর দেহ।
গতকাল আমার রুমমেইট হয়েছে করোনা পজেটিভ।
আজ বেড়েছে আমার শরীরের উষ্ণতা।
তাতেই আমার পাশে ঘেঁষছে না কেউ।
চেনা পৃথিবীটার কেমন যেন এক অচেনা আচরণ।
এমন না হলে হয়তো কোনদিন দেখাই হতো না বিষধর গোখরোর খোলস বদলের দুর্লভ দৃশ্য।
ইদানিং বন্ধুদের সাহচার্য বঞ্চিত হলেও সখ্যতা হয়েছে আদা, লেবু, রশুন, গরম জল আর একটা ইলেকট্রিক ওয়াটার হিটারের সাথে।
চলছে জীবনের সাথে মরণের এক অদৃশ্য লড়াই।
অবশ্য সুনিশ্চিত মৃত্যুতে আমার খুব একটা আপত্তি নেই তেমন,
ঋণের বোঝা বাড়িয়েই বা কী লাভ?
তবে জীবন মরণের এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অসুস্থ মায়ের মলিন মুখটা ভীষণ মনে পড়ছে আজ।
মা আমাকে বলেছিলেন "বাবা আমি মরে গেলে আমার কাফনের কাপড়টা তুই কিনে দিস আর জানাজার নামাজটাও পড়াবি তুই"।
আমি এখন প্রবাসে,
প্রায় আট বছর আগে মদিনা থেকে মায়ের জন্য কিনে রেখেছি মার্কিন থান।
মায়ের নামে ওমরাহ করেছি, তাওয়াফ করেছি অসংখ্য বার।
তবে মায়ের জানাজাটা বোধহয় পড়ানো হলো না আমার।
গলাটা ভীষণ ব্যথা করছে আজ।
বুকভরে বিশুদ্ধ বাতাস টানতে ব্যর্থ হচ্ছে মুমূর্ষু ফুসফুস।
হয়তোবা মাকেই শুনতে হবে আমার চলে যাবার শেষ সংবাদ অচিরেই।
মা........ মাগো......
তোমার হতভাগ্য সন্তানকে ক্ষমা করে দিও মা।
বুকের অভ্যন্তরে যে প্রবাসী রোপণ করেছে করোনার বিষাক্ত বীজ,
মায়ের কোলে মরবার কোন অধিকার নেই তার,
কোন অধিকার নেই,
কোন অধিকার নেই.....