হ্যাঁ, সমস্ত জল্পনা কল্পনা শেষ করে আমরা আমাদের সম্মিলন দুই ভাগে আগরতলা প্রেস ক্লাব ও মুক্তধারা অডিটরিয়ামে সম্পন্ন করার মন স্থির করে এগিয়ে যেতে থাকি । ১০ই আগষ্ট আমাদের প্রিয় কবি আভা সরকার মণ্ডল উনার স্বামীকে নিয়ে যথা সময়ের প্রায় ৪৫ মিঃ পরে আগরতলা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন । আমরা গাড়ি নিয়ে বিমান বন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে হোটেলে পৌছে দেই । পরদিন যদিও বেলা আড়াইটার সময়ে পৌছানোর কথা তবে শেষ পর্যন্ত বেলা পৌণে পাঁচটায় বাংলাদেশের কবিদের একটা বড় টিম প্রায় ১৮ জন আগরতলা আন্তর্জাতিক বাসষ্ট্যান্ডে উপস্থিত হলে আমরা উনাদের পুষ্প স্তবক দিয়ে বরন করে নেই । তার কিছুক্ষণ আগে ক্বি পলাশ দেবনাথ বাংলাদেশের মৌলভীবাজার থেকে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় । এই সময়ের দুই দেশের কবিদের মিলনে কি যে এক আবেগ উচ্ছ্বাস ছিল সে কথা লিখে বুজানোর সাধ্য আমার নেই । প্রসঙ্গতঃ আমাদের সঙ্গে কোলকাতা থেকে আসা কবি প্রণব লাল মজুমদারও ছিলেন । আমরা সেখান থেকে তিনটি গাড়ি দিয়ে হোটেলে যাবার ব্যাবস্থা করি এবং হোটেলের দ্বারপ্রান্তে আমাদের ত্রিপুরার মেয়েরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে ছিটিয়ে আবারো বরণ করে নেন এবং হোটেলে প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট ভাবে বুক করে রাখা রুমে পৌছে দিয়ে প্রথমে ঠান্ডা পানীয় পরে চা-বিস্কিটের ব্যবস্থা করা হয় এবং সকল অতিথির রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয় । উল্লেখ্য, প্রিয় কবি কবীর হুমায়ূনের সঙ্গে বাসে বসে আলাপ চারিতার সুবাদে বাংলাদেশের আরেকজন কবি কামরুজ্জামান সাহেব আমাদের অতিথিদের সঙ্গেই থেকে যাওয়া ও অনুষ্ঠান উপভোগ করার আবদার জানালে , যদিও উনি বাংলা কবিতা ডটকমের সদস্য নন তবুও আমরা সমান ভাবেই আতিথেয়তা দেয়ার চেষ্টা করেছি । ঠিক একই রকম ভাবে পরের দিন বাংলাদেশ থেকে আগত কবি ফরিদ হাসান এর সঙ্গে আরেকজন সম্ভবতঃ বাশার সাহেবও উনাদের সঙ্গে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে আমরা তাকেও যথাযোগ্য ভাবে রাখার চেষ্টা করি । এভাবেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কোলকাতা ও আসাম থেকে আগত সমস্ত কবি বৃন্দকে রেল ষ্টেশনে সমান ভাবে বরণ করে নিই । কবি দিদি আভা সরকার মন্ডলের কন্যা এই দিনে একা কোলকাতা থেকে বিমানে এসেছেন, আমরা তাকেও বিমান বন্দর থেকে আনার ব্যাবস্থা করি । রাতে খাবারের ব্যাবস্থাও করা হয় ।এক্ষেত্রে কবি সমীর প্রামাণিক’দার কথা উল্লেখ না করে পারছি না, উনি আসার পর থেকে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে সবসময় থেকেছেন এবং প্রয়োজনীয় সঙ্গ দিয়েছেন ।
পরের দিন সকাল ৯ টা থেকেই একেবারে সাজো সাজো রবে একে একে সব কবি আসতে শুরু করেন আগরতলা প্রেস ক্লাবে এবং সারে নয়টার মধ্যে প্রায় সবাই আসলেও যথাসময়ের কিছু পরে আমাদের চা-টিফিন আসায় অনুষ্ঠান শুরু করতে প্রায় ২০ মিনিট দেরী হয় । শুরুতেই আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশের মাননীয় সহ-হাই কমিশনার আরিফ মহম্মদ, বিশেষ সম্মানিত অতিথি প্রাক্তন আই.এ.এস অফিসার তথা আই.এল.এস হাসপাতালের মাননীয় এডভাইজার শ্রী কিশোর আম্বুলী এবং উদ্ভোধক ডঃ দেবব্রত দেবরায়, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক যথাসময়ে উপস্থিত থাকলেও মঞ্চে আরোও দুজন উপস্থিত থাকার কথা ছিল ।কবি শ্রী দিলীপ চ্যাটার্জী এবং আই.এল.এস হাসপাতালের মাননীয় সি.ই.ও শ্রী ভার্বি চ্যাটার্জী আত্মীয়া বিয়োগ জনিত কারনে উপস্থিত থাকতে পারেন নি । শুরুতেই সভাপতি মণ্ডলী সহ অতিথিগনের আসন গ্রহণ ও বরণ পর্ব সহ উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানটি আমি নিজে সঞ্চালনা ও পরিচালনা করি অতঃপর সঞ্চালনার দায়িত্ব কবি শ্রী সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ন্যাস্ত করে আহ্বায়ক হিসেবে স্বাগত ভাষণ রাখি এবং সেই সঙ্গে আমাদের অনুষ্ঠান সূচী অনুযায়ী অনুষ্ঠান মালা খুব সুন্দর ভাবেই এগোতে থাকে । অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথমে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ও পরে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিঁখুত পরিবেশন পর্বটি খুবই আকর্ষনীয় ছিল । যদিও কিছু কিছু ছন্দপতন হয়নি তা নয়, কেননা আসরের অন্যান্য সমস্ত কবিগন ১২ই আগস্ট বেশ রাতের দিকে আসায় অনুষ্ঠান পরিচালনার প্রস্তুতি পর্ব সহ কোন আলোচনা করাই সম্ভব হয়ে উঠেনি ফলে মসৃণ পরিচালনায় কিছু কিছু ব্যাঘাত আসলেও সৌমেন’দার দক্ষ সঞ্চালনায় সেটা প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারেনি ।এছাড়াও কিছু ভুল ত্রুটি তাৎক্ষণিক ভাবে আমাদের এডমিনদের সহযোগিতায় আলোচনা সাপেক্ষে সুসম্পন্ন করা গেছে । সর্বোপরি আমাদের অনুষ্ঠান অর্থাৎ সারাদিন ব্যাপী অতিথিবর্গের আলোচনা, কবিদের কবিতা পাঠ ও সম্মাননা প্রদান ইত্যাদি ছিল একেবারে সুশৃঙ্খল এবং সুসজ্জিত ।যদিও দুপুরের খাবার পরিবেশন বিষয়ে সামান্য অনুযোগ দেখা গেছে তবে বেশীরভাগ উপস্থিত কবিই দেশ অথবা বিদেশের দূরদূরান্ত থেকে আগত বিধায় নিয়মানুবর্তিতার ক্ষেত্রে কিছু শৈথিল্য ছিল বৈকী ।ত্রিপুরা রাজ্যের বেশ কিছু বিশিষ্ট কবি সহ প্রকাশকের উপস্থিতি ও শেষ পর্য্ন্ত থাকাটা ছিল আমাদের সম্মিলনের অলঙ্কার । এছাড়াও নবপ্রান্তিক অনাথ আশ্রমের কর্মকর্তা সহ সকল কর্মী আমাদের এই সম্মিলনে দারুন ভাবে অংশগ্রহন করেন । সবশেষে গ্রুপছবি উঠানোর মধ্যে দিয়ে যথাসময়ে আমাদের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ছিল শৃংখলাপরায়নের আরেক সুন্দর দৃষ্টান্ত ।শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ , এমনি রেশ নিয়েই কবিগন আমাদের অনুষ্ঠান স্থলের আশেপাশেই ত্রিপুরার অত্যন্ত দর্শনীয় কিছু স্থান গ্রুপ করে করে পরিদর্শন করেন এবং ঠিক আটটায় আগরতলা শহরের ঐতিহ্যমণ্ডিত এক রেষ্টুরেন্টে গানে গানে জম্পেশ আড্ডায় ডিনার সম্পন্ন করেন ।
আমাদের অনুষ্ঠান মালা যেহেতু ২ দিনের জন্য সাজানো তাই পরের দিনের অনুষ্ঠান না হয় আরেক পর্বের জন্য তোলা রইল ।