আসল কথায় আসার আগে একটা ছোট্ট গল্প বলে নেই । আমরা যখন ৭/৮ জন মিলে ঢাকা সম্মিলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এব্ং সেখানে যখন কুষ্টিয়া ভ্রমণের কথাটিও আসছিল তখন আমার এক বয়ষ্ক অফিস কলিগ হাজী মোঃ আব্দুল সেলিম আমাদের সফর সঙ্গী হওয়ার জন্য নাছোড়বান্দা অবস্থা । ঠিক এমন সময়ে, বাংলাদেশ থেকে মিলি আপা মানে আমাদের প্রানের প্রিয় কবি আফ্রিনা নাজনিন মিলি দিদি আমাকে কুষ্টিয়া ভ্রমণের বিষয়ে একটা বিশেষ ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা জানায় ফলে আমরা যখন আবার আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় কুষ্টিয়া ভ্রমণ বাতিলের কথা বলি তৎক্ষণাৎ আব্দুল সেলিম ভাই তার সফর বাতিল ঘোষণা করেন, যদিও আগে থেকেই আবার আমাদের কুষ্টিয়া ভ্রমণের কথা চূড়ান্ত হয় কিন্তু উনাকে আর সঙ্গে নিয়ে যেতে পারলাম না কিন্তু আজকের এই আলোচনার মূল বিষয় "কুষ্টিয়া ভ্রমণ" দেখে উনার আফসোস আজ অবধি আমাদের দুঃখ দেয়, উনার আগ্রহ আমাকে আজও লেখার আগে আগাদা দেয় বলে বিষয়টা লিখেই দিলাম । এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, এবারের সম্মিলনে ভারত থেকে অংশগ্রহণকারী অতিথিবৃন্দের হাতে তোলে দেওয়া শুভেচ্ছা স্মারকটি ছিলে দেখার মতো, যা পেয়ে সকলেই যারপরনাই খুশী ( আব্দুল সেলিম ভাইয়ের স্মারকও আমরা নিয়ে এসেছিলাম) ।
যাই হোক, এবারে আসা যাক আসল কথায় । প্রথমেই বলে রাখি আমি গল্পকার বা প্রবন্ধকার নই ; তাই স্মৃতিকথা বা সুখের কথা অতটা গোছিয়ে বলতে পারি না উপরন্তু অনেকেই জানেন সদ্য হার্ট এ্যটাকের ধাক্কা সামলে আসলাম । তবুও জমে থাকা আবেগ অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার একটা প্রচেষ্টা করি । আজ ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ বাংলা কবিতা আন্তর্জাতিক কবি সম্মিলন - ২০২৪ এর ২য় দিন । যদিও অফিশিয়ালি সম্মিলন একদিনেই ছিল কিন্তু কয়েকজন বিশেষ উদ্যোক্তা মিলে আমাদের মানে ভারতের কবি ও অতিথিবৃন্দকে নিয়ে ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ায় একটা সুন্দর পরিকল্পিত আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করেন । পদ্মাসেতু, লালন শাহের বাড়ি, রবীন্দ্র কুঠি ইত্যাদি ইত্যাদি নানান বিষয়ে এক অভূতপূর্ব রোমাঞ্চ নিয়ে এই ভ্রমণের অপেক্ষায় ছিলাম আমরা । সকালবেলা হোটেলে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরীই হল, তবে আরো দেরী হতো যদি ষাটোর্ধ জোয়ান মানুষ আমাদের প্রিয় কবি কবীর হুমায়ূন দাদা এসে ডেকে না তুলতেন । দাদার আপ্যায়নের বিশেষ নাস্তার তাগিদে তড়িঘড়ি দাদার সঙ্গে বেড়োতে হল ।নাস্তা-গল্প-আড্ডা শেষে সফরসূচী অনুযায়ী আমাদের আরেকজন অতি প্রিয় কবি নাজমূল হাসান ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে মিলি আপার আট তলার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তো আমাদের অবাক বিস্ময়ে দেখা আর শেষ হয় না । কত বড় মন হলে, কত বড় উদার মানসিকতা আর প্রকৃতির প্রতি টান থাকা হৃদয়ের মানুষ হলে পরে ঢাকা মহানগরের (পল্লবী) প্রাণকেন্দ্রে আট তলার উপড়ে একটা ফ্ল্যাটের বেলকনিতে এতো সুন্দর একটা ফুল ও ফলের বাগান করা যায় ! কি নেই তাতে ! লতা, মাচান থেকে একেবারে কান্ড বিশিষ্ট নানান ফল ও ফুলের বাহার দেখে শুধু আপ্লুত হতে হয় । বিস্ময় কাটিয়ে ঘড়ে ঢোকে তো চক্ষু চড়কগাছ ! এত সুন্দর বাড়ি ! গোছানো, পরিপাটি করা যেন স্বপ্নপুরী । কবি ও কবিতার নানান মিশেলে যখন আমাদের বিষ্ময় কাটবে কাটবে ভাব তখনই আমাদের সাথে যোগ দিলেন প্রিয় কবি জাহিদ হাসান রঞ্জু দাদা, পেছন পেছন আরো বেশ কয়েক জন । কবি হুমায়ূন কবীর, কবি মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন এবং সবথেকে বড় পাওনা পেয়ে গেলাম যখন দেখলাম সেদিনকার মিলি আপার বাড়িতে নাস্তা ও দুপুরের খাবারের আনুষ্ঠানে একেবারে আন্তরিক ভাবে উপস্থিত আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয়া কবি সেলিনা খাতুন ও শ্রদ্ধেয় কবি শেখ মোঃ খবির উদ্দিন মহাশয় ।সবাই মিলে হৈ হৈ রৈ রৈ করে নাস্তা করতে বসলাম বটে কিন্তু নাস্তার এলহি ব্যাপার দেখে ঘাবড়ে গেলাম আমি । একেবারে আমার আবদারের ভাপা পিঠা থেকে শুরু করে পরোটা, চিকেন কি নেই ! তারপরেই আবার মিলিদিদির বাগানে কবিদের আড্ডা-গানে বেলা গড়াতে লাগলো । এই করতে করতে দুপুরের খাবারের ডাক পড়লো ঠিক কিন্তু পেটের টান নেই নেই করে একেবারে বিকেল চারটা । খেতে বসে আবার সেই কান্ড ! আর সেখানে যদি রঞ্জু ভাই পরিবেশক হয় তবেই বুজুন আমাদের কি অবস্থা ! ডাবল পিস ইলিশ আর মাট্টাচালের (হাইট্টা চাল বা লাল চাল) ফ্লেবার নিয়ে নিয়ে আমরা যখন পর্যুদস্ত তখন আবার বইমেলা থেকে বার বার কবি বুলবুল আহম্মেদ ও কবি অবিরুদ্ধ মাহম্মুদ এর ফোন থেকে ডাক আসছিল, সেই তিনটে থেকে আমাদের জন্য বসে আছেন শ্রদ্ধেয় কবি মোঃ সিরাজুল হক ভূঁইয়া সঙ্গে রয়েছেন আমাদের মাননীয় এডমিন – ৩ এছাড়াও আরো অনেকে । কিন্তু হলে কি হবে ! আমাদের লাঞ্চ সু-সম্পন্ন করতে গেলে যে ডেজার্ট দই মিষ্টি বাকী থাকে তাই মিলিদির সংগৃহীত সেরা দইয়ের সাথে আবারো একদফা কবিতা পাঠের আনন্দ আবেগ অনুভূতি নিয়ে দৌড় দিলাম মেট্রোরেলে বইমেলার দিকে ।
-----চলবে ।