কম্পিত হাতে হত্যাকান্ডটি মাত্রই সম্পন্ন করলাম,
সুচারু শিল্পীর মতো
জিঘাংসাবৃত্তির নিখুত অলংকরন
জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষনের আবছা ব্যাবধানের যবনিকাপাত।
দীর্ঘ পরিকল্পিত একটি পরিশিলিত অপরাধ
নিজের হাতে, ভীষন ঠান্ডা মাথায়।
খুব আয়াসসাধ্য বা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম একে বলা যাবে না
অস্তিত্বের নিভু নিভু প্রানপ্রদীপটা
ফুঁতকারে নিভিয়ে
এক লহমায় প্রাণবায়ু ত্যাগ করল দেহ পিঞ্জর
অথচ, একটা সৃষ্টি কত সময় সাপেক্ষ
সুদীর্ঘ ন’টি মাস
বিন্দু বিন্দু জীবনিশক্তি সঞ্চয় করে
মাতৃজঠর ত্যাগ করে একটি জীবন্ত বিষ্ময়।

প্রথমে সে সামান্য অবাক হয়েছিল
চিরচেনা নিজেকে নিজের
হন্তারকের ওসুর ভূমিকায় দেখে
সে হয়তো ভুরু কুঞ্চিত করেছিল তাচ্ছিল্য নিয়ে
কিছুটা অবিশ্বাস কিছুটা বিষ্ময়
ক্ষণিকের তরে তাকে হয়তো একটু অপ্রস্তুতও করে থাকবে।
তাতে খুনির কিছুমাত্র করুণা কিংবা
আত্নগ্লানি উঁকি মারেনি মনের কোণে।
এতো করারই ছিল।
পরিপাটি একটি সুদীর্ঘ পরিকল্পনা ছক কেঁটে
শুধু অপেক্ষায় ছিল সহসা মঞ্চায়নের।


তবে এটি নিছক কোনো আত্মহনন নয়,
মামুলি একটি হত্যাকান্ড হলে
কবেই চুকে যেত হিসেবের নিকেশ।
কোনো ক্ষনিকের উত্তেজনার তীব্র প্রকাশ নয়,
নয় সাধারন জিঘাংসা নির্বান
নিজেকে নিজে চিরতরে সরিয়ে দিতে
অনেক ভাবতে হয়েছে। নিতে হয়েছে অনেক প্রস্তুতি
কষতে হয়েছে অনেক ছক। দিনে রাতে অবেলায়।
নিদ্রায়, অনিদ্রায়।
নিজের সঙ্গে নিজের অনেক বোঝাপড়া, আত্নজিজ্ঞাসা
যুক্তি, পাল্টা যুক্তি সাজিয়েছি মস্তিষ্কের ধুসর গহবরে। অতঃপর…….

আসলে তাকে আর বাঁচিয়ে রাখা যেতও না।
যে নিজেই নিজের মধ্যে মরে আছে
তাকে বাঁচায় সাধ্যি কার।
একটু একটু করে নিজেকে সে এমনিতেই ফুরিয়ে আনছিল।
আপোষের তীব্র আর্সেনিক বিষ,
হতাশার গাঢ় অ্যালকোহল পানে
অশুদ্ধ কলুষময় করে রেখেছিল তার আত্মাকে
বহু আগে হতেই।

অথচ এত কাছে থেকেও
কাউকে জানতেও দেয়নি।
বুঝতে দেয়নি অন্তরাত্মার সুপ্ত কান্না।
শুধু সঙ্গোপনে শুকিয়ে এনেছে নিজের ইচ্ছে নদীর
সবটুকু স্রোতধারা।
ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি, চলে যাবার।
কি ভয়ানক বিষাদে, আত্নগ্লানিতে
একটা ভয়ানক বিষ্ফোরনের অপেক্ষায়
ছিল অপেক্ষমান। শেষ হবার, শেষ দেখে নেবার।

শেষ মুহুর্তে সে অবশ্য সামান্য হলেও
কেমন যেন একটু মায়ায় পড়ে
কিংবা মৃত্যুর হিমশীতল মুখ দর্শনে
ভীতচকিত, একটিবার ভেবেওছিল নিবৃত্ত হবার
যদি শেষ একটি বার?........
তবে সেটা খুবই ক্ষণকালের তরে
একবার উঁকি মেরে শীতের কুয়াশাভেদী সূর্যের মতো
আবার মিলায় দীর্ঘশ্বাসের অমানিশার আঁধারে।
নাহ, আর নয়, বেঁচে থাকা নয়, বাঁচিয়ে রাখাও নয়
কোনো কিছুর তরেই অপেক্ষায় থাকা নয়।
হলকুমের টুটি চেপে আপনারে আপনি হনন করে
মানবের মানব জনমে
সুতীব্র ঘৃনা মাত্র সঙ্গী করে।