আমি তো তখনই ভালো ছিলাম,
যখন ভাষায় ভিন্নতা ছিল,
ভিন্নতা ছিল জাতীয়তায়।
ওরা আমাকে নিজের ভাবেনি কখনো।
পর ভেবে চালাতো পাশবিক নির্যাতন।
আমাকে ভুখা রেখে ওপারে পাচার করেতো
আমার বুকের জমিনে ফলানো শস্য সমূদয়।
এমনকি শিক্ষা চাকরি চিকিৎসা সব কিছুতেই
ছিল অসম বন্টন।
আমাকে এহেন দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয়ার মানসে
সেদিন গর্জে উঠেছিল একটা উত্থিত তর্জনি।
ফিরিয়ে দিতে ভোট ও ভাতের অধিকার,
গড়ে তুলেছিল অবরোধ ও আন্দলোন।
চালিয়েছিল প্রাণপণ যুদ্ধ।
শত্রুরা সেদিন ক্ষুব্ধ হয়ে কেড়ে নিয়েছিল
লাখো স্বজনের প্রাণ।
বিবস্ত্র আমার সর্বাঙ্গে করেছে পৈশাচিক নির্যাতন।
আমি স্বাধীন হবার বাসনায় সহ্য করেছি
বর্বতার স্ট্রিম রোলার।
অবশেষে রক্তস্নানের পর স্বাধীন হয়েছে
আমার বিক্ষত অবয়ব।
আশায় বুক বেঁধেছি আমি।
স্বনির্ভরতায় নিরাপত্তার রঙিন স্বপ্ন দেখেছি
স্বাধীন পতাকার অমৃত ছায়াতলে।
কিন্তু হায়! একি?
আজও আমি লালসার স্বীকার একদল
স্বদেশী হায়েনার।
ঘরে বাহিরে, শহর কিবা গ্রামে
স্কুল কলেজ বাস কিবা ট্রামে,
ওদের কামাগ্নিতে আজও দগ্ধ হয় আমার
পবিত্র মাতৃত্ব।
আজ কোথায় নিরাপত্তা আমার?
আমার কৈশোরে পিতা, তারুণ্যে শিক্ষক,
যৌবনে বন্ধু, পৌঢ়াতে সহোদর।
কেউ ছাড়েনি আমায়, কেউ না......
সব শেষে এই কঠিন বার্ধক্যে আমাক
বিবস্ত্র করেছে আমার নাড়িছেঁড়া ধন,
আমারই ঔরস তার কামাতুর লালসায়।
ইস! আমি মরে যাই, লজ্জায় ঘৃণায় আর
সীমাহীন অপমানে।
আমি তোমাদের ধর্ষিত মানচিত্র বলছি।
পরম মমতায় তোমরা যাকে মা বলে ডাকো,
যাকে নদিমাতা বলো আকণ্ঠ শ্রদ্ধায়।
ন'মাস জঠরে রেখে জন্ম দিয়েছি তোমায়,
তোমার জন্য গোপনাঙ্গে আজও বয়ে বেড়েই
মাতৃত্বের দাগ,
আজও বহমান আমার প্রসবকালীন রক্তস্রোত।
অথচ সেই মাকেই নির্বিচারে রক্তাক্ত করে
তোমার পাশবিক পৌরুষ।
আমি জানি ধর্ষক কখনও পুরুষ হয় না
আর পুরুষও নয় ধর্ষক।
ওরা কাপুরুষ ওরা নর্দমার কীট,
ওরা নরপশু ওরা বেজন্মা, জারজ,
ওরা জাতীয় কুলাঙ্গার।
পক্ষান্তরে ওরা তো আমারই ঔরস।
আমি তোমাদের ধর্ষিতা মা বলছি,
আমিই তোমাদের ধর্ষিত মানচিত্র...