এক অকাল বর্ষণ সিক্ত, আশা জাগানিয়া মাঘী প্রভাতে,
সেই চিরচেনা একাকী অলস গাত্রোত্থান,
পাশ ফিরে নিজের নিষ্ঠুর একাকীত্বে শীতল আলিঙ্গন,
লক্ষ্যচ্যুত ও কক্ষচ্যুত হবার সহস্রতম ভোর বিহানে,
নিজেকে আবিষ্কার করি এক অকাল বসন্তে।।
ব্যগ্রতার ক্ষণিক মোহে, একাকীত্বের পর্দা সরিয়ে তবু উঁকি মারি,
খুঁজে ফিরি কোনো আশ্চর্যতম চমককে। অলৌকিক কোনো কাকতালের আশে।
খুঁজি সেই সোনালী দিন,
খুঁজি আমার ঊনত্রিশ কিংবা ত্রিশটি সুবর্ণ বৎসরে।
মন্দার, অশোকের বনে, কিংবা মেঘ শিরিষের স্মৃতিময় জঠরে।
পরক্ষণে মনে পড়ে, এক প্রাগৈতিহাসিক গুহাবাদুড়ের মতো,
জনম জনম আমি অচ্ছুৎ হয়ে পড়ে আছি, এই ততোধিক অস্পৃশ্য,
মেকি নগরের বহুমূল্য অসুখী চাকচিক্যে।
জীবন আমার অষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা, জীবন বাস্তবতার অদ্ভুত জ্যামিতিক সড়কে।
মনে পড়ে, কক্ষচ্যুত এক একদা নক্ষত্র আমি,
আমার এই শব্দ শূন্য নিজস্ব জগতে শীত ছাড়া কোনো ঋতু নেই।
এখানে বর্ষা নেই। এখানে সাদা জামদানী শরত নেই।
মোমের মৃদু আলো জ্বালা জোনাকিরা অথবা শরত নেই।
নেই নেই, এখানে বসন্ত নেই। ছিল না কোনো কালে।
এখানে রঙের বদল নেই। এখানে শুধু দিনের বদল মেলে।
রাত শেষে দিন। দিন শেষে রাত মেলে। সাদা কালো গোলমেলে।
আমার কাছে তার হিসেব নেই। এখানে দিন পঞ্জি নেই।
আমার এই পরিত্যক্ত জীবনে কেবল নেই, নেই, নেই।
বহু বহু কালের পরিক্রমায়, আমি আটকে আছি এক স্থির সময়ে।
আমি পিছু ফেলে এসেছি বহু বসন্তকে।
আমি কবে ভুলে গেছি বাসন্তীর আগমনিকে।
ভুলেছি, সেই কবেকার কোন বিস্মৃত জীবনে,
সেই কৃষ্ণচূড়া, পলাশের আদিখ্যেতায় ভাসা আম্র মঞ্জরীকে।
আমি প্রাগৈতিহাসিক গুহা বাদুড়,
ক্যালেন্ডারের তেরো ফেব্রুয়ারিতে লটকে রেখেছি ফাল্গুনকে।
ঠিক যেমন রেখেছি সযতনে, অসহায় দৃষ্টি পটে,
ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাওয়া আমার তিপ্পান্নটি বসন্তকে।
এখানে এখন জীবন কেবলই রুটীনে বাঁধা, তাল লয়হীন ছন্দে,
মরণের আগ তক বেঁচে থাকার আরোপিত আনন্দে।
মনুষ্য রূপে জনমের অনিচ্ছুক অপরাধে, জীবনকে তবু বয়ে চলি নিরবে।
এই অদ্ভুত বর্ষণ, এই ঘুম ভাঙা সকাল, কোকিলের অকারণ ডাক,
নতুন দ্যোতনার, নতুন যোজনার বার্তা আনে না কভু,
আমার এ অকাল বসন্তে।