না, আমি কবি নই - নিতান্তই এক সৌখিন কবিতা পাঠক মাত্র! আমি কবিতা
পড়ি মনের আনন্দে - খুব ভাল লাগে; - কবিতার মতো কে আর দেয় এত
সুখ, এত ভাললাগা! তাই, কবিদের প্রতি আমার অপরিসীম ভাললাগা, ভালবাসা,
শ্রদ্ধা আর ঋণ জমে ওঠে। এই ভাললাগা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর জমে ওঠা ঋণ
শেয়ার আমার প্রতিদিনের পাঠ থেকে কিছু মনে গেঁথে যাওয়া কবিতার এই
সন্নিবেশ; - এ শুধু কোন এক অন্য অবসরে আরো একবার-বহুপাঠে কাব্যরস
আস্বাদনের আয়োজন বা প্রয়োজন মাত্র।
আজকের দশ কবির প্রতি আমার হৃদয়ের অকৃত্রিম উষ্ণতা নিবেদন! আর যাঁরা
কবি, হৃদয়-মেধা নিংড়ে কবিতা আনে এ কবিতার আসরে প্রত্যহ, যাঁরা এখানে
অবর্তমান (হয়ত আমার অপ্রস্তুত পাঠাভ্যাসে), সেই সব কবি-হৃদয়ের প্রতিও
আমার ভালবাসা অন্তহীন! তাঁদের হাতেও আমার কাব্যরস পান ও প্রত্যাশা
নিরন্তর! আগামিকাল তাঁদের কবিতার মূগ্ধতায় ডুবে যেতে চাই!
অন্যপাঠ থেকে আমার খুব ভাললাগা একটু শেয়ার করতে না পারলে কেমন
যেন একটা ছটফটানি জানালার পর্দায় উঁকি-ঝুঁকি মারে, পড়াতে মন বসেনা!
হা হা হা ... কবি, ক্ষমিয়ো অপরাধ!
ধর্ষণ
(কাব্যগ্রন্থ: জ্বলো চিতাবাঘ)
- হুমায়ুন আজাদ
মা, পৌষ-চাঁদ-ও কুয়াশা-জড়ানো সন্ধ্যারাত্রে, শাদা-দুধ সোনা-চাল
মিশিয় দু-মুখো চুলোয় রান্না করছিলেন পায়েশ; চুলোর ভিতরে
আমকাঠের টুকরো লাল মাণিক্যের মুখের মতোন জ্বলছিলো।
সেই আমার প্রথম রঙিন ক্ষুধার উদ্গম-
মায়ের পাশেই ব'সে
সারাসন্ধ্যা ধর্ষণ করলাম একটা লাল আগুনের টুকরোকে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার সাত দিন পর দেখলাম পদ্মার পশ্চিম পারে নারকেল
গাছের আড়ালে সূর্যাস্ত খুলছে তার রঙিন কাতান।
সূর্যাস্ত, আমার মেরিলিন, জাগালো আমাকে-
টেনে এনে তাকে নারকেল গাছের আড়ালে আসন্ধ্যা ধর্ষণ করলাম,
পদ্মার পশ্চিম প্রান্ত রক্তে ভেসে গেলো।
অনার্স পড়ার কালে কলাভবনের সম্মুখ থেকে আমার অধরা বাল্যপ্রেমিকার
মতো ছুটে-যাওয়া একটা হলদে গাড়িকে ষাট মাইল বেগে ছুটে
পাঁচ মাইলব্যাপী ধর্ষণ করলাম।
একাত্তরে পাকিস্তান নামী এক নষ্ট তরুনী আমাকে দেখালো তার
বাইশ বছরের তাজা দেহ, পাকা ফল, মারাত্মক জংঘা-
চৌরাস্তায় রিকশা থেকে টেনে প্রকাশ্যেই ধর্ষণ করলাম;
বিকট চিৎকারে তার দেহ রক্তাক্ত ও দুই টুকরো হ'য়ে গেলো।
-------------------------
কবিতা সুন্দরের প্রতিমা হয়ে আসুক, চিরন্তন হৃদয়-অনুভূতির ছবি হয়ে উঠুক,
মনন-শৈলীতে জেগে উঠুক, হয়ে উঠুক উজ্জ্বীবনের জীয়নকাঠি - এই চির
প্রত্যাশায় - সৌকপা।
--------------------------------------------------------------------
১
নিখিলেশের ডায়রী - ৮ -প্রেম
- নাইবা গেলো জানা
এই ছুঁড়ী বিয়ে করবি?
এইতো আগের প্রেমের শরীর
ঝাটিয়ে বিদায় করল ইতি।
সন্দেহ কি আর রসে বসে, এমন কিছু দেখতে নোস
কি এসে যায়, প্রেম না এলেও
অভ্যাসে প্রেম, হাড়ি কলস।
সে যে ছিল পাক্কা খাসা, তবু ও
মাঠে পুড়ল ঘাস,
যা কিছু যা সবুজ ছিল
এখন তাতে দীর্ঘশ্বাস
এখন আমার তুই সজনী
আনাজ, বটি, ফ্রিজের ঝাল
সন্ধ্যে আকাশ, মোটা চাঁদে
রাত বীরাতে জোরের তাল
এখন তোকে সরসে বাটায়, ইলিশ ভুঁইয়ের
স্বাদের মান
অনায়াসেই আসলো "খুকি" থুড়ি
তুই যে বলিস --- সেরা দান ।
স্বপ্ন আমার টাকায় ঘোরে
তোর শাড়ি আর গয়না ফাও
রোজ রাতেই বাসতে ভাল
তোকে ঘোরাই গহীন বাও।
--------------------------------------------------------------------
২
খন্ডিত আশা-জারুলের কোঠোরে দ্বি-খন্ডিত আক্ষেপ
- মুক্তি আর প্রেম মানুষের জন্যে
বসে আছি আশায় আশায় এই ভেবে-
সুলভ মূল্যে সুখ বিক্রি করে যদি কষ্ট কেনা যেত
প্রতীক্ষার পৌরাণিক রাতে বারংবার ফিরে যাই
কি পেলাম কিংবা কতোটা কি পেয়েছি-
সুখের মসৃণ আভা মেখে যদি কষ্টের দু-চোখে যেত,
বসে আছি আশায় আশায়
সেই কখন কবে থেকে -
সুষমামুখর মাতাল রাত দেখা অনেক দূর
পথ হারা নিরন্তর পথে যদি আরেকবার হাঁটা যেত,
সব-ই ভুল কতোটা ভুল-
বসে আছি শুষ্ক নিয়মহীনতা পান করে নষ্ট-দলিল
দিন-রাত উজাড় করে, জীবন বদলের
জ্যামিতিক বিশ্লেষণে যদি দ্বি-খন্ডিত করে দেখানো যেত
সুদীর্ঘ সংঘাতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব নিকাশ,
এই জীবনে কতোটা দিয়েছো - কি পাইনি
কতোটা হারিয়েছি-
কবিতা'র অঞ্জলি ভরে রেখে দিতাম
প্রায়শ্চিত্তের নির্মাণকৌশল, আশা-জারুলের কপাট খোলা
অন্তক্ষরণে তোমাকে নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা
পারলে পুরোটাই দেখাতাম।
--------------------------------------------------------------------
৩
পাখিতন্ত্র
- ছোট কবিতা
দূঃস্বপ্ন
সারারাত জল খুঁজে খুঁজে
হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর
ওয়াসার কল্যাণে সকালে অফিস;
ভুলে যাই অনুস্বরের রাজ্যশাসন!
সঠিক পাখি
অনেকান্তে অনেক সময় অনেকটাই যায় চলে
সঠিক পাখি বসে এসে বেলা পড়ে যাওয়া ডালে।
পাখিতন্ত্র
পাখিদের কোন মানচিত্র নেই - শুধু সুনীল আকাশ
পাখিদের কোন জেলখানা নেই - শুধু স্বাধীন বাতাস।
পাখিদের কোন হাতিয়ার নেই - শুধু প্রেমের ডানা
পাখিদের কোন রাজনীতি নেই - শুধু সুখ আলপনা
পাখিদের কোন দলাদলি নেই - শুধু খোঁজা মনজুটি
পাখিদের কোন লুটপাট নেই - শুধু প্রেমে লুটোপুটি।
--------------------------------------------------------------------
৪
সৃজন - নবীন মন্ত্র
- সুদীপ তন্তুবায় (নীল)
(১)
অতৃপ্ত সাধের জলধিতে
জোয়ার আসে,
রাত্রিব্যাপী সাধনায় গড়ে উঠে
নবীন মন্ত্র ।
নীরবে অন্তরালে উন্মুক্ত হয়
হৃদয়ের দরজা ।
(২)
নীরবে চেয়ে থাকে সাধনার ফল,
জলধি গ্রাস করে কূল-উপকূল । ক্লান্তিহীন লালসা ....
সৃজন ছুটতে থাকে
অন্ধকার পদদলিত করে ।
--------------------------------------------------------------------
৫
স্বপ্নপক্ষ
- ত্রিচরণ
১
শুক্লপক্ষে যদি চোখ বুজে আসে
জাগিয়ে দিও -
স্বপ্নের বাড়ি যাব একসাথে।
২
কৃষ্ণপক্ষে যদি বাত বেড়ে যায়
শিশিরে এসো -
হাঁটবো নদী পাড়ে একসাথে।
--------------------------------------------------------------------
৬
নদীসূত্র: জলের অর্থে বাঁকে বাঁকে সঙ্গমে যেতে হয়
- মৄত্তিক মাসুম
বাঁকহীন নদীর স্বপ্নে ভেসে যায় এইসব জৈবিক সময়
এইসব দিন-রাত্রি
ভীষণ খেয়ালে মরে যায় জলের অর্থ সরোবরের পথ
পৃথিবীর সমতল ছিল কবে!
জলের অর্থে বাঁকে বাঁকে সঙ্গমে যেতে হয়।
--------------------------------------------------------------------
৭
তুমি না আসলে একটা ইয়ে
- সৈয়দ জাহেদ হোসেন
দেবরাজ, তোমার বিছানা এতো নরম কেন?
-তুমি এসেছ বলে।
আমার বুকে তোমার মাথা কেন?
-প্রেমের তরী স্পর্শ করব তাই।
স্পর্শ করেছ?
-এখনো পাহাড় পর্বত বেয়ে উপরে উঠছি।
কখন নামবে?
-যখন অক্সিজেনের অভাব হবে।
হাঁপাচ্ছ কেন?
-পর্বতের চূড়ায় উঠেছি তাই।
কিছু পেলে?
-হ্যাঁ, বিজয়।
এইবার নামো,
-নামলাম,
কোথায় এলে?
-নদীর তীরে,
সাঁতার কাটবে?
-না, ডুব দিব।
কতক্ষণ ডুব দিয়ে থাকতে পারবে?
-যতক্ষণ না তোমাকে ভিজাতে পারি।
তুমি না আসলে একটা ইয়ে।
--------------------------------------------------------------------
৮
ঠিকানা – জেলগরাদ
- আলোর পথযাত্রী (চন্দ্রশেখর)
তোমার সঙ্গে আড়ি।
গুড়-রুটি নয়, ছুঁড়ে দিয়েছিলে
সাতমহলা বাড়ি।
শোবার ঘরে চাঁদ।
জানালা-গরাদ বুনে দিয়ে গেছে
অষ্টাপদীর ফাঁদ।
রাজার মা-কে ডাইনি
এমন সত্যি বলার স্বাধীনতা ছাড়া
আর কিছুই তো চাইনি।
এই হল অপরাধ।
ভূখা পেটে কিল মেরে শেষে
ঠিকানা – জেলগরাদ
মহল-গরাদ-চাঁদ
ভেদ করে শুনি জলোছ্বাসের
প্রতিবাদী কলনাদ।
এই টুকুই তো আশা।
পকেট ভরিনি, যেটুকু পেয়েছি
মানুষের ভালবাসা।
--------------------------------------------------------------------
৯
নজরুল সাহিত্য- পত্র
- এস কে আই আলী
"বুলবুল"
তুমি "রিক্তের বেদন" বুঝবে না।
আমার "বাঁধন হারা" মনে "মরু ভাস্কর"এর "প্রলয় শিখা" সম যে মরু "ঝড়" তার সর্বগ্রাসী "মৃত্যুক্ষুধা"য় "সন্ধ্যা" আকাশের "ধুমকেতু"র মত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছি তোমার মানস পট থেকে।
যে "সন্ধ্যা" তারার "ঝিলিমিলি" হাত ছানিতে "আলেয়া"র পিছু নিয়েছিলাম- আজ জানলাম তা "কুহেলিকা"।
হে "চোখের চাতক"
-তোমার হৃদয় মালঞ্চের "গুল বাগিচা"র "দোলন চাঁপা"য় বসে শুনতে পাব কি "গীতি পুস্তক" বা "গীতি শতদল"এর "বনগীতির" নির্ঝর ?
হে "সুর সাকী"
- সে "গানের মালা" "বিষের বাঁশি" "ফনিমনষা"র কাটা বা "জুলফিকার" হয়ে আঘাত হানবে আমার হৃদয় কন্দরে।
জানি,
-"সর্বহারা" এ "দুর্দিনের যাত্রী' কে "জিঞ্জির" আবদ্ধ করতে দু বাহু বাড়িয়ে "শিউলী মালা" নিয়ে কেউ বরণ করতে আসবে না।
তোমাকে নিয়ে "চিত্তনামা"য় যে "নতুন চাঁদ' এর স্বপ্ন এঁকেছিলাম দূরান্ত "পূবের হাওয়া"য় "পুতুলের বিয়ে" সম ভেঙ্গে গেছে সে "সঞ্চয়ন"।
--মনে পড়ে "সাতভাই চম্পা" দেখতে গিয়েছিলাম "ধূপছায়া"য় । "ছায়ানট" এ "সাপুড়ে" চলছিল, আমি "রাজবন্দীর জবানবন্দী" আর একটা"লাঙল" পত্রিকা কিনতে চাইলাম,-তুমি বললে -ওহে "বিদ্যাপতি" "নবযুগ" এর হবে
কৃষক হবে না কি?
-আমি বললাম, জানই তো আমার একটা "সাম্যবাদী" মন আছে।
--জানি না কোন "ভাঙ্গার গান"এ সব কিছু এলো মেলো হয়ে গেল।
এখন স্মৃতি চারণ করি আর মাঝে মাঝে তোমার দেওয়া "যুগবাণী'র যুগশ্রষ্টা "অগ্নীবীণা"র কবি নজরুলের "ঝিঙেফুল" আর "চক্রবাক" পড়ি।
তোমাকে লিখতে বসে হৃদয় "সিন্ধু হিন্দোল"(ইত) হয়ে 'সঞ্চিত"(আ) ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে হৃদয়ের অতল তলে।
এ "ব্যথার দান" টুকু সাদরে গ্রহণ করবে এ প্রতাশায় ইতি টানছি।
যদি কাব্যে "আমপারা" আর "রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়ম"বই দুটি পাঠিয়ে দাও তবে সেই হবে আমার "শেষ সওগাত"।
ইতি
বর্ণহীন
"চন্দ্রবিন্দু"
--------------------------------------------------------------------
১০
ছোট্ট পাখি
- অহনা
ছোট্ট পাখি রোজই দেখি
পাশের বাড়ীর ছাদে,
নিত্য নিত্য ছোট্ট পাখি
নতুন ফন্দি ফাঁদে।
কখনো খায় শুকনো ছোলা
কখনো খায় মুড়ি।
কখনো আবার সূর্যালোকে,
খায় সে সুর সুরি।
সেদিন দেখি বৃষ্টি শেষের
ছাদের জমা জলে,
ছোট্ট মিষ্টি পাখি আমার
একাই খেলে চলে।
এমন করেই দিন কেটে যায়
দেখে পাখির ফন্দি।
মন হতে চায় ছোট্ট পাখি
কিন্তু, মন যে পরায় বন্দি!!
--------------------------------------------------------------------