লোকালয় থেকে অনেক দূরের
নির্জন মরুতে,
সমতল ভূমি থেকে অনেক উঁচু এক পাহাড় চূড়ায়
প্রায়ই আসেন তিনি।
কখনো খালি হাতে,
আবার কখনো খাবার নিয়ে সাথে।
কখনো একদিন, কখনো তিনদিন
আবার কখনো একটানা বহুদিন
পড়ে থাকেন পাহাড় চূড়ার এক গুহায়।
সমাজের কোলাহল, পাখির কলতান
ক্ষমতার লড়াই, প্রতিশোধ স্পৃহা
কোনো কিছুই টানে না তাকে,
প্রেমময়ীর ভালোবাসা, পিতৃত্বের মায়া
কোনো কিছুই রুখতে পারে না
গৃহভ্যন্তরে এই লোকটিকে।
তিনি ছুটে আসেন সবকিছু ছেড়ে
নির্জন মরুর এই দূর পাহাড়ে।
এই পাহাড় চূড়ার অভ্যন্তরে এক ছোট্ট গুহায়
তিনি ডেকে যান তার মতো করে,
রাত কি দিন? সকাল কি সন্ধ্যায়?
ডেকে যান আল্লাহকে লুটিয়ে পড়ে সিজদায়
রাতের নীরবতায়, সীমাহীন নিস্তব্ধতায়
ডেকে বলেন- প্রভু হে! দিশা দাও মানবের
অন্ধকার থেকে আলোর পথে।
ওহে কাবার মালিক! বিশ্ব জগতের প্রভু!
রাহ দেখাও তোমার পথের
জুলুম-নির্যাতন আর পাপাচার থেকে
কুফরী শিরকের শৃঙ্খল থেকে
মুক্ত করো আমাদের।
তার কাকুতি মিনতি আর রোনাজারিতে
কেঁদে উঠে বাতাস, পাহাড়ী গুহাটি
মরুর নির্জনতাও টপটপ করে অশ্রুফেলে
তারাও আবদার জানায় আল্লাহর কাছে
এর দোয়া কবুলের।
একদিন যায়, তিনদিন যায়
এভাবে কেটে যায় বহুদিন।
তিনি পাহাড়ী গুহায় ধ্যানমগ্ন সময় কাটান
বিষম ব্যথায় দরদী মনে প্রভুকে ডেকে যান।
মাঝে মাঝে এমন হয়-
আহার ফুরিয়ে যায়
তবু গুহা ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করে না,
কখনো আবার প্রিয়তমা বৃদ্ধা খাদিজা
প্রিয়তম স্বামীর খোঁজে
ছুটে আসেন এই পাহাড় চূড়ায়।
এভাবে দিন যায়, রাত আসে
পুবের সূর্য পশ্চিমে ডুবে ফের
নতুন সূর্যের উদয় হতে থাকে প্রভাতে,
আর এই সাধকের বয়স
চল্লিশে এসে ঠেকে।
প্রতিদিনকার মতো ধ্যানমগ্ন সাধক
হঠাৎই সেখানে আগমন ঘটে এক আগন্তুকের
সে বলে উঠে- ইকরা!
সাধক ভয় পেয়ে যান, বলে উঠেন-
মা আনা কারী।
আগন্তুক বলে- পড়,
সাধক বলেন- আমি তো পড়তে জানি না।
আগন্তুক এগিয়ে এসে সাধককে কাছে টানে
নিজের পেশি বহুল বাহুর বেস্টনিতে
সব শক্তি দিয়ে সাধককে নিজ বুকের সাথে চেপে ধরে।
কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলে- পড়
সাধকের একই কথা
আমি তো পড়তে জানি না।
আগন্তুক আবার চেপে ধরে
এভাবে চলে তিনবার...
আগন্তুক তৃতীয়বার বলে- পড়
এবার সাধক বলেন- আমি কি পড়বো?
আগন্তুক বলে- পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।
ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খলাক,
খলাকাল ইনসানা মিন আলাক।