কবি, ক্ষমিয়ো অপরাধ!

না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
থেকে আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ ছিল; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।

খুব আনন্দেই কাটছিল আমার! বেশ চলছিল আমার কাব্যপাঠ - কাব্য-পাঠাভ্যাস।
কিন্তু বিধি বাম - ডান পাশে হাটলো না!

কেউ কেঊ কবির মনোক্ষোভের কারণ হয়ে উঠলাম ভাললাগা কবিতায় সিরায়াল
দেয়ায়। প্রশ্ন উঠে আসে রেটিংয়ের!

কবি, ক্ষমিয়ো অপরাধ! এখানে আসলে কোন রেটিংয়ের ব্যাপার ছিলনা মোটেই।
তাছাড়া, কবিতাকে রেটিং করার মতো এত ক্ষমতা, জ্ঞান বা প্রস্তুতি কোনটাই
আমার নেই। এটা একান্তই আমার ভাললাগা কবিতার সংখা বা সিরিয়াল মাত্র।
আর আমার এ ভাললাগার প্রকাশ কবির মনোক্ষোভের কারণ হয়ে যাওয়ায় আমি
প্রস্থানে।

ধন্যবাদ, কবিকুল। বিষয়টা আমার মাথায় এভাবে খেলেনি। ক্ষমা করবেন এই
সৌখিন কবিতা পাঠককে। কবির কাছে অনেক আনন্দের ঋণ রয়ে গেল আমার
চিরকালের হাতে।

কবিতা আমাকে নিরন্তর সুখ দেয়, সোহাগ করে, ঘুমিয়ে গেলে জাগিয়ে দেয় -
বলুন, কবিতাকে কীভাবে ভুলি! না, আপনারা লিখে যান নিরন্তর - তার ভিতরে
কুড়িয়ে পাবো অনেক অনন্য কবিতা - আর আমি ঠিকই সেগুলো নির্বাক পাঠে
হরণ করে নেব - রেখে দেব শিকোয়!

কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় রয়ে গেলাম। ধন্যবাদ কবি সম্প্রদায়। - সৌকপা।
--------------------------------------------------------------------

ঢেউ ভাঙার খেলা
- অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়


এক বুক জলে দাঁড়িয়ে আছি
ডুবে আছি জলে আর অনন্ত আকাশ দেখছি
নীল রং ছড়িয়ে রয়েছে ভুবনজুড়ে, ঘন নীল...
ঢেউ ভাঙার খেলায় কেমন মেতেছে দ্যাখো
অবলীলাক্রমে তছনছ করছে কেমন উন্মাদ বাতাস।

এ পাপ আমার, পাপবিদ্ধ দিনলিপি এ আমার...
মিথ্যা আমার বর্ণিত অমরত্ব
অমরত্ব ভিক্ষা চাওয়া আমার দুর্মতি স্পর্ধা...

বৃথা চাতুরি করি প্রতিদিন তাই
প্রতিদিন ভেঙে ফেলি নিজেকে কাচের মতোন
প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাই আমি
কেন-না, হৃদয়ের গোপন অরণ্যে কারা যেন
                                   বৃক্ষ ধর্ষণ করে।

কত রাতদিন পরুষ-রক্তে ভিজে গেছে বুক
ভিজে গেছে নরম মাটি আর
                               কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয়,
ভাবছি কোকিল কি আর ডাকবে না এ জীবনে
ফুল কি ফুটবে না বাতাসে সুবাস ছড়িয়ে--
জর্জরিত এই ভিখিরি আর কতদিন পড়ে থাকবে
                                               মরা ফুটপাথে।

এক বুক জলে দাঁড়িয়ে আছি
ডুবে আছি এমনভাবে
যতখানি নিজের পাপ-সমষ্টি লুকিয়ে রাখা যায়
আর প্রতিদিন ঢেউ ভাঙার খেলায়
                                 মেতে উঠছি এইভাবে...
আর কতদিন ? ক...ত...দি...ন ?

--------------------------------------------------------------------

বেদনার উৎস থেকে
- নাইবা গেলো জানা


দুহাত দুরে থেকেই বল
এখনো বেশ আছে সময় - তোমার আমার মতবাদ
কিংবা আমাদের কথা কাহিনী -স্বরবিন্দু
এ খোলা আকাশের নিচে -- ভেবে দেখ
তোমার শুধু তোমার হাতে হাত রেখেছিনু বলেই
এ আসঙ্গ পৃথিবী আমাদের হলো --
কেটে যেতে পারাই যেত - দুটো জীবন - ধুলো মেখে
এই পরাবাস্তব উন্নতির নাই বা হয়ে সঙ্গী
এই সফলতা বা ব্যর্থতা গায় না মেখে
হায়রে এ জীবন বড় সাধের জীবন --- ভালবেসে


দুচোখ বুজলেই পালে পালে আমি তুমি
পথে হাটি --  ব্যস্ত শেখায় সবাই একে একে
রাষ্ট্র শেখায়, সমাজ শেখায়, ধর্ম শেখায় ...
ন্যায়, অন্যায় -- মূল্যবোধ --- বিচিত্র


আমার হাফ ধরে , সত্যি আমার হাফ ধরে ...
বেদনার উৎস থেকে তোমায় দেখি
গভীর ভাবে দেখি --- কাঁদছ কিনা তুমিও
এ হাজার বছরের মানুষ --- শুধু ভালবেসে জীবন শিখল না।

--------------------------------------------------------------------

অপারক
- ঝন্টু মণ্ডল


অন্ধকারের বাঁধে আটকে পড়া আলো
ছোট্ট, অপরিমেয়।
বুড়ো হতে থাকা তারারাও অপারক আজ
হাত বাড়াতে!

ক্ষোভের বন্যায় আসাড় আজ
দুর্বলতা ভেবোনা!
আমার জমা তোমার পুঁজি
অনেক হিসেব বাকি।

তোমার পাঁচ-তারার আবর্জনায়
ভাসে আমার ঠাঁই।
খেটে খাই ঘাম ঝরাই...
তোমার টেবিলে না-খাওয়ার পাহাড়!

আমার স্বপ্ন-গুড়ো খাবি খায় মিছিলে
প্লাকার্ড আর স্লোগানে।
তোমার মুখে প্রশান্তির হাসি
লাঠি আর বুলেটে!

নতুন বছরে নতুন শুরু
তবু পিছুটান---
ভুলিনি লাশেদের গুণতি
মৃত্যু---তো'কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি।

তুমি খুশি থাকো রাধাচূড়া হয়ে
আমি কৃষ্ণচূড়া হতে পারবোনা!
আমার ফাঁপা পাঁজরে জমেছে..
ক্ষুধার্ত কালো-রক্ত!

--------------------------------------------------------------------

কাঁটার গোলাপ
- হাদী রকিব


ধনুকের মত টানটান হয়ে আছে সবুজ সময়,
যেন বাতাসেও রাখা আছে ধারালো বিষ্ফোরক।
খাদের কিনারে এসে বুঝি-
একাকী নদীর পাড়ে একা বসে আছি!


দেখি জাহাজ ভিড়ল ঘাটে,
দেখি আকাশে আকাশে ভাসে বিদায়ী মেঘের চিঠি।


একটি যাপন-দৌড় শেষে বুঝে নেয় জীবনের এথলেট-
মোলায়েম বৃষ্টির পর্দা  
সতত নিভিয়ে দেয় বারুদ মাথার কাঠি।
নইলে আমার তুমি হয়ে জ্বলে উঠবার কথা!


হাহাকার ভরা শূন্য হৃদয় আমার,
তুমি কেঁদনা এমন আর।
জলের জ্বালানি দিয়ে
ক্ষেপিয়ে তোলনা সুপ্ত অগ্নিগিরি!
যে ঘুমিয়ে আছে তাকে নিবিড় ঘুমুতে দাও!


বস্তুত জীবন মানেই কাঁটার গোলাপ-
কিছু ঘ্রাণ
কিছু রূপ
আর কিছু রক্তের স্বাক্ষর!

--------------------------------------------------------------------

ফাঁক ফোকর
- আহম্মেদ রফিক


ফাঁক ফোকরের গর্তেই থাকে জলসা
নখের মাঝে দর্পণ

পৃথিবী ঘুমালেও জেগে থাকে শর্তাদি
সত্যেরা ক্লায়ক্লেশে ভাসায় নাক
বোকারা ভাবে
ঘুমাও পৃথিবী আরো

ফাঁক গলে বিজলী বাতি নিয়ন আলোর শহর
বেচাকেনার হৈচৈ
অথবা ধর্ষণ

দেহ শুকায় বৈষম্যে
অর্বাচীন প্রাণের আকুলতাও !

--------------------------------------------------------------------

সাধনার সুর
- সুদীপ তন্তুবায় (নীল)


এক শাখে শত বিহগ
ডেকে ডেকে উঠে,
সাধনা বা শখে দানা
খায় খুটে খুটে ।

সকলে কূজিয়া উঠে
নিজ নিজ সুরে,
সাধনার সুর তব
যায় বহুদূরে ।

শখের কূজন ছোটে
ধূলো বালি গায়,
হয়ে ক্লান্ত পথভ্রান্ত
গোধূলিবেলায় ।

দায়বদ্ধ সমাজেতে
পড়ে শত কাজ,
কেও থাকে কেও যায়
হলে সন্ধ্যা-সাঁজ ।

কেও বা তরুর তলে
নিয়ে জীর্ণ পাতা,
কূজিতে কূজিতে গাঁথে
হৃদয়ের গাথা ।

এক শাখে মত্ত সবে
হও সাধনায়,
একাগ্রে পালন কর
সমাজের দায় ।

একটা কথা বলে রাখি
অন্তিমের বেলা
-যেমনই হোক গাথা-কথা
করোনা অবহেলা ।

জাগো কবি জাগো সবে
নিদ্রা করো দূর,
লেখনী হাতেতে গাঁথো
সাধনার সুর ।

--------------------------------------------------------------------

বিদায়
- সামিউল ইসলাম সরোজ


মাটিতে শুয়ে আমি, আগরবাতির ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে পুরো ঘর।
উত্তরে মাথা দক্ষিণে পা আর পূব পশ্চিমে অনেকগুলো অশ্রুসিক্ত মুখ।
আমার বুকের উপর মায়ের মাথাটা পড়ে আছে,
মায়ের সুন্দর মুখটা এত ফ্যাকাশে কেন আজ?
চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে আছে।
অশ্রু থামছে না, বিলাপ থামছে না।

ওই যে, ঘরের ঠিক কোণাটায় আমার রূহটা, যমদূতের শক্ত হাতের আড়ালে বন্দি।
সেটাও কেমন ক্লান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে চেয়ে আছে।
খুব চেষ্টা করছে যমদূতের হাতের বাঁধন ছুটে আবার আমার ভিতরে ফিরে আসতে,
আমায় জাগিয়ে তুলে সে আবার মা'কে বলতে চায়, "কেঁদোনা মা, ফিরে এসেছি"।

আশেপাশে তো সবই পরিচিত মুখ আমার,
আশ্চর্য এ দিনে সকলেই একত্রে ক্রন্দন মেলায় শামিল হয়েছে।
আমার বাবা, কাছে আসতে পারছেন না, দূরেই দাঁড়িয়ে আছেন।
ছেলেকে কোলে করে কত ঘুম পাড়িয়েছেন ছোটবেলায়।
কিন্তু, আজকের ঘুম ভেঙ্গে ছেলে আর কখনোই উঠে বলবে না, "বাবা,গুড মর্ণিং"।

আমার রূহটা আবার নড়ে চড়ে বসে, বাবার দিকে তাকায়।
আবারও যমদূতকে মিনতি করে, "শুধু একটিবার, শুধু একটিবার ফিরে যেতে দাও,
শেষবারের মত বাবার পিঠে বসে ঘোড়া দৌড় খেলতে চাই।"
"শেষবারের মত উঠে দাড়িয়ে বলতে চাই, "দেখো বাবা, তোমার চেয়ে লম্বা হয়ে গেছি"।

কিছুক্ষণ পরেই আমার শরীরটাকে গোসল করনো হবে।
জানাযার পর সেই সাড়ে তিনহাত মাটির ঘরে চলে যাচ্ছি।
শুনেছি বাবা নিজ হাতে সেখানে মাটি ভরবেন।
জানিনা, সন্তানকে শেষ দেখার অনুভূতিটা কেমন।
বাবা পারবেন কিনা জানিনা।
যাই হোক, সবাইকে বিদায়।

--------------------------------------------------------------------

ওকে বল সখা তোরা ফিরে যেতে
- অরুন কারফা


ওকে বল সখা তোরা ফিরে যেতে
ক্ষেপে উঠেছে হোলী খেলায় মেতে
কারো না কারো ক্ষতিতে বড়
আনন্দ পায় ও অর্থ জমিয়ে
হস্ত যুগলে রক্ত রাঙ্গিয়ে।

ভীমরুলের চাকে ছুঁড়ে দিয়ে ঢিল
ঝাঁকে ঝাঁকে যখন তারা পিলপিল
দংশায় উড়ে হেলায় কেমনে
ও তখন কলস তলায় পেতে
রক্ত কণিকা জমায় নেশাতে।

রক্তের সাথে ও জানে সম্পর্ক স্বর্ণের
যেমন জন্ম জন্মাতর দানব ও ধনের
হিসাবের খাতায় পাহাড় জমে যায়
তবু ঘুণাক্ষরেও মনে হয়না তার
কাজ করি সামান্য কিছু মানবতার।

অথচ ভাণ্ডারে যা ছিল সঞ্চয়ে
কয়েক পুরুষ খেত তার বিনিময়ে
আর কিছু বিলিয়ে হেসে বুক ফুলিয়ে
সর্বজনের হতে পারত প্রিয়
কর্ম করে কিছু প্রশংসনীয়।

--------------------------------------------------------------------

ঘুম
- সরকার মুনীর


হায় ঘুম
নিরবচ্ছিন্ন জাগরণ এক অলীক সম্ভাবনা
তাই প্রতিনিয়তই আমরা কৃতার্থ তোমার কাছে।
স্বল্পমেয়াদী এই মৃত্যুই যে আমাদের
জেগে থাকা জীবনের টনিক।

হায় ঘুম
নির্ঘুম প্রহরে আমরা কতো পন্থাই না খুঁজি
শুধু একটু তোমার দেখা পাবার আশায়।

হায় ঘুম
অবচেতন এ অন্ধ-ক্ষণে কখনো বা দেখাও
স্বপ্ন নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র-
অবাস্তব, কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাপঞ্জির সম্ভার।
কখনো তা ইঙ্গিত পূর্ণ- ভবিতব্য উন্মোচক
কখনো বা ভীতি সঞ্চারক - অস্বস্তির বাহক।

হায় ঘুম
তবুও চাইছি তোমাকেই
চাইছি নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে দেহমন সমর্পণ-
নিয়মতান্ত্রিক খন্ড-মৃত্যু, অপরিহার্য কর্ম বিরতি।

হায় ঘুম
কেউ চাই না আবার সেই তোমাকে যে ঘুমে আর
ভোর আসে না এই পৃথিবীর আলোতে।

অথচ সেই ঘুম- শেষ ঘুম, তুমি
আছো যে আমাদের সবারই অপেক্ষায়।

--------------------------------------------------------------------

রিক্ত
- মামনি দত্ত


কিছু পৈশাচিক উল্লাস হাওয়ায় মোরগের ঝুঁটি
টিপে রাখে, ঋতু ও পথ রেখেছে আস্তিন বলয়ে
কুড়ানি রা খুঁটে খুঁটে বাকল সাজিয়েছে
পাতা ঝরা অরন্যের প্রবাদে।

মাটি কর্ষনে রূপশালী ধান আরেকবার জাগে,
দুচোখ ভেসে যায় কীর্তিনাশার দিকে
নির্মাণ ছুঁয়ে স্বপ্ন ফেরি কোন এক পউষ রাতে।

ঝিরিঝিরি মৃত বৃষ্টি আলগোছে পড়ে থাকে
পৃথিবীর শেষ দ্বীপের কিনারায়
উল্লাসের প্রসাদী গন্ধ জাগে বিনোদন সীমায়।।

--------------------------------------------------------------------

আমি একাত্তর দেখিনি
- রিয়াজ মাহমুদ


আমি একাত্তর দেখিনি
দেখিনি মহান স্বাধীনতা,
আমি দেখেছি নিপীড়িত জনতার
নির্মম বাকহীনতা।

আমি দেখিনি চোখে ত্রিশ লক্ষ বা  
ততোধিক শহীদের লাশ
দেখেছি তাজা লাশের উপর
মানব রূপী দানবের নৃত্য উল্লাস।

আমি দেখিনি আর এক রেমেসিসের
শাসন আর স্বাধীন বাংলার স্বাধীনতা হরণ।  
দেখেছি তবে সত্য লেখার দায়ে  
এক কলম সৈনিকের কারাবরণ।

আমার কানে বাজেনি কোন বীরাঙ্গনার
প্রলাপ আর শহীদ জননীর দীর্ঘশ্বাস,
আমি দেখেছি চোখে, মায়ের সামনে
ধর্ষিতা মেয়ের রক্তাক্ত তাজা লাশ।

আমি দেখিনি ক্ষুব্ধ সৈনিকের  
রোষানলে সে রেমেসিসের পতন,
আমি দেখেছি এক নক্ষত্রের শ্লীলতাহানী
আর লক্ষ জনতার হৃদয় ক্রন্দন।

আমি দেখিনি একাত্তরের হায়নাদের
নগ্ন তান্ডব আর গণহত্যা,
আমি দেখেছি দুহাজার তেরর
বর্বরচিত, নৃশংস নরহত্যা।

--------------------------------------------------------------------

লুকোনো শীৎকার ( মূল : ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা)
- অর্বাচীন স্বজন

.
লুকোনো প্রেমের গোপণ শীৎকার!
জন্ম হতে বয়ে চলা ক্ষত! পুড়ছি নিয়ত!
শুষ্ক ক্যামেলিয়া ফুল! হুল ফুটানো সূচ!
সমুদ্র তীরের দেয়াল বিহীন নগর!

রাত্রিলগ্নে বলে চলি জীবন বৃত্তান্ত
স্বর্গময় পাহারশ্রেণী, নির্জন উপত্যকায়।
কন্ঠে আর অন্তরের গভীর ছেয়ে গেছে পশুত্বে
সীমাহীন নৈঃশব্দ্য! কম্পমান আইরিস!

আমাকে আইসবার্গের শীতল কন্ঠ শুনতে দাও
আর মিলিয়ে যেতে বলো না কভু
এমনিতেই এখানে প্রতিদিন আকাশ ভেঙে পড়ে।

আমার শক্ত মাথার খুলিকে মুক্তি দাও!
দয়ালু হও! বন্ধ কর অসহ্য নির্যাতন!
চলে যাব প্রকৃতির কোলে,
চলে যাব ভালবাসায়।

--------------------------------------------------------------------

সমকোণে এসো
- মৃত্তিক মাসুম


সূক্ষকোণে ছায়া ছোট হয়
৯০ ডিগ্রীতে
পদতলে
রয়
স্থুলকোণে
  দীর্ঘ হতে হতে
    গোধুলির আড়ালে যায়।

ছায়া
অন্ধ-
কার
ছায়া
অন্ত-
রায়
তাই সবকিছু সমকোণে চাই।

সম-
কোণে
দেয়
সূযটা
সবচেয়ে আলো উষ্ণতা।


    সমস্ত
  সূক্ষকোণ
জুড়ে প্রস্তুতি -
আশা-আশ্লেষ স্বপ্নসিঁড়ি

সম-
কোণে
এসো
এসো স্বপ্ন শাসন করি।

--------------------------------------------------------------------

স্বপ্ন
- চন্দ্রশেখর (আলোর পথযাত্রী)


পথ হাঁটতে কাঁটা বেধে তবুও পথে সুখই খুজি
সুর কেটে যায়, ছন্দ হারাই, তবুও ভাবি ‘স্বপ্ন বুঝি’!
স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে আছে তুলসীতলায় ইটের খাঁজে
স্বপ্নগুলো লুকিয়ে আছে ঢাকাই শাড়ির আলতো ভাঁজে।
স্বপ্ন আমার ইচ্ছে-ঘুড়ি হালকা হাওয়ায় উড়তে থাকে
স্বপ্ন আমার কালো ভ্রমর, দাঁড়িয়ে থাকে পথের বাঁকে।

স্বপ্ন জাগে নিশুত রাতে রণক্ষেত্রে, ধানের মাঠে
এক কিশোরী জলের স্বপ্নে জৈষ্ঠ্যরোদে যোজন হাঁটে
রেলস্টেশনে স্বপ্ন খোঁজে গুটিকয়েক ন্যাংটো ছেলে
পেটের দায়ে আরেক নারী লজ্জা বেঁচে অবহেলে
স্বপ্ন আমায় ছুটিয়ে বেড়ায় খর নদীর দূর্বিপাকে
অধরা সব স্বপ্নগুলো রক্তে শিরায় জড়িয়ে থাকে।

স্বপ্ন দেখে কলের মজুর চিমনি দিয়ে উঠবে ধোঁয়া
স্বপ্ন জাগে দেহের কোষে, শরীর খোঁজে একটু ছোঁয়া।
একটু ছোঁয়া, স্নেহের পরশ, একটু ভালবাসতে চাওয়া
বাঁচার মন্ত্রে বেহাল ডিঙায় সাগর বুকে ভেসে যাওয়া
স্বপ্ন রঙিন, স্বপ্ন ধূষর, বিষের নীলে রক্তের ছাপ
ভূখা পেটে স্বপ্ন দেখা! হে মোর স্বদেশ, কী অভিশাপ!

--------------------------------------------------------------------

আমি কবি নই
- জিহান আল হামাদী


অনেক যুগ কবিতা লিখিনা
ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে কালির দোয়াত,
কাগজের পাতা সন্ধিকাল পেড়িয়ে
হুট করেই বুড়িয়ে গেছে গতরাত;
তবু কবিতা লিখতে পারিনি বহুকাল
ওরা এখন আর আসে না,
একঘেয়ে কবিতা সাজাতে সাজাতে
ওরা ক্লান্ত, আমি ছন্দ-প্রতিবন্ধী ।।

কী দোষ আমার ?
পুরোটা জীবন যে হাতে তুলে নিয়েছি কলম
সেই হাত যখন তুলে নেয় অস্ত্র,
তখন আর কী আশা করো ?
আহত আর্তনাদের ভিড়ে রক্ত দিয়ে
দু'কলম লিখতে তো পারছি !!
এই কি বেশি নয় ??

যে শব্দমালা আমায় ছেড়ে যাচ্ছে
তাদের জীবন বাচাতেই এত যুদ্ধ !
কবি পরিচয় দিতে চাই না বলে
আমাকে কবিত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে ওরা ।।

নিয়ে যাও শব্দ, তোমাদের বর্ণ
কবি হতে চাই না;
তবু ছয়শ কোটি মানুষের ভেতর রয়ে যাবো
ষোড়শী সব প্রেমিকা আমার জন্যই কাঁদবে-
তাদের হৃদয়ে প্রথম ভালবাসা হয়ে বেঁচে থাকবো
নিয়ে যাও কবিতা, আমি কবি নই ।।

আমি কোন কবি নই
আমি পৃথিবীর সকল প্রেমিকার ভেতর
লুকিয়ে থাকা প্রেমিকের পঙক্তি,
আমি ছয়শ কোটি মানুষের ভেতর
লুকিয়ে থাকা শব্দ-মিছিল ।।

--------------------------------------------------------------------

তোমাকে আজ ছাড়ছি না
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন


যেদিন তুমি লাল শাড়ি, লাল টিপ পড়ে এসেছিলে,
ইচ্ছে হচ্ছিলো সূর্যোদয়ের লাল আভাটুকু বদলে দিই।
বহুক্ষণ মুখোমুখি দুজনে,
কয়েকবার তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে
মনে হচ্ছিলো কাজল কালো চোখের এই কালো টুকু
অন্য কোথাও না থাকলে ভালো হত।
তোমার দৃষ্টির রং, তোমার কৃষ্টির রং,
তোমার বিশ্বাসের রং, তোমার নিঃশ্বাসের রং,
ব্লাউজের নীচে কিছু মসৃণতার রং,
খুব কাছে থেকে মুক্তাকাশে রং ধনু দেখার মত।
দূরে থেকে কাছে যায়,
কাছে থেকে আরও কাছে আসি
তোমার নিঃশ্বাসের বাতাস শুনে শুনে
যৌবনের শিকড়ে ঢেলে দিই আরও কিছু রং
কামনার রং, বাসনার রং,
তুমি স্তব্ধ, তুমি অবাক,
ইচ্ছাতে তুমি নিরুপায়,
আনন্দের ক্লান্তির রাঙ্গানো দু’চোখ
ফের চোখ তুলে কিছু ভালোবাসা বিনিময়,
রঙের ভিখারী হয়ে কাটিয়ে দিলাম সারাটা দিন।
দিন জানে, বেলা শেষ
সময় জানে, যেতে হবে
আকাশ জানে, মেঘ হবে
মেঘ জানে, বৃষ্টি নামবে,
বৃষ্টি জানে, তুমি আমি ভিজব
কেউ যেন আজ আমাদের তাড়া না দেয়,
কতক্ষণ ধরে বসে তুমি আমি জীবনের জন্য,
খুব আস্তে, ফিসফিস করে নিজেকে বলি
সব রং না দেখে তোমাকে আজ ছাড়ছি না।
সব রং না মেখে তোমাকে আজ যেতে দিচ্ছি না।

--------------------------------------------------------------------

বাস্তবতা, যেন এক অপ্রিয় সত্য বাণী
- সাগর কাজী


এখন অনেক রাত ,
শুয়ে আছি মস্ত ইমারতের ছয় তলায় ।
ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে আমি জানালার পাশ ঘেষে -
ঘনঘোর নিশীথে আছি তাকিয়ে মেলে দিয়ে জানালার দ্বার অন্ধ আকাশ পানে ।
ফেলছি দু চোখের পলক ;ভাবছি আনমনা হয়ে ,
কি এক আশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে দাঁড়ায়ে আত্ন প্রতিষ্ঠিত ইমারতটি -
অচিরেই পড়ে উঠল মনে আত্ন চিন্তা ,নিজকে নিয়ে সুদৃঢ় এক ভাবনা ।
জীবনের সংগ্রামময় পথে হতে হবে আমাকেও বড় ,এক দীর্ঘ উচ্চতা সম্পন্ন ,
গাঢ় ,মজবুত ভিত্তির মতো হয়ে উঠতে হবে প্রতিষ্ঠিত ।
বিস্মিত দৃষ্টি হঠাতই চলে গেল অদূর আকাশের তারকা দলের ভীড়ে ,
জ্বলজ্বল তারকাদের পানে চাইতে না চাইতেই এক নূতন ভাবনা উদিত হল ।
হতাম যদি আমি তারকা ,জ্বলতাম ঐ আকাশে আলোক ঐশ্বর্য নিয়ে ।
ভাবতেই চলে এলো ঘুম ;চোখ জোড়া স্তব্ধ হয়ে এলো,
অচেতন তন্দ্রাময় নিদ্রায় যাই চলে ভেসে স্বপ্ন মেলায় ।
বিস্মিত করে নিজকে আবিষ্কৃত করলাম মুক্তাকাশের জ্বলজ্বল তারকার শোভায় ,
আলোক ঐশ্বর্যে শোভিত হয়ে অভিভূত যেন আমার আমি !
পৃথিবীর বুক থেকে আছে চেয়ে লক্ষ কোটি আঁখি পলকহীন আমার পানে ,
আছে চেয়ে এক মুগ্ধময় দৃষ্টিতে ।
যেন সবাই চায় পেতে একই ঐশ্বর্য ,
করতে চায় আপনকে সেই মুগ্ধতাপূর্ণ শোভনের শোভায় শোভিত ।
ঊষার উষ্ণময় ঝলমল রদ্দুর আলোয়
আঁখি জোড়া ঘুমহীন হল ,
এখন স্বচ্ছময় এক সকাল ,
মুখোমুখি আমি বাস্তবতার ।
স্বপ্ন যতটাই সরল বিপরীতে রয়েছে তার
বাস্তবতা ।
যতটাই সহজ ভাবায় স্বপ্ন
বাস্তবকে ততটাই কঠিন ভাবায় বাস্তব
স্বপ্নকে ,
স্বপ্ন অচিরেই দেয়
এনে ঐশ্বর্য ;বাস্তবতার
প্রাতে নামতে হয় এসে সন্ধান সংগ্রামে ।
বাস্তবতা ,যেন স্রস্টার এক
অতি কঠোর ,অতি অনমনীয় ,অকোমল
দান !
বাস্তবতা ,যেন এক অপ্রিয় সত্য বাণী !

--------------------------------------------------------------------

ফল হত
- সুশীল রায়


মহাশূন্যে হাত পেতে আন্তরিক সারাটা জীবন
যদি সত্য সাধনায় যথার্থ দাঁড়িয়ে থাকা যেত,
যদি বৃক্ষ হয়ে যেত আরাধনা, নিবেদন, ব্রত;
- হয়ত সময়োচিত ফল হত করতলগত।

--------------------------------------------------------------------

আলো
- অধীর কুমার সিনহা


আলোর মাঝে দাঁড়িয়ে আমি খুঁজি কোথায় আলো?
রকমারি ঝিকিমিকি ধাঁধায় চোখে লাগে সব কালো,
পায়ের কাছে প্রদীপের শিখা দেয় তার মিষ্টি ছোঁয়া
হাজার বাতির ভিড়ে তারে যায় চিনে নেওয়া।

--------------------------------------------------------------------

অকাল বোধন
- মহারাজ


আমি হারিয়ে যাচ্ছি গভীরে, আরও গভীরে...
সুদূর কোন জলপরীর দেশে-
যেখানে একমাত্র সুখ-শান্তি পাশাপাশি এসে বসে!
চারিদিকে পাখামেলে ভেসে বেড়াচ্ছে কত শত জলপরী...
কাকে ছেড়ে কাকে দেখি;
আহা! মরি মরি কত না সুন্দরী!

আমার প্রভাত স্বপ্ন আজ আবার নতুন দিশা পাবে!
(হঠাৎ)- আআআ...মোলো যা!
কখন থেকে ডাকছি, তা কখন বাজার যাবে?
চোখের পাতায়  আঁধার নেমে আসে,
চোখ চেয়ে দেখি আমি, একি! সামনে দাড়িয়ে কে...
গিন্নি না অন্তর্যামী?

(গিন্নি)- বলছি! সুখ সায়র ছেড়ে এবার তুমি জাগো।
(আমি)- সামনেই এক এক ধূর্ত সার্ক; স্বপ্না তুমি এখন ভাগো!!!
          
            বউ নয় যেন সাক্ষাৎ পার্বতী...
            শুধু খাঁড়ার স্থানে ধরা আঁশবটি!

স্বপ্নের এই অকাল বোধন হয় তো, এমনই রোজ!
স্বপ্নালু চোখে, তবু রোজ করি; স্বপ্ন পরীর খোঁজ।
স্বপ্নের এই অকাল বোধন হয় তো, এমনই রোজ!

(মাছের বাজারে...)

                - দাদা, জলপরী কত করে?
(ভেদো মাছওলা রেগেই আগুন, ওর মেয়ের নাম ও তো পরী)

               - পরী বিক্রি নেই; এই কালু তক্তাটা  নিয়ে আয় তো?!

               - আবার তক্তা কেন? এমনিই চলে যাবো!
(পালিয়ে...)

               - এখন আমি পালিয়ে বাঁচি;
               - আরেকটু হলেই কাঁচি!
               - ভাগ্য জোরে বেঁচে গেছি...
               - আরেকটু হলেই কাঁচি!

৩-টি থলে বোঝাই করে, সন্তর্পণে ফিরি বাড়ি!
আমি তখন লৌহ পুরুষ,
যুদ্ধ জয়ের গন্ধ গায়ে... সে অসীম বাহাদুরী,
গিন্নি তখন আয়ত মুখে; লজ্জাবনতা নারী!
যুদ্ধ জয়ের গন্ধ গায়ে... কি অসীম বাহাদুরী!!!

--------------------------------------------------------------------

সকল কবিতা তোমাকে নিয়ে
- কবীর হুমায়ূন


আমার সকল কবিতা তোমাকে নিয়ে
        ইনিয়ে বিনিয়ে লেখা;
শব্দের তীর বিদ্ধ করে ভাঙ্গাবো না আর অহমিকা।
ঘৃণায় কাটায় এঁকে দিবো বুকে
         শতাব্দির অন্ধকারের কালো দাগ,
নাইবা রইলো শুদ্ধ-চেতন, নাইবা রইলো অনুরাগ।
আমি তো কবি নই -
প্রেমের ফল্গুধারায় জলের ভেতর এঁকে যাবো
          আশ্চর্য স্মৃতির ফলক!
বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে তোমার অবহেলায়;
তাই, জেগে উঠে অপ্রেম কবিতার ঝলক।

বুড়ো অশ্বত্থের তলে বসে -
প্রার্থনার ভঙ্গিতে কতোই যেচেছি বিমল ছোঁয়া,
শীত-কুয়াশার শরীরে এঁকে গেছি নিরন্তর
বসন্তের পরাগ রেণুর নিপুন আল্পনা।
তোমার হৃদয় গলেনি -
অনেক বৃষ্টিতে ভেজা কদম ফুলের সৌরভ ছোঁয়ায়;
তুমি আজ ঘোর অন্ধকার -
তাতালো রোদে বিস্তৃত মাঠে মরিচিকার নীল ধোঁয়া।

--------------------------------------------------------------------

আমি মানুষ
- সুবীর কাস্মীর পেরেরা


বন্ধু নীল প্রায়ই বলত,
আয়না মন্দিরে যাই;
দেখবি মনটা ভালো হয়ে যাবে;
মা দুর্গার  আশীর্বাদে, তোর মনের ক্ষত সেরে যাবে।

বড় আশা নিয়ে, মন্দিরের বাইরে
দাঁড়িয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি,
পুজোর থালা হাতে পুজারী,
ধূপ-ধূয়ো, কীর্তন , খোল, মন্দিরা,
উলুধ্বনি আর আশীর্বাদের প্রসাদ।
বড্ড সাধ জাগে, যাই প্রসাদ নিই, কির্তন  করি।
না যাওয়া হয়নি;
আমি যে বিধর্মী!

আহম্মেদ রফিক ভাই বলেছিল-
মসজিদ হলো শান্তির জায়গা;
আমিও তাই জানি,
জুম্মাবারে ছুটে গেলাম বায়তুল মোকাররম মসজিদে;
হাজারো মুসল্লীর মিলন মেলা
সবার গায়ে শুভ্র পোষাক, টুপি, পিতা-ছেলে, ভাই-ভাই
এক লাইন, সেজদা, দোয়া, শান্তি বিনিময়
অবশেষে আজানের সুমধুর ধ্বণি।
যেতে চাইলাম শান্তি নিতে;
না যাওয়া হয়নি;
আমি যে বিধর্মী!

গির্জার  মিনারের ঘন্টার আওয়াজ
প্রায়ই কানে ভেসে আসতো।
বড্ড ভালো লাগে,
বন্ধু কবি ভিক্টর শোনালো
পরম শান্তির কথা।
রোববার সকালের খ্রীস্টযাগে চলে গেলাম,
দুর থেকে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখি;
বাইবেল পাঠ, সারমন, ধূপারতি, গান
যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যুর বর্ণনা,
এব্ং প্রসাদ বিতরণ।
খুব যেতে ইচ্ছে করে,
প্রসাদে যীশুর ভালোবাসা নিতে মন চায়!
না যাওয়া হয়নি;
আমি যে বিধর্মী!

আজ ধর্ম আমাকে বিধর্মী করে রেখেছে!
অথচ আমরা ধর্ম বিশ্বাসী এক রক্ত মাংসে গড়া
মানুষ!

--------------------------------------------------------------------

দোষ-ত্রুটি
- মুজিবুর রহমান মুনীর


শাপলা শালূক পদ্মপাতা
বদ্ধ জলেই জন্মে সই।
খুঁজতে গেলে মূলের মাথা
কাদা ছাড়া পাবে কই?

--------------------------------------------------------------------

হাত
- দেবাশিস্‌ মন্ডল


হাত পেতেছো ছোট্ট খুকু
কেন যে হাত পাতো ?
বড় হয়ে হাত বাড়িও
তখন দেব হাত-ও!

--------------------------------------------------------------------

বসে আড়ালে মনখানি ভরবে হেসে
- সাইদুর রহমান


ব্যাপার কি, তোমাকে লাগে বিমর্ষ কেন ?
বড় কিছু হবে ভবে, আশা ছিল যেন;
বারে ! পারনি হতে, তাতে হয়েছেটা কি,
যে আতুর ল্যাংরা জন্মে, তার কি ?

তুমি দেখেছো এ আকাশ পানি পাহাড়
দেখেছো এ মাটি চাঁদ ও সুরুজ
কত জনে রাখলো তোমার খোঁজ;
ভালোবাসা দিয়ে আবার তো পেলে
নাই বা পেলে মালা তোমার গলে;
পায় নি যে আলো সব তার অন্ধকার।

কে দেবে কোথা পাবে এক মুঠো খাবার
       ঝড় বৃষ্টিতে যার নেই ছাদ
       পায়নি পৃথিবীর মিষ্টি স্বাদ;
       দেখে নি স্নেহ মমতার ছায়া
       সদা বস্ত্রহীন না বুঝে হায়া;
সেই তো বুঝে গো ব্যথা, কিছু নাই যার।

আশা নিরাশা আলো আঁধার হবে বিলীন
তোমাকে আমাকে একদা হতে হবে লীন;
মাটির সনে মিশে হবে তবে উর্বর
হবে বৃক্ষলতা ফুল ফলে ভরপুর।
হবে না বিমর্ষ তখন বরং হর্ষে
বসে আড়ালে মনখানি ভরবে হেসে।

--------------------------------------------------------------------

কবি’র নলিনী
- ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত


তুমি সে আন্না. তুমি অনন্যা, শিক্ষয়িত্রী হয়ে এসে,
ইংরাজী শিখিয়ে, ব্যারিষ্টারি পড়াবে, ভেবেছিলে অবশেষে ।
তোমার শিক্ষায় শিক্ষিত রবি, করেছে বিশ্বজয়,
ব্যারিষ্টারি আর হয়নি যে পড়া, হয়েছে কাব্যময় ।
রবির শিক্ষা অতি সামান্য, পাঠশালা কারাগারে,
তোমার সহজ ইংরাজী শিক্ষায়, শিক্ষিত হয়েছে পরে ।
তর্জমা করে কবিতা শোনাতে, দিয়েছিলো প্রানমন,
তোমার কাছে আদর পাবার, সেটা ছিলো মূলধন ।
রবি কে বলেছো, ডাক নাম দিয়ো, সুর দিয়ো সেই নামে,
রবি’র দেওয়া সেই নলিনী নামে, মন ভরেছিলো প্রেমে ।
তোমার গানেতে প্রান আছে কবি, বলেছ আন্নারানী,
মরণ এর থেকে জেগে উঠে যাবে তোমার সে নলিনী ।
বলেছিলে তুমি, কথা দাও রবি, রাখবেনা মুখে দাড়ি,
তোমার মুখের সীমানা যেন, পুরোটা দেখতে পারি ।
তোমার সে কথা রাখতে পারিনি, আজ যেন মনে হয়,
তোমাকে দেওয়া সে আঘাত আমাকে, বারে বারে কাঁটা দেয় ।
রবি’র বিমর্ষে দিতে সান্ত্বনা, রবি’র পাশেতে থেকে,
চোখ টিপে দিতে পিছন থেকে, রবি কে প্রফুল্ল দেখে ।
রবি’র কাছে তে থাকতে চাইতে কতো ছুতো ছলনায়,
ভেবে হতে সারা, তোমার রবি কে কবে পাবে নিরালায় ।
শরীরে শরীরে হাতে হাত রেখে, প্রেমে খাটাতে জোর,
শত চেষ্টাতেও টলাতে পারো নি কবি শৈল্পিক ঘোর ।
চঞ্চল ছিলে প্রতিনিয়তই, যখন যা করে ভর,
অযাচিত ভাবে বসে যেতে তুমি, নেয়াটি খাটর পর ।
হঠাৎ হঠাৎ বলতে রবি কে, কি যে ভাবো আনমনে,
কি যে ভাবো রবি আকাশ পাতাল, হাত ধরে নিয়ে টেনে ।
টানো তুমি রবি আমার এ হাত, জোর করে ধরে টানো,
টাগ অফ ওয়ার খেলবো আজ কে, নিস্কৃতি নেই কোনো ।
হঠাৎ খেলার সম্মতির আগে, নিজে থেকে হার মেনে,
না ছিল পুলক, না ছিল রোমাঞ্চ, সে খেলার প্রতিদানে ।
বুঝেছিলে তুমি এ প্রেম শুধু, কাব্যের অনুদান,
এ তো নয় প্রেম শরীরে মনের, তোমার সন্দিহান ।
শুনতে চাইতে তর্জমা সুরে, কবির কাব্য কাহিনী,
রবি’র কন্ঠে প্রেমের কাব্যে, রোমাঞ্চিত হতে নলিনী ।
সেই রোমাঞ্চে কোনো একদিন, ঘুরে ঘুরে এসে কাছে,
রবি কে বলতে, বিলেতে একটা গল্প কথায় আছে –
যদি কোনো নারী ঘুমিয়ে পরলে দস্তানা চুরি যায়,
যে চুরি করে, চুমু দেওয়া তার অধিকারে জন্মায় ।
সে আরাধনায় ঘুমিয়ে  সে পরে, দস্তানা পাশে  রেখে,
ঘুম থেকে উঠে দস্তানা দেখে, পরে আছে সেই থেকে ।
এই ভাবে রবি বুঝতেন রোজ, ঘটতে চলছে ঘটনা,
তাই তো তোমাকে বঞ্চনা না করে, তোমাকে করেছে রচনা ।
তোমার মর্ম্ম বেদনা ফুটেছে, প্রতি রূপে প্রতি ক্ষনে,
স্মৃতিতে রেখেছি তোমার প্রেরণা, কবি’র ‘ফুলের ধ্যানে’ ।
অপ্সরার প্রেমে তোমাকে রেখেছি, নলিনী এসেছে তায়,
নলিনী নলিনী ডেকে গেছে কবি, নলিনী কেঁদেছে হায় !
লঘু করে কখনো দেখিনি তোমাকে,
সে ভালোবাসার যেমন হোক না স্বাদ,
স্নেহ প্রীতি প্রেম যেটাই বলো, পেয়েছি সবের প্রসাদ ।
রবি’র মনের বনের কিছু না কিছু, অফোটা ফুল সে ফুটিয়ে যায়,
হয়তো সে ফুল ঝরে পড়ে যায়, গন্ধ তার যায় না মিলায় ।

--------------------------------------------------------------------


ঢেকে দাও প্রভু ! আমার মায়ের শরীর খানি
- রিপন গুণ

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া একজন "মা" ও তার সন্তান কে স্মরণে…..
.................................................



ঢেকে দাও প্রভু ! আমার মায়ের শরীর খানি
কারন, তার রক্তে মেখে গেছে- আমার নিষ্কৃয় দেহ-বয়
যদি তুমি মহান হলে তবে, তুমি মেঘ দাও,
প্রভু তবু তুমি ঢেকে দাও- এই রক্তে ভেজা শরীর।
আর ক্ষত-তো সাড়া যাবে না !
কেউ পাবে না শুদ্ধ-করতে আমার ব্যাথা,
প্রভু দয়ালু যদি হও,  শোনো তুমি আমার কথা
বুকেতে আমার ভরা নদীর উঠছে তুফান ।

কে থামাবে বল তুমি যে আমায়?
ঢেকে দাও তুমি তৃপ্তি-করে,
আমি ছিলেম ওই তোমার গরিব
নয়-তো তোমার আমীর !
নয়তো আমার প্রতি সদায় হও আর-নিক্ষেপ করো -
ওই রক্তে ভেজা জমিনের পড়ে থাকা পাথর !
যে, পাথরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়
আমার সমস্ত পরিক্রমার মাঝে বয়ে যাওয়া জ্বলন্ত আগুন ।

যদি পারো তুমি চাঁদের আলো হও
একটু শান্তি আর ছায়ার আশায় আমি দাড়াবো তোমার মাঝে
তবু ঢেকে দাও প্রভু আমার মায়ের শরীর খানি,
ওই অবিমিশ্রিত নীলের অসীম হতে- শুধুই নীরবে না তাকিয়ে থাকো তুমি ।

এখন আমাদের ঘরের মাঝে প্রভু তুমি ঢালো -
রাত্রির আঁধারে পুরো চাঁদের আলো,
দিনের কল্যাণে ঢালো, তেমনি করে সূর্য্য কিরণ
আমিতো বলিনি তাতে কিছু ।

জানাই-নি একবিন্দু ক্ষোভ, কোন অভিযোগ
তুমি বন্ধু না হও, হও আমাদের আশ্রয় দাতা
তবু ঢেকে দাও, আমার মায়ের শরীর,
চাঁদ না হও, হও তুমি চাঁদের ছায়া আমি সেই ছায়াতে আশ্রয় খুঁজি তোমার ।

--------------------------------------------------------------------

প্রেম কথা
- বিভূতী দাস


ছ্ল করে আজ এই বাগিচায়
কেন গাইলে প্রেমের গান
মুখ ঢেকেছে কলিরা সব
হোয়েছে অভিমান।।

ঝরা পাতার ঊষ্ণ শ্বাসে
ব্নতল আছে ঢেকে
নূপুর বাজায় চৈতালি দিন
প্রেম  গিয়েছে পরবাসে।।

ডাকছে কুহু আপন মনে
প্রিয়া কি তার আসবে কাছে
দিল বাগিচা ভোরবে কিগো
নূতন কলির প্রেমের রঙে।।

--------------------------------------------------------------------

পথিক আমি
- দীপঙ্কর


ধূসর বালুঝড় থেমে গেলে, বৃষ্টি নামে
রোদের গন্ধ ওয়ালা পাখির ডানা, অজান্তেই থামে
বাকি থাকা উই পোকার দল, একে একে
স্বপন ডানায় ভর দিয়ে উড়ে যায় মাঠে
কথা হয় এক বর্ষা আর এক একাকী রাতের ....।

বাইরে একা দাঁড়ালে, ঝি ঝি পোকা ডাকে
দেহ, মন, শিরশিরানি সব ইচ্ছের বাঁকে
ব্যাঙের ডাক, নিশাচর পাখির ব্যঙ্গ
ঝাঁকে ঝাঁকে মেঠো ইঁদুর, নেয় সঙ্গ
পাতা থেকে ঝরে ফোটা জল, বিরহী সে বাতাসের.....।

নিঃশব্দে হেটে যাওয়া, কোন শব্দ অনুসরণে
অসংখ্য পচা শামুকের খোল পাড়িয়ে, একমনে
দাড়িয়ে তালগাছ; মেঘ ওড়না সরিয়ে
উঁকি দেওয়া চাঁদ, আরও মায়া ফেলে জীবনে
যদি ছুঁয়ে যায় জল, কোন ঝরে যাওয়া মেঘের.....।

স্বপ্ন ছেড়ে পথিক আমি, তোমার খোঁজে
দূরে কোন নদী, জলে যার এস্রাজ বাজে
নক্ষত্র দেখানো পথে, বাড়িয়েছে পা আমি
প্রতিটি পদক্ষেপে, ভিজে মাটিতে রেখেছি অপেক্ষা
যদি কখনো তাকিয়ে তুমি, বৃষ্টিস্নাত আকাশের.....।

--------------------------------------------------------------------

সময় তাড়িয়ে বেড়ায় জীবন
- খান


সময় তাড়িয়ে বেড়ায় জীবন
প্রয়োজনের তাগিদে ছুটে চলে
তারুন্যর ছাপ নতুন সৃষ্টির ধারায়
প্রতিনিয়ত সৃষ্টির শিয়রে দাঁড়িয়ে স্রষ্টা।

তারুন্যের দেয় অদম্য প্রেরনা
বিপাকে ফেলে হতাশার হাতছানি
দুই প্রহরী অবতীর্ন সংঘাতে
বিজিত, বিজয়ী চলে উল্টোমুখী
সহজাত স্বভাব আলিঙ্গন করে না
কল্যান, ধ্বংস আপোষ নেই তাদের
অটল আপন বৈশিষ্টে ।

সুস্থ মানসিকতাই করতে পারে সমন্বয়
কল্যাণ অগ্রে, ধবংস পশ্চাতধারায়
সমন্বয়ই শান্তির দূত হিসাবে কাজ করে
তখনি শান্তির স্বর্গ গড়া যায়
নরক বিতাড়িত করা যায়
ক্লেদাক্তো দুষন ভরা পৃথিবী থেকে ।

--------------------------------------------------------------------

কবির ফিরে আসা
- ইব্রাহীম রাসেল


কারো জন্য কোনো কোনো মানুষ
হয়তো অপেক্ষায় থাকে
আবার সেই মানুষটিই হয়তো
অপেক্ষারত মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে
বেঁচে থাকে কিংবা বার বার ফিরে আসে।

মানুষেরা এমনই; নিজের জন্য না হলেও
কিছু প্রিয়মানুষ, কিছু প্রিয় মুখ থাকে
যাদের জন্য মরতে গিয়ে আবার ফিরে আসে।

কবির চোখ কখনো কখনো খুঁজে ফেরে
নতুন কোনো প্রিয় হয়ে ওঠা মুখ,
কবি নিরবে গোপনে অতি সংগোপনে
পেতে চায় নতুন কোনো সুখ।

কবি পুরনোর টানে পড়ে থাকে
কবি নতুনের আশায় বেঁচে ওঠে।
ফিরতে ফিরতে আবার শুরুর দিকে
এক অজানা মায়ায় পড়ে দাঁড়িয়ে।

--------------------------------------------------------------------

গেঁদুরাম সর্দার।।
- ইন্দ্রলেখা ভট্টাচার্য্য


  গেঁদুরাম সর্দার,
  ছিলো শখ জর্দার;
  তাক বুঝে ডিবেখানা
  ঝেড়েছিলো বড়দার!
  সাথে কিছু আধুলি,
  রুপোমোড়া মাদুলি,
  ক্যামেরা ও ঘড়ি লুটে,
  ধরে ট্রেন খড়দার!
  টেলিফোনে ধমকায়,
  “আছে গ্যাং রিষড়ায়,
  পুলিশের কাছে যেন,
  যাবিনে,খবর্দার!!”
  বড়মামা টিকটিকি,
  ধরে ফেলে তার টিকি,
  বামাল-সমেত তাকে
  করে আনে গ্রেফতার!

--------------------------------------------------------------------

রায় বাঘিনী
- অহনা

  
সুন্দর বনে রাতে সুন্দরি বাঘিনী
বাঘা সুরে ধরেছিল বাঘেশ্রী রাগিনি,
সবে চোখ বুজেছিল দক্ষিনরায়,
বাঘা সুর শুনে ঘুম ছুটে পালায়।
প্রশ্ন করেন তিনি "ওগো রায় বাঘিনী
এত রাতে কেন গাও এই রাগ রাগিনি?"
সুন্দরি বললেন "শোন দিয়ে মন,
রিয়েলিটি শো এ আছে কাল অডিশন"
দক্ষিনরায় কন হেসে হাসি দেঁতো,
"আমরা ওখানে গেলে, লোকে থাকবে তো?"

--------------------------------------------------------------------

নানা রঙের তারুন্য ।
- তরুন তুর্কী


তারুন্যে কভু দূর্বার গতিতে
আন্দোলনের পথে নির্ভার নিশ্চিন্তে
দাবী আদায়ে এগিয়ে চলা ।
স্লোগান বৃষ্টিতে উঁচুতে বাঁধা গলা ।

তারুন্যে কভু মারনাস্ত্র হাতে
দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানীতে
রক্তে রাঙ্গা নিজের জামা ।
বীরত্বের প্রদর্শনীতে লাভ করে নেকড়ে উপমা ।

তারুন্যে কভু বিপ্লবের পথে
সমাজ বদলে দেয়ার শপথে
নিজেকে হারানো সবার মাঝে ।
সকলের মঙ্গলের তরে খেটে যাওয়া সকাল-সাঁঝে ।

তারুন্যে কভু ক্ষমতার মোহে
অন্যায়-অনাচার আবহে
লোভ লালসাতে মত্ত হওয়া ।
মিথ্যার বুলিতে চারপাশ বিষাক্ত করে দেওয়া ।

তারুন্যে কভু ঘর্মাক্ত শার্টে
ক্ষয়ে যাওয়া জুতো ছেড়া প্যান্টে
ঘামের মূল্য চাইতে বিলিয়ে দেয়া ।
শ্রমিকের শ্রম প্রতিষ্ঠায় হারিয়ে যাওয়া ।

তারুন্যে কভু নেতার আহবানে
লগি-বৈঠা হস্তে ধারনে
উদ্দাম নৃত্য ; মৃত লাশের উপর ।
প্রকাশ্যে দিবালোকে উন্মুক্ত রাজপথে উন্মত্ত ঝড় ।

তারুন্যে কভু দুখীর সেবাতে
আর্ত-বঞ্চিতের হাহাকার ধ্বনিতে
নীরবে নিভৃতে পাশে দাঁড়ানো মানবপ্রেমী ।
প্রচারের আড়ালে এগিয়ে চলা স্বার্থহীন মুক্তিকামী ।

তারুন্যে কভু উদাত্ত ঘোষনাতে
'ধর্ষন-শতক' পূরনের আনন্দে মেতে
বীরত্বগাঁথা প্রচারে ব্যস্ত ; অসংকোচে সচেতনে ।
পৈশাচিক বর্বরতার আনন্দ আহরনে ।

তারুন্যে কভু বিস্মিত দৃষ্টি
অবলোকনে অন্যের কুকর্ম সৃষ্টি
শিরায়-উপশিরায় অন্যরকম প্রানোম্মাদনা ।
মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষায় একরোখা জেদী-সেনা ।

তারুন্যে কভু বাসস্ট্যান্ডে দাড়ানোতে
স্কুল-কলেজ গেইটে উক্ত্যক্তকারী হতে
কখনো বা প্রতিহিংসার যন্ত্রনায় দগ্ধ হয়ে
প্রতিশোধ স্পৃহায় ঘৃন্য জঘন্য কর্মে পড়ে জড়িয়ে ।

তারুন্যে কভু দিগন্তে দিগন্তে
বিপ্লবের বার্তা ছড়িয়ে দিতে
প্রতিবাদী ব্যক্তিত্বের পরিচয়ে সম্মুখ পানে ।
অন্যায় অসত্য আমূল উপড়ে ফেলার অভিযানে ।

তারুন্যে কভু প্রেমিকার সাথে
ফোনালাপে কিংবা ডেটিং পার্কে বেড়াতে
তারুন্যের উচ্ছাস সবটাই উজার করে দিয়ে
উল্লাসে ফেটে পড়া প্রেমেতে মত্ত হয়ে ।

তারুন্যে কভু দেশের তরে
দেশমাতৃকার কল্যানের ঘোরে
নিজেকে নিংড়ে দেয়া শতভাগ ঢেলে ।
আত্নত্যাগের বড়ি গিলে ।

তারুন্যে কভু জ্ঞানতাপসে
আপসহীনে জ্ঞান পিয়াসে
নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যত রচনায় মগ্ন ।
কখনো বা জ্ঞানের নেশায় আত্নভোলা তারুন্যে ।

তারুন্যে কভু মাদক সেবনে
তছনছ পরিবার ; মাদকসেবীর অর্থ যোগানে
দু'কূল হারিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় ।
কেউ বা মৃত্যুদ্বার হতে ফিরে আশার প্রদ্বীপ জ্বালায় ।

তারুন্যে কভু বাম আন্দোলনে
কভু যোগ দেয় ডান ধারনে
কখনো বা সুবিধাবাদী রাজনীতির মায়ায় ।
পুতুল নাচনে ব্যস্ত আপন অবস্থান হারায় ।

তারুন্যে কভু আমরন অনশনে
শিক্ষার নৈতিকতা রক্ষার জন্য
দেশের সম্পদ বাঁচানোর তাগিদে রাজপথে ।
রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভাংতে ।

তারুন্যে কভু আপোষহীন
ঘটাতে অত্যাচারীর বিলীন
বড্ড জেদী মহামূল্যবান প্রান বিলিয়ে দিতে ।
দেশের জন্য সত্যের সেবায় চিরনিদ্রায় শায়িত হতে ।

--------------------------------------------------------------------

ভ্রমন
- সুমনা ভট্টাচার্য্য


নাম টা শুনেছি
যাওয়া হয়নি ......
হঠাৎ  দেখিএকদিন
বাঁশবনের পাশে
ছোট্ট শ্যামল গাঁ
নীলচে আকাশ টালমাটাল
কাজলা দীঘির জলে...

শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবন
ধানের গোলার সুঘ্রান
রিনরিন শব্দ তুলে
গোধুলিতে গবাদিরা ফেরে
তারপর রজনীগন্ধার খেত জুড়ে জ্যোৎস্না
জমিন আসমান একাকার ...

হঠাৎ ট্রেনের আওয়াজ
ছুটে যাই আল ধরে
লোকাল পেলাম শেষে
তাকাইয় প্ল্যাটফর্মে
স্টেশনের নাম ছোটোনীলপুর
ভেঙে যায় ঘুম......

--------------------------------------------------------------------

স্বপ্ন-০১
- স্বপ্নবাজ


রঙ্গমঞ্চে আমি যেনো
রঙ-রঙ্গিন এক মানুষ
দিন কি রাতে সকাল সাঁঝে
উড়াই রঙ্গিন ফানুস।


হাজার রঙের স্বপ্ন দেখি
নিদ্রা-জাগোরনে
হোচট খেয়ে পরেও দেখি
স্বপ্ন অকারনে।


হয়তো স্বপ্নে রাজা আমি
কখোনো বা হিরো
আবার দেখি শিল্পপতি
স্বপ্ন শেষে জিরো।


স্বপ্নের ঘোরে ছুটে চলি
মরিচিকার পিছে
বোকা’র হদ্দ ভাবি না তাই
সব কিছুই যে মিছে।


চোখে স্বপ্ন, মনে স্বপ্ন
মাথায় স্বপ্ন ঘোরে
প্রাপ্তি খাতা ভেসে গেলো
স্বপ্ন স্রোতের তোড়ে।


হতোচ্ছাড়া স্বপ্নবাজ এক
বসত করে ছোট্ট মনে
ভেঙে গেলে রঙীন স্বপ্ন
কষ্ট লুকাই বুকের কোনে। ।

--------------------------------------------------------------------

অনুরোধ
- শান্ত


ফিরে এসো মালবিকা মেঘের রথে চড়ে
               তোমার জন্য প্রতিদিন
               বুকে বাজে ব্যাথার বীণ
আসতে তোমায় হবেই ফিরে আমার ছোট্ট ঘরে।

লুকালে মুখ সত্য কি গো আড়াল হয়ে যায়?
              ভ্রমর ভয়ে ফুলেরা সব
              রুদ্ধ করে প্রেম কলরব?
পতন ভয়ে তারা'রা সব মহা শূণ্যে ধায়?

চিরন্তন যা সত্য আছে, যায়না মোছা তারে
              আধারে'তে লুকালে মুখ
              কাঁদিয়ে তুমি পাবে কি সুখ?
আছি জেগে, রইব জেগে, বিনম্র ঐ ভারে।

ফিরে এসো প্রিয়া তুমি, এসো বলছি ফিরে
             হৃদয়ের'ই ব্যাকুল ডাক
             তোমার কাছে পৌছে যাক
সারা জীবন রাখব তোমায় পাহাড় দিয়ে ঘিরে।

--------------------------------------------------------------------

চাওয়া পাওয়া
- জি,এম, হারুন-অর-রশিদ


যুবতী,

নিজেকে দেখে আয়নাতে

—–কিছুই চায়না

শুধু ঋণী থাকতে চায়
                        নিজের কাছে।

যুবক,

শুধু থাকে হাত পেতে

——কিছুই পায়না

সুখ স্বপ্নে ঋণী হয়
             যুবতীর কাছে।।

--------------------------------------------------------------------

সে কী তুমি
- ডাঃ মাজহার খান


প্রতি রাতে,ঠিক মাঝ রাতে,
কে যেন আমায় অধিকার করে বসে ।
কীগো সে কী তুমি ? না অন্য রমনী?
আমি ত জানি আমার লাগি,
তুমি বিনে কেউ জাগেনা রজনী।
তবে কে এল,কে এসে জড়াল তার বুকে,
সুখের অমানীশা ছড়াল দুচোখে।

--------------------------------------------------------------------

শশ্মান
- মোর্শেদ হাবীব সোহেল


অগনিত প্রহর পরে
এসেছিনু সেবার ফিরে ,
নিঙরায়ে দিতে তোমারে
বুকের জমানো ভালবাসা ।
আসিয়া ফিরে শুনি তুমি ঘরে ,
ভাবিলাম তবে হয়তো অভিমানে
মুখখানি রাখিছ বালিশে লুকায়ে ।
হেনকালে যবে প্রবেশিনু ঘরে
দেখিনু তোমারে বিছানার 'পরে ।
মলিন মুখে পলকহীন চোখে ,
যেন বিস্ময়ে দেখিছ মোরে ।
কহিনু "কি দেখিছ অমন করে ,
ওগো মোর মনহারিণী ?
ওঠো এবার , ছাড় মান ,
খোল অধরের তালাখানি ।
বল শুনি মধুর বাণী ,
জুড়াই এ প্রাণ প্রিয় স্বরে ।
কি হল এবে, কথা কওনা কেনে ?
ছাড় মান দিওনা কষ্ট প্রাণের সখারে ।
দেখ চাহি , এনেছি তোমার লাগি
বানারসি শাড়ি , কাঁচের চুড়ি ,
সিথীর সিঁদুর , লাল টিপ ,
আরও কত কি , এই দেখ চাহি !
কি গো লো, কথা কওনা কেনে ?"
এবার হৃদয়খানি উঠিল কাপি ,
তাহারে কি ধরিছে বিমাড় ?
তবে কেনে প্রিয়া কথা কয় না আর ?
ব্যাকুল হৃদয়ে যবে ছুইনু তোমারে ,
দেখি হিমশীতল দেহখানি ।
বুঝিনু তখনই , মোর পরাণ পাখি
গিয়াছে উড়ি , তাইতো শূণ্য খাঁচাখানি ।
যারে মুই ডাকি , সে তো আজি নাহি ,
কে কহিবে কথা ? এত আয়োজন কার লাগি ?
বুকে জড়ায়ে ধরি শতবার ডেকেছি ,
মোর আর্তনাদে বোধহয় কেঁদেছিল পৃথিবী ।
যমের হাত থাকি নিতে চাহিনু কাড়ি ,
পারি নাই , আগেই গিয়াছে চলি।
অবশেষে , লাল শাড়ি জড়ায়ে সিঁদুর পরায়ে ,
আপনার অর্ধখানি আপনার হাতে ,
শেগুন কাঠের রাঙা চিতায় শোয়ায়ে ,
নিঠুর শ্মশানে আপনার সোহাগেরে
পোড়ায়েছিনু সেদিন , ক্ষুধিত আগুনে ।
সে যে কেমন জ্বালা , বুঝিতে সখী,
এমন অভাগা হয়ে আসিতে যদি ।
এই শ্মশানে পোড়ায়েছি আপন হাতে
আপনার পিতা বিশ্বনাথেরে ।
ঐশ্বর্যের মাঝে বেড়ে ওঠা পিতা মোর ,
অভাবের কষাঘাতে , পারি দিল পরপারে ।
সিঁদুরহীনা মা মোর স্বামী শোকে
সাতদিনও রহিল না , সাড়া দিল তাঁর ডাকে ।
তারেও পোড়ায়েছি এই শ্মশানে ,
সে যে কত কষ্ট , তা কি পাথর সহিতে পারে ?
চাঁদের মতন ফুটফুটে মোর ছোট ভাইটি
রুপে গুণে যেন স্বয়ং রাম জী ।
চাঁদের মতন মুখে তাহার থাকিত সদা হাসি
জ্ঞানের আশে শত কৌতুহলে ছিল সে কৌতুহলী ।
ভেবেছিনু , ভাই মোর বড় হয়ে ,
ফুল ছিটাবে কুলের মুখে ।
আশার মুখে ছাই দিতে সহসা সেদিন তারে ,
ধরিল অচীন বিমাড়ে ।
শত চেষ্টা , ডাক্তার কবিরাজে সাড়িল না ,
সাড়া দিল শ্মশানের ডাকে ।
মুই অভাগা আপনার হাতে
পুড়িনু তারেও শেগুনের খাটে ।
আহা কহিতে যে আজ পরাণ ফাঁটে ,
ভীষণ আর্তনাদে কাঁদিয়া ওঠে মন ।
আপন বলিতে একে একে
সবারেই পুড়িনু , এই শ্মশানের ঘাটে ।
শুধু বাকি থাকিল দিদি ,
কৃপন স্বামীর সাথে হয়েছিল সাদী ।
একদা হঠাত্‍ পদব্রজে , আসিয়া হাজির উঠোনে ,
হাসিমুখে নয় কিছুটা অবাক হযে
জিজ্ঞাসীনু "কেনে গো দিদি পায়ে হেঁটে ,
গতরে এত আঁচর লাগিল কেমনে ?"
কোন উত্তর পাইনু না ,
সোজা চলিল ঘরে ।
বুঝিনু যৌতুকের লাগি ,
জোড় করে পাঠায়েছে স্বামী ।
কথা না বাড়ায়ে চলিনু টাকার খোঁজে ,
না পেয়ে বেচিনু জমিটুকু বাবুদের কাছে ।
টাকা নিয়ে আসিয়া বাড়ি ,
কহিনু "ওঠ গো দিদি , টাকা আনিছি ,
কর না দেরি , তরা করি যাও বাড়ি ,
সুখে সংসার গড় নিয়ে সন্তান স্বামী ।
হিদুর ঘরে জন্মেছি এটাই বড় শাপ ,
যৌতুক দিতেই হবে নইলে পাব না মাপ ।"
এতেক কহিয়া যবে প্রবেশিনু ঘরে,
দেখি দিদি নাই ,মলিন দেহ রেখে
চলিয়াছে পরপারে ।
অভাগা মুই , দু:খ ক্ষোভ মনে রেখে ,
তারেও পুড়িনু এই শ্মশানে ।
এতটুকু বয়সে , বংশের প্রদীপগুলোরে
একে একে নিভাইনু হেথায় , এই শ্মশানে ।
একা হয়ে একদা চাঁদনী রাতে ,
তোমারে মুই তুলিনু ঘরে ।
ভেবেছিনু আবার মোর ভরিবে সংসার ,
কিন্তু ভাগ্য দোষে রহিনু সন্তানহীন জনমে ।
অভাবের তাড়নে একদা গেনু শহরে ,
কিছু টাকা কামাইয়া ফিরিমু ঘরে ।
কিন্তু শহর , সে তো বড় কঠিন ,
কাম না পাইয়া গেল বহুদিন ।
অবশেষে বহু কষ্ট ,
কিছুটা কামাইয়ে ,
ফিরিনু ঘরে ।
ফিরে দেখি তুমি নাই ,
মোরে ফেলে চলিছ ওপারে ।
সেই থেকে মুই শ্মশান বাসী ,
শ্মশান মোর ঠিকানা ।
হেথা মুই মোর স্বজনেরে পাই ,
পাই তোমার ছোয়া ,
তোমারে ফেলিয়া তাই যাইমু বল কোথা ?

--------------------------------------------------------------------

তুমি আর কোনোদিন ছুবেনা আমাকে
- Rmostazir


আমি তোমার হাত ধরে রাখ্ তে চেয়েছিলাম......

মেঘেরা আকাশের বুক থেকে দুরে সরে যায়
এবং তুমি আমার কাছ থেকে;
তবুও তো মেঘ  বিষ্টি নামায়
পৃথিবীকে ছুয়ে ছুয়ে,

কিন্তু তুমি কোনোদিন ছুবেনা আমাকে......?

--------------------------------------------------------------------

এলোমেলো.......চিন্তা......
- আলোকিত অন্ধকার


অপেক্ষায় আছি বরষার............
যদিও তার আগেই এসেছে গৃষ্ম...............
বসন্ত চলে গেছে............
জীবন কি ঋতু বদলের সাথে সরবদাই সমান্তরালেই চলে !!!!

জীবনের জলছবি কে পেছনে ফেলে......
কুয়াশায় ভেজা মাঠে সাঁতার কাটার প্রয়োজন নেই একদম...............
আমি তাই আমার সকাল টা কাটাই বিছানায়.................

আর সব কোলাহল আমার পৃথিবীটাকে করে তলে প্রশ্নময়........

--------------------------------------------------------------------

সেই স্কুলে
- আরিফুর রহমান(ডিজিটাল কবি)


          চলো যাই সেই স্কুলে
যেখানে শৈশব স্মৃতিদলে আজও যায় লুকোচুরি খেলে।
যেখানে দলে দলে গিয়েছিলে,দিবাশিখা-তলে।

           চলো যাই সেই স্কুলে
যেখানে ফুলগুলো ছিল সেই প্রভাতের বাগে,
যারি সেই সৌরভে আজও মন জাগে।

          চলো যাই সেই স্কুলে
যেখানে আলোর কপাটগুলো দিয়েছিল  খুলে,
আমাদেরি প্রিয় সেই শিক্ষক গনে।
          গিয়েছ কি ভুলে?
চলো যাই একই সাথে আজি খুশি মনে।

সত্যের তারাগুলো আমাদের সম্মুখে
যেখানে  মিটিমিটি হেসেছিল জোছোনার সুখে।
আমাদের ভুলগুলো গিয়েছিল চলে
একে একে সবই যেন সাগরের তলে।


হয়েছিলো সাথী সব ভ্রমরের দলে,
তারা থেকে ডানাতে হাসি  নিবে বলে।

চলো লুকোচুরি খেলি গিয়ে স্মৃতিদের সাথে,
চলো মিটিমিটি হাসি গিয়ে তারাদের সাথে।
চলো  গাঁথি আজি স্মৃতিমালা,পরে নেই গলে,
চলো আজি দেব সবই স্মৃতিদ্বার খুলে।  
       চলো যাই সেই স্কুলে,
  চলো চলো, গিয়েছ কি ভুলে?

--------------------------------------------------------------------

বছরের পয়লা দিনটা –ছিল বর্ষবরণ !
- দীপক কুমার পুশীলাল


বাংলা বছরের পয়লা দিনটা –
                  কেমন কাটলো ?

   আশা- আকাঙ্ক্ষার গ্যাস ভড়া বেলুন
                     আকাশে ভাসলো ,
                        না  উড়ানের আগেই ফাটলো ?

প্রথম পর্ব  ( আপটু)  সকাল দশ ,
                 কবিতার  প্রত্যাখ্যান –
‘ ভাই ১৪/৪ তো দিলাম তোকে –
       ১৫/৪ এ তুই আসরের বাইরে বস ,''
তাই পর্ব এক-শুধুই আপ্সোস ।

দ্বিতীয় পর্ব ( আপ্টু ) মধ্যাহ্ন পাঁচ ,
            আত্মীয় স্বজন -
                       ব্যাপক ভোজন-
উপ্সস ,   পেটফাটা ভোজ, তবু নেই আজ বারন-
                           খাওয়া দাওয়ায় বর্ষবরণ-
                 রশনা তৃপ্তি আন্তরিকতায়
                              পেলাম পরম স্নেহের আঁচ ।
     আপনজনের চেনা অতীত-
                       শীতল পাটি-
                  কত কথা আর কিছু কাটাকুটি –
আমি  ‘ স্লিপিং- মোডে ’-এক কোনেতে চিত ,
                   গিন্নীর হুকুম “ হালখাতা কোরতে
                             পাঁচটায় বেরোন ঊচিত  ।”

শেষ পর্ব সন্ধ্যা সাতটা থেকে ,
        পিতৃদেব সব্বাইকে   বলেন হেঁকে –
“ অনেক হোল ভোজন ,
     এখন শুধু গান, আর নাচন কোদন ।”
এটা আমার সেরা প্রাপ্তি পয়লা বৈশাখে ,
                 সূর ও বেসূর মিলেমিশে একাকার-
                       কিছু  করার   ইচ্ছে সবার-
          এই মায়ার বন্ধন ,
                        সারা বছর অটুট যেন থাকে ।
আমার নববর্ষ ১৫/৪ রাত বারোটাতেই শেষ ,
   ব্যর্থতা দিয়ে  শুরু  হোলেও-
        গ্যাস বেলুন  তো  উড়ে গেছে অজানা দেশ ,
           ফুরফুরে  একটা আবেস-
                 আমার  সব  চাওয়া-পাওয়ার
                           এটাই বিধাতার নির্দেশ !

--------------------------------------------------------------------

আমি কেমন?
- ওয়ারেশ নাবিল


কারো কাছে আমি বেশ ছোট্ট ছেলে...
কারো কাছে আমি বেশ বড়...
কারো কাছে ঠিক ঠিক উটকো ঝামেলা যেনো...
কারো কাছে মন ভরো ভরো...

কেউ কেউ ভরা ভরা,আমাকেই মনে ধরা...
miss করে আমাকে ভীষণ...
কেউতোবা মেপে মেপে দাঁতে দাঁত চেপে চেপে ...
করে যায় মিষ্টি শাসণ...

... কারো কাছে ধুত্তোর ঠিক যেন তেলাপোকা...
কারো কাছে হাজী মোহসীন...
কারো কাছে মুখভার গম্ভীর...কারো কাছে
মোল্লায় নাসিরুদ্দিন...

কারো কাছে ফাজিলের একশেষ...কারো কাছে
আমি বেশ ভেজানো বেড়াল...
কারো কাছে খোলাখুলি, এক ডালে ঝোলাঝুলি...
কারো কাছে ভীষণ আড়াল...

--------------------------------------------------------------------

আমি যে তেমন প্রেমিক নই
- সন্দীপ নস্কর


কেন বুঝিস না ? আমি যে তেমন প্রেমিক নই।
কান পেতে কান-ভাঙানো কথা আমি শুনিনা,
চোখ থাকতে অন্ধ সেজে থাকিনা,
ন্যাকা-ন্যাকা মিথ্যার জ্বাল বুনে,গাছে তুলে
মই কেড়ে নেওয়ার অভ্যাস আমার নেই।
কেন বুঝিস না ? আমি যে তেমন প্রেমিক নই।
তেমন করে রুমাল দিয়ে ঘাম মুছিয়ে,
প্রেমিকার চোখে আঙুল দিয়ে প্রেম দেখিয়ে,
অন্ধ প্রেমের অন্ধকারে,বন্ধ মনের বন্দী-দশায়,
জন্মান্তরের বন্ধনেতে-ও আমার নাম নেই।
কেন বুঝিস না ? আমি যে তেমন প্রেমিক নই।
আমার নামে থাকবে লেখা অভিমানের চিঠি,
মন ভাঙলে শরীর জাগবে,এটাই আমার রিতি,
তারপরেও বলতে পারিস হৃদয় যখন কাঁদে,
তখন চোখদুটো কেন শুকনো ?একটুও জল নেই।
কেন বুঝিস না ? আমি যে তেমন প্রেমিক নই।

--------------------------------------------------------------------

আলো, ছায়া, প্রতিফলন
- বিমূর্ত অনুক্ষন


ভাবতে চাইনা তবুও
উকি দিয়ে যায় মনে
মগ্ন হয়ে দেখি মোমের আলো
এদিক সেদিক নড়ে
অবিরম প্রকৃতির খেলা
নিজের ছায়াটা দেখতে ভালোলাগে
এদিক সেদিক নড়ে
চিন্তাগুলো এলোমেলো হয়
হাতটা আলোর কাছে নেই
অদ্ভুত বড় এক অচেনা থাবা
হয়ত এটাই মনের হিংস্র সত্ত্বা
এদিক সেদিক নড়ে
চিন্তাগুলো দুলতে থাকে
হঠাৎ আলোকিত চারিপাশ
মোমটা নিভিয়ে দেই
বসে থাকি স্থির আলোর নিচে
তবুও ভাবনাগুলো আসে
এদিক সেদিক নড়ে

--------------------------------------------------------------------

ডুবে মরি মনের টানে
- সরকার ফজলুল হক


তোমার কাছে মধু আছে, মাখন আছে,
মৌচাকে মোম আছে ,ব্যথার মালিশ আছে ,
কথায় কথায় নালিশ আছে , ঊনিশ বিশ তাও আছে  
আমার কাছে নাই --------------------!

স্বপ্ন দেখার যাদু আছে , যাদুকরার তাবিজ আছে,
ভাঙা গড়ার খেলা আছে , ঠমক চমক সবি আছে,
শান্তি দেয়ার ওষুধ আছে,অশান্তিরও ফন্দি আছে ,
আমার কাছে নাই--------------------------।

রত্ন আছে , যত্ন আছে , ফুলে ফুলে খুব সেজেছে,
মন ভোলানো কথা আছে , মাথায় ভরা কেশ আছে,
উপমার ঝুড়ি আছে , রঙে রূপে বাহার আছে ,
আমার কাছে নাই------------------------------।

তোমার কঠিন হিয়া আছে , সব কবি‘রা বলে গেছে,
রাগে ঠাসা মন আছে , ফোঁস ফোঁসানি শব্দ আছে ,
অনুরাগের বাসা আছে , ভাল একটা মন আছে,
মনটা নাকি লুকিয়ে রাখ আসলে কি তাই----------?

এত সব বুঝে শুনে , হিসেব কষি গুনে গুনে ,
শুন্য খাতা শুন্য জেনে , ডুবে মরি মনের টানে,
তোমার ছলে তোমার জলে , যেতে চাই উজান পানে ,
তোমায় পেলে মনটা বলে মরেও শান্তি পাই -----!

--------------------------------------------------------------------

আগাছা
- জবলুল হক


বাংলাদেশকে খাচ্ছে লুঠে
গুটি কয়েক লোকে
ওদের জ্বালায় দেশ-জনগন
মরছে ধুকে ধুকে।
ওরা কেহ রাজনীতিবিদ
কেহ শিল্পপতি
ওরা ক'জন টাকার কুমির
প্রভাবশালী অতি।
ওরা লোভী;দুর্নীতিবাজ
করছে দেশের ক্ষতি
স্তব্ধ করে দিচ্ছে দেশের
উন্নয়নের গতি।
ওদের যবে উপড়ে দিতে
পারবে জনগন
সোনার বাংলার স্বপ্ন হবে
সেদিন বাস্তবায়ন।

--------------------------------------------------------------------

আজ সকালে
- সুদীপ রায়


আজ সকাল থেকেই মন ছায়া ছায়া ..
চোখেতে ঝিমিয়ে আছে আধাঘুম .. আধা রোদ্দুর I
কলম কাগজ আছে টেবিলেতে পড়ে,
মাথায় আসছে না কিছু ..
দশটা বাজতে আর কদ্দুর ?
...
এক কাপ কফি যদি কেউ করে দিত !
কেউ বুঝি নেই ধারে কাছে I
একটা চড়ুই শুধু সজনে গাছের ডালে,
চুপচাপ একা বসে আছে I
পাখিটারও চোখ ঘুমঘুম ..
সকালটা আজ জানি না কেমন
ভীষণ একলা যেন .. ভারী নিঝ্ঝুম I

সামনে জানলা খোলা .. ধু ধু আকাশের মুখ ..
খবরের কাগজটা নিপাট I
আরও এক ঘুম মেরে দিলে হয় ..
সুইচ অফ করে দিই মনের কপাট I

মনের দরজা খানা রোলিং শাটার,
নীচে নেমে এলো ঝুপ ঝাপ I
এবার ঘুমের দেশ .. বড় আরামের ..
ঘুমের বৃষ্টি নামে টুপটাপ I

--------------------------------------------------------------------

চোখ
- মোহাম্মদ আজিজুল হক রাসেল


তোমাতে লুকিয়ে আছে রহস্যের আধার
মনের না বলা গুচ্ছ কবিতার ।

অভিব্যক্তির প্রারম্ভিকতা উন্মুক্ত করে
খুলে দাও মনের  দুয়ার।
প্রকৃতি খুঁজে নেবে নন্দিত রুপের ব্যাকুলতা
বুলিয়ে পরশ রেশমি সুতা ।

দুষ্টুমিতে বরই চতুর, ছলনার মন্ত্রমালা
আকুল মনে জাগিয়ে দোলা ।
হৃদয় দুয়ারে করছ খেলা
বেলা অবেলা সারাবেলা ।

পাপড়ি যুগল প্রহরীর ন্যায় ব্যস্ত
নিরাপত্তা এর হাতে ন্যস্ত ।
গতি তাহার অতি দ্রুত  
হোক সে আবাল বৃদ্ধবণিতার নেত্র ।

নয়ন মণির যতনে মিলিবে রতন
চশমার হবে না প্রয়োজন।

--------------------------------------------------------------------

লাল গোলাপ
- আহমাদ সাজিদ (উদাস কবি)


ক্লাস শেষে কলেজ থেকে, ফিরছি বাড়িতে
ভাদ্রের চমত্কার পড়ন্ত বেলা
এই মেঘ, রৌদ্র, ছায়ার খেলা
কখনো বা যায় না দেখা, সূর্যের আড়িতে!!
নদী পার হচ্ছি নৌকোতে, আমরা কজন
বিনা মেঘে যেন বজ্রপাত
মাঝ-নদীতে বৃষ্টির উত্পাত
হাতের টিপ_ছাতাটা মেলে ধরলাম তখন!!
ছাতার ডাঁশায় লুকানো ছিল যে গোলাপ ফুল
ধরল সে হাত বাড়িয়ে
ছাতার শলাকা ছাড়িয়ে
বন্ধুদের টিপ্পনীতে তখন,গায়ে ফুটাল হুল!!
ঘটনাটা ছিল ঠিক এই রকম
কলেজের বাগান থেকে সকালে
তুলে  ফুলটা বড্ড বেতালে
হাতের ছাতায় লুকিয়ে, ফেলেছি তৃপ্তির দম!!
"ফুল দিলে কী হয় বন্ধু বল না" শিমুটা গেয়ে ঊঠে গান
বলেছিলাম তখন লজ্জার স্বরে
ফুলটা তো দিই নি ইচ্ছেকরে
ফেলে দিল  সে নদীতে গোলাপটা, ভয়ানক অভিমান!!
আষাঢ়ের মেঘ করে, চোখে নামে বৃষ্টির ধারা
সেই থেকে মেলা  
মান অভিমান খেলা
আমায় করে বশ, জীবনটা করল মাতোয়ারা!!

--------------------------------------------------------------------

একই ঘরে পরবাস কেন?
- আসাদ রুবেল


সকালে ঘুম ভেঙ্গে হাটি হাটি পায়
প্রতিদিন নিয়ম করে যে কাজে যাই,
সারাদিন পিঁপড়ের মতো অক্লান্ত খেটে
তুলে দেই তোমার দুমুঠে
মাস শেষে আমার পারিশ্রমিক।
তুমি কী বুঝতে পার ঠিক
কি কারনে এখনো এমন করি?
কেন ভালো থাকার নাটক করি?

বাচ্ছা ছেলে যেমন যায় ভুলে
তার ফেলে আসা দুরন্ত প্রহর
হয়তো তুমিও ঠিক  গিয়েছ ভুলে
আমাদের ফেলে আসা নির্জন বাসর।
যেখানে হাতের পরে রেখে হাত
একান্তে, নির্জনে অম্লান বদনে
কাটিয়েছি মায়াবী, অন্ধকার রাত
গল্প-কথা, খেলার ছলে দুজনে।

সেখানে দিয়েছিলাম কথা দুজনে
আসুক শত সহস্র  ঝ্ঞ্ঝা ঝড়
একে অন্যের হাত ছেড়ে কখনো,
কোনো কালে  হবোনা পর।

আজও সেই স্মৃতি মনে করে
লোক চক্ষুর অন্তরালে, একই ফ্লাটে
তোমার দরজার ওপারে আছি পরে
মনের সব কামনা ত্যাজে।

কোন কারনে ছুটে গেলো বাধন
কিইবা তোমার একা থাকার কারন
মাস শেষ হলে মুঠো ভরে বরন
অনুগ্রহ করে করিবে বর্নন?

--------------------------------------------------------------------

শুভ নববর্ষ
- RED Mukherjee


আধ ছেঁড়া গেঞ্জি তে, মাথা ভরা তেল,
একটাই কাজ তার... “সেল” “সেল” “সেল”
চিল্লিয়ে লোক ডাকা, সারাদিন ধরে ।
চৈত্রে তিরিশ দিন, রাস্তার মোড়ে...
শনি আর রোববারে, চাপ হয় বেশী ।
ওই দুদিনেই দ্যাখে, মালিকের খুশী...
দুই দিনে কুড়ি টাকা, উপরি তো জোটে!
নইলে দেড়শ টাকা, পাঁচদিন খেটে ।
যত চেল্লায় সে, ততো বাড়ে লোক,
শব্দের মানে নয় নাই জানা হোক...
আজ তবে শেষ দিন, হাঁফ ছেড়ে বাঁচা।
কাল থেকে উঠে যাবে, অস্থায়ী মাচা ...
মিষ্টি দিয়েছে বাবু, টাকা ভরে খামে ।
কালকেই ফিরবে ও নিজেদের গ্রামে...
বোনের ম্যাক্সি কেনে, বাবলুর গাড়ী,
কাল “নববর্ষ”...খুশী যে সবারই......

--------------------------------------------------------------------

অভিমান আর অপেক্ষা
- মাহমুদ আল মেহেদী


একটি একটি করে
আসে শুভেচ্ছা বার্তা।
কাছের দূরের স্বজন,
বন্ধুরা করছে আশীর্বাদ।
কতই না ভালবাসে সবাই আমায়।
আনন্দের জোয়ার।
মোর কর্ণ শুনতে চায়
সেই অভিমানীর কন্ঠ।
দু'চোখ দেখতে চায় তার বদন।
মন পড়তে চায় তার চিঠি।
জন্মদিনের এই উত্সবে সহস্র লোকের
ভীড়ে
দু'চোখ তারে খোঁজে।
মন বলে সে নিশ্চয় এসেছে।
করছে মজা মোর সাথে।
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে এ গাধাটাকে।
না না সে কি আসে?
সে তো আমায় গেছে ভুলে।
কতদিন হয়ে গেল,
একটি বারও কি তার হয়নি সুযোগ?
কি করেছি আমি?
একটু যা রাগই করেছিলাম।
সে শুধু দেখেছে রাগ।
দেখেনি তার
অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ভালবাসা।
সে কি অবুঝ শিশু?
সে কি বোঝে না এ পাগলের জ্বালা?
কত না কেদেছি গোপনে।
সে দিনের ঐ না জানা ভুলের কারণে
গেছে চলে আমায় ফেলে।
এখনো আসে নি ফিরে।
ক্ষমার আশায় রয়েছি
তারই পথ চেয়ে।
ক্ষুদ্র আশা, সে হয়ত আসবে।
সে কি জানে না অপেক্ষার প্রহর
কতটা কষ্টকর?
আর কত কাল রইব পথ চেয়ে?
মনে কি নেই তার এই দিনটির কথা?
যাক না পৃথিবীর সব লোক ভুলে...
কিন্তু
সে ভুলে যাবে এটা মানবো কি করে?
সকাল গড়িয়ে এল বিকেল।
আসে নি কো সে,
তবুও রয়েছি প্রতীক্ষায়।
আসবে সে হয়ত সন্ধ্যে বেলায়।
নয়তো পাঠাবে চিঠি
শুভেচ্ছায় ভরপুর।
সন্ধ্যে প্রায় হয়ে যাচ্ছে।
এখনো এলো না।
নাকি আসবে না?
পাঠাবে না কোন চিঠি।
তবুও অপেক্ষায় রয়েছি আমি।
আজ না তো কাল,
কাল না তো পরশু।
এ বছর না হয় পরের বছর।
রয়েছি প্রতীক্ষায়---
মন বলে হয়তো সে আসবে।

--------------------------------------------------------------------

জগত
- আবু মোবারাক মহম্মদ ইবরাহিম


যেন পুরো একটি রুটির আকার
দেড়শত মিলিয়ন কিলোমিটার
তার অন্তরেও কিন্তু নিউক্লিয়ার;
মহাজগতের ভজকট  ব্যাপার!
অমরত্বকে ছুঁতে গেছে বারংবার!


সময় হয়না এতকিছু বোঝার;
তার প্রয়োজন আধপেটো খাবার।

--------------------------------------------------------------------

বাংলাদেশ আমার
- অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়


তুমি আছো আজো আমার স্মৃতি জুড়ে ।
আমার নিশ্বাস প্রশ্বাসের আবর্তে,আমার
রক্তের প্রতিটা কণায় কণায় আজো রয়েছে,
তোমার অতীত ইতিহাসের অভিঞ্জান,
হে প্রিয় দেশ, বাংলাদেশ আমার ।

তুমি আমার কাছে স্বপ্নে পাওয়া কবিতা,
যার সুখ স্মৃতি প্রতিটা পরতে পরতে
রেখে যায় তার নিজস্ব আবেগ স্পর্শ ।
আমার নিবিদ স্পন্দনে,আমার রক্তের
প্রতিধারায়,আমার পূবর্পুরুষের মৃত স্বপ্নে
আজো তুমি বেঁচে আছো,
হে প্রিয়দেশ, বাংলাদেশ আমার।

৪৬ এর দাঙ্গা অথবা ৪৭ এর দেশভাগের
জ্বলন্ত স্মৃতি তাই আজো দ্বিখন্ডিত করতে পারে না
আমার মনের আকাশ কে । তাই আজো

জীবনান্দের রূপসী বাংলায় বা কোজাগর লক্ষীর পায়ের ছাপে,
আমি করে চলি আমার অতীত শিকড়ের সন্ধান
হে প্রিয়দেশ, বাংলাদেশ আমার ।

--------------------------------------------------------------------

নিরুত্তর
- প্রিন্স ইনজামামুল হোসেন


যেখানে পথের শেষে
অঘ্রাণ চুঁইয়ে পড়ে হিমেল রক্ত,
দু চারটে সোনাঝুরি গাছ
ভিড় করে আসা প্রেক্ষাপট।

আমি কবি হতে চেয়েছিলাম
বাবা মরতে দিতে চায়নি,
কিন্তু আর একজন মারা গেছে
তার অন্তৌষ্টিক্রিয়া এখনও বাকি।

স্ব্প্ন দেখার চরম ভুলের জন্য
শাস্তি দিতে সে চলে গেছে,
তারপর আর স্ব্প্ন দেখি না
তবুও সে কি ফিরে আসতে পেরেছে??

--------------------------------------------------------------------

ক্ষণিকা
- মোজাম্মেল হক(মন)


ক্ষণিক চোখের অবসরে
চাহি ক্ষণিক লাজে,
ক্ষণিক অবকাশে ক্ষণিক
কথা বলা দু'য়ে!
ক্ষণিক সময় পাশাপাশি
ক্ষণিক ভালোবাসা,
ক্ষণিক লাজে তোমার মুখে
ক্ষণিক মৃদু হাসা!
ক্ষণিক পরশ তোমার হাতে
ক্ষণিক ভীত হওয়া,
ক্ষণিক কালের সেই সে ছোঁয়া
ক্ষণিক ভালো লাগা!
ক্ষণিক স্বপ্ন-ভালোবেসে
বাঁধব দু'জন বাসা,
ক্ষণিক কালের এই ধরাতে
তাইতো মোদের
স্বপ্ন সুখের
বৃহৎ ভালোবাসা!

--------------------------------------------------------------------

অদৃষ্ট
- ডাকু নয়ন


গ্রহণ করো তুমি
চিরকাল
এই স্বপ্ন ......

কখনও নয় আশা নির্ভূল
গ্রহণ করো তুমি
চিরকাল...  
চিৎকার করা
এই করুণ আকুতি
চোখের জল
এই অভিপ্রায় ।

কখনও নয় বনদেবী
গ্রহণ করো তুমি চিরকাল
আমার গান এই বিন্যাস
তোমার হৃৎপিন্ডের আঘাত।

গ্রহণ করো আমার এই অর্ঘ্য
তোমার প্রাপ্য বুঝে নাও
গভীরে  তোমার।
হৃৎপিন্ডে আমার,
আছো তুমি।

জানে এই অদৃষ্ট জগৎ আর
অপরাধী স্বপ্নরা আমার ।
দীর্ঘ এই জগতে
অদৃঢ় স্বপ্নরা আমার ,
নিয়তির খপ্পরে পরে
কাঁদে চিরকাল ।

--------------------------------------------------------------------

শুভ নববর্ষ
- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য


বন্ধু ,
               কথা মত,  নূতন সূর্য উঠেছে বৈশাখের প্রথম দিন ,      
              পূরানো সূর্য লাল শালুতে মুড়ে তুলে রাখা আছে তাকে ।  
               প্রত্যেক রোমকূপে জমা গ্লানির উপসংহার ,
               পূরানো খাতা ,সব লাল শালুতে মুড়ে তুলে রাখা ।      
               দেওয়ালে  সাজানো  স্রষ্টার সাথে প্রকৃতির মৈথুন ছবি,      
               মুছে , সাজিয়েছি ফুলের মালায় ।  
               নূতন পঞ্জিকায় লিখেছি নব সূর্যের ভৌগোলিক অবস্থান ।  
               বর্ষফল - দুঃখের লবণাক্ত জলে ভারাক্রান্ত ছিল
               যে চোখ গুলো , এবার আনন্দাশ্রুর প্লাবনে ভাসবে ,  
               নতুন খাতায় এঁকেছি স্বস্তিক চিহ্ন আর নব পল্লব ।

--------------------------------------------------------------------

দু:খের কাফন
- মো: আনোয়ার সাদাত পাটোয়ারী


আমার হৃদয়টাকে ঝলসে দিয়েছি
কষ্টের এসিডে,
এখন স্বপ্নগুলো রঙ ধরায়না চোখে
ভাবনাগুলো কল্পনায় আল্পনা
আঁকেনা মনে।
চাওয়াগুলো করেনা কোন মিটিং মিছিল
আন্দোলন অবরোধ,
বন্ধ্যাত্বে ভুগছে সময়ের ঘড়িটা।
দু:খের কাফন জড়িয়েছি শরীরে,
একাকী সময় কাটে আজ
নির্মম নি:সঙ্গতায়।

--------------------------------------------------------------------

মনোহারিণী
- রিয়াদ পাটোয়ারী


কোন গাঁয়ের মেয়ে তুমি প্রিয়
কোথায় তোমার ঘর,
তুমি যে আমার মনোহারিণী
তোমায় নিয়ে বাধঁবো সুখের ঘর।

তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখ‌ি
নানা রঙের ছবি আকিঁ,
তোমায় নিয়ে কাব্য লেখি
তুমি যে আমার পরান পাখি।

মনো জগৎ  এ উকিঝুকি
মনকে আমি চেপে রাখি,
কেন করিস ডাকাডাকি
ও আমার মনো পাখি।

--------------------------------------------------------------------

কথা রাখলে না
- রিয়েল আবদুল্লাহ আল মামুন


তুমি কথা দিয়ে কথা রাখলে না
আমার উঠোনে এলে না
আমার উঠোনের দূর্বাঘাসগুলো
তোমার প্রতীক্ষায় অনশনে আছে।

তোমাকে নিয়ে দেখা হলো না
আমার আকাশের চাঁদ-তারা-জোছনা
আজ রাতের জোছনায় তোমাকে দিয়েছিলাম
আমার বাড়িতে নিমন্ত্রন।

তুমি এলে না বলে
আমার বাগানের ফুলগুলো তার সুভাষ ছড়ানো
বন্ধ করে দিয়েছে।
রাতের পাপিয়া আর ডাকছে না পিয়া পিয়া।

তুমি চলে এসো প্রিয়তমা,
তোমার জন্য পাঠিয়ে দিলাম আমার ভালোবাসা,
সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে,
সাথে আমিও
তুমি এলেই কেবল বাজানো হবে বরণ সংগীত।

--------------------------------------------------------------------

পূজ্যতে রাজা
- শুভাশীষ গুহ


সমাজে প্রতিষ্ঠিত ওই লোকটি
ধনবান প্রাচুর্যে,নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদে
...ওর কাছে
খণ্ড শব্দ ‘কালচার’, দিয়ে শুরু হয় যার ‘এগ্রি’

অপসংস্কৃতির ছায়া না মাড়াতে
চাও ওর মেহেফিল এড়াতে?
বয়েই গেল... তোমার বন্ধু,
গায়ক, বুদ্ধিজীবী ধন্য হন ওর স্তব আওড়াতে।

ভাবছ তুমি আনবে বিপ্লব?
তোমার ভাবনা নেহাতই কু-মতলব;
শহিদ হওয়ার অন্য উপায়ও আছে
মাকাল ফল ধরে যেন কোন গাছে?

লিখছ বসে নূতন কোন গান
ধরেছ বুঝি নূতন কোন কর্ড;
কে যেন ছাই বলেছিল...
‘পেন ইজ মাইটিয়ার দেন সোর্ড’!

একদা ছিল পড়া এখন ভুলতে চাই...  
ক্ষয়ে যাওয়া স্বর মাষ্টারের লেগেছে কাঁপতে...
বিদ্যাতঞ্চ নৃপতঞ্চ, নৈবতূল্য কদাচন
স্বদেশ পূজ্যতে রাজা, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।

--------------------------------------------------------------------

আমি মায়ের কাছে যাব
- মহিউদ্দিন হেলাল


মাগো আমি তোমার কাছে যাব,
তোমার কোমল ছোঁয়া পেয়ে দুঃখ ভুলে যাব
চরন ধূলি পাবার আগেই বক্ষে পাব ঠাঁই
আদর মাখা হস্তযুগল মাথার পরে চাই!
ললাটে মোর চুমু দিয়ে ব্যথা গুলো ভুলিয়ে দিবে
মুখে কিছু বলার আগে আপনা থেকেই বুঝে নিবে !

আমি তোমার কাছে যাব
জমানো সব কষ্ট গুলো তোমাকে শোনাব!
বিভোর হয়ে শুনবে তুমি না বলা সব কথা
অস্ফুট মুখটি দেখেই বুঝবে হৃদয় ব্যথা
অশান্ত সব বেদনা গুলি এক নিমেষেই শেষ
ঠোঁটের কোনে ফুটবে আভা, ফুটবে হাসির রেশ!

আমি মায়ের কাছে যাব
শেষ বেলাটা হাসি কান্নায় মায়ের বুকে রব !!

--------------------------------------------------------------------

ঝিনুক ঝিনুক
- আর্য


সাগরের কাছ থেকে ঘুরে এসে
চোখ খুলতে পারি না
জ্বালা করে
নোনা স্বাদ

সেদিনও এমন হয়েছিল
বুকের মাঝে গুরু গুরু
দ্রিম দ্রিম
জলোচ্ছাসের শব্দে কান পাতা দায়

পেরিয়ে এসেছিলাম নদী অরণ্য পাহাড় ডিঙিয়ে
তোমার বাড়ির আঙিনায়

তুমি ঝিনুক কুড়োতে তখন ব্যাস্ত

ভেসে গেছিলাম আবারো এক নিরালা
মোহনায়...

--------------------------------------------------------------------

পারি না বোঝাতে
- বাবু আসাদ


বেলা কি অবেলা স্বপ্ন খেলা,
পারি না বোঝাতে, তুমিও বোঝনা,
হৃদয় নীড়েতে কর বিচরণ,
তোমাকে ঘিরে শুধু পথচলা
পারি না পারি না, আর তো পারি না
ফিরিয়ে কত দেবে সেও তো জানি না
সকাল সন্ধ্যা কর বিচরণ মনের খেয়াল মাঝে
রাত্রী গভীর হলে মনের শুন্যতা যায় বেড়ে।

দাও যত দাও, যত অঘাত-ই দাও
ভালবেসে যাবো তুমিও জেনে নাও!
যাও ভুলে যাও, যাও দুরে যাও,
থাকো যেখানেই যেমন,
তোমার প্রতিক্ষায় ছিলাম আছি,
থাকবে তেমনি এই মন!

--------------------------------------------------------------------

স্তাবক কবি
- নাছির উল্লাহ


দুর্বোধ্য কবিতার স্তবক দিয়ে
স্তাবক কবি স্থাপন করেছে নীড় ,
শুন্য হাতে পুন্য পাবে বলে
রয়েছে দাড়ায়ে, প্রতীক্ষায় অধীর;

স্তুতি গায় সে চারিপাশে যে ধায়
অনন্তে হারায় যত মানবিক দিক,
কিংবা চিরসত্যের মোহবন্ধনে
বন্দি যেসব ছন্দহারা প্রাণ।

সব কিছুতে আর কবিতে মিলে
ঐকতানের মুক্ত বাতায়নে
অন্যরকম পন্যমালার খেলায়
গড়েছে সে চেতনার রং দিয়ে
কবিতার মূর্তিলোক;

স্তাবক কবির স্তুতি অন্তহীন;
গহীনে সে বাজায় বাশি,ঢাক
বাহিরে তার অতি ক্ষীণ ডাক
পৌছে কিংবা পৌছতে গিয়ে শুধু
হারায় নিজে, হারায় সে কবিরে !

পন্য-ঘাটে বর্ণছাটের ভীড় এত যে বেশি আজ
তীরেতে গিয়ে ডুবিবে কী এ তরী
তবে কি এ যাত্রা হবে না শুভ !!

না হোক তবু ভাল;
এ ঘাটের এক নবীন কর্ণধার
হয়ত লিখিবে অবজ্ঞাতে শেষে
এসেছে কোনকালে
এসেছে সে পন্য সাজায়ে আমাদের এ ঘাটে
সকালেই স্ব-কাল ফুরায়েছে তাই
ফিরিয়াছে শেষে এ ঘাট হতে
                      ব্যর্থ মনোরথে!!!

--------------------------------------------------------------------