না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।

আজকের ১১ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান  (‌হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!

কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
--------------------------------------------------------------------


এক মুঠো মুক্তি-প্রেম-নির্জনতা ভ'রে বন্ধুর কাছে পত্র
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে


আজকাল যে-দিক দিয়ে যাই হাজারো
চিত্কার-নির্যাতন গলা চেপে আমার স্পন্দন রোধ করে,
চোখের দু পাশে বাড়ন্ত কালো-কালো ঠান্ডা ছায়া-গ্রহণ
সমূলে কেটে প্রেম আর মুক্তি'র সবুজাভ সখ্যতা
আমার হাত ধরে থামায়,
বন্ধু তোর্ সাথে এই পথে বহুদিন গিয়েছি-
  পায়ে ধূলো-কাদা মেখে, বই খাতা এক হাতে
              কোমরে চাপিয়ে স্কুল পালিয়েছি কতোবার;
ইচ্ছের মাস্তুলে স্বপ্ন বেঁধে খেলেছি এক জীবনের অবাধ্যতা,
কানামাছি, গোল্লাছুট খেলেছি কতো
মখমলে মোড়া নরম সুখে খামখেয়ালীপনার
মুদ্রা কুড়াতে সারা গ্রাম চষে বেড়িয়েছি
এখন কোথায় থাকিস - জানি নে


তুই-তো  জানিস
আমাদের কবিতা-প্রেমে  কেউ আঘাত করলে
   প্রতিশোধের হাজারো পথ-স্বর আমার পাঁজর খুলে বেরিয়ে যেতো,
আমাদের দৃষ্টি পরিক্রমা কেউ বন্ধ করে দিলে
   মৌনতার উপরেখা থেকে পক্ষপাতহীন জ্বলজ্বলে হাজারো শঙ্খ-দৃষ্টি ছড়িয়ে যেতো,
আমরা সত্যের মুখোমুখি হলে  
   মাথা নিচু করে আমার অস্তিত্বজুড়ে সত্যবদ্ধ একজোড়া হাত
                                 বাতাসে লাল-ফুলকি ছিটিয়ে দিতো,

বন্ধু-  
কেমন আছিস,
এখন রাত বাড়লে বাস-স্টান্ডে কয়েকটি একচোখা কুকুর,
টহলদার, মশা আমার রক্তাঞ্চল রোধ করে-সংঘবদ্ধ হয়ে
হাত মচকে দিতে চায়,  
বিশ্বাস কর আমি তাদের মত ঘাতক নই
আমার সেন্টিমেন্ট বিশ্বাসঘাতকের অঙ্গুলি চুষতে পারেনা।

ভালো থাকিস
কয়েক বিন্দু নির্জনতা আর এক দন্ড প্রতিবাদ খামে ভরে
তোর্ জন্যে খবর পাঠালাম
ঘরে ঘরে- এই পথে- এই জনসমুদ্রে- বৈশাখী হাওয়ায়  
সব ক্রোধ, ভালোবাসা, পরিচিতি, মানুষ হবার আকাঙ্খা
                            গোলাপের কাঁটায় রক্তাক্ত করেছি
              আমি ভালো নেই    
ফুল বিক্রি করতে করতে কৃষ্ণচুড়ার বরফমাখা সুবাস
কটকটে লাল মরূর মড়া অন্তরালে এখন একাই মাখি- ক্ষুধা মিটাই
পথে পথে কবিতার জোস্না পান করে  
                            তোকে দেখিনা।  

--------------------------------------------------------------------


একটা অশ্বথ বৃক্ষের বড় প্রয়োজন
- এস কে আই আলী

[যা বলার তা যায় না বলা
তাই করতে হয় এ ছলা কলা]


শুক চঞ্চু স্খলিত হয়ে মাতৃ জটর পেরিয়ে জরাজীর্ণ ধংসস্তুপের ইটের কোটরে পেল আশ্রয়।
ধীরে ধীরে অতি ধীরে মেললো নয়ন, দুটি পাতা একটি কুঁড়ি।
শুষে নিলো ধংসপের যত রস।
ভগ্নস্তুপ, হারাবার কিছু ছিলো না, দিলো উজাড় করে।
ঊর্ধ্বে নিম্নে দু’দিকেই বিস্তার।
কাণ্ডে, কাণ্ডে প্রকাণ্ড হয়ে উঠলো।
শাখায়, প্রশাখায় কত পাখ পাখালির কূজন।
দীনহীন শিশুদের ওয়ান্ডারল্যান্ড, শিশূপার্ক, তীর্থস্থান ।
ঘর হারাদের ঘর।
ধংসস্তুপ,
একদিন ছিলো,প্রাণের স্পন্দন, জাগলো আবার প্রাণ বন্যায়।
****
মার্বেল পাথরের ব্যালকনিতে সযত্নে লালিত হাস্না হেনা আর বনসাইয়ের জল যোগানে বনরবজী আজ বড় ক্লান্ত।
***
হে অজ্ঞাত কূলশীল অশ্বথ,বিস্তারিত করো তোমার কাণ্ড।
ধংসপ্রায় এ বনরাজীকে জাগিয়ে তোলো।
শ্যামল বাংলা আবার ভরে উঠুক, শ্যামলিমায়। প্রাণ বন্যায়।

--------------------------------------------------------------------


বছরশেষে লিখে রাখি লজ্জা অনুচ্ছেদ
- রিপন গুণ


নৈরাশ্যনিবাসের পলেস্তারা খসা দেয়াল
মুখ দেখছে, অন্ধকারের নিজস্ব পটে
আমাদের যন্ত্রণার নুনগুলো জড়ো হতে হতে
ফ্রেস্কোর প্রত্নসংকেত,
কুয়াশাকার্নিসে পা ঝুলিয়ে অবিরাম
অমানিশা চিত্রনাট্য ।

সৌরপরিক্রমার প্রথম কক্ষপথে ওই যে, তরুণ
বসে আছে ফুলস্কেপ সূর্যপত্র হাতে
বুকের ভেতর রেণু রেণু প্রোটনেরা,
মায়াবন্ধনে বেঁধেছে নিউট্রনকণা
প্রবল শক্তিআধারে পা গুটিয়ে বসা সাদাবামন
আর চোখের বর্ণালিতে মুগ্ধবোধ স্বপ্নপাঠ ।

অথচ কণ্ঠনালী বরাবর ছুরি শানাচ্ছে ইঁদুরদৌড়
চোদ্দকিস্তি মনখারাপের প্রথম এপিসোডেই,
বর্ণপরিচয়ের পাতা ছিঁড়ে রাখছে
অনির্দিষ্ট সেনসেক্স,
হারমোনিয়ামবেলা হারিয়ে ফেলছে-
ক্লাসমেটের ডো রে মি ।

আমাদের ছোটনদী পাঠশাল
ভুল ট্র্যাফিক সিগন্যালে
ঢুকে গেল ঘোড়দৌড়ের মাঠে,
ওই দেখো রোদ্দুরসরণির অভিযাত্রী পথ হারালো
শপিংমল শাসনে ।

পাসওয়ার্ড সভ্যতার আকাশকুসুম দিগন্ত
চমকে উঠছে পড়ুয়ার পতনশীল লাশে,
ক্রেডিটকার্ডের উল্টোপিঠ লিখে রাখছে
লজ্জা অনুচ্ছেদ ।

--------------------------------------------------------------------


বিশ বছর আগে
- মুজিবুর রহমান মুনীর


বিশ বছর আগে কোন এক কলেজ ছুটিতে হায়
বেড়াতে গিয়ে আম জাম লিচু কাঁঠাল দেবদারু ঝাউ
ছায়া ঘেরা এক মায়ার পল্লী গাঁয়।
দেখেছি প্রতি বাড়ী প্রতি ঘরের আঙিনায়
ধান ও খড়ের উৎসব-
দুগ্ধবতি গাভী মারাইয়ের গরু
ঘাণি টানা বলদ গাড়ি টানা মহিষ
বস্তা টানা ঘোড়া রোদে পোড়া সহিস
ফুলে ফলে নূ’য়ে পড়া সুশভিত লতা ও তরু
তখন জল বাঁশে ঝোলা জাল উঁচু মাচায় বসা জেলে
বই খাতা হাতে গল্প করে ফেরা কিষাণ কিষাণীর মেয়ে
কামার কুমার কুলি মজুর তাতী ও শিক্ষকের ছেলে
ছাতা মাথায় শিক্ষক-শিক্ষিকা বিন্ম্রতায় পথ উপচে পড়ে
গাঁয়ের লোকেরা তাঁদেরে কতনা শ্রদ্ধা কতনা ভক্তি করে।

বাড়ীর ফটকে কুটা উড়ানো চিটা রোদে শোভা পায়
সোনার হাড়ি কুমার বাড়ীর এখানে সেখানে ঠাঁয়।
মাটি ছানা মাটি টানা মাটির হাড়িতে মাটি জোড়া
কেহ রং কেহ আলপনা কেহ আবার পূনে দিছে পোড়া।
এখানে হল্লা ওখানে হল্লা এক্কাদোক্কা নাটাই ঘুড়ি
হাতুড়ি হাঁফর তাঁতের শব্দে সে এক স্ব্প্নপূরী।

বিকেলের ছায়া সোনা রোদ হলুদ ফোঁটা
ঝিলমিল আমলকী করমচা বেথলের গোটা
খালের ধার পুলের পাড় মাছরাঙা মন ভেলের বাঁশে
ঝাঁক ঝাঁক হাস নির্মল আকাশ কলমির গন্ধ বাতাসে।
সেদিনই বৈকালিক হাট চট বিছায়ে বসেছে দোকানী
অল্প দামের পশরা অনেক দামী মুখ ভরা হাঁসিখানি।
গামছা কাঁধে খালৈ হাতে খদ্দেরের ভীড় খুশীতে বেচা-কেনা
শহর থেকে আসা মেহমান সহ্জেই যায় চেনা।

গৃহস্থ কিনে তেল লবণ, শিশু খাতা কলম কাঁচের ঘড়ি
সং সেজে রঙয়ের মানুষ বিক্রি করে ক্রিমির ঔষধ বাতের বড়ি।
গ্রাম্য ডাক্তার বাঁশের মাচায় পাচীন বটের জট ঘেঁষে
চোখে চশমা পড়নে ধুতি গলায় পুরনো থার্মস্কোপ।
করাতিরা বসে আছে দড়াদড়ি করাত লয়ে পাশে
আগামী কালের কাজের ভাবনায় উ্ৎগ্রীব সারা চোখ।
সাপুড়ের সাপ খেলা তাবিজ বেচা কুমার হাটার কাছে
মাছের গলিতে এলেই বুঝা যায় বাঙ্গালী ভাতে ও মাছে।

একই হাটে পাঠশালা পাশাপাশি মসজিদ মন্দির
বায়স্কোপের নাচ-গান রাইস মিলের শব্দ নিভিড়।
বেলা গেলো সন্ধ্যা হলো ছায়ার মত আধার এলো হাটে
কাশি খঞ্জনি উলুধ্বনি পাখীদের গান আযান উঠিল সাথে।
দোকানীর ধূপধুনি হাসনাহেনা বকুল ঘ্রাণ বাতাসে
ভক্তিতে নূ’য়ে গেলো দশদিক ভক্তপ্রাণ আরক্ত রসে।
উঁচুসড়ক বাঁশের সাঁকো বিলঝিল ওপারের গ্রাম
পটে আঁকা চিত্রের মত সব কিছু নির্জীব।
ঘর ফেরা শুরু- আগামী কালের স্বপ্ন আগুয়ান
অপেক্ষায় প্রহর গোনে জ্বলে ওঠা মমতার পিদীপ।

ঘরে ফিরে দেখি, সে কী? সেখানেও চলছে
পাটিসাপটা ভাপাপুলি নানা পিঠার নিপূণ আয়োজন
পিদীপের নীচে চেনা মুখ চেনা চোখ ঝলমল জ্বলছে  
বনলতা সেনেন মতন-
‘এত সময় কোথায় ছিলেন?’ সকলেই বলছে।
সে স্বর্গ, স্বর্গীয় সে সুখ বুক ভরে নিতে যদি হয়
আবার আমাদের ফিরে যেতে হবে মাটির কাছে
কোন পল্লী গাঁয়।

--------------------------------------------------------------------


শাড়ির পাপ খুলে দেব তোর হাতে
- মৄত্তিক মাসুম


গোধূলি আর প্রত্যূষের খোয়াড়ে
লোটকে আছে রাত - সময়
স্বপ্নের শবদেহ ব্যবচ্ছেদ
প্রত্যহ হা-পিত্যেশ
তদন্ত রিপোর্ট
গড়ায় কাঠ-
গড়ায়

          নিউটন মিথ্যে নয় -

শুধু
আয় আর
একটিবার
শাড়ির পাপ খুলে দেব তোর হাতে

--------------------------------------------------------------------


কবি
- সরকার মুনীর

( আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতাটি আজ এই শুভদিনে আসরের সব কবিদের প্রতি অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করছি- সবাইকে শুভ নববর্ষ ১৪২০ )


রুক্ষ প্রকৃতির বুক চিরেও কেউ কেউ
এগিয়ে যায় গন্তব্য-হীন।
মাথার উপর তার শব্দের চাদর
রোদ-বৃষ্টিতেও তাই সে নির্বিকার।

বোধের ব্যাধিতে আক্রান্ত সেইজন—কবি
সুন্দরের সন্ধানে ব্যস্ত ভাবালু এক মানব।
অন্তরের গহীনে সে বর্ণ খুঁজে ফেরে স্বপ্নের
রুঢ় বাস্তবের কর্কশ জমিনে এক ঠায় দাঁড়িয়ে।

ব্যস্ত আমাদের আগ্রহ বা অনাগ্রহ থেকে
সে থাকে দূরে- চিন্তার সাথে চেতনার সন্ধিতে।
সফল পদাবলীতে সে হয় মহানায়ক
বিফলতা তার নিত্যসঙ্গী—অন্যকে না বোঝানোর গ্লানিতে ন্যুজ।

তবু কাগজের ক্যানভাসে শব্দের ছবি আঁকে সে
তার উদার মনের জমিনে স্বপ্ন চাষে আহবান থাকে সকলের।

--------------------------------------------------------------------


চলে যাব কবিতাকে নিয়ে
- চন্দ্রশেখর (আলোর পথযাত্রী)

*(আপাতত উৎসর্গ করছি 'নাইবা গেলো জানা' কে)*
---- ---- ---- ----


মাফ করবেন,
কবিতাকে নিয়ে আপনাদের কাছে কোনও কথাই বলব না।
এ আমার একান্ত আপন সুতীব্র ঘোষণা।

আপনারা যা খুশি বলতে পারেন, ভাবতে পারেন,
ছিঃ ছিঃ করতে পারেন, দুয়ো দিতে পারেন, যা খুশি…
আর আমি, এই সবকিছু পিছনে ফেলে
আপনাদের সামনে দিয়ে… এই সন্ধ্যায়…
কবিতাকে নিয়ে চলে যাব।

চলে যাব সজল মাঠ শ্যামলী নদী পার হয়ে
দুধ-সাদা পাহাড়ের মাথায়
নিখাদ নিলাজ কবিতার টান টান শরীরে
ঢেলে দেব শুদ্ধ হলাহল – মুগ্ধ সোমরস
আপাদশিখর জিভ দিয়ে টেনে নেব নিজের ভেতর।
যন্ত্রণার তীব্র মালকোষে আর উত্তপ্ত লাভাস্রোতে
জন্ম নেবে এক জলজ উপাখ্যান
কবিতার শরীর ভেঙে ভেঙে…

সেই সজলের স্রোতধারা আমাকে ভাসিয়ে নেবে।
আজন্ম অনাঘ্রাতা কুমারী কবিতার
ঠোট-চিবুক-স্তন-যোনী পার হয়ে পৌছে যাব পদমূলে
বিলীন সাগরের সফেদ ফেনায় নোনা রক্ত-ঘামে।

এ-নিয়ে আপনাদের আর কীই বা বলার থাকতে পারে!

কবিতা তো আমার একান্ত আপন কামনার ধন।
তার কাঁধে হাত রেখে ধীর পায়ে হেটে যাব
অবুঝমারের গভীর জলপাই জঙ্গলে
জোনাকির মুক্তাখচিত রাতে
নিষাদের দামামায় মুড়ি-গোণ্ডদের প্রাকৃত মদে
জমে উঠবে আমাদের যৌবনের উল্লাস।

দাউ দাউ আগুনের নীলচে শিখায়  
দাহনের শেষ পর্বে
জন্ম নেবে খিদের মহাকাব্য
আর, মরুর তৃষ্ণা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব
কবিতার শরীরের অণু-পরমাণু কোষে কোষে
বেহুলার বাঁশি আর দুন্দুভিনিনাদে।

তারপর,
কুমারী অনাঘ্রাতা কবিতাকে নিয়ে
নবীণা ঊষাকে সাক্ষী রেখে
ঝর্ণা অবগাহণের পর
একটি সবুজ পাহাড়
রূপোলি নদী
আর ভবিষ্যতের মহীরুহের কচি পায়ে
আভূমি প্রণত আমি
ঘুমিয়ে পড়ব হিমালয়ের কোলে মাথা রেখে
কন্যাকুমারীতে পা।
আমার এক হাত ছুঁয়ে থাকবে কচ্ছের রান
অন্যহাত নাগা পাহাড়ের চূড়া।
আমার পিঠের ওপর
আদিম অধিবাসীদের হৈ-হৈ রাতের নগ্ন সৃজনোল্লাসে
লেখা হবে নতুন কবিতা।

আমার মাথার কাছে উঁচনো বেয়নেটের মাথায়
ডানা মেলে উড়ে এসে বসবে প্রজাপতি।

এ-নিয়ে আপনাদের আর কীই বা বলার থাকতে পারে।

--------------------------------------------------------------------


কাছে এসো, তোমার জন্য একটা বৈশাখ
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন


আজ আমি এসেছি পাঞ্জাবী পড়ে
খাদির কাপড়ে তোমার বানিয়ে দেওয়া।
-আমিও শাড়ি পড়ে এসেছি, লাল পাড় সাদার উপরে,
-যেটা আমার তোমা হতে গত বসন্তে পাওয়া।
তোমাকে খুব খুব সুন্দর লাগছে, আজ
-মিথ্যে বলনা ওগো আমার দেবরাজ।
        বাঙ্গালীয়ানার দিব্যি দিয়ে
                     বৈশাখ এলো আজ,
       নববর্ষের এই দিনেতে
                     কেন বাঙ্গালী সাজ?
       তোমার আমার বৈশাখটা
                     হোক প্রতিদিন
       ভালোবাসা প্রেমের ছোঁয়ায়
                     থাকুক অমলিন।
       এসো এসো আমার প্রিয়,
                     বৈশাখের রাখালী
        আজি এই নববর্ষে
                     নয় কোন আর হেয়ালি।
        কালো চুলের খোঁপাতে  
                     পড়াব গোলাপ ফুল
         শুধরে নিব যত আছে
                     বিগত সব ভুল।
         তোমার রাঙ্গা গলাতে
                     পরিয়ে বেলির মালা
         গাইব বাউল সুরে
                     নতুন দিনের পালা।
         মেহেদী রাঙ্গানো হাতে
                     পরিয়ে গাঁদার রাখি,
         উড়িয়ে দিব মুক্তকাশে
                     ভালোবাসার পাখী।
         আজকে তোমায়
                     দেব না কোথাও যেতে
         সারাটাদিন আমার বুকে
                     থাকবে কান পেতে।
         তোমার তরে নব দিনে
                     ভালবাসার আলিঙ্গন
        মিষ্টি সুরে গোপন প্রেমের
                     সান্ধ্য আয়োজন।
-এই মাত্র লিখলে?
চল পান্তা ইলিশ খাই, সাথে ঠক দই,
-একদিনের পান্তা ইলিশের বাঙ্গালী আমি নই।
আজ বটমূল টা খুব বেশী ভিড়।
-তোমার চোখ তো চোখ নয়, যেন একটা তীর।
একটাই তো তীর আছে, সেটা তোমার দিকে তাক করে।
-সুন্দরী মেয়েদের শাড়ীর আড়ালে নরম পেটে চোখ পড়ে।
             ইলিশের মত চকচকে পেট
             তোমার শাড়ীর আড়ালে,
             মধুর ক্যান্টিনের সিঙ্গারাটা
             বুকের ভিতর চাপালে।
            
             এমন কিছু আছে তোমার
             নেই অন্য কারো,
             এমন কথা এমন দিনে
             কিভাবে বলতে পারো?
-এইসব অসভ্য কবিতা কিভাবে আসে?
তুমি যখনই আস, সভ্য থাকে না কাব্য।
-সাথে তুমিও। ভুলে গেছি, শুভ নববর্ষ।
ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি,
-আমিও।
কাছে এসো, তোমার জন্য একটা বৈশাখ
-ওটা না হয় আজ বাকী থাক।

--------------------------------------------------------------------


আজ হারাবো।।
- ইন্দ্রলেখা ভট্টাচার্য্য


আজ হারাবো হাজার মেঘের পালে,
আজ জড়াবো আকাশজোড়া জালে।
আজ ঝাঁপাবো ভালোবাসার খাদে,
আজ পা দেবো শূণ্যে, মোহের ফাঁদে।
মানিনা আজ মিথ্যে ভয়ের বাধা,
মৃত্যু, তুমি কৃষ্ণ,আমি রাধা।
আজকে নেশায় হাল্কা মাথা বেশ,
আজকে মনে মাতাল খুশির রেশ।
নীল যমুনার শুনেছি হাতছানি;
এক ডুবেতেই তোমায় পাবো জানি!..

--------------------------------------------------------------------
১০

আশ্রয়
- সুকন্যা ঝা


এখনও বহুদূর যেতে হবে
যাত্রা সবে শুরু
ক্লান্ত পথিক , হেঁটে চলেছি।
মাঝে মাঝে দেখতে পাই বিশাল বট,
ভাবি একটু বিশ্রাম নেব,
কিন্তু ভয় হয়
যদি ঘুমিয়ে পড়ি ।
আর অন্ধকার ছড়িয়ে পরে
রাস্তা বড়ো এবড়ো খেবড়ো
আলোতেও কেউ চলতে চায় না
আমি সাহস করে বেড়িয়েছি
দেখি কত দূর পৌছাতে পারি
বীরদের বলিদান ব্যর্থ হল
এক সময় লুট চালাত বিদেশীরা
আজ লুঠ চালায় স্বদেশীরা
আগে পশু দিয়ে পণ্য ক্রয়বিক্রয় হত
আজ নারী পণ্য পাচার হয় দেশে বিদেশে
আগে নারী পুরুষের সীতা আর রাম ছিল আদর্শ,
আর আজ রাবণ, শূর্পণখা দেখা যায় সর্বত্র
দুধ-ওয়ালা ঘুরে বেড়ায় যত ত্রত
আর মদ বিক্রেতার স্থান কাল পাত্র নির্বাচিত
আমার শব্দ কম পড়ে যায়
এই সব ভাবতে ভাবতে চোখ ভরে যায়
বেদনায় জর্জরিত হৃদয়
এই বিশাল পৃথিবীতে একটা নির্মল আশ্রয় চায়
আশ্রয় খুঁজতে বেড়িয়েছি
বহু কাল কেটে গেছে
আজও পাইনি
অপেক্ষা করছি
দেখছি আগে কোনটা পাই
পৃথিবী ঠাই না
মৃত্যুর কোলে আশ্রয়।।

--------------------------------------------------------------------
১১

চিত্ত আমাদের নব বরষে
- অরুন কারফা


চিত্ত আমাদের নব বরষে
নিত্য জাগুক নবীন হরষে
আগমনে তার উঠোনে হিয়ার
চতুর্দিকে ছড়িয়ে প্রেমের বারতা
ফুলে ফেঁপে উঠুক মনের উদারতা।

অদেখা বছরের পদার্পণে
খুশীর হাওয়া বয় যেন মনে
ছড়িয়ে বাণী হৃদয় খানি
জিতে নিয়ে সবার অতি সহজে
আলোর প্রকাশে উঠুক তা সেজে।

ফুলে ফুলে সাজানো বনে উপবনে
দুলে দুলে ডাকুক কুহু কুহু তানে
দেখি যেন ভিন্ন ছবি এক অন্য
নব বর্ষের ডাকে দিয়ে সাড়া
খুশীতে ডুবে যাক বসুন্ধরা।

আর, যেমন দেখা দিলে দিনের আকাশে তারা
হতাশ না হয়ে আমরা হতাম আত্মহারা
তেমন ভাবুকে কবি, চাবুকে পার করিয়ে
তেপান্তর ছাড়িয়ে আনন্দের ঘোড়া
পুরনোর সঙ্গে নতুন কে দিক জোড়া।

--------------------------------------------------------------------