না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।
আজকের ১১ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান (হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!
কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
----------------------------------------------------------------------
বিসর্গব্রীহি
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে
শহরের সব রাত ঝরে পড়ছে কাঁচের গ্লাসে
বরফ ভেসে উঠছে সোনালী প্রলোভন
টুকরো টুকরো কাঁচ অন্তর্গত দুঃখ উঁচিয়ে-
সভ্যতার অস্থিতে মাতম তুলছে ক্লান্ত অবকাঠামো
ফিরে আসবনা আর
ফিরবোনা তোমার চোরা পথের শূণ্যতায়।
এক ঝাঁক পাখির কসম খেয়ে বলছি -
রঙিন গ্লাসের ঘুম জড়িয়ে এ শহর ঘুমালে শিশুর মুগ্ধতায় জলদস্যুর মুখোশ পরাবো,
রঙিন গ্লাসের ঘুম জড়িয়ে এ শহর ঘুমালে যৌবনের বাসী ফুলে অন্ধ কবিতা'র নড়াচড়া তরুণীর লজ্জায় পুড়িয়ে দেবো,
উসখুস বাতাস সময় পেলেই শ্রীহীন এক শহর অন্ধকার উপহার দিয়ে যায়
ব্যাগ ভর্তি করে, সময়টা যে দিনে দিনে অপ্রিয় হয়ে উঠেছে -
যখন তখন বড় বড় বিল্ডিং বগলদাবা করে আকাশের উচ্চতাকে স্পর্শ করি
এক ছায়া থেকে আরেক ছায়ায় সরে যাই,
মেঘ ডিঙিয়ে একটি মৌলিক গ্রহে মানবতাবাদী শহর স্স্থাপনের
ইচ্ছে অনেক দিনের।
কে জানি বলছে -
শহরে গুলি করছে এক দল রঙবাজ, বদলা নেবার
কোনো ইচ্ছে আপাতত নাই-
তাই রঙিন গ্লাসে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খাচ্ছি কোনো এক দিনের আলাপচারিতায়
আলখেল্লা পরিহিত দুঃস্বপ্নের হেমলক -
নীল্-রক্ত, মাছির ঔরসে ডুবিয়ে
ভূমধ্য সাগরের বালুকায় হাঁটতে হাঁটতে ফিরিঙ্গি মাছের
খলবল দেখতে যে খুব মন চায়।
এ শহরে আজ আমার সঙ্গী ভিন্ন কিছু প্রাণী - কোথাও না গেলে
ওরা আমায় নিয়ে যায় - ইটভাটা, হোটেল, নীল নদ ছাড়িয়ে ত্রিস্তানে -
এক দল ফেরারী সংখ্যালঘুর সম্পর্ক - লাল নীল্ দোলা - নারী'র অধিকার - ইতিহাস
হই-চৈ করতে করতে মরে যায়।
আজ শহর থেকে দূরে সরে গেলে টের পাই কন্ঠস্বরে মমতার রুদ্ধতা
-অদ্ভুত লাগে, নির্বাক আসবাব পত্রের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে
তখন পিকাসোকে দেখি -
টেপ রেকর্ডারে সুরে বাজে
পিকাসোর শিল্পকর্ম, টেবিলে টেবিলে না ফেরার গান লিখে
একটি পুস্তকে রেখে যায় - ব্রিফকেস ভর্তি নিষিদ্ধ জীবন।
ইচ্ছে করছে ভাঙ্গা গ্লাসের ধারালো টুকরো দিয়ে
এ শহরকে আবার হত্যা করি, সোডিয়াম আলো নিভিয়ে
ভিন গ্রহে জন্মের মতো ডুবে যাই
আজীবন না ফিরি।
----------------------------------------------------------------------
অ-শরীরী
- ঝন্টু মণ্ডল
নিজের শরীর তবু নিজের নয়
যে যখন চায় সঁপতে হয়।
চেনা নিঃশ্বাসে অচেনা বিষ
ভাগ্যিস,
অনুক্ষণ
সাদা শরীরে লাল-সবুজ ধর্ষণ!
একফোঁটা শরীর ধার যদি পেতাম
চৈত্র-সেলে কালবৈশাখী লুফতাম।
নোনাঘামে অতলের হদিস
ডাক দিস,
দলছুট
মানুষের ঘরে মান-হুঁশ লুঠ!
হবু-কঙ্কালে বাড়তি শুধুই চামড়া
মেদ মাংস কবেই গেছে,গণতন্ত্রে আমরা!
ছানি চোখে ফ্যালফ্যাল না-পাওয়া চাওয়া
ধাওয়া;
ভাগ্ভাগ_
ভদ্র অঙ্গে ফাঁস-কালো দাগ!
বাকিটুকু কী হবে,শুষেই নাও
বিনিময়ে একটুকরো শ্মশান দাও।
নাক কাটা স্বপ্নেরা থেকে যাক
তাক-তাক;
হৈ-চৈ
মানুষ---আমার আত্মাটা কই??
----------------------------------------------------------------------
দোষ দিয়ো না
- অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
করাঘাত কোরো না বন্ধ দরজায়
কঠিন আলস্যে আমি যদি না জাগি এইবেলা
দোষ দিয়ো না, প্রিয়তমা পাঞ্চালী।
যদি না জাগি
মনে কোরো
আমাদের নিয়তি বড়ো নিষ্ঠুর
অসীম অভিমানে যে দ্বিধাবিভক্ত হয় বেশি।
অথচ এই বাউণ্ডুলে সময়ে
আমার কোনো নালিশ ছিল না কারো কাছে
আমার কোনো উৎসব ছিল না রসবতী, পাঞ্চালী --
কাকতাড়ুয়ার বিশ্রী হাসি দেখতে দেখতে
যদি অকাতর প্রেমে আহ্লাদিত না হই কখনো
প্রিয়তমা, দোষ দিয়ো না।
গতকাল রাতে আমি আগুনে পুড়িয়েছি
নীল মখমলের বিছানা, বাৎসায়ন, বিদ্যাসুন্দর --
দগ্ধ করেছি কামার্ত শরীর।
এক বিকলাঙ্গ শিশুর মতো শুয়ে আছি
নিঃশব্দ অন্ধকারে যদি জড়িয়ে আসে অবসন্নতা
এই নষ্ট সময়ে যদি না ওড়ে কোনো প্রজাপতি
দোষ দিয়ো না, প্রিয়তমা পাঞ্চালী।
----------------------------------------------------------------------
চিত্রকর ও বৃষ্টি হওয়ার পদ্য
- বাণীব্রত কুণ্ডু
আমি আকাশের কোলে
তোমাকে নির্মাণ করেছিলাম
মেঘের মমতা দিয়ে –
স্কেচের ভাঁজে ভাঁজে
সন্তর্পণে এঁকেছিলাম
সুদর্শন অন্ধকার,
সমস্ত শৈলীতে ছিল
এক আদিম মায়াবী
অরণ্যের নেশা...
আমি তোমাকে –
মাটির কাছ থেকে এনেদিলাম সুবাস
তুমি তা গ্রহণ করলে,
জলের কাছ থেকে এনেদিলাম টলমলতা
তুমি রসবতী হলে
বায়ুর কাছ থেকে তোমাকে দিলাম স্পর্শভাব
তুমি ছুঁয়ে দিলে মন
আগুনও তোমাকে ঢেলে দিয়েছিল তার রূপ
তুমি পুড়িয়ে দিলে
পুড়িয়ে দিলে সব...
চোখ ধাঁধিয়ে গেল অসহ রূপময়তায়!
আমি ভুল বুঝতে পারলাম,
এভাবে তোমাকে অপূর্ব করা ঠিক হয়নি –
দহনবেলায়,
তাই তোমার শরীরে ছিটিয়ে দিলাম
বিরহ রঙ...
তুমি বৃষ্টি হয়ে গেলে।
আর আমি –
বৃষ্টির সাথে সাথে আমার বেদনাকে মিশিয়ে
অপরূপ হয়ে রইলাম –
এই মাটি, জল, হাওয়ার কাছে...
----------------------------------------------------------------------
যাই, অস্তমিত সূর্যের আলোর নিচে
- রিপন গুণ
যাই, যাই অস্তমিত
সূর্যের আলোর নিচে যাই
মনের মধ্যে সাদা পথ -
বেয়ে বেয়ে যাই, কাগজের নৌকা
ওই তো যায়, যাই গোপন
সুড়ঙ্গে, আলোর পেটিতে যাই ৷
ওখানে -
শহরের সবুজ মন্দির
ওখানে -
দিনের আয়ু আর মৃত,
সাদাস্মৃতি ডেকে নিয়ে যাই ৷
সে তাঁর গুহামূর্তি নিয়ে -
দাঁড়িয়ে আছে, পাথরে চুলের
ছায়া, বালিতে,
গোপন ব্যথা আর বিষাদ
ফুটন্ত কুড়ি,
তাঁর কাছে যাবো, খুলে দেবো
অন্তরের সিক্ত ঘাস ৷
স্পর্শের গভীর
সাম্পান যেখানে ডুবে গেছে,
ডুবন্ত মানুষের
মুখের দিকে যেখানে -
ছুঁড়ে দিচ্ছি
বৃষ্টির নন্দন, আঙুলের জ্বর ৷
পাতাল যাত্রীদের তুবড়ানো
গালের উপর -
দেখছি শুকনো পাতা,
পানির ফোটা ৷
মানুষের মুখের দু’পাশে
দু’রকম
জলছাপ দেখি,
একপাশে -
মৃত্যুদূত, হাতে ফুল
অন্যপাশে -
বাঘিনীর বিক্ষিপ্ত হাসি
আর
বন্য ফুলের গন্ধ ৷
আমরা দেখি -
আমাদের আত্মার মধ্যে
উড়ছে ঈগল,
তার পাখার হাওয়ায়
কয়লার পাহাড়
কাঁপে -
বিচিত্র তৃষ্ণার হাড়ে,
জন্ম নিচ্ছে
ফুল ৷
কখনো কখনো
জলকাচে মুখ ভেসে ওঠে,
সমুদ্রের দুর্বিনীত
বাঁকা চাহনির কাছে উড়ে যায় ৷
রাত্রিদিন জেগে থাকে
তোমার পাশে বোবা প্রদীপের আলো,
কার ছায়ায় একলা হও তুমি?
হাতে লেগে থাকা মৃত্তিকার ঘ্রাণ
পাখির বিষণ্ণ পালকও,
তোমাকে কি একবারো ডাকেনি?
ঢেউহীন পানির শরীরে
আজ যাকে -
তুমি বিকেলের বালুভূমিতে নিয়ে যাচ্ছো,
তাঁর টুকরো আয়নার কাচে
কোন রূপসীদের হাড় দেখছো?
ভাঙা চোয়ালের শুভ্র দিগন্তে
আমি তোমাকেই দেখেছিলাম -
অচেনা পর্যটক,
এখন তুমি সমুদ্রের বালুতে
স্মৃতি ও গ্রীবার
সাম্পান,
আমাদের মুখস্থ জীবনের খাদ ৷
----------------------------------------------------------------------
নীলো তুমি ওঠো (১)
- মুজিবুর রহমান মুনীর
নিলো তুমি ওঠো, ঘুমিও না আর!
চেয়ে দ্যাখো ঐ চাঁদ উঠেছে
বৃষ্টি ধোয়া রাতের আকাশ
বাতায়নে বাঁকা আলো তার
সারা ঘর উছলায় উল্লাসে।
নিলো তুমি ওঠো!
দ্যাখো ঐ নদীতে জোয়ার
ঈশানের বাতাস চাঁদের আলো
ঢেউ নিয়ে আসে কূলে
দূরে নিয়ে যায় খোটমুক্ত ঘাটের তরী।
দুই পাড়ে নিঝুম গ্রাম
অশোক আগর কামিনীর ছায়া
ঝিরিঝিরি পাতা লতার শিহরণ
উঠোনে তারার মেলা
হাস্নাহেনা রজনীগন্ধার সুবাস ক্ষরণ
তোমাকে আমাকে ডাক দিয়ে যায়।
নীলো তুমি ওঠো!
দ্যাখো ঐ মিনার মন্দির শিরিশের বন ছোঁয়া মেঘ
নিশাচর বাদুড়েরা অবাধ পাখা ছাড়াছাড়ি
এপা্রের গ্রাম পিছু ফেলে ওপারে দীঘল পাড়ি
তুমি উঠলে আমরাও দিতে পারি, যেতে পারি
অবাধ জোছনা দূরের বনের কাছে
রাত জাগা কবির কাছে জোয়ার ওঠা মনের কাছে
অনাহারী জনের কাছে
দেশ মাতৃকা রক্ষায় বিনিদ্র জেগে থাকা
অতন্দ্র প্রহরীর পাশে।
নিলো তুমি ওঠো!
----------------------------------------------------------------------
তরঙ্গিত জোৎস্নার রুপালি স্বপন
- হাদী রকিব
যখন আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে লেগে থাকা
কাম আর শস্যের জলজ কণাগুলি
বীভৎস জাহাজ হয়ে ভিড়ে আমারই বন্দরে...
যখন হলুদ হলুদ চোখে দেখি সন্ধ্যার শহর!
ইট, পাথর আর ধোয়াঁর আঘাতে আঘাতে
আহত মনের ক্ষত বিক্ষত শরীর...
যখন তোমার কোমল শরীরে নেমে আসে
কামের কুৎসিত কালো রাত্তির...
ইচ্ছে করে দীর্ঘশ্বাসে পুড়ে ফেলি সমস্ত আকাশ!
ইচ্ছে করে ফিরে আসি আমার নিজস্ব জানালায়!
যার উজ্জ্বল রোদে লেগে আছে বিষন্ন শৈশব!
-পাখির পালকে জমা মেঘের স্মৃতি!
সবাইকে ফিরে আসতে হয়;তুমিও আসবে!
গাঢ় নীল তোমার দু’চোখে দেখবো আবার
নিদ্রালু নদীটির বুকে তরঙ্গিত জোৎস্নার রুপালি স্বপন!
----------------------------------------------------------------------
শরীর
- আহম্মেদ রফিক
শরীরটাই কি সব ?
এমন উথাল পাথাল জীবন,
ঘরে ফিরে সেও, নিংড়ে নিতে যায় তবুও ।
সহসাই যত চিন্তা উড়ে আসে
এরপর, তারপরে কি হতে পারে আরও ।
কেমন করে সইবে বদল হয়ে যাবে যে ভাষা,
নজরের মাঝেও যত অতৃপ্তি... অশরীরী
কুরেকুরে খাবে তাবত সম্বোধন ।
সবখানে এক শুন্যতা !
বেদখল হয়ে গেলে অথবা হারিয়ে ফেলে যে কান্না,
আপাদমস্তক হিসাবের চুলচেরা
এমন উথালপাতাল নিংড়ে নেওয়া ;
পরিবর্তন হয়নাই আজো বিশ্বাসের তার্কিক ।
শরীরটার ভিতরেই থাকে সব বাতায়ন,
কখন খুলে কোন রসায়ন !
দম ফুরালেও চাহিদা থেকে যায় আরো ...
আরো ক্রোধ, ক্ষুধা -নিঃস্ব হবার আয়োজন,
আরো ইতিহাস পথের ধুলোর ।
শরীরটাই প্রবাহ হৃদয় নামের নদীর
ছাপ রয়ে যায় উদয় অস্তাচলের ।
(হাইফথেসিস এর মত ভাব্না)
----------------------------------------------------------------------
ইচ্ছে ছিল
- রোদের ছায়া ( মৌসুমী)
ইচ্ছে ছিল স্বাধীন হব
ইচ্ছে ছিল খুব
মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে
আকাশ গাঙ্গে ডুব
স্বাধীন হবার আশা ছিল
বন্দি হাওয়া ভুলে
খিল আঁটা দরজাটা যাক
হাট করে খুলে ।
কষ্টের কপালে দেয়া
নীল রঙা টিপ
চুল জুড়ে সেটে থাকা
আগ্রাসী ক্লিপ
সব কিছু ছুড়ে দিয়ে
ভুল করে পথ
সীমারেখা ভাঙ্গার আজ
নেবই শপথ
পাখির ডানায় দিয়ে
যাবতীয় ভার
ইচ্ছেঘুরির নাটাই
ধরেছি আবার
সবুজ ঘাসের গায়ে
ছুড়ে দিয়ে লাল
স্বাধীন সূর্যটা যে
হয়েছে দামাল ।
----------------------------------------------------------------------
ফাঁদ
- Allabhya Ghosh
ফাঁদ পেতে বসে আছে পাখি-ওলা ।
তোতা, ময়না,টিয়ে,দোয়েল,শালিক,
মাছরাঙ্গা, পিঙে,বৌকথাকও বিদেশি
লিনিওলেটেড, ম্যাকাউ, হলুদ টিয়া,
গ্রে-প্যারট, ল্যামবার্ড, রেড রাম,
কাকাতুয়া, ডাইমন্ড ডু,পিনথ, ককাটেল,
রোজিলা, গোল্ডিয়ান পিচ্চে, পোরপাচ,
গোর্কী গালা কাকাতুয়া, লাভবার্ডস ,
ফরফাস ,বাজরিগার পেলে সোনায়
সোহাগা ।পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিক্রি
করবে । গেরস্তর দের বারান্দার কোনে
খাঁচায় ঝুলবে পাখি । কারবা দাঁড়ে পায়ে
চেন বাঁধা অবস্থায় পাখি গাইবে কৃষ্ণ
নাম । গৃহস্বামীর সুখ গান গাইতে না
পারলে দানাপানি বন্ধ করে দেবে ।
সহবত শেখাতে কোন কোন পাখিকে
ছাতার কাপড়ে ঢেকে রাখা হবে ;
লোক চক্ষুর অন্তরালে ।
পাখিরা ভাবে; পাখি-ওলা কী নিষ্ঠুর ।
নিজের জন্য একটা পাখিও রাখার
সাধ হয়না তার ।
-পাখি-ওলা বলে সাধত হয় ; তবে
সাধ্যে কুলয় কই । এই দেখ ম্যাকাউ
তুমি কত শিক্ষিত তবুও তোমার দাঁড়
চাই । দাঁড়েতে দাঁড়িয়ে থেকে প্রেম হয় ।
তার জন্য একটা আকাশ দরকার ।
যার খাঁচার মত কোন জালের দরজা
নেই । নেই তোমার পায়ের বেড়ির
মত বন্ধন ।
পাখিরা বলে ;
-তবে তুমি আমাদের ধর কেন?
পাখি-ওলা হাসে !
-তোমরা ধরা দাও বলেই না;
আমি ধরতে পারি ।
পাখিরা বিরক্ত হয় !
-আমাদের তুমি ঠকাও ফাঁদ পেতে ।
পাখি-ওলার হাসি থাকে অম্লান ;
-এই দেখ চোরের জন্য দ্বার খুলে
রাখলে ; চোর যদি চুরি করে । দোষটা
কার চোরের না মনিবের । তোমরা
তো আমার ফাঁদে জেনে শুনে আকৃষ্ট
হও সখি ।
পাখিরা বলে ;
- হবোনা তোমার ঐ তেলা পোকার মত
লকলকে শিশ্ন দৃঢ় হলে পরে ; ময়ূরেরা
ভাবে সাপ । তোমার ঐ দীর্ঘ বক্ষ যুগল ;
যেন স্বর্গের নন্দনকানন । চোখ দুটো যেন
শেষনাগের অমৃত হ্রদ । ঠোঁট দুটো যেন
সমুদ্রর ফেনা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে শুধু চুমু
খাবার জন্য । বটবৃক্ষের মত তোমার এক মাথা
চুল যেন শান্তির নীড় । নাকখানা যেন পায়রার
বোমা । দূর দূরান্ত থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে চিনে নেওয়া
যায় তোমাকে ।
তার পর বহু দিন কাল হাওয়ার মত উবে যায়
পাখি ওলা ঘুণাক্ষরেও টের পায় না । বুঝতে পারে
যখন ; তখন তার ঢেঁকির মুখের মত শিশ্নটা
নিম্নমুখী । দারিদ্র আর বয়সের চাপে তার প্রসারিত
বক্ষ যুগলের হাড়ে এখন পাখির খাঁচার মত ক্ষুদার্থ
মানুষের ভাস্কর্য । চোখ দুটো যেন ছানি পড়ে ঘোলা
নালার জল । ঠোঁট দুটো যেন উচ্ছিষ্টের ভাগার ।
মথার কেশবিন্যাস আজ মরূদ্যান হয়ে ; যেন
বসন্ত শেষের পাতা ঝরা গাছ । পাখিদের
আকৃষ্ট করার মত পাখি-ওলার আজ আর কিছু
নেই । ফাঁদ পেতে সে বসে থাকে । কোন পাখি
আর আসেনা তার কাছে । ফাঁদের দড়িতে পড়ে
না টান ।
হটাৎ একদিন ভর দুপুরের ঝিমুনির ফাঁকে পাখি-ওলা
দেখে ;সাক্ষাত যমের মত একটা কালো কুচকুচে
দাঁড়কাক এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে । পৃথিবীর
কোন দেশে কে পোশে এই অলুক্ষনে পাখি ।
পাখি-ওলা জানেনা । আমস্টারডামে নাকি
পতিতাদেরও সামাজিক স্বীকৃতি আছে ; তবু কেন
সমাজের নোংরা খেকো ঝাড়ুদার কাকেরা অস্বীকৃতি
এদেশে ; তা জানে না পাখির দালাল এই পাখি-ওলা
আর পতিতা কাকেরা । তলায় তলায় কাকের
উপকার উপভোগ করলেও ; বাড়ির চৌহদ্দিতে
কাক দেখলে ; অমঙ্গলের কথা ভেবে গৃহস্বামী
তাড়ায় ছে ছে করে ! পাখি-ওলাও বলে ;
-হুস যা ।
দাঁড়কাক বলে ;
-আমার নামের আগে দাঁড় থাকলেও
আমি কাকাতুয়ার মত দাঁড়ে থাকি না ।
আমাকে ধরো তোমার ফাঁদে ।
পাখি-ওলা রেগে ওঠে ।
-বেড় দূর হ । তোকে ধরে লাভ নেই । ছুঁলেই
এইডস হতে পারে ।
কাক বলে;
-পাখিরা বলে তুমি নাকি পোষার মত পাখিই
পাওনি আজ অবধি । যে পাখি বেঁধে নয় ছেঁড়ে
পোষা যায় । আমাকে তুমি তোমার গৃহিণী করবে
পাখি-ওলা । আমি খাঁচা বা দাঁড় ছাড়াই তোমার পোশ
মানব ।
পাখি-ওলা আর রেগে তিরস্কার করে ;
-দূর হ ঘাটের মরা ; যমের ও অরুচি !
পোড়ার মুখি কাক তখনো বলে;
- আমি তোমার ওপরের হারিয়ে যাওয়া
ক্ষণিকের রাংতার
আড়ালের চকলেটের মত হৃদপিণ্ডটার
ভালবাসায় অকৃষ্ট হতে চাইছি পাখি-ওলা ।
ওটা যেন অন্নপূর্ণার হাড়ি কখনো ফুরবে না ।
এবার পাখি-ওলা একটু নরম হয় ; খিদেটা
তার চনচনে পেয়েছে বেস । ভাবে যেচে আসা
সুযোগ হাত ছাড়া করা কী ঠিক হবে !!
একবারও ভাবে না এই প্রথম কোন পাখি পাখি-ওলার
বাইরে আবহ বিকারে জীর্ণ শরীর মন্দিরের ফাঁদের নয়;
ভেতরের দেব দর্শনের কদর করছে ।
ফাঁদের দড়িতে পড়ে টান ।
কাক বলে ;
-আমি ধন্য পাখি-ওলা চির কৃতজ্ঞ তোমার কাছে ।
পাখি-ওলা কাকের ঘার মটকাবার আগে বলে;
-এবার তুই মরবি ।
কাক বলে ;
-মরেও সুখ ;ভালবাসায় বঞ্চিত হয়ে বাঁচার চাইতে ।
শহরের আস্তে-কুড়ে মানুষের নোংরা আবর্জনা সাফ
করতে করতে কাকটা বোধয় বিষাক্ত কিছু পুষছিল
নিজের পাকস্থলীতে । সেই রাতেই ভেদ বমিতে
পাখি-ওলা মারা গেল কাকের মাংস খেয়ে ।
সকাল হতে না হতে রাজ্যের চিল আর শকুন
ছুটে এলো পাখি-ওলার মৃতদেহে আকৃষ্ট হয়ে ।
খুবলিয়ে খুবলিয়ে খেল তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ !
বাদ পড়-লোনা পাঁজরের আড়ালের হৃদপিণ্ডটাও ।
পৃথিবীতে পাখি-ওলার সেই ফাঁদ পড়ে আছে এখনো ।
তুমি পাখি-ওলা হলে কী পাখি ধরবে বলও ?
----------------------------------------------------------------------
অথঃ জিলিপি কথা।।
- ইন্দ্রলেখা ভট্টাচার্য্য
গুপেদার দাদু , অতি সুস্বাদু জিলিপি ভাজেন।
কী করে হাতাই , ভাবে তা সদাই , ভাইপো গজেন।
মালকোঁচা মেরে , সেদিন দুপুরে , দাদু যান ভোজে।
গজা চলে যায়, গুটিগুটি পায়ে , জিলিপির খোঁজে।
গুপেদার দিদা , বড় তিনি সিধা , হেসে-গলে জল ।
গজেন সাঁপুই , খোঁজে সে রসুই করে নানা ছল ।
তামার রেকাবে , অতিথি হিসাবে মোটে দুইখানা ?!
ভরে কিবা মন ? ভাবে সে কখন লুটি রে খাজানা !
পৌঁছলো শেষ , জিলিপির দেশ , কাকার কিচেন ।
দেখে সেথা, ক্রুক , সহকারী-কুক গুম্ফ মোছেন !
চোখাচোখি দেখা , ভারী ভ্যাবাচ্যাকা , ব্যাটা বাটপাড়।
চোরে-বাটপাড়ে , ফের শলা করে , জিলিপি সাবাড় ।
----------------------------------------------------------------------