কথা দিলাম
—উৎপল নরেন্দ্র মাইতি
ভীষণ মনে পড়ে শরতের সেই মিষ্টি বিকেলের কথা !
হাওয়ায় দোলা কাশ, পেঁজা তুলোময় নীল আকাশ !
মাঝ নদে জোয়ারের প্রতীক্ষায় পালতোলা নৌকার সারি,
রূপনারায়ণের তীরে বসে হলদে-নীল সালোয়ারে তুমি ।
প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে কতো কথা হলো,
আবার বলা হলো না কতো কথা কথায় কথায় !
শক্ত করে হাতদুটোকে জড়িয়ে ধরে সেদিন কথা দিয়েছিলে
থাকবে অপেক্ষায় চিরটাকাল শুধু আমার পথ চেয়ে !
তোমাকে পাওয়ার খুশিতে মন একেবারে পাগলপারা !
বিগলিত হৃদয়ের বোকা বোকা কথা শুনে
আমায় পাগল বলেছিলে তুমি ভালোবেসে।
সেদিন ভাবিনি... ওটাই হবে আমাদের শেষ দেখা !
যেদিন শুনলাম তোমার বিয়ের সম্বন্ধ হচ্ছে, খুউব বড় ঘরে,
সত্যিই পাগল হলাম সেদিন তুমি অন্যের হবে ভেবে !
উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ালাম হৃদয়ে আগলে একটিই আশা
শুধু একটিবার... আর একটিবার হয় যদি দেখা
ধন্য হব, সার্থক হবে আমার বেঁচে থাকা !
পাহাড় পেরিয়ে সাহারা হয়ে খুঁজে বেড়ালাম সমুদ্র তীরে তীরে ,
সর্বত্রই চোখ দু’খানি তোমায় খুঁজছিলো হাজার মানুষের ভিড়ে !
হেথা সেথা খুঁজে খুঁজে এলাম ফিরে কোলাঘাটের ওপারে
একরাশ ক্লান্তি নিয়ে রূপনারায়ণের সেই তীরে ।
শরতের সেই মিষ্টি বিকেল, হাওয়ায় দুলছে কাশ
নীল আকাশে ভাসমান ধবধবে সাদা মেঘমালা,
নীল পাড় হলদে শাড়ীতে তীরে বসে তুমি একলা !
পাহাড় থেকে সমুদ্র যে তিথিকে খুঁজেছি একটিবার দেখার তরে
চোখেমুখে একরাশ বিস্ময় রূপনারায়ণের তীরে সেই তিথিকে ঘিরে !
হাতে নেই শাঁখা কপালে না সিঁদূর ! বিস্ময়ে যেন থরথর বুক !!
“কেমন আছো তিথি ?” জিগ্যেস করলাম নিজেকে সামলে নিয়ে,
তাকিয়ে রইলো ছলছল চোখে অভিমানে নির্বাক হয়ে !
শুনেছিলাম তোমার বিয়ে হচ্ছে খুব বড় ঘরে,
তাই আর আসিনি শুধু তোমার সুখ চেয়ে !
মৌনতার আস্তরণ ছেড়ে বেরিয়ে এলো তিথি এবার.....
“ পারতাম হয়তো বড় বাড়ির বৌ হতে....
কিন্তু সুখ ! পারতাম কি অন্যের হয়ে সুখে থাকতে ?
আমি যে মনে প্রাণে ভালোবেসেছি শুধু তোমায় ,
একা একা বসে ফিরি রোজ বিকেলে তোমার প্রতীক্ষায় !”
ভুল হবে না আর তিথি কথা দিলাম,
থাকবো সাথে বাধা-বিঘ্ন যতই আসুক না কেন ।
যাবো না তোমায় একলা ফেলে, আর কক্ষনো, কোনোদিনও !
******