না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।

আজকের ১৩ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান  (‌হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!

কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
--------------------------------------------------------------------


এনিগমা
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে


কেউ দেখেনি -
আমার সমগ্র চোখ-জুড়ে গেল বছর বেশ কয়েকটি ভৌগোলিক বনভূমি জেগেছে।
ওখানে জন্মেছে ছোট ছোট জলজ উদ্ভিদ, মাছ, মৌমাছি - ওরা সুস্থ, সংঘবদ্ধ
এক ভাষায় কথা বলে;
গ্রীষ্মকালে মেঘ-বৃষ্টি,জ্বরে,অসুখে ও  বিভিন্ন সংস্কার দোষে আক্রান্ত হয়
                        মানুষের মত সুশীল, সম্পূরক
                       কারো কারো অ-মানুষের মত কন্ঠ -
সন্ত্রাসী- আগ্রাসী- মার্কস ব্যাজ মুখোশ পরে আজ রাতে নদীর মোহনায়
স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন করে দেবে, ওদের যে ক'জন তাদের  চিনি
                        ওরা বিপ্লবী সাংঘাতিক।  

জারুল-দেবদারু'র  সোনালী লতাপাতা দিয়ে দু-দিন আগে আমার হাড়ে  
বাঘিনী-বায়োনেট কামড়ে ধরেছে বুনো-অঞ্চলের সমগ্র কটিদেশ, ওদের-ই  কেউ-
দেখেছে আমার আস্থাবর, সরল চোখের প্রেম
জরায়ুর অন্তরালে ঘুমন্ত অর্থহীন আগাছার দীর্ঘ বিস্তার,
          চাইলে ধর্ষণ লুন্ঠন দিয়ে একটা দো-চালা ঘর তোলা যেতো  
          চাইলে মাইল মাইল নিম্নাঞ্চল দশ ফুট জলোচ্ছ্বাস দিয়ে আটকে দেয়া যেত
          চাইলে বুনোজন্ত, বেশ্যা, স্বৈরাচার, পুরো গ্রাম-সীমান্তে  
                                                        আঘাত করতো  আঘাত
                                                         হত্যা করতো  হত্যা
                          জল্লাদ খোলা মাঠে এক কোপে কেটে ফেলতে পারেন
                          সংসদ থেকে বৈধতা আনা যেত

কেউ না দেখলেও আমি দেখেছি -                        
খরস্রোতা খালবিল বনভূমির বুক চিড়ে চিড়ে ক্ষান্ত - দুঃশাসনে আহত বিবেক
স্রোতের সাথে যেদিক চায় যায় আমিও ছুটে যেতাম  তার মত
ছায়া নেমে আসলে-
               এখন যে দিকে যাই কুকুরের ডাক শুনতে পাই
               দুঃশাসনের ডাক শুনতে পাই
               দুঃশাসনের ডাকে রক্তাক্ত ত্রিমাত্রিক রহস্য দেখতে পাই
               পাপ আর অপরাধের ক্ষমা কৃষ্ণ নক্ষত্রে দেখতে পাই
               এখন বনে হিন্দু - মুসলমান নামধারী কেউ নাই
               আমি চাইলে গনতন্ত্র- মুক্তি- বাসি ফুল জঙ্গলে যা ইচ্ছে করতে পারি।

বনভুমিটা এখন বাড়ন্ত , মৌমাছি আর ডুমুরের ফুলে আতর  ঢেলেছে  
গহীন বুনো রাত-  আদিম  অস্তিত্ব একাধিকবার ঝলসাবে,
নীলাভ লজ্জা- ভয়- সাহস খুটিয়ে খুটিয়ে  খুলবে
                                                               দেখবে  কেমন আছি  
ঘাসফড়িং আরেকটি কালো মানচিত্র দিয়ে ঢেকে দেবে পুরো বনাঞ্চল;
                                                    
আমি যখন যাবো
     আমার পা ভেঙ্গে ভেঙ্গে মাটি সরাবে পৃথিবী  
আমি যখন অতি বিশ্বাস রেখে তাকাবো
    চিলের চোখ থেকে এসিড ঝরে ঝলসে যাবে আকাশের মুখমন্ডল
আমি যখন দু-হাত প্রসারিত করবো
    ওরা কেটে নেবে  আমার বনাঞ্চল

আমি এখন বলে দিতে পারি
কে কে হত্যাকারী।

--------------------------------------------------------------------


অস্থি ছুঁয়ে থাকি
- বাণীব্রত কুণ্ডু


পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলে উঁচু টিলাটার কোলে
আমি জেগে থাকি –
জেগে থাকি কার্তিক সন্ধ্যায়
গৃহস্থের দেওয়া আকাশবাতিটার মতো

রাতভর বয়ে যায় কত উন্মাদ বায়ুদল
উড়ে যায় রূপচোরা পাখি ; হলুদ চোখ জ্বলে
এখন আর শৃগালেরা প্রহর গোণে না তাই
গা-ঝারা দিয়ে পুরোনো কিছু আগুনের লেলিহা
ঠিকরে বেরিয়ে আসে শহরের বুকে
গেয়ে ফেরে মকরসঙ্গীত কোনো...

আমি কোনো ‘হ্যাপি প্রিন্স’ নই
আমার কোনো ‘আলাদিনের চিরাগ’ নেই
শুধু দু-চোখে জল ভরে রাখি,
কখন হৃদয় চলে যায়!
রাত্রি এলে আজো তাই
                     অস্থি ছুঁয়ে থাকি।

--------------------------------------------------------------------


সুখ বৃক্ষ বাড়ছে স্বপ্নে
- জি,এম, হারুন-অর-রশিদ


আমার হৃদয়কে যখনই স্বপ্ন ধার নেয়
তখনই আমি সুখী মানুষ হয়ে যাই।

শৈশবে একটা সুখ বৃক্ষ কিনেছিলাম
হৃদয়ের অনাবাদী  জমি আবাদী  হয়েছিল সুখ বৃক্ষে।।

মা বলেছিল ”দেখ ঐ বৃক্ষ তুই কিনিসনে,
সুখ বৃক্ষের পাশেই  দুঃখের আগাছা জন্মায়,
সুযোগ পেলেই আগাছাগুলো বৃক্ষের গলা চেপে ধরবে’’
……  মনোলীনা আছে বলেই বৃক্ষটা একটু করে বাড়ছে।।
মনোলীনার সাথে দেখা হবে আশায়
হৃদয়টাকে মাঝে মাঝে রোদে ঝলসে্ নেই,
সূর্য্যের সাক্ষাতে বৃক্ষ তার দু’বাহু মেলে দেয়
পৃথিবীর সমস্ত সুখকে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করে
তখন হৃদয়ের মাঝে আরেকটি হৃদয় কথা বলে।।

মনোলীনা আমাকে ভুল বুঝলেই -দু’-একটা পাতা ঝরে যায়,
মনোলীনা ভুল বুঝলেই-বৃক্ষটা নিজেকে উপড়ে ফেলতে চায়,
মনোলীনা ভুল বুঝলেই-বৃষ্টির সাথে রক্ত ঝরে,
মনোলীনা  ভুল বুঝলেই- স্বপ্ন আমার হৃদয়কে ধার নেয়।।

স্বপ্নের মাঝে – মনোলীনা আমাকে ভুল বুঝেনা,
স্বপ্নের মাঝে – মনোলীনা বৃক্ষের হাত ধরে ,
বৃক্ষ তার সমস্ত  পাওনা পুষিয়ে নেয়।
স্বপ্নের মাঝে – মনোলীনা আগাছা গুলো উপড়ে ফেলে,
স্বপ্নের মাঝে – মনোলীনা বৃক্ষের স্পর্শে স্বপ্ন দেখে
স্বপ্নের মাঝে – মনোলীনা আমার হৃদয়ের কথা
তার কন্ঠে ধারন করে।।

‘’আমার হৃদয়কে স্বপ্ন যখনই ধার নেয়
তখনই আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ’’

--------------------------------------------------------------------


বুনো কাব্য
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন


(এক)

বুনো কাব্য
******

  তোমার হাতটা দাও,
- কেন?
  তোমার হাত ধরব।
- ধর।
  হাতে একটা চুমু দেব?
- দাও।
  হাত দুটো এত নরম তুলতুলে কেন?
- মাখন দিয়ে বানিয়েছেন স্রষ্টা।
  তাহলেতো কামড় দিয়ে দেখতে হয়।
- ভালো হবে না বলছি।
              তোমার হাতে রেখেছিনু হাত
              ভাবিনি কোন পাঁচ সাত,
              উদোম প্রেমে উদোম রাত
              মনকে রাঙ্গিয়ে এলো প্রভাত।
- কার কবিতা?
  কবি দেবরাজ।
- এতো সুন্দর কবিতা তুমি কি করে লিখ?
  তোমার প্রেমের কারনে।
- আমার জন্য কোন কাব্য কি তোমার আছে? সব তো পত্রিকার জন্য।
  শুনবে?
- হ্যাঁ।
              আলতো করে আলতো চিমটি
              দিলাম নগ্ন পিঠে,
              আলতো চাপে নরম বুকে
              প্রেমের জ্বালা মিঠে।
              আলতো করে হাত রেখেছি
              নরম বুকের ভাঁজে,
              আলতো করে আদর পেয়ে
              তোমার দু'চোখ বুজে।
              আলতো করে ফেলছি যত
              নিঃশ্বাস তোমার গাঁয়,
              ভারী হলেও আমার ওজনে
              তোমার যত সায়।
              ওজন দিয়ে ভোজন করি
              সারা অঙ্গের ঝড়,
              অর্থহীন শব্দ প্রেমের
              কেঁপে উঠে স্বর।
- বন্ধ কর বুনো কাব্য, দিলাম গালে এক চড়!


(দুই)

যৌবনের ঝাউবনে
***********


  কি?
- কী?
  না, কিছু না।
- তাহলে?
  দেখছি।
- অমনভাবে?
  অমনভাবেই তো দেখবো।
- গিলে খাবে নাকি?
  চিবিয়ে খাবো
- শয়তান,
  এতো সুন্দর কেন তুমি?
- সুন্দর চোখ দিয়ে দেখছ তাই,
  এতো প্রেমময় কেন তুমি?
- তোমার প্রেম আমার হৃদয়ে তাই,
  তোমার চোখে এতো কিসের মায়া?
- পৌরষের কাছে পরাস্ত আমার চোখ,
  তোমার ঠোট দুটো রাঙ্গা কেন?
- এতো কাব্য কেন আজ? প্রিয় কবি দেবরাজ,
  কোন উদ্দেশ্য নেই,
- উপলক্ষ আছে?
  তাতো আছেই,
- কি সেটা?
  মুক্তো কুড়িয়ে কাটাব সারাদিন,
- কোথায়?
  ঝাউবনে,
- হাসালে! ঝাউবনে মুক্তো,
  হ্যাঁ, তরল মুক্তো,
- সেই ঝাউবনটা কোথায়?
  তোমার যৌবনে, যৌবনের ঝাউবনে,
- অসভ্য! কি বেয়াদব!

--------------------------------------------------------------------


খোলা চিঠি
- শান্ত


প্রিয় ঊষা,
জলতরঙ্গে লাগছে আগুন তোমার আগমনে। তুমি
আসবে বলে রক্তরাগে প্রকৃতি হয় লাল। সবুজ ভূমি
ছেড়ে শিশিরের অবগাহন, চোখ তুলে জেগে আছে যে জন
স্বপ্নে জাগরণে। রাত্রি হাতছানি দিয়ে কাড়ে এ মন।
তুমি বাঁচার মানে খোঁজো বন্ধুত্বের মাঝে। জীবন পাও
একটু হাসির সুধারসে। দাম্পত্যের রাগ-অনুরাগ দাও
মুছিয়ে ভালবাসার প্রথম কিরণে। আত্নজার শান্ত ছায়া
এক সময় রূপ নেয় অজান্তে মন পাখির মায়া।
ঊষা, সেই যে বাংলাভাষার বুকে আঁচড় কেটে তুমি
কবিতা লিখতে, কবি ও কবিতার হৃদয় চুমি।
আমি উন্মাদ হয়ে তোমার সাথে ফিরতে চেতাম--
তুমি আমার বায়না শুনে হেসে খুন। আমি পেতাম
যোগ বিয়োগের সমাধান, আর স্মৃতির চাদরে সুখস্মৃতি।
আমি জীবনের নামতা, প্রেমের নামতা আর প্রেম-প্রিতি
পদ্যে বাঁধার চেষ্টা করতাম। এ মন রক্তিম উত্তাল হলে
পাঞ্চাল নন্দিনীর নামহীন সপ্তক বাজাতাম, তুমি ভুলে
আমায় সমর্পণ করতে তোমার স্বপ্নের রামধনু-হোলির ভাষা।
বন্ধু, সমাজের জাগরণ, অরূপরতন  নয় তো আমার আশা।
আমি শুধু তোমার আকাশে চাঁদ তারা মেঘ হয়ে---
ভ্রমণ করতে চাই ছোট্ট পাখির মত। চলছে বয়ে
আমার অবাধ্য মনের প্রেম প্রত্যাশা রাতজাগা পাখির মত
তারার চোখে ঘুম আনতে যায়। সমাজে দূর্গা আছে যত
তারা আহবান করে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু আমার এ মন
পড়ে আছে তোমার বর্ণচ্ছটায়। আমি জানি তোমার গুপ্তধন
জমা আছে বড় মহাজনের কাছে। কিন্তু জেনে রেখ আমি--
ভালবাসা কে যেতে দেব না অস্তাচলে। ক্ষমিও হে জগৎস্বামী।
ইতি, অপরাহ্ন

--------------------------------------------------------------------


সমবায়
- চন্দ্রশেখর


এখন আঁধার রাত
ঝুপড়ির বেড়া পেরিয়ে গন্ধ
ছড়িয়ে দিচ্ছে ভাত।

ভাত, শুধুই ভাত
ক্ষিদের ঝোলে মেখে নিয়ে খায়
ছোটো-বড় মিলে সাত।

রাত পেরিয়ে দুপুর
ঝুটো বাসনটা চেটে কেঁদে ফেরে
আশ্রিত নেড়ি কুকুর।

রাত কাঁদে ‘হায় হায়’
ঝুপড়ি ঘরে দাওয়ায়-মাটিতে
কুকুরে-মানুষে সমবায়।

--------------------------------------------------------------------


এসো হে দখিন হাওয়া
- মুজিবুর রহমান মুনীর


এসো হে দখিন হাওয়া
প্রাণ চঞ্চল
ঐ দূর নদী কাশবন
জোছনা জোয়ার প্লাবন
ঝিলিমিলি বালুচর খেয়াঘাট
প্রান্তর পেড়িয়ে এসো!

হে নিটল
ঐ কলাপাতা রাতের ছায়া
দখিনের বন ঘর ফেরা পথ
সারি সারি গ্রাম জোনাকী মন
হাসনাহেনা কাঁঠালচাঁপা
ভালোবাসা ঝিল্লির গান
প্রাণ বায়ু জড়িয়ে এসো!

হে স্নিগ্ধ শীতল
ঐ ঝর্ণা পার্ক গলি লাইটপোস্ট ল্যাম্প
নীরব আলো ভাস্কর্য মিনার
বাইন বার্য মেহগনি ইউক্লিপটাস গাছের সারি
পাশের ঐ নারিকেল সুপারী আমের বাগান
ধবধবে ইটের বাড়ী
জানালা শার্শি বেলকোনি রেলিং
অচেনা ছায়া অজানা নারী
নিশিথ প্রেমিক প্রাণ বিনিদ্র আঁখি
তন্ময়ে ভরিয়ে এসো!

হে অফুরান
জীবনের জয়গান
যথা শীঘ্র আমাদের ঘরে এসো!
ভীষণ শ্বাসরুদ্ধ ভিতরে আমরা ক’জন
তোমার অপেক্ষায় আছি।

--------------------------------------------------------------------


সবুজ ব্যাঙের কেচ্ছা
- এস কে আই আলী


এক যে ছিল সবুজ ব্যাঙ
করত শুধু ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
তার ছিল এক দুষ্টু ছেলে
সারাটা দিন কাটাত খেলে।
মায়ের কথা শুনত না,
মায়ের আদেশ মানত না,
করত শুধু মারামারি,
সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি।
ডাইনে চলতে বললে তারে,
যেত সে বায়ে ঘুরে।

দেখে এমনি ছেলের গুন,
মায়ের মনে জ্বলে আগুন।

ভাবল মাতা মৃত্যুর পর,
পাহাড়ের পর হলে কবর।
বর্ষাকালে থাকবে ভালো,
জোনাকিরা জ্বালবে আলো।

তাইতো ডেকে ছেলেকে,
সকল কষ্ট বুকে চেপে,
বললো মাতা মৃত্যুর পর
দিবে তুমি আমার কবর
ছোট্ট ঐ নদীর ধার,
ছেলে করলো অঙ্গিকার।।

তারপর এক ভোরের বেলা,
মা ব্যাঙের ভবলীলা,
সাঙ্গ হল যবে,শিশু ব্যাঙ ভাবে,
তাকে কবর দিতে হবে।।

যেহেতু মার জীবদ্দশায়
একটি কথাও শুনি নাই,
তাইতো মায়ের শেষ অনুরোধ
পালনে করব ঋণ শোধ।
হোক যতই কষ্ট আমার
নদীর পাড়ে মায়ের কবর
দিবই দিব আমি,
শান্তি পাবে মার আত্মা খানি।।

অবশেষে মায়ের কবর
দিল এক নদীর পাড়,
বিপত্তিটা শুরু হলো,
বর্ষায় নদী ভরে গেল,
উপচে পড়লো নদীর পাড়
ডুবলো তার মায়ের কবর।

(তাইতো) বৃষ্টি নামলে কাঁদে ব্যাঙ,
করে শুধুই ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।।

--------------------------------------------------------------------


আছ তুমি মৃত্যুতে, আছ তুমি প্রেমে ( প্রিয় কবি সিলভিয়া প্লাথ স্মরণে)
- অর্বাচীন স্বজন


যতবারই দেখি  বিষণ্ণ , অথচ স্বর্গীয় মুখখানি
ততবারই হয়ে পড়ি আচ্ছন্ন!
কি অজানা ব্যথা না জানি ছিল লুকিয়ে
কেউই পারে নি জানতে।
আজন্ম বিষণ্নতায় ভর করে
খুলে দিয়েছ কাব্যের সহস্র দ্বার।
কোন অজানা শোকে বেছে নিলে আত্নহনন?
জানি না! জানা হবেও না কোনদিন
বরফের মাঝে লুকিয়ে থাকা আর্তনাদ
আর পপিফুলের বুনো মাতাল করা সৌন্দর্য
শুধু তোমার কাছেই দিয়েছিল ধরা
প্রেম ছিল তোমার  সারাক্ষণের আরাধ্য
কিন্তু হায়!
বিষণ্নতা আর মৃত্যুর মাদকতায় দিলে ডুব
আর আমরা হারালাম একটি প্রস্ফুটিত গোলাপ।

--------------------------------------------------------------------
১০

আজ গগনে অরুণ উঠেনি ("অরুণ কারফা" দাদার স্মরণে)
- সাগর কাজী


(আজ) গগনে অরুণ উঠেনি ,
বসন্তের এই মধুর ক্ষনে দখিন সমীর ছুটেনি ।
গগনে অরুণ উঠেনি ।
বনের কোকিল আজ আসেনি ,
জগত নিখিল আজ হাসেনি-
ছন্দ লহর ঢেউ খেলেনি ,
অন্ধ পূবে দীপ জ্বালেনি ।
কালো মেঘ রাশি টুটেনি -
গগনে অরুণ উঠেনি ।

(আজ) প্রভাত কেন যে আলোহীন !
দিবস প্রাতে এই বেলাতে নামে আজ কোন কালো দিন !
প্রভাত কেন যে আলোহীন ।
বুলবুলি আজ সুর তুলেনি ,
সমীর দোলায় দিক দুলেনি-
হাসনাহেনা টগর বেলি ,
যেইখানেতে দৃষ্টি মেলি-
ফুলবনে ফুল ফুটেনি ,
গগনে অরুণ উঠেনি ।

(আজ) চারিদিকে এক নব ভাব ,
লক্ষ সুখের মাঝে কোন এক ভীষণ সুখেরই অভাব ।
চারিদিকে এক নব ভাব ।
সবার মাঝে শূন্যতা কার ?
যার অভাবে জগত অসার-
শূন্য শূন্য কি শূন্যতা ,
যেদিক তাকাই অপূর্ণতা -
আজ কে সে এসে জুটেনি ?
গগনে অরুণ উঠেনি ।।

--------------------------------------------------------------------
১১

আমার স্বপ্ন বড়ই শুকনো
- অরুন কারফা


আমার স্বপ্ন বড়ই শুকনো
জমাট বদ্ধ প্রচুর প্রশ্ন
নিশ্চুপ থাকা সময়েরই মত
রক্ত রঞ্জিত ক্ষত বিক্ষত।

ভয়ঙ্কর তার পাহাড়ের রূপ
দেখে অনেকে ভাবে ভগ্নস্তূপ
যার তলেতে আছে লুকিয়ে
কত দিনের থেকে শুকিয়ে
অজস্র দীনের বাসনা গাথা
কত অভুক্ত গরীবের কথা
যাদের জন্য না লেখায় গান
সুরের মাধূর্য পায়না মান।

স্বপ্ন গুলো উঠে দাঁড়িয়ে
মাথা চাড়া দিয়ে
বাস্তবে জমির উপর
হাঁটলে পা দিয়ে
এসবেরই হয়ত হত সুরাহা
দেখাতে পারত অনেককেই রাহা
যেমন স্রোতস্বিনী ধায় সাগর পানে
কত আবর্জনা আর বর্জ্য টেনে
তবু ধরার বুকে আছে সে সুখে
জীবনকেও ধরে বাঁচিয়ে রেখে
ক্ষত লয়ে হৃদয়ে প্রতি নিয়ত
বয়ে চলে তাও হয়ে বন্দিত ।

--------------------------------------------------------------------
১২

জনতার সুখ
- কবীর হুমায়ূন


(এক)
আমরা হলেম মেষেরই পাল, রাখাল হলেন তারা,
স্বার্থ তাদের হাসিল তরে- রক্ত চোষেন যারা।

ভোটের সময় কাতুকুতু, ভোট ফুরোলেই শেষ,
আমরা মরি ক্ষুধার জ্বালায়, তারা থাকেন বেশ।

পাতি নেতা, ছুতি নেতা, নেতার নাতি নেতা,
ছল-চাতুরী যেমন করেই চায় যে শুধু জেতা।

গণতন্ত্র, জনতন্ত্র শুধুই মুখের ভাষা,
জনগণের ভাগ্য নিয়ে করে যায় তামাশা।

(দুই)
এই তো সেদিন টিভি খুলেই দেখি অরূপ ছবি,
সৌদি আরব এসেছিলেন রাজার পুত্র কবি-

বললেন তিনি স্যুট-টাই গায়ে, গদি পেলে ভাই,
দেশের মাঝে ছড়িয়ে দেবো আলোকের রোশনাই।

হায়রে আলো! জনগণের জ্বলবে কবে আর?
গদির মোহে মানুষ মারে বিবেক অন্ধকার।

স্বপ্ন দেখি এই জনতার অতুল অনুপ সুখ,
স্বপ্ন কবে সফল হয়ে কাটবে তাদের দুখ?

--------------------------------------------------------------------
১৩

স্বৈরিতা সুখ কেড়ে নেয়
- ত্রিচরণ


ও চাঁদ, জোসনায় মুগ্ধ হয়েছি - শুয়েছি পাশে
ঢেলেছি সৌরবীর্য - কী পাপ করেছি আর...

গণভোট হেরে যাই স্বৈরিতার কাছে - যাবজ্জীবন!

--------------------------------------------------------------------