না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।

আজকের ১৫ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান  (‌হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!

কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
----------------------------------------------------------------------

দিন বদলের কথা
- মামনি দত্ত


অভিমান নিয়ে ফিরে যাওয়া
অতোটা ভাবাই নি আমাকে,  
পৌষের রোদ এঁটো গন্ধ রেখে গেলে
জামাতেই মুছে রেখেছি।

ব্যথা বিলাসিতা ফুল থেকে ফুলে
ঘুরেফিরে ক্লান্ত হলে,
নিজেরাই ঘুমিয়ে পড়েছে
বোতাম ভাঙা জামার আড়ালে,  

তুমি জানবেনা - এই জামা ভারী পর্দা হয়ে
ঝুলবে অভিমান আর অনুতাপের মাঝে,  
সেদিনও ভিজে যাব অনায়াসে
বৈশাখী রোদের নিশ্চিত চুম্বনে,

একবারও ভাববো না- কতটুকু
অনুতাপ কালবৈশাখী আনে
মার্জিন ভেঙে হরিণের পায়ের ছাপে।।

----------------------------------------------------------------------

গৃহযুদ্ধের অবসান
- ঝন্টু মণ্ডল


নিউরোনে আজ গৃহযুদ্ধ
আমি ছিট্‌কেছি আমা হতে।
হাজার ক্রোশ হাঁটার কষ্ট নিয়ে
উস্‌কো-খুস্কো চুল
আর আমি
আবার দিগভ্রান্ত!

শুকনো কান্না হাসি হয়ে ফেরে
অরুচি নোনাজলে।
অনেক হাসি পাওনা ছিলো
আজ আর হিসেব নিইনা।
একলা ওড়নার গাঁটেই
আমি অংকে কাঁচা...
আবার-ও!!

ভাবা কাজ পড়ে থাকে
যেটা করি--তাও ভুল করে।
ধুলোর সাথে ঘর করা সন্ধ্যের
আঁচল ধরে ছুটি
নোনার মালিক সাগরে---
ওকেও স্বপ্ন দেখাই..
প্রকৃতির টানে।

হামান-দিস্তায় গুঁড়ো করো মোরে
মাথাটা যেন মিহি হয়।
বিকিয়ে দিও কেজিদরে তা
না-হয় ফ্রী-তেই।
যদি কিছু বেপরোয়া স্বপ্ন
মুড়োতে না চায়---
মিশিয়ে দিও ক্ষুধা দে-ভাতে..
আমার নামটা কেটে দিয়ে!!

----------------------------------------------------------------------

সন্তরণশৈলী
- ত্রিচরণ


সন্তরণশৈলী

সাঁতার না জানলে হাঁটুজলই যথেষ্ট;
আমাকে সাঁতার শেখাও, কেষ্ট -
পাড়ি দেব সাত-সমুদ্র যত নদী সৃষ্ট।


চিরন্তন

সবকিছু ভেঙ্গে পড়ে
কিছুক্ষণ শুধু নড়ে - কিছু ছায়ারেখা -
জানি, - তবু ছুটি - হবে চিরন্তনের দেখা।


অভিমান

অভিমান নাকি ভাললাগার আয়না
ভাললাগারও নাকি থাকে প্রেমের বায়না -

নদীর অভিমান ভেঙ্গে যায় পাড়ের স্বপ্ন-সুখ-সম্ভাবনা।


প্রথম বৃষ্টি

প্রথম বৃষ্টিতে থাকে ঘ্রাণ - অমীয় ঐন্দ্রিক গান
সেতারের তারে তারে টান - থাকে গোধূলির তান -

গোধূলি নিয়ে যায় দু'পক্ষের রাতে!

----------------------------------------------------------------------

প্রেমের ঠিকানা
- সরকার মুনীর


উদ্বায়ী প্রেম, তুমি অজান্তেই শিখিয়েছ
ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়ার খেলা-
শিশু থেকে পশুতে-আবাল বৃদ্ধা বনিতার মাঝে।
ভণিতার ফর্মালিন দেয়া প্রেম আমি চাই না
চাই না কৃত্রিমতার অভিশাপে সিক্ত সম্পর্ক।

উদ্বায়ী প্রেম, তুমি ছিঁড়ে ফেলেছ আমার ভালোলাগাকে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছ দিক বিদিকে
অথচ তাই সযত্নে কুড়িয়ে নিয়ে মানুষ-প্রকৃতি
আমায় করেছে মহিমান্বিত।

বলছি না প্রেম অভিশাপ ; আসলে এ এক মহার্ঘ পবিত্রতা।
তবে তার সৌন্দর্য একমুখিতায় নয় বরং বণ্টনে।

মানব প্রেম আর প্রকৃতি প্রেমের গলিতে হেঁটেই
জেনেছি- স্রষ্টাকে প্রেমের মহাসড়কে ওঠা যায়।

[ Every isolated passion, in isolation , is insane.
But sanity may be defined as the synthesis of
these insanities. – Bertrand Russell ]

----------------------------------------------------------------------

নিজেকে কাটি
- রিপন গুণ


এস নিজেকে কেটে দেখি -
শরীরে আমার কি সামাজ্য সম্পত্তি,
শিথিল শরীর, ব্লাডের বোতল
অ্যানাস্থেসিয়া, মদ্যপানে
ঈষৎ আসক্তি দেবদ্বিজে পূর্ণ ভক্তি ।

সমস্ত প্রোগ্রাম ছকে বাঁধা শরীর পোর্টেবল
রিপোর্ট বলে- মধ্যবিত্ত অস্থির চিত্ততা,
সুখ স্বপন, গাড়ী গোলাপী কিশোরী,
এই সব মিলে- মিশে তারে চিপ্সে
চিন্তা ইলেক্ট্রন ছেয়েছে শরীর,
দশ আঙ্গুলে বাঁধা
তেত্রিশ আশা ভরসা ।

কপালে ছেলেবেলার টিকা
রাশি লগন মিলিয়ে অনেক আবছা কথা,
কানে ভাসে এখন !
না মেলা কথার জন্য
গনক ঠাকুরের গলা টিপিনি,
খুব জোরে হাসতেও পারিনি -
শুকনো ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়বে ভয়ে ।

অথচ ছোটবেলায় সাহস ছিল
সাফ করতাম আচারের বোতল,
তাড়াতাম পাগল কুকুর ।

এখন নিজেকে কাটি -
ধোপার হিসেব খাতায়
দেখি কি কি আছে বাকী !

----------------------------------------------------------------------

মেঘলা সময়
- হাদী রকিব


খুব করে যা কিছু চেয়েছি
কখনো পাইনি তার এতটুকু ছোঁয়া;
খুব করে যা কিছু খুঁজেছি
হারিয়ে গিয়েছে নক্ষত্রের মত
বাতাসে রেখেছে কিছু ঘ্রাণ !

হিলিয়ামে ভরা বেলুনের মত যাযাবর-
এ আমার হলুদ জীবন
কতটা পেয়েছে ছাই শুধু তার হিসেব কষেছে !

এতটা আঁধার তবু...
কখনো সাহস করে বলতে পারিনি
ভালবাসি যেমন জীবন -
মৃত্যুকেও ভালবাসি!

এখন আমার দিন
এখন আমার রাত
বিষণ্ণ র‍্যাপারে মোড়া মেঘলা সময়!
- দেয়ালে ঝোলানো একা রুপালি গিটার !

----------------------------------------------------------------------

রাত-দিন
- সুদীপ রায়


সুর ডুবে যায়,
কর্পূর উবে যেতে চায়,
চুরচুর হয়ে শেষে, দিন ভেঙ্গে যায় ।

ফুল বাগে হাসে,
ভণ্ডুল রাত তবু আসে,
বুলবুল শিস দিয়ে, উড়ে চলে যায় ।

ছাই পথে ওড়ে,
পরছাই সাথে সাথে ঘোরে,
যাই-যাই রাত উড়ে, দূরে ভেসে যায় ।

কম-বেশি সবে,
হরদম রবে, কথা কবে,
ছম ছম রাত তবু, ভয় যে দেখায় ।

----------------------------------------------------------------------

ওখানে আমি আর আসব না
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন


একদিন ভালোবাসা তোমার দরজাতে কড়া নেড়ে যাবে
তুমি হতবিহবল হয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে
বাইরে গিয়ে ডানে বামে সামনে উপরে নীচে তাকিয়ে দেখবে
কেউ নেই।
শুকনো পাতার মর্মর শব্দকে মনে হবে হারানো ভালোবাসার পদধ্বনি,
বাতাসের শো শো শব্দে হয়ত শুনবে, ভুলে যাওয়া প্রেমের সুর
বৃষ্টির ছল ছল শব্দে তোমার আমার প্রথম গান মনে হবে,
মেঘের উল্লাস শুনে কে যেন ডাকছে তোমায়,
তুমি ছটফট করবে, তুমি অশান্ত হবে,
তুমি দিক হারাবে, তুমি কুল হারাবে,
অশান্ত মন নিয়ে দরজার ওপাশে যেও না,
বাইরে কেউ নেই।
চারিদিকে আলোর খেলায়, অন্ধকারের অপেক্ষায়
মধ্যবর্তী বিরতিতে আমার স্মৃতি যদি ঢুকে যায়,
কিংবা
স্বপ্নের ভিতর ভালোবাসার আত্মহত্যা দেখে কেঁপে উঠবে,
বিছানার ডান পাশে হাতরিয়ে অহেতুক আমাকে খুঁজো না,
কিংবা মনের অজান্তে দরজার বাইরে যেওনা,
ওখানে কেউ নেই।

তুমি যা বলেছিলে, তাই তো করেছিলাম
হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা শীতের রাতে উদোম হয় কুয়াশা কুড়িয়েছিলাম,
তোমার গায়ে মাখব বলে,
ভোরের সূর্য থেকে তাপ এনে তোমাকে দিয়েছিলাম,
তোমাকে উষ্ণ করব বলে,
সৈকতের বিস্তীর্ণ বালি থেকে শামুক কুড়িয়ে মালা গেথেছিলাম
তোমাকে পড়াব বলে,
তোমাকে ঢাকব বলে
নীল সমুদ্র থেকে ঢেউ তুলতে গিয়েছিলাম,
ঢেউ এর সাথে যুদ্ধ করতে করতে এবার আর ফিরতে পারিনি
সবাই আমাকে তুলে এনেছিল।
ও টুকু পারি নি বলে
ক্ষমা করে দিও আজীবন।
আর নীল সাগরের কাছে যেও না,
ওখানে আমি নেই, ওখানে আমি আর আসব না।

----------------------------------------------------------------------

সময়ের অবুঝ পায়ে ঘুঙুরের ধ্বনি
- ইব্রাহীম রাসেল


অদূরে সময়ের অবুঝ পায়ে ঘুঙুরের ধ্বনি
আজ ভেসে আসে,
কোন নির্জনে লুকিয়েছে গুটিগুটি পায়ে।

ক্রন্দন ধ্বনি শুনি অনাবাদি জমির।
শস্য সমারোহ ছিল যে বুকে
সবুজের দোলা নিত্যানন্দে ভরিয়ে তোলে মন,
সেথায় এখন দুঃসময়ের কালো পতাকা ওড়ে
দোফসলী জমির শূন্যতা কাঁপিয়ে তোলে ধরণী।

সাফল্যরা গোপনে মুচকি হাসে।
সব সরঞ্জাম এতো কাছাকাছি তবু
নির্দয় সময় আজ খেলছে কানামাছি।
দুটি নদীর মোহনায় একি অদৃশ্য চর!
মিলন তারা নিস্প্রভ ঝিমুচ্ছে এক কোণে।

সময় প্রদীপ শিখা দৃঢ়পায়ে সমুখে দাঁড়ালে
আবার আবাদ হবে জমি, শস্য সমারোহ হবে
সবুজের দোলা নিত্যানন্দে ভরিয়ে তুলবে মন,
মোহনায় হবে জলজ খেলা।
উজ্জ্বলতায় হেসে উঠবে মিলন তারা
সেই সময় কতোদূর! কতোদূর সাফল্য গাঁথা?

----------------------------------------------------------------------

আমি সেই সাদা রঙের ট্রেনের অপেক্ষায় আছি।
- নাজমুন নাহার


১ ।

ফের প্রেমে পড়ি
ফের জলে পড়ি
ফের হাত পা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে বসি
আবার আকাশের জলের সাথে আত্মীয়তা করি
ঘর বসতি ভাসিয়ে দিয়ে বন্যা হই
আমার ওরকম ভুলে ভুলে
গদ্য পদ্য কবিতা হয়
এবার  আর জলে নামবো  না
পা ভেজাব না জলে
এবার আমার আকাশের জল
তার বাড়ী উজার করে একেলা একেলা কাঁদুক
আমি আড়ি নিয়েছি তার সাথে
তার ভুলে গদ্য পদ্য সে একাই রচনা করুক
আজ সে আমায় জল হতে দিক ।
২।
তোমাকে যে ভালবাসি
সে আমার সৃষ্টিকর্তা জানেন
তুমি বিশ্বাস কর অথবা নাই করো
কতকাল শুনেছি বুকের ভেতর তোমার কড়ানাড়া
এটা আমি ঈশ্বরকে বলে রেখেছি চুপি চুপি
তিনি জানিয়েছেন ভালবাসা বৃথা যায় না
বুকের ভেতর রোদের সাথে তোমাকেও লালন
করতে জানিয়েছেন
আমি আর্জি দিয়ে রেখেছি
বাতাসে
জলে
আর ঠিকানাবিহীন চলা পাতাল বাসী ট্রেনকে
আমাকে ঠিকঠাক মত তোমার ঠিকানায় পোঁছে দেবে বলে
আমি সেই সাদা রঙের ট্রেনের  অপেক্ষায় আছি।

----------------------------------------------------------------------

পরিস্থিতি-১
- সুদীপ তন্তুবায় (নীল)


আমার কোমল শয্যা - সহবাস !
সঙ্গিনীর বুকে মুখ গুঁজে
নীরব আমি
চরম সুখের প্রত্যাশায় !
-আমি এক ভিনদেশী রাজকুমার !

যখন ভগ্ন কুড়েঘর,
বিদীর্ণ ভিত্তি
তখন আঁধার ঘেরা কুটিরে
এক জ্বলন্ত মোমবাতি ।
হৃদয়ে ক্রশ কাটতে কাটতে
নত আমি ।

----------------------------------------------------------------------

আমার মুক্তি পাবার
- ঋষি


বিষাক্ত অন্ধকারে আমি দিন গুনছি
-মুক্তি পাবার ।
কিন্তু আমি তো খুন করি নি ,
সবাই বলে আমি নাকি মারাত্মক খুনি ।
আমার লতার রক্তে ভেজানো এ হাত
কিন্তু বিশ্বাস করো তোমরা আমি তো খুন করি নি ।.
সম্পর্ক মরে গেছিল বহুদিন ,ও তো শরীর
এতো আনন্দের কথা লতার
-মুক্তি পাবার ।
অন্ধকারে একটু আলো আসে ঘুলঘুলি দিয়ে
পায়রার দানা ঝাপটাবার শব্দ পায় আমি এখানে ।
লতার শরীরটা কাত্রেছিলো,শব্দটা শুনি
আমি বলেছিলাম আদালতে
-আমি খুন করি নি  ।
ওরা শুনলো না দিল আমায় যাবত্জীবন কারাগার...।
সেদিন রাতে তুমুল ঝগড়া ,মারামারি ,ফাটাফাটি
কিন্তু আমি লতাকে ভালোবেসেছি তাই দুঃখ নেই ,
-তাই ওকে মুক্তি দিয়েছি  ।
এবার আমার অপেক্ষা লতার কাছে যাবার
-আমার মুক্তি পাবার...।

----------------------------------------------------------------------

চঞ্চল জীবন স্থবির হবে
- কবীর হুমায়ূন


নিশুত রাতের কান্না কখনো শুনেছো কি কান পেতে?
শিশির ধারায় অশ্রু তাহার ঝরে পড়ে নিরবধি;
তোমার চেতন এতোই রুদ্ধ, দেখোনি তা' কোন মতে।
মনন বিহীন মানবীর মন ধরিয়া রাখবে যদি,
তবে কেনো তুমি বন্ধু-চেতনে এই বন্ধুর পথে
হাতখানি তোমার বাড়িয়ে দিলে? এই মন হলে রদি-
তোমারও কিছু দোষ খুঁজে পাবে; জীবনের সংবৃতে
জটিলতা জমে, তিক্ততা বাড়ে প্রতিদিন নিরবধি।

সব কিছু ভুলে, আবার যদিবা দোঁহে কাছাকাছি আসি
বিমল চেতনে; পরস্পরের অহংবোধের ছায়া
ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দূরের সাগরে; অতল জলের রাশি
ধুয়ে মুছে নিবে সকল কালিমা, মিথ‌্যার কালো মায়া।

এই চঞ্চল জীবনের কাল স্থবির হবে জানি,
তবে কেনো আজ নিতি টেনে আনি দুঃখের ছায়াখানি?

----------------------------------------------------------------------

অষ্টাদশী খড়ের চালে
- অরুন কারফা


অষ্টাদশী খড়ের চালে
শুনে চক্ষু ওঠে কপালে
কেউ ভাবে যাবে একা যবে রবে
মনের কথা বলবেই খুলে
প্রস্তুতি চলে, না যায় ভুলে।

কেউ ভাবে যাবে শরতের সকালে
থরে থরে শিউলি গন্ধ ছড়ালে
যখন কিনা মনের বীণা
বাজিয়ে শাস্ত্রীয় ভৈরবী রাগে
পেশ করবে সে ভালবাসা বাগে।

কেউ আবার ভাবল অঝোর শ্রাবনে
নিবেদন করবে প্রেম সিক্ত মনে
উজাড় করে নিংড়ে নিজেরে
যাতনা বেদনা হৃদয়ের বেটে
আসবে সুহৃদের সন্নিকটে।

একজন আবার ভাবল তারে
দেখবে পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে
দেখা যাবে আদল তখনি তো আসল
তারপর নয় ভোরের দিকে
প্রেম দেবে তারে শিশিরে মেখে।

কেউ ভাবলনা কিন্তু একবারও
কি করেই বা সময় কাটছে তারও
কি করে যে সে কিসের আশে
বেঁচে আছে ভবে এই সংসারে
কষ্টের বোঝা বয়ে অনিবারে।

----------------------------------------------------------------------

সূর্য পশ্চিমে ঢলে-আমি দেখি নাই
- নাদনে কুচেঅভা


তারে যেন দেখিয়াছি কবে , হ্যা, তারে যেন দেখিয়াছি কবে !!
মনে হয় যেন চেনা -মনে হয় যেন চেনা ! তবু , চিনছি না যে ?
ওহ ! তখন তার নাক ছিলো রিক্ত, মুখভরা ছিলোনা হাসি
       আরো আজ শাড়ী পরেছে  ।

খোলা মেশিনের নৌকোয় মুখোমুখি বসিয়াছে সে
পাশে তার কোনো একজন, মনে পরেনা- তারে আমি
দেখিয়াছি   কোনো সন্ধে
কোলে তার ফুটফুটে চাঁদ- অবাক চোখ যার জলের পানে
আমি যাহা জল ভেবে সবকিছু নিয়েছি মেনে

সহসা চোখ তুলে সোজাসুজি তাকালো সে
আকাঁশ জুড়ে যেন ঘন কালো মেঘ ছড়ায়েছে
সকল প্রদীপ বুঝি নিভে গেছে ঝড়ো বাতাসে

আমি তার আগের মুখখানি আবারো দেখিলাম সেই
পথের ধারে ঝাকি মেরে বলেছিল, '' সূর্য পশ্চিমে ধায় -
       এখনো কি দেখ নাই ?? ''

----------------------------------------------------------------------