পুরাতন কাগজের স্তুপ থেকে বেরিয়ে এলো একখানা সাদাকালো ছবি
সদ্য গজানো হালকা গোঁফ,
লিকলিকে চেহারা,
মায়াবী চোখ,
পাঞ্জাবি পরা এক কিশোরের ছবি,
ছবি তো নয়,
রক্ত-মাংসের শরীরে লুকিয়ে থাকা গভীর ক্ষত,
হৃদয় রক্তাক্ত করে হঠাৎ জ্বলে উঠল দগ দগ করে।
কিশোরের পাশে বধূবেশে এক কিশোরী দাঁড়িয়ে,
লাজুক লাজুক চোখ,
নাকেতে নোলক,
কানে দুল,
খোঁপায় ফুল।
ছবির স্মৃতি হৃদয়ে উঠল ভেসে,
অর্ধশত বছর আগে এক বৈশাখে তোলা ছবি,
সেদিনের কিশোর ষাটোর্ধ্ব আজ,
হঠাৎ উঠল হেসে,
না, আনন্দের হাসি না,
কষ্ট-আনন্দ মিশানো হৃদয় চিরে বেরিয়ে এলো এক বেদনাময় স্মৃতি।
কিশোর বয়সে তরুণ হলো,
তরুণী হলো কিশোরী,
উত্তাল ঢেউ হৃদয়ে দিল দোলা,
ছন্দময় হলো একসাথে পথচলা।
স্বপ্নে বিভোর হলো তরুণ-তরুণী,
ঘর বাঁধার স্বপ্ন,
চিরদিন একসাথে থাকার স্বপ্ন!
আভিজাত্যের উঁচু দেয়াল,
ভেঙে দিল স্বপ্নের ঘোর।
কোথায় গেলো তরুণের স্বপ্ন,
কোথায় গেলো তরুণীর ঘর,
পরকে আপন মেনে নিতে হলো,
আপন হলো পর।
পরের সঙ্গে রইল দেহ,
অতৃপ্ত রইল মন,
কিশোরের চুল পেকেছে আজ,
কিশোরীও হয়েছে বুড়ি,
হৃদয়ের রং এখনো রঙিন,
স্মৃতিগুলো যেন এখনো অমলিন।
অর্ধশত বছর আগের ছবি আজ,
নিয়ে গেল বছর পঞ্চাশ আগে,
কৈশোর তারুণ্যের শত স্মৃতি আজ
হৃদয়ে উঠল জেগে।
হায় কিশোরী!
হায় তরুণী!
এখন রইছ কোথা?
আমি যে তোমার স্মৃতি,
তোমার ছবি নিয়ে,
জেগে রয়েছি হেথা।
হঠাৎ কানের কাছে ভেসে এলো কিশোরীর কণ্ঠস্বর,
’’এই তো আমি, আমিও যে এখনো তোমার জন্যই আছি জেগে।’’
ঘুম ভেঙ্গে গেল, বৃদ্ধ দেখল একা শূন্য বিছানায়,
এই গোধূলি বেলায়
কিশোর বেলা কি আর ফিরে পাওয়া যায়?
সমাপ্ত।