১৮ তারিখ রবিবার হলেও ব্যস্ত নগরীর বুকে কোন অলসতা খোঁজে পেলাম না । সকাল থেকে যে সময়টার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, অবশেষে সেই সঠিক সময়েই সূর্য সেন মঞ্চে পৌছে গেলাম । গিয়ে তো দেখছি সবাই ব্যস্ত । অভিজিৎ দা প্রোজেক্টার নিয়ে ব্যস্ত । রুমা দি উদ্ভোধনের প্রদীপ নিয়ে ব্যস্ত । ঊমা দি প্রধান অতিথিকে কিভাবে আপ্যায়ন করবেন, কখন পুষ্প স্তবক দেবেন, কখন উত্তরীয় পড়াবেন, কিভাবে মোমেন্টো দেবেন ইত্যাদি নিয়ে রূমা দি'র শ্রদ্ধেয় পিতা শ্রীযুক্ত হীরেন ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন । নীলোৎপল দা কখন গান পরিবেশন করবেন এবং সঙ্গী মিউজিশিয়ানের সঙ্গে শেষ আলাপটা সেরে নিচ্ছেন । সুখেন্দু মাইতি এক কোনে বসে সবার ব্যস্ততাকে উপভোগ করছেন । ইতিমধ্যে মাইকে হ্যালো - মাইক টেষ্টিং সুর ভেসে আসল । প্রোজেক্টারের পর্দ্দায় ভেসে উঠল ,"কবি সম্মেলন - ২০১৬ ইং" এ আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম । এতসব কিছুর মধ্যে অভিজিৎ দার সকলের স্নেহ ধন্যা কন্যা (নামটা মনে আসছে না) কিন্তু ক্যামেরা হাতে ক্লিক এর পর ক্লিক নিয়েই যাচ্ছেন । দেখতে দেখতে হলঘরে যখন প্রায় ৫০/৬০ জন কবি ও কবিতা প্রেমী উপস্থিত ঠিক তখনি জানতে পারলাম আমাদের আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রীমতি কৃষ্ণা বসু পৌছে গেছেন । সকলের ব্যস্ততা যখন আরো চরমে তখনই হলে প্রবেশ করলেন অতিথি । সঙ্গে রয়েছেন বিশিষ্ট কবি শ্রী বৈজয়ন্ত রাহা ও শ্রী শমীক জয় সেনগুপ্ত । অতঃপর একে একে শুরু হল অনুষ্ঠান সূচীর ক্রিয়াকর্ম । অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রীমতি কৃষ্ণা বসু কতৃক প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্যে দিয়ে যে অনুষ্ঠানের সূচনা হল, ক্রমান্বয়ে আয়োজকের স্বাগত ভাষন, কবিতা পাঠ, প্রধান বক্তার বক্তৃতা, শুভেচ্ছা পত্র পাঠ, বিশিষ্ট কবিদের কবিতা পাঠ ও নবাগতদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন , নির্দিষ্ট সময় অন্তরে গান সহ সবশেষে স্ংশ্লিষ্ট সকল শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ সীমায় যে কখন পৌছে গেলাম টেরই পেলাম না । বিকাশ দাস কবিতা পাঠ করতে গিয়েও ঊনার প্রান চঞ্চল উপস্থাপনায় সকলকে কি সুন্দর ভাবে আকৃষ্ট করলেন তা শেখার মতো বটে । তপন দাস স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করলেন তবে উনার অভিনয় ক্ষমতা নিয়েও কথা হল বটে । রিংকু রায় নিজের কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি সুখেন্দু মাইতি'র লেখাও আমাদের আবৃত্তি করে শোনালেন । সৌমেন দা তো শেষের দিকে একেবারে মুখস্থ বিশ্বকবির কবিতা আবৃত্তির দক্ষতায় সকলকে মুগ্ধ করে দিলেন । শ্রীযুক্ত সৌমেন, অনন্ত গোস্বামী প্রোগ্রামে থাকবেন না, থাকবেন না করেও শেষ পর্যন্ত কবিতা পাঠে অংশ না নিয়ে পারেন নি , শুধুমাত্র ঊনাদের কবিতা আগে থেকে দেয়া ছিলা না বলে আবৃত্তির সময়ে প্রোজেক্টারে ডিসপ্লে করা সম্ভব হয়নি । অরুপ গোস্বামী এখানেও তার আঞ্চলিক ভাষার লেখা পরে সব্বাইকে আরেকবার বিমোহিত করলেন । প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, এই অনুষ্ঠানেই অরুপ দা কিন্তু উনার "আঘন্যা ধানের ভাত" স্ংকলের কপি আমাকে স্নেহভরে দিলেন । এছাড়াও কবি সীমা সান্যাল, শেলী নন্দী , দিলীপ চট্টোপাধ্যায়, বিজয় দাস সহ আরো অনেক কবি যারা বাংলা কবিতা ডট কম - এর সদস্য নয় ; কবিতা পাঠ করলেন । মধ্যাংশে আয়োজকদের বদান্যতায় হয়ে গেল এক প্রকার ভূড়িভোজ । আবার চা বিরতির সময়ে আমরা শ্রদ্ধেয়া কৃষ্ণা দি'র আশির্বাদ নিতেও ভুলিনি বটে । এবারে আমার কবিতা পাঠ প্রসঙ্গেও দু-চার কথা বলি । অনেক অনুষ্ঠানেই কবিতা পাঠ করে থাকি কিন্তু কৃষ্ণা বসু'র মত ব্যক্ত্বিত্বের সামনে কবিতা পাঠ - আলাদা কৃতিত্ব থাকে , পাঠ করলাম দুটি কবিতা ১) দেবতা তুমি ২) স্পন্দনে জাগে । কবিতা পাঠ করতে করতে অতিথিবৃন্দের মুখের অভিব্যক্তি লক্ষ্য করছিলাম, মনযোগ কি রকম হয় দেখছিলাম বটে । হাত তালি সহ উপরোক্ত দুটি বিষয়ের ক্ষেত্রে আমি ধন্য বলতেই পারি । এবারে একে একে ঘরে ফেরার পালা । একেক জনের সঙ্গে করমর্দন করতে করতে চোখের জলকে লজ্বায় সম্বরন করছিলাম । এত ভালো লাগা, এত আপনত্ব ! সব কিছুকে স্মৃতি করে আগামীর প্রত্যাশায় বুক বেঁধে ঘরের দিকে রওয়ানা দিলাম । বাতানুকুল গাড়িতে বসে বার বার কানে ভেসে আসছিল প্রধান অতিথির সে মূল্যবান কথাগুলো - এ রকম সম্মেলনকে আমি "সারস্বত সম্মেলন" বলি.........কবিতা হল সমস্ত শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ শিল্প .........কে কেমন লিখে সেটা বড় কথা নয়.........যাঁরা এই শিল্পকে আপন করে নিতে চায় আমি তাদের সকলকে এক সূতোয় যেন বাঁধা থাকে সেটাই চাই.........সব শেষে নিজের পচ্ছন্দের কবিতা গুলির উচ্চারন কানের মধ্যে বার বার যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ।
এভাবেই শেষ করে এলাম এবার কবি সম্মেলন। আমি গল্পকার নই, তাই হয়ত সবকথা গুচ্ছিয়ে বলতে পারলাম না, একান্তই নিজের মনের অনুভূতিটুকু আমার মতো করে বর্ণনা করলাম । স কলকে আবারো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই ।