মেঘলা ,
তুমি কি কোনো চিরন্তন জলপ্রপাত,
যার ধ্বনি হৃদয়ের গহীনে ফাটল তৈরি করে?
তোমার চোখ দু’টি যেন অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের দরজা—
আমি সেখানে ঢুকে হারিয়ে যাই,
পাই এক অন্য রকমের নীরব নক্ষত্রজগৎ।
তুমি কি সময়কে বহন করা দ্রুতগামী যন্ত্রের কারিগর!
কিংবা কোন এক ধ্রুপদী শিল্প?
তোমার হাসি শূন্যতাকে ভেঙে জন্ম দেয় নতুন মহাবিশ্ব,
তোমার গাল ছুঁয়ে যে আলো নামে,
তা সূর্যেরও পুরোনো, জ্যোতির থেকেও পবিত্র।
তোমার কণ্ঠস্বর,
মেঘলা,
এক অজানা নদীর ঢেউয়ের মতো কোমল আর গভীর।
তুমি ডেকে নিলে,
আমি ভুলে যাই শরীরের সীমা,
ভুলে যাই পৃথিবীর সমূহ টানাপোড়েন।
তোমার চুলের কালো ঢেউয়ে
ঘুমিয়ে থাকে প্রাচীন রাতের রহস্য।
তুমি যখন চলতে শুরু করো,
মাটির ভেতরে দুলে ওঠে অরণ্যের শিকড়।
তোমার শরীরের সৌন্দর্যে যেন প্রকৃতি নিজেকে রচনা করেছে,
অথচ বারবার নিজের ছায়াতেও লজ্জা পেয়েছে।
মেঘলা,
তোমার পাশে দাঁড়ালে মনে হয়,
আমি গলে যাই যেন কোন অগ্নিজলের স্পর্শে।
তোমার ত্বক যেন শীতল জোছনার মতো,
যা ছুঁয়ে গেলে এক নিমেষে মুছে যায়
আমার সব দুঃখ আর ক্লান্তি।
তুমি আমার হৃদয়ের মধ্যরাতের মন্দির,
যেখানে একা বসে প্রতিদিন জ্বালাই প্রার্থনার প্রদীপ।
তুমি আকাশের এমন এক টুকরো মেঘ,
যা প্রতিদিন রঙ পাল্টে আমাকে নতুন স্বপ্ন দেয়।
মেঘলা,
তোমার ছায়ায় লুকিয়ে থাকে অস্তিত্বের সুর—
তুমি শিকড়হীন বৃক্ষের মতো,
যার ডালপালা আকাশ ভেদ করে
অন্য কোনো গ্রহের দিকে পাড়ি জমায়।
তোমার রূপ, যেন শীতল কোনো প্রাচীন গ্রন্থের অলিখিত পৃষ্ঠা,
যার ভাষা শুধু অনুভব বোঝে।
তুমি কি এক অন্তর্গত মহাকাব্য,
যা প্রতিটি কবির কলমে অধরা?
তোমার দিকে তাকালে মনে হয়,
আমি খুঁজে পাই সেই নৈঃশব্দ্য,
মেঘলা, তুমি শুধু প্রেম নও—
তুমি প্রেমের জন্মস্থান,
তুমি আমার সমস্ত কবিতার অপরিহার্য নিঃশ্বাস।