বেড়েছে অনেক বুকের পিড়াটা
শ্বাস বুঝি যায় চলি,
যাবার বেলায় প্রিয়তমা শোনো
কিছু কথা যাই বলি।
তোমার সহিত সাক্ষাৎ হওয়ার
সেই সে সোনালী ক্ষণে,
কতো ছিল বুকে অজানা পুলক
আজও তা রয়েছে মনে।
সহজ সরল, সাদামাটা মেয়ে
ভুবন ভুলানো হাসি,
অলখে আমার হৃদয় কাননে
বাজালে প্রেমের বাঁশি।
প্রথম দেখার ভালোলাগা থেকে
নিয়েছি তোমার পিছু,
সবার সমুখে ভালো ছেলে আমি
বুঝতে দেইনি কিছু।
সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল
ছল করে কথা বলা,
শুরু হয়েছিল সুখে কিবা দুখে
পাশাপাশি পথচলা।
কাজে ফাঁকি দিয়ে এখানে-ওখানে
বেড়াতে গিয়েছি কতো,
অজানা হরসে দিন মাস করে
বছর হয়েছে গত।
সেই থেকে যেন দু'জন দু'জনে
শুরু হলো মেলামেশা,
রক্তের সাথে মিশে গেলো যেন
তোমাকে পাওয়ার নেশা।
গোচর-অগোচরে আগলে রেখেছি
যাইনি কখনও ছাড়ি,
কোন শকুনের অশুভ আঁচড়
না নেয় তোমাকে কাড়ি।
চোখের আড়াল হতেই আবার
নিয়েছি তোমার খোঁজ,
দেখতে তোমার সোনা ঝরা হাসি
গোলাপ এনেছি রোজ।
মনে পড়ে আজও..
ক'দিনের লাগি সাভারে গিয়েছি
হৃদয়ে লাগেনি সুখ,
বুকের দুয়ারে উঁকি দিতো শুধু
তোমার মায়াবী মুখ।
কী মায়ার ডোরে বেঁধেছিলে তুমি
গড়েছিলে বুকে বাসা,
করিতে সদাই শিরা ধমনিতে
অনায়াসে যাওয়া আসা।
তখনই দিয়েছি রাণীর আসন
বুঝতে পারনি তুমি,
তুমি ছাড়া ছিল জীবন আমার
রসহীন মরুভূমি ।
ঈদে-পার্বণে কোনকিছু দিলে
নিতে তুমি হাসি মুখে,
সেই হাসিটুকু দীপ জ্বেলে দিতো
আমার আঁধার বুকে।
যদি বা দেখেছি কখনও তোমার
বিষাদে মলিন মুখ,
নিমিষে আমার হাওয়া হয়ে যেতো
দুনিয়ার যতো সুখ।
একদা আমার আকাশে দেখেছি
বিষাদের কালো ছায়া,
অজানা কারণে দূরে চলে গেলে
ভুলে গিয়ে সব মায়া।
চলে গিয়েছিলে শত ক্রোশ দূরে
করিনি তখনও ভয়,
আমার মায়ার বাঁধন টুটার
সাধ্য কী করে হয়?
সময়ের স্রোতে কতো কিছু হলো
মনে পড়ে অবিরত,
আমার লাগিয়া সুরাইয়া বুবুর
বকুনি খেয়েছ কতো।
ধীরেধীরে বুকে ব্যাকুলতা বাড়ে
সেই থেকে কাছে আসা,
তখনও বুঝনি কতটুকু চাওয়া,
বুঝনি না বলা ভাষা।
সেই চাওয়াটুকু প্রেম ছিলো, নাকি
ছিল শুধু পরিচয়?
কতো কাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে শেষে
হয়ে গেল পরিণয়।
সেই থেকে প্রিয় তোমাকে দিয়েছি
ফাঁকি আর শুধু ফাঁকি,
যতো কথা ছিল প্রণয়ের আগে
সব যেন ছিল মেকি।
কথা ছিল আমি সুখ আর দুখে
রবো খুব কাছাকাছি,
সুখ সুখ করে মরীচিকা খুঁজে
আজও দূরে সরে আছি।
একটা বালিসে মাথা রেখে শোবো
ভাত খাবো এক থালে,
অভাগার চাওয়া প্রেমময় প্রীতি
সয়নি তো পোড়া ভালে।
কথা ছিল আমি মুছে দেবো চোখ
ভাসে যদি কভু জলে,
মনে হলে আজও সেসব কাহিনী
পুড়ি শুধু পলেপলে।
জীবনে ক্ষুধার চাহিদা মেটাতে
হয়ে আছি পরবাসী,
হৃদয়ের চাওয়া প্রেম প্রীতি সবে
নিজ হাতে দিয়ে ফাঁসি।
যাই যাই করে সুখ গুলো যবে
হৃদয়ে বেঁধেছে দানা,
দুনিয়ার বুকে মহামারি রূপে
করোনা দিয়েছে হানা।
চারিদিকে ছোটে মৃত্যু মিছিল
লাশ আর শুধু লাশ,
বিষের সাগরে পরিণত হলো
লকডাউন কারাবাস।
চারজন আমার নিকট স্বজন
ওপারে দিয়াছে পাড়ি,
যাই যাই করে চলে গেলো তারা
হয়নি তো ফেরা বাড়ি।
শ্বাস নিতে যেন খুব ব্যথা লাগে
মুখে নাই কোন ভাষা,
হয়তো আমার বুকের ভিতরে
করোনা বেঁধেছে বাসা।
এ নিদান কালে কতো কথা আজ
পড়ছে আমার মনে,
একবুক ভরা কথার ফোয়ারা
বাকি যে তোমার সনে।
মনে পড়ে তবু সোনা মাখা মুখ
হতাশার ফাঁকেফাঁকে,
মরণ আমার নিকষ আঁধারে
হাতছানি দিয়ে ডাকে।
চলে যাই যদি প্রিয়তমা ওগো
সকল বাঁধন ছিঁড়ে,
নিয়তির ডাকে সাড়া দেই যদি
আসবো না কভু ফিরে।
তোমার না পাওয়া কষ্টের কথা
রেখোনা হৃদয়ে জমা।
অপরাধ ভুলে এই অভাগারে
করে দিও শেষ ক্ষমা।
তোমার উপরে খুব খুশি আমি
দাবিদাওয়া কিছু নাই,
বিধাতাকে বলি হাসরের দিনে
তোমারেই যেন পাই।
------+++-----