সূর্যগ্রহণ
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
মেঘে ঢাকা আকাশ, অবরুদ্ধ পথ,বেলাশেষে নব
যাত্রায় নির্ভীক বেসে এবার উঠেছি জ্বলে,
নবীন-যৌবন জাগ্রত আজ সেজেছে যোদ্ধার সাজ
হাতে নিয়েছে তলোয়ার তুলে।
রুদ্র রাগে মলিন বদন আঁখিতে আগুন
ধরণী কম্পিত ক্রোধে,
কণ্ঠে বাজছে শ্লোগান রক্ত তৃষায় জেগেছে প্রাণ
নেমেছি পথে পতাকা ললাটে বেঁধে।
চাই মুক্তি, চাই সংগ্রাম, চাই স্বাধীনতা, ওরে নির্বোধ
এত কিসের তোর দুর্বলতা? আঁধারে প্লাবন পূর্ব দিগন্ত!
ভিতু মনে যারা ছিল ঘুমিয়ে জাগিয়ে দিয়েছি
মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে,
রক্ত দাও, ইতিহাস লিখবো, রঙিন হোক সীমান্ত।
একদিন আসবে আদিত্য সুন্দর-সত্য
সকাল হবে রহস্য রজনী পেরিয়ে,
শোষিত-পীড়িত-অবাঞ্ছিত জনতার দ্রোহ
ভেঙে সূর্যগ্রহ দীপ্তি দেবে ছড়িয়ে।
ওরে ভিতু চোখ খুলে দেখ্ ওই দিগন্তে সব পুড়ছে
মরছে অগ্নিতে, দেশ জুড়ে শুধু ভয়ানক কোলাহল!
ধূম কুণ্ডলী পাকিয়ে গগন ছুঁয়েছে ভস্ম উড়ছে
আঁধারে পথ হারিয়েছে পাখির দল।
ঝরে গেছে কত তাজা ফুল এই বনে ঘর ছেড়ে
এসেছি কবরে-শ্মশানে, শুধু শুনি মৃন্ময়ীর ক্রন্দন!
ওই তো প্রিয়া আমারে ডাকছে ধর্ষিতা হয়ে লজ্জায়
মরছে, সম্পদ চূর্ণ-বিচূর্ণ হারিয়েছি বন্ধন।
আজ আমি মুক্ত হৃদয় রিক্ত শুকিয়েছে
আঁখিতে অশ্রুজল,
মায়াহীন মন প্রতি শোধে মত্ত নির্ভীক যোদ্ধার
বুকে ঝরে রক্ত স্বাধীন চেতনায় চল-চঞ্চল।
ছাড়বো না-শুধু লাঞ্ছনা পেয়েছি প্রাণে
মাদল বাজুক গগনে ছেড়ে চলে গেছো তুমি,
এখন রণক্ষেত্রে রণবীর এখানে মৃত্যু সব স্থির-
রক্তে তোমার নাম লিখি আমি।
সহসা অট্টহাসিতে কাঁপাল ভুবন এসেছে দুশমন
নর্তকীদের রংমহলে,
ওরা আনন্দিত মদ্দ পানে মত্ত ওষ্ঠ-অধরে মিশে
অবৈধ বীর্য ঢালে।
ডেকে বলে সৈন্যসামন্তরে আরো রমণী আন ধরে,
ক্ষুধিত যৌবন আমার-আমি নরপতি!
গ্রামে-গঞ্জে-শহরের রাজপথে শুধু রক্ত
নিস্তব্ধ নিশিতে আঘাত এনেছে বুকে মা-মর্দিত,
দেখি দেহান্ত দেহের দুর্গতি।
শব স্তূপে পথ ঘাট অবরুদ্ধ বাতাসে বিক্রীত গন্ধ
দিচ্ছে বুকে বিদ্রোহের দোলা,
রক্ত-মাংস খাওয়া পশু চারিদিকে চিল নামছে
ঝাঁকে-ঝাঁকে হে-বন্ধু,হাত ধরো এসে এই বিদায় বেলা।
কত ভেঙেছে মন্দির কাঞ্চনে গড়া মূর্তির
পদাঘাত পেয়েছি প্রাণে,
লেগেছে মহামারী অসহায় বিদর্ভ নগরী
কবি ব্যাকুল-বীরের সন্ধানে।
অবশেষে এসেছি রাজদরবারে এক অবলার চিৎকারে,
উলঙ্গ শরীরে বসিয়ে আছে শত্রু পাহারায়!
রণবীর হয়ে নিকটে গিয়ে শুনলাম নাম তিলোত্তমা
করলো বীর কে প্রণাম, মুক্ত করো আমায়।
সে দৃশ্য দেখে হয়েছি নত বীর লজ্জিত
নিজ বস্ত্র বিলিয়ে দিলাম তারে,
বোন বলে বুকে নিয়ে অশ্রু মুছিয়ে
রুদ্রতাণ্ডব তুলেছি এবারে।
যত ভীতু-কাপুরুষ-নির্বীজ হওয়াতে দেশ জুড়ে
ক্ষতবিক্ষত ওদের আঘাতে, কত তিলোত্তমা
দিয়েছে বলিদান!
নিজ সম্মুখে দেখেছে বাবার হত্যা মা-মেয়ে হয়েছে
ধর্ষিতা, নারী সত্তার শুনি করুণ গান।
কত লুটিয়ে চরণ ধরেছি মুক্তি চেয়ে মিনতি করেছি,
কে শোনে কার কথা!
ওদের পেয়েছে যৌন তৃষা আমি হারিয়েছি দিশা,
ক্ষত বুকে জেগে ওঠে শত সহস্র করুণ ব্যথা।
ক্ষণকাল পরে শত্রুরাজ আসলো ঘরে
হর্ষে হেসে-হেসে,
মন্ত্রী মণ্ডল কে ডেকে কয় ভরল প্রাণ পূর্ণপ্রভায়
এসো মোহিনী,বসি শরীর ঘেঁসে।
জোর-জুলুম হাতা-হাতি অবশেষে অবসান
বক্ষে রমণী রসে করিবে স্নান,
এমন ক্ষণে রণবীর হলেন উপস্থিত!
তলোয়ারের এক আঘাতে ছিন্ন মস্তক পড়লো
মাটিতে,পদাঘাত দিয়ে গাইলাম জয়ের গীত ।
রচনাকাল, ১ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ,
১৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ, শনিবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।