অপহরণ
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
সভ্য-সমাজের লঙ্কাধিপতি
করেছে হরণ, করি আরতি!
ক্রন্দনে মরি চরণ ধরি
ছেড়ে দাও হে-নাথ, করি মিনতি।
শবল-সরল-সজল আঁখি আজ আমি বেধে রাখি
ওরে কি করে দেখি ওই বিচিত্র দৃশ্য,
বাধা দিলে মরবো অকালে
ত্রিলোক জয়ী দশানন করবে ভস্ম।
সুদর্শনা মোহে-মোহিত মন
শত সীতা হয় লুণ্ঠন,
বদ্ধ ঘরে বন্দী হয়ে যাচ্ছে ক্ষয়ে
ঝরে বর্ষণ।
এখন শত রাবণ কত লঙ্কায়
বলাৎকারে তৃপ্ত পায়,
উলঙ্গ করে জড়িয়ে ধরে
অধরে-অধর লাগিয়ে লালা ঝরায়।
ক্ষত বুকে রক্ত ঝরে স্তন ছিঁড়েছে থাবা মেরে,
অন্ধকারে বদ্ধ ঘরে করে হত্যা!
ওরে আর কত মরবো
কবরে-শ্মশানে কত জ্বলবো,
কলঙ্কের কালি আমারে মাখালি
নির্যাতিত নারী লজ্জায় মুখ কত ঢাকবো?
আত্মহত্যা, করি মূর্খতা!
বনলতা-কবিতা নই আজ আমি,
আমার হয় বস্ত্র হরণ হই ধর্ষণ
চলছে যত শোষিত-সমাজের ভণ্ডামি।
নারীরা-নর্তকী, রঙমহলে ডাকি
খুঁজি পতিতার-প্রেম !
পত্নী, সেতো দাসী-উর্বশী
অনন্ত যৌবনা-যৌন রসে ভাসি
দানে পেলেম।
তবে মা, সেতো প্রতিমা
আছে মন মন্দিরে!
পূজা করি উনি ঈশ্বরী
জন্মদান কারী,
বড়ো করেছে আমায় আদরে।
ওরে এ-কিসের সমাজ কিসের সংস্কৃতি
সম্পর্ক হেতু গণ্য হলো প্রীতি,
এ-কেমন নীতি?
কাউকে মারি,কারো হই পূজারী,
সবতো একই নারী
যত অসামাজিক-অপসংস্কৃতি।
যৌবন দারিদ্র্যে ভুলেছে সব
শুনি কৌরব-কলরব,
পূর্ণ-রাজ সভায় পাঙ্চালী বস্ত্র হারায়
মৌনতা-মহারথী সব।
যুগ-যুগ ধরে এই সংসারে
হচ্ছে নারী-নির্যাতন,
যাজ্ঞসেনী হয়ে তবুও যাচ্ছে ক্ষয়ে
আজ ছিন্ন তার সকল বন্ধন।
এখন সে-শুধু মৃত্যু,
পাষণ্ড-পুরুষের বিধ্বংস কারিণী
আমি শিখণ্ডিনী,নই ভিতু-
প্রতিশোধের অগ্নিতে জ্বলছি দিনে-রাতে
আজ এসেছি রণ-ক্ষেত্রে করতে যুদ্ধ!
পুরুষ শাসিত সমাজ ধ্বংস হবে আজ
দণ্ড-দিতে হও তোমরা ক্রুদ্ধ।
মদিরায় মুখ লাগিয়ে হিংস্র চোখে-চেয়ে
হয়ে আছিস সব নেশায় তর,
শরীর ঘেঁসে পাশে বসে
শুনেছিস বয়স বারো।
তবে কিসের বাসনা জাগে মনে
এনেছিস ধরে অন্ধকার বনে,
সংস্কার-শূন্য ওরা-নগণ্য
মাথা নত করবো কত ওদের চরণে?
তাই মরণ কালে রক্ত ঢালে
আজও কত নারী,
জীবন ধরে যুদ্ধ করে
করতে মোচন-মহামারী।
তবুও কত হেরে অশোক-বনে যাচ্ছি মরে
হে বীর! যুদ্ধ করবে-কবে?
চকিত জনতা হয়েছে বিচ্ছিন্নতা
কোনদিন কি আর এরা একতা হবে?
ওরে আছে যত মন্দোদরী হয়ে আদর্শ নারী
পাঙ্চালীও চেয়েছে ন্যায়,
রাক্ষস বংশ হয়েছে ধ্বংস
কুরুবংশ-ও হবে ক্ষয়।
রচনাকাল ৮ অক্টোবর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ
বাংলা- ২৩ আশ্বিন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ.. (মঙ্গলবার )
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।