না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।
আজকের ১৫ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান (হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!
কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
----------------------------------------------------------------------
আট দশকের ভালোবাসা
- মহিউদ্দিন হেলাল
তোমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তোমায় বলেছিলাম,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তুমি আশ্চর্য হয়ে বললে, "ভালোবাসা কি?"
যখন দশ বছর
তখনও বলেছিলাম, "তোমাকে ভালোবাসি"
উত্তরে বলেছিলে, "তাই? চল তবে কানামাছি খেলি।"
কানামাছি খেলতে খেলতে যখন তোমার ফাগুন আসতে শুরু করল,
অঙ্গে অঙ্গে পরিবর্তনের ছাপ।
কোথাও কোথাও গোপন পুস্প অংকুরিত,
না কিশোরী, না যুবতী, ঠায় পনেরতে দাঁড়িয়ে
এমন এক দিনের পড়ন্ত বিকেলে শিমুলতলে বসে গুন গুন করছিলে,
খুব কাছে গিয়ে বললাম, "তোমাকে ভালোবাসি"।
গোধূলির সূর্যটার মত লাজে লাল হয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলে!
ভরা বসন্তের কোন এক বিকেলে
দিঘির পাড়ে পাশাপাশি বসে জলের বুকে ভাসমান
রাজহংসের প্রেমলীলা দেখছিলাম।
তুমি তখন বিশ বছরের অনন্যা।
কানের কাছে ফিস ফিস করে বললাম, "তোমাকে ভালোবাসি"।
অমনি মাথাটা আমার কাঁধে রেখে পিছনের হাতটি দিয়ে
এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলে,
মনে হল তুমি আর আমি একই প্রাণ!
আমার বুকের মাঝে তখন কালবৈশাখী ঝড়।
এতো কাছ থেকে বিপরীত লিঙ্গের নিঃশ্বাসের উষ্ণতায়
ভিতরে তোলপাড়, যৌবনের সুনামি অনুভব করি!
পঁচিশ বছর বয়সে তোমাকে যখন ভালোবাসার কথা জানালাম,
তুমি চায়ের পেয়ালাটা হাতে দিয়ে জানতে চাইলে,
" কাজবাজ কিছু হল? এ ভাবে আর কত দিন? মা বলছিল......"
তিরিশ বছরের কোন এক সন্ধ্যায় আবার আমি বললাম, "তোমাকে ভালোবাসি"
তুমি বিছানার চাদরটা ঠিক করতে করতে বলেছিলে,
"যদি সত্যই ভালোবাসো কাজ শেষে জলদি ঘরে এসো।"
তোমার বয়স তখন চল্লিশ বছর,
এক ছুটির দিনের পূর্বাহ্নে তুমি রান্না ঘরে ভীষণ ব্যস্ত।
আমি বললাম, "তোমাকে ভালোবাসি।"
ঝুলন্ত আঁচলটা কোমরে গুজতে গুজতে উত্তর দিলে,
"সংসারের এই টানাটানি আর ভাল লাগে না!"
তুমি পঞ্চাশ আর ষাট এর মাঝামাঝি
দিনে দিনে তোমার চোখের রশ্মি কমতে শুরু করেছে,
তবুও পুরানো চশমাটা চোখে লাগিয়ে
কি সুন্দর সেলাইয়ের কাজটা করছিলে
তখন আরেকবার বললাম, "তোমাকে ভালোবাসি।"
দেখলাম তোমার বাঁকা ঠোঁটে মুচকি হাসি।
তারপর অনেক দিন কেটে গেল,
তুমি সত্তরে পা দিলে।
বাড়ির পিছনের বাগানটায় মুখোমুখি বসে দু'জনে স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম।
আমার লেখা অনেক চিঠির চুম্বক অংশ,
স্মৃতি থেকে পড়ছিলে আর আমাকে ব্যঙ্গ করছিলে।
আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম, "তোমাকে ভালোবাসি"
তুমিও খিলখিল করে হেসে উঠলে।
আজ তোমার বয়স আশি বছর।
বৃদ্ধাশ্রমের নির্জন কক্ষে শুয়ে শুয়ে আমি যখন শেষ প্রহরের অপেক্ষায়,
দেনাপাওনার হিসেবে বিশাল শূন্য এঁকে,
অনাগত মহাকালের যাত্রার শুভক্ষনে,
পৃথিবীর সব মায়ামমতা, প্রেম যখন আমার কাছে অর্থহীন,
ঠিক তখন পাশের আরেক নির্জন কক্ষ থেকে
লাঠির উপর ভর করে, ত্রিভুজ হয়ে
কাঁপতে কাঁপতে তুমি এসে আমার মাথার পাশে বসলে।
মাথায় হাত বুলিয়ে টলমল চোখে
কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বললে, "আমি তোমাকে ভালবাসি!"
আমি শুনলাম, পৃথিবীর সুন্দরতম উচ্চারণ!
অতঃপর ............
----------------------------------------------------------------------
অনুত্তীর্ণ
- মামনি দত্ত
দিন শেষে এক টুকরো আশ্রয়
ধ্বসের অতলে অনু পরমানু,
যারও আগে শতাধিক জন্ম
তুকতাক বেলোয়ারি তে কি ভীষণ!
পালকে জেগে থাকে পাথর চোখ
বেওয়ারিশ অগুনতি হাত তীব্রতম
ছুঁয়ে যায় আমার হৃদপিণ্ড কশেরুকা,
ধূ ধূ হাতের পাতায় অসহ্য অনুতাপ,
পার্থিব অপার্থিব সমান -সীমান্ত হারিয়ে।
পথভ্রষ্ট সময় এখন মাটি থেকে
ধূলোর শূন্যতা পেলে,
বোবা অনুভূতি সন্ধ্যা বৃত্ত ভাঙে,
ভাঙা কোন এক টুকরোতেই ফিরে চলা আমার
শিয়রে যাপন কালীন উপবাস নিয়ে।।
----------------------------------------------------------------------
শহুরে দাবানল
- ঝন্টু মণ্ডল
সূর্য থেকে চুয়ে পড়া গরল পান
নিয়মিত অযাযিত।
ঘামে ভেজা লোমশ শরীর
স্যাঁতস্যাঁতে চট্চটে আদর
আর পারফিউম!
সানগ্লাস-চোখে মরীচিকা ভ্রমণ আর
আগুনের ফুলকি চুম্বনে
ছাতার ছায়া খোঁজা।
কপাল গড়ানো ঘামের স্বাদে
হঠাৎ-ই চমক!
অসহ্য তৃষ্ণায় কুঁকড়ে ওঠা শরীর
কণ্ঠে শব্দ শুকায়।
বোতলবন্দি ঠান্ডায় অতৃপ্ত চুমুক
ছাদে বসা জলের ট্যাঙ্ক
তবু অসহায়!
ধোঁয়া ওঠা রাজপথ নিরবে ঘুমায়...
ফুটপাতে ক্ষুধার্ত ভাতঘুম;
তবু ট্রামের নাক-ডাক।
পায়ে-কংক্রিটে ঘষাঘষি
স্যান্ড্উইচ জুতোর খোলস।
ঘামে আর ঘুমে জর্জরিত আমি
ভিজে পিঠ গোমড়ায়।
বাসে ট্রেনে শরীরের লোফালুফি
হাতের পাঁচ লোহার রড--
অশালীন পিছল!
কালোলাভার স্রোতে আমার শহর
দম ছাড়ে গঙ্গা-পাড়ে।
জীবনে থেকেই জীবনের খোঁজ
ইতিউতি ছড়ানো প্রেমিক যুগলের
আলস্য চুম্বনে!
----------------------------------------------------------------------
রাত - ১
- দীপঙ্কর
রাত বাড়লে, আমাকে ব্যথার পোকায় কাটে;
অসংখ্য কীচকের ডাক, ঘরে, তক্তপোষে
রাতে বালিশে কান পাতলে শোনা, অসংখ্য ব্যথার
দংশন যাতনা। অবিচল আমি মিটিয়ে নিই আপসে ।
দিনের বেলায় চারিদিকে, বারুদ বারুদ গন্ধ
ভেজা বাতাস, ঝেঁপে আসে নাকে মুখে; দুহাতে
তপ্ত রোদ্দুর, একটার পর একটা যুদ্ধ চলে
আলোছায়াতে। নিরুত্তাপ আমি একলা ঘুড়ি হাতে।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমি, রণ-ক্লান্ত, শর-বিদ্ধ
অযথা চিৎকারে, ক্লান্ত পাখিদের ইতিউতি ওড়া-উড়ি
যন্ত্রণা ভালোবাসে নেমে আসে রক্তক্ষরণ; রাতের
নেশায় যাওয়া আসা ভালোবাসার জুয়াড়ি ।
----------------------------------------------------------------------
আমাকে দু’ফোঁটা অশ্রু দাও
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন
একজন বনলতা সেন খুঁজতে কখনো নাটোর যেতে হয় নি,
শান্তি নিকেতনে রৌদ্র উজ্জল দিনে, গাছের ছায়ায়
ধবধবে সাদা শাড়ীতে, কালো চুলের খোঁপাতে বেলি গুজে
অনাগত বাঙ্গালীর বেশে যে মেয়েটি একাকী বসে
শেষের কবিতা পড়ছিল,
কখনো মনে হয়নি সে হৈমন্তী।
হাজার হাজার প্রেমের কাব্যে পেলাম না
নজরুলের নারগিছ।
তোমাকে পেয়ে
আমার এই অশ্রুহীন চোখ স্তব্ধ হয়েছে,
আমি হয়েছি শব্দহীন প্রেমিক,
আমি তাই হাত বাড়িয়ে আছি তোমার দিকে।
যদি পার,
কিছুটা হাসি, কিছুটা চুলের গন্ধ, কিছুটা ঠোঁটের রং
আমার জন্য রেখে দিয়ো।
আমি বার বার ওগুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখব।
আজ আমার এই অন্ধ প্রেমে
তোমার কিছুই চাওয়ার নেই, জানি
আমার জন্য কখনো দু’ফোঁটা চোখের জল হবে?
আমি সিক্ত হব।
আমার জন্য কখনো দু’ফোঁটা চোখের জল হবে?
আমি সজিব হব।
কিছুটা অশ্রু,
কিছুটা হাসি,
কিছুটা চুলের গন্ধ,
কিছুটা ঠোঁটের রঙের খোঁজে
জেগে জেগে আকাশের বুকে কান পেতে তোমার শব্দ শুনি।
আমি নিঃশ্বাস ফেলতে পারি না,
আমি ঘুমাতে পারি না,
তোমার প্রেমে ডুবে গিয়ে শেষ নিঃশ্বাসে বলি
আমাকে দু’ফোঁটা অশ্রু দাও।
----------------------------------------------------------------------
ভালোবাসার জোয়ার
- সুবীর কাস্মীর পেরেরা
মাঝি আজ কাজে যাবা না?
পরানের গহীনে পিরিতের বাঁধ
ভেঙ্গে যাবে গো,
সামাল দিবা ক্যামনে?
টিনের চালের ফুটা দিয়া
ফোটা ফোটা ভালোবাসা
চুইয়ে চুইয়ে পড়ে;
শরীর কি ঢাকা যায়
ছেঁড়া পালের এক টুকরো
আঁচলে?
মাঝি বড্ড রশিক পুরুষ;
মায়ার জালে আটকে রেখে
মুচকি হেসে কয়,
আমার নায়ের পাল যে উড়ে
শীতলক্ষ্মার গায়।
ক্যামনে তারে রাখি ধরি
শিকল দিব পায়!
পিরিতের বান মারিলা জোয়ারে,
বানের জলে ভাসতে ভাসতে
কোন সওয়ারে?
মরা গাঙ্গে বান ডেকেছে,
মাঝি তাই কাজে যাবা না?
----------------------------------------------------------------------
চুম্বনে এসো সখা - ভেসে যাই কবিতায়
- মৃত্তিক মাসুম
চুম্বনে এসো সখা চুম্বনে এসো
সব ছাই উড়ে যায়
চুমায় চুমায় - চন্দন উষ্ণতায়
চুম্বনে এসো সখা - ভেসে যাই কবিতায়।
ঘুম না এলে সখা ডেকো রাত চুম্বনে
এঁকে দেব দু'চোখে চুম
কবিতার ডানায় ঘুম
নিয়ে যাবে স্বপ্নের ভুবনে।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে সখা ডেকো ভোর চুম্বনে
চুম্বনে জল - জলেই বল
দু'গেলাস চুম্বন পিয়ে
উঠবে জীয়ে - দেখ সত্য জীবন সন্তরণে।
দিনশেষে ডেকো সখা গোধুলি চুম্বনে
গোধুলি রাঙিয়ে দেব কপালে চুম্বনে -
কপালে চুম্বনে মুছে যায় দুঃখ-জ্বরা-ক্লান্তি
কপালে চুম্বনে মুছে যায় স্মৃতি - ধোয়াশার ভ্রান্তি।
চুম্বনে এসো সখা চুম্বনে এসো
সব ছাই উড়ে যায়
চুমায় চুমায় - চন্দন উষ্ণতায়
চুম্বনে এসো সখা - ভেসে যাই কবিতায়।
----------------------------------------------------------------------
চঞ্চল জীবন স্থবির হবে একদিন
- কবীর হুমায়ূন
নিশুত রাতের কান্না কখনো শুনেছো কি কান পেতে?
শিশির ধারায় অশ্রু তাহার ঝরে পড়ে নিরবধি;
তোমার চেতন এতোই রুদ্ধ, দেখোনি তা' কোন মতে।
মনন বিহীন মানবীর মন ধরিয়া রাখবে যদি,
তবে কেনো তুমি বন্ধু-চেতনে এই বন্ধুর পথে
হাতখানি তোমার বাড়িয়ে দিলে? এই মন হলে রদি-
তোমারও কিছু দোষ খুঁজে পাবে; জীবনের সংবেতে
জটিলতা জমে, তিক্ততা বাড়ে প্রতিদিন নিরবধি।
সব কিছু ভুলে, আবার যদিবা দোঁহে কাছাকাছি আসি
বিমল চেতনে; পরস্পরের অহংবোধের ছায়া
ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দূরের সাগরে; অতল জলের রাশি
ধুয়ে মুছে নিবে সকল কালিমা, মিথ্যার কালো মায়া।
এই চঞ্চল জীবনের কাল স্থবির হবে জানি,
তবে কেনো আজ নিতি টেনে আনি দুঃখের ছায়াখানি?
----------------------------------------------------------------------
শহর
- বিমূর্ত অনুক্ষণ
গোধূলির শেষ আলোটাও শেষ হল
আঁধার ঘণীভূত হচ্ছে
শহর বন্ধি মানুষগুলো বাসের হাতলে ঝুলছে
কৃত্রিম আলোয় ঢাকা পরেছে শহর
ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলে উঠেছে
কয়েকটা আবার নিভু নিভু করছে
আঁধার আরো জরিয়ে ধরছে শহরটাকে
ধীরে ধীরে নির্জীব করে তুলেছে
রাস্তার কুকুরটা ল্যাম্পপোস্টের আলোয় গুটিশুটি হয়ে
রাস্তায় গাড়িগুলোর গতি বাড়ছে
আঁধার আরো ঘণীভূত হয়েছে
রূপপোজীবিনীরা রূপের পশরা সাজিয়ে বসেছে
চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোটে পুরু লিপস্টিক
শহরের ভদ্র সমাজকে ব্যাঙ্গ করে হাসছে
রাস্তার পাশের ছোট্ট শিশুটার কান্না এখনও ভেসে আসছে
শহরটা আঁধারে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে
----------------------------------------------------------------------
আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা
- অরুন কারফা
আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা, যে কিনা তোলে হাসির বন্যা
গভীর উচ্ছ্বাসে
ভাঙ্গলেই সেই তন্দ্রা সুখের, টের পাই সবই মিছে দুখের
তার দীর্ঘশ্বাসে।
তাকে নিয়ে লেখা পত্র মনের, রং বেরঙের কাগুজে নৌয়ের
মতই যায় যে ভেসে
মনে হয়না পৌঁছবে মোহানা অবধি, যেখানে অজান্তে জলধি
মিশে গেছে এসে হেসে।
আমার রচিত যেসব গান, যাতে আছে তার অসীম অবদান
তারে বিনা সুর খোঁজে
সকালের রাগ যেন বাজে বিকালে,বড্ড পুরাতন ও সেকেলে
দুঃখী মেয়েটি সেজে।
এ সত্ত্বেও ঠিকানা আমার, তারি মাঝে আছে বেঁচে থাকার
জানি আমি গরবে
দাঁড়িয়ে থেকে দেখলে অত্যাচার, সে খোঁচা দেয় বিবেকে আমার
গর্জে উঠে সরবে।
----------------------------------------------------------------------
জীর্ণসেতুর ওপাড়ে
- রিপন গুণ
বিতর্ক তোমাকে ঘিরে থাকে
হাত বাড়ালেও তাই, বামনের চাঁদের প্রসঙ্গ
তোমার অহংভঙ্গী, নির্লোম ভ্রুয়ের রেখাকে
দূর থেকে স্পর্শ করি, রুদ্ধশিখা বাতি ছুঁয়ে যেন কোনও আগুনপতঙ্গ ।
সত্যি বলো, দেহলীন দীর্ঘ লাস্য শেষে -
ক্যামেরা মুগ্ধ রেখে ফিরে গেলে সাজঘরে ধীর,
আয়নায় এরকমই ঋজু থাকে গ্রীবা? এমনই খুন খুন হেসে...
কাজল নিখুঁত করো? নাকি কোনও শহীদবেদীর ।
ক্লান্তমালার মতো ঝরে যেতে ইচ্ছে হয়, উজ্জ্বল মিথ্যের থেকে?
আমি জানি বিরতিতে- বিছানায় প্রসাধন রেখে
নগ্ন বেরিয়ে এসে, নির্জনে হাওয়ায় দাঁড়াও---
বিতর্ক তোমার চোখে কবেই কাজল, প্রিয় হ্যানা মন্টানা -
ইদানীং চোখ চুঁইয়ে চোখের কোলেও দেয় চুপিসারে হানা,
মেকাপে ঢাকেনা -
আমি জীর্ণ সেতুর বুকে হাত রাখি... ভুলে যাই তোমার ঠিকানা ।
----------------------------------------------------------------------
কবিতা
- মুজিবুর রহমান মুনীর
অনেক অধমেও লিখতে পারে উত্তমের কবিতা।
কিন্তু অনেক উত্তমেও জানে না
তার পঠন-পাঠন অনুধাবন মর্মে লুকানো স্বর্গ বারতা।
----------------------------------------------------------------------
জলদণ্ড
- ত্রিচরণ
'ভরা কলসি বাজে কম' - কোন বাদ্য বাজাবি বল -
শাওয়ারের নিচে দাঁড়ালেই বুঝবি
ছাদে ট্রাঙ্কি কত জল।
----------------------------------------------------------------------
প্রাণের রাখাল।।
- ইন্দ্রলেখা ভট্টাচার্য্য
আকাশে আজ ঐ পাংশু মেঘের দল,
আজকে হাওয়াও আনমনা, আচ্ছন্ন;
তারারা সবাই পরাজিত সেনাদল,
জানেনা চাঁদ, সে বিরহিনী কার জন্য !
আজকে উতল নীল যমুনার জল,
আধো-জোছনায় গোপভূমি যেন বন্য;
ব্রজবাসিনীর দুটি চোখ ছলোছল,
প্রাণের রাখাল পরবাসে গিয়ে, অন্য।
----------------------------------------------------------------------
একবার ডেকে দ্যাখো
- সুদীপ রায়
একবার ডেকে দ্যাখো ।।
আমি ঠিক সাগর উজিয়ে এসে যাব ।
শুনেছি, তোমার দরজায় নাকি আজকাল
ভিড় কম থাকে ।
শুনেছি বিকেলের শেষ আলো নাকি আজকাল
তোমার বিষণ্ণ মুখের ছবি বসে আঁকে ।
সরোবরে ফুলেরা এখন ফোটে না তেমন করে নাকি আজকাল ।
যদি খুব একা লাগে,
একবার ডাক দিয়ে দেখ,
তোমার কাছেতে ঠিক এসে যাব ।
আমিও একাকি ।
---------------------------------------------------------------------