তখনও পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি।
বাবা অস্বীকার করে বাবা হতে।
মা গর্ভপাত করান লোকলজ্জার ভয়ে,
নয়তো বা তনুর শ্রীহীন হবে বলে।

জন্মের প্রাক্কালে দেখা হয়েছে
লিঙ্গ ভেদ করে, আমি পুত্র না কন্যা।
যদি আমি মেয়ে হই, তাহলে
আমায় হত্যা করা হয়েছে মায়ের গর্ভে।

জন্মের পরও সমস্যার অন্ত নাই
আমাকে নিয়ে। আমার পরিচয়
গোপন রাখতে ফেলে দেয়া হয়েছে
গাছের তোলায়, মন্দিরের অঙ্গনে নয়তো
আবর্জনা স্তূপে হাসপাতালের প্রাঙ্গণে।

যদি বেঁচে থাকি, হয়তো আমায়
তুলে নিয়ে গেছে অনাথ আশ্রম।
নতুবা জীবন কেটেছে আমার
পাগলিনী-ভিখারিনী মায়েদের কাছে।

নিজেকে নিজের জানার আগে
ভিক্ষার থালা উঠে এসেছে হাতে।
খিদের যন্ত্রণায় আমি ভুলে যাই,
যে খাওয়ার আমি মুখে তুলছি
সেই খাওয়ার গরল না অমৃত।

জিহ্বার লালা শুকিয়ে যায়
ঘিট মারতে মারতে। চোখ গিয়ে
যখন পৌঁছায় ধনীদের বাড়িতে,
কুকুরের খাবারের সৌখিন পাত্রে।

খাবারের স্বাদ হলেও সাধ্য ছিল না।
চড় লাথি খেয়ে ফিরে আসতে হয়
দারোয়ানের হাতে, গেটের সামনে থেকে।
শুনতে হয় বেজন্মা, চোর, ইতর
অকথ্য গালিগালাজ। শুনতে হয়
দেশি কুকুরের ইংরেজি নামটাও।

আমার কোন নাম ছিল না।
যাদের খিদের যন্ত্রণা নিয়ে মরতে হয়,
তাদের আবার নাম হয় নাকি!
ভাবতে থাকি ওরা খেতে পায়
আমি কেনো পাই না।

ওর বাবাকে, ওর মাকে
কেউ তো জানতে চায়নি ওর কাছে।
যদি আমি কুকুর হয়ে জন্মাতাম।
বেজন্মা বলে কেউ গালি দিত না নিশ্চয়ই।
দু'মুঠো খাবারও পেতাম।


                          সমাপ্ত