বয়স তো কুড়ি পার করেছি আরো ক’মাস আগে,
প্রাইমারি পড়েছি,
হাইস্কুল পড়েছি,
কলেজেও ক’ক্লাস পড়েছি,
সব মিলিয়ে চৌদ্দ ক্লাস।
আমি মায়ের সাথে প্রাইমারি গেছি,
বাই সাইকেল চালিয়ে হাইস্কুলে গেছি,
বন্ধুদের সঙ্গে হৈ চৈ করে কলেজেও গেছি,
জীবনের কুড়ি বছর পার হলো, ধীরে স্থিরে,
তবে বিয়ের বেলায় হঠাৎ কেনো?

সেদিন কলেজ থেকে এলাম,
বাসায় তখন অন্যরকম ধুমধাম,
রাতে বাসায় মেহমান আসবে, মেহমান!
মেহমান তো আগেও এসেছে কিন্তু...
মাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা বাসায় কী হচ্ছে এসব?
মা মুচকি হেসে বলল, ’’আজ তোকে দেখতে আসবে’’,
’’আমাকে দেখতে আসবে?
কেনো মা? আমাকে দেখতে আসবে কেনো?’’
মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
’’পাগলি, বিয়ের বয়স হলে মেয়েদের দেখতে আসে তাও বুঝিস না’’
’’বুঝি না মা, আমি বুঝতেও চাই না,
তোমরা আমায় বিয়ে দিতে চাও?
আমি বিয়ে করবো না মা, আমায় তোমরা বিয়ে দিও না,
আমি একদিন অনেক বড় হবো,
বড় অফিসার হবো, ডি.সি, এস.পি হবো’’।
মা চলে গেলো কড়া শাসন করে, ’’চুপ, কোনো কথা বলবি না,
বাবা-মা যা করে সন্তানের ভালোর জন্যই করে’’।
আমার ভালোর জন্য সব আয়োজন হলো শুরু,
পাত্র পক্ষ আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো,
আমার চোখ, কান, নাক, মুখ
উফফ, আমি যেনো কোরবানির গরু।
কাজি সাহেব এলো, একখান সবুজ খাতা নিয়ে,
আমি তখন সংজ্ঞাহীন এক জড়বস',
কী বলেছি মনে নেই, শুধু মনে আছে সবুজ পাতার সই।

গভীর রাত,
একটা শক্ত শরীর আমায় অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরলো,
একটা শরীর আমায় দোলিত, মোথিত করলো,
আমি জোরে চিৎকার করতে চাইলাম,
সেই শক্ত হাত আমার মুখ চেপে,
কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
চুপ, চুপ, আমি তোমার স্বামী
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
স্বামীর ভালোবাসায় সিক্ত হলাম আমি,
রক্তাক্ত হলাম,
স্বামীর ভালোবাসায় আমি তার সন্তানের মা হলাম
এক অজানা,
অচেনা,
ভালোবাসাহীন ঘরে,
কেটে গেলো সারাজীবন কোনোদিন
অথচ হৃদয় থেকে বলতেই পারলাম না, ’’ভালোবাসি’’।
সমাপ্ত।