নীলপদ্ম
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
নীরব নিশুতি রাতে বুকের ধুক-ধুক শব্দে
জেগে ওঠে অসমাপ্ত ঘুমন্ত কবিতা।
অযুত বছর ধরে হতাশার অন্ধকারে, একাকীত্ব
লিখছে উপন্যাস ব্যাকুল ব্যথায় রক্তের অক্ষরে।
এখনো শরত গোধূলি-- সেজে ওঠে তোমার
চোখের কাজলে, ভ্রুর মধ্য ভাগে কালো টিপ
আজও সৌন্দর্যে অমর ইতিহাস।
এখনো দেখি-- অপলকে তোমার রঙিন ঠোঁট ছুঁয়ে
ক্লান্ত রবির অস্তগমন!
অধরের উপরিভাগে ওষ্ঠ ছোঁয়া তিল বিন্দুতে
যত করেছি মনোনিবেশ,
অচেতনে-অবলীলায় গড়িয়ে পড়া চোখের জলে
আমি স্বয়ং ভেসে গিয়েছি বহুবার।
তবুও বেদনার অতল সুমুদ্দুরে হারিয়ে-ও
সজ্ঞানে যখন হেসে উঠি প্রেমিক হওয়ার উচ্ছ্বাসে,
মনে হয় এ-অশ্রু নয়-- রক্তজবায় সাজানো বাসর।
যদিও তোমার লাজুক চোখের মেলে দেওয়া
অতীত চাউনি, আজ-ও আমাকে সান্ত্বনা দেয়!
কিন্তু ব্যর্থ হই, অবুঝ মন তোমাকে চায় --
শুধু কাছে পেতে, শুধুই কাছে পেতে।
শ্রী-পূজারিণী তুমি কেন চলে গেলে?
একদিন গোধূলিতে গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে,
উন্মাদ লহরী দেখতে-দেখতে বলেছিলে----
কবি,
-----------নদী আমার খুব পছন্দের,
ইচ্ছা করে নীলপদ্ম হয়ে স্রোতস্বতীর বুকে
ভেসে যেতে।
পাখির ডানার মত হাত দুটি মেলে দিয়ে
সুদূর দিগন্তে অপলকে তাকিয়ে,
শীতল বাতাসে হারিয়ে বলে উঠলে ---
তোমার কি ভালো লাগে?
তবুও নীরব হয়ে পলকহীন চোখে
শুধু তোমায় দেখছিলাম।
তুমি হাতের কনিষ্ঠ ধরে নাড়িয়ে বললে,
এমন করে আমার দিকে চেয়ে
কি ভাবছ শুনি?
ততক্ষণে শরীরটা একটু ঝাঁকি দিয়ে উঠলো,
বিচলিত কণ্ঠে বললাম না-না তেমন কিছু নয়,
শুধু চেয়ে-চেয়ে তোমায় দেখছিলাম
আমার শ্রী-পূজারিণী।
তুমি স্মিত হেসে হাতটা শক্ত করে ধরে বললে
তাই বুঝি? প্রত্যুত্তরে আমার ভালোবাসার
আত্ম প্রকাশে সে বলেছিল,
কবিরা প্রকৃত প্রেমিক হয় শুনেছিলাম
আজ তা দেখলাম এবং অনুভব ও করলাম।
আমি হাসতে-হাসতে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
নির্লজ্জ নয়ন-নয়নে রেখে বললাম
আমার মধুকরী, পীযুষ পিপাসার ছলে
কি এমন খুঁজে পেলে-
যে শ্রেষ্ঠ প্রেমিকের উপাধি সামর্থ্যহীন
এই পূজারীকে দিয়ে দিলে?
লজ্জিত পূজারিণী হাতের গোলাপটি
কেড়ে নিয়ে নত চোখে বলেছিল,
তোমার চোখ যে রংধনুর সাতটি রং নিয়ে
ছবি আঁকে সর্বক্ষণ শুধু আমাকে,
আর মনের আসনে বসিয়ে দিনভর কবিতা লেখ
তা কিন্তু আমার অজানা নয়।
কি আশ্চর্য, আমার হৃদয়ের কথাটা আজ তুমি
কি করে এত সুন্দর করে বলে দিলে?
তোমার কণ্ঠে শুনতেও মন্দ লাগলো না।
সত্যি, আমি যে তোমাকেই শুধু ভালোবাসি
আমার পূজারিণী!
তুমিই সব থেকে সুন্দর আমার কাছে।
যদি কখনো ভালো লাগার কথা বলো,
তবে আমার অনেককিছুই ভালো লাগে!
ভালো লাগে এই সৌন্দর্যের সাগর,
পাহাড়ের দেশ,অঝোরে ঝোরা ঝর্ণা,
গোধূলির আকাশ, সবুজ শ্যামল অরণ্য,
কুসুম বাগানে রঙিন প্রজাপতি,
প্রকৃতির না-না রূপ, না-না সজ্জা,
সব- সবকিছুই ভালো লাগে।
কিন্তু, সব থেকে ভালো লাগে বসন্তে পুষ্প
সজ্জিত পথে তোমার হাতটি ধরে পথ চলতে,
আর তোমার চোখে চোখ রেখে গল্প করতে।
অবাক হয়ে পূজারিণী আনন্দে বলে উঠলো
’‘সত্যি?’’
কেবল এটুকু নয়-- আমার সকল কষ্ট, দুঃখ,
হৃদয়ের দারিদ্র্যতা, পিঁড়া,জীবন যুদ্ধ,ন্যায়-অন্যায়,
সব-সবকিছু যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তোমাকে
একবার দেখলেই সমাপ্ত হয়ে যায়।
তুমি পূর্ণ-প্রভা, ভুবন সুন্দরী, আমার শ্রী-পূজারিণী।
মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে তোমার চরণের নূপুর হতে,
তুমি যখন চঞ্চলা হরিণী সেজে পথ চলবে,
আপন মনে তোমার গান গেয়ে যাব।
কিন্তু আজ তুমি নিয়তির নির্দেশনায়
নিজ প্রার্থনায়, নদীর বুকে নীলপদ্ম হয়ে
ভেসে চলেছো, আর আমি নিদ্রা হারা রজনী
যাপন করি সেই নীলপদ্মের পূজায়।
রচনাকাল, ১১ জানুয়ারি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।