. ( দ্বিতীয় সর্গ)
‘‘মাধব,এই ধর্ম কি রূপে হয়?
বলুন আমায় সরান সংশয়!
যে মার্গে গমন করলে
নিজেকে চেনা যায় আত্মা বলে
সে মার্গ কেই ধর্ম কয়।’’
যখন মানুষ জানতে পারে
সকলে পরমাত্মার অংশ,
তখন সে ভালোবাসে সৃষ্টি'কে
করে না ধ্বংস।
কারণ এই সৃষ্টি'ই পরমাত্মা
এটাই সত্যতা
তখন মনে জন্মে করুণা!
সংসারে একজন পড়িত হলে
ব্যথা পায় সকলে
অধর্মী এটা বোঝে না।
তারা নিজের সুখের জন্য
কার্য করে জঘন্য
অপর'কে করে পিঁড়া প্রদান!
অধর্ম অন্য কিছু নয়
পরমাত্মা থেকে দূরে সরায়
মনে করে সে নিজে বলবান।
‘‘অর্থাৎ অধর্ম অজ্ঞানতা-
যারা ভুলেছে বিধাতা,
তাদের প্রতি দয়া হওয়া আবশ্যক?
তবে কিসের দণ্ড? কিসের হত্যা?
এই যুদ্ধ থামুক।’’
অজ্ঞানী যখন,
জ্ঞানকে করে না অনুসরণ -
তখন দণ্ড দেওয়াই দয়া!
সৃষ্টির গতি পরমাত্মার অভিমুখে হক
এটাই আমার চাওয়া।
কিন্তু কখনো-কখনো হয় এরূপ উপস্থিতি,
অজ্ঞান,অধর্ম হয়ে ওঠে বিশ্ব-পতি -
সংসারে ধর্ম হয় লুপ্ত!
তখন ভয় উৎপন্ন হয়, করুণা নাশ হয়ে যায়,
সত্য থাকে গুপ্ত।
আগামীর কথা ভেবে আজ জাগ্রত হবে
করবে অধর্ম নাশ,
দুর্বলতা সরিয়ে যুদ্ধে যাবে এগিয়ে
এটা আমার পূর্ণ বিশ্বাস।
কিন্তু মাধব, আমার হাতে হবে হত্যা -
কি করে ভুলবো এই সত্যতা,
তবে কি নাশ হবে না অন্তরের করুণা!
যদি ধর্মের মূল ভিত্তি করুণা হয়,
তাহলে কি আমার আত্মা অধর্মী হবে না?
কর্মের বন্ধন বাধে সর্বক্ষণ
হয় সংসার-সর্বহারা,
কিন্তু কার্য মুক্ত করে চিরতরে
ঝরায় অমৃত ধারা।
তাই জানতে হবে কর্ম কার্যের
কি প্রভেদ?
সকল কর্ম-কার্য হয়, সর্ব কার্য-কর্ম-নয়,
হে-পার্থ করো তুমি লক্ষ্যভেদ।
কর্ম সেই কার্য'কে বলে,
যার অন্তর নিতলে -
ডুবে থাকে ফলের আশা,
থাকে সুখ, সম্পত্তি'র লালসা-
প্রশংসা প্রাপ্তি'র ইচ্ছায় যদি কার্য করে,
সকাম কর্ম বলা হয় তারে।
কিন্তু, কেউ যখন করে ঈশ্বর-শরণ
কর্ম ফলের আশা ব্যতীত করে কার্য,
করা হয়েছে তাকে নিষ্কাম ধার্য-
এই সকাম,নিষ্কাম মিশ্রণে কর্ম বন্ধনে
হয় আসা যাওয়া,
আসলে কেউ কর্মের সাথে যুক্ত নয়
কর্ম ফলের সাথে যুক্ত হয়
তাই উচিত লোভীদের দণ্ড দেওয়া।
যদি যুদ্ধে বিজয়ের থাকে আশা তোমার
তবে পরাজিত হলে দুঃখ হবে,
আর সেই দুঃখ মনকে করবে রুক্ষ,
অপর কার্য করাবে;
যার কারণে আবার জন্মাতে হবে।
আর যদি বিজয়ী হও
তবে অহংকার পাবে বৃদ্ধি,
করবে বিশ্ব বিজয়ের বুদ্ধি -
করাবে হত্যা;
তাই বিজয়ের মোহ নয়
নয় পরাজয়ের ভয়,
তবেই যুদ্ধ শেষে না সুখ প্রাপ্তি হবে-
না দুঃখ, খুঁজে পাবে তুমি বিধাতা।
না সুখ মাধব, না তো দুঃখ -
আমি রুক্ষ,
আজ হারিয়ে গেছে শক্তি!
অস্ত্র উঠছে না হাতে, লুণ্ঠিত রণ ক্ষেত্রে-
হৃদয়ে জাগুক ভক্তি।
অর্থাৎ তোমার সুখ, দুঃখ, হতাশা, নিরাশা
যুদ্ধের জন্য নয়,
যুদ্ধের সাথে করেছো যে আশা পোষণ,
তার কারণ -
(মাধব, আপনার কথা কি আর মিথ্যা হয়)।
তাই সুখ, দুঃখ সমান গণ্য করে
জয় পরাজয়ের হাত ধরে
যদি যুদ্ধ করো হে পার্থ
তবে তুমি হবে না পাপী,হবে নিষ্কাম কর্মযোগী,
ভুলে যাও সব স্বার্থ।
যে সাংখ্য জ্ঞান প্রাপ্ত করে জানতে পারে
সে কেবলি এক আত্মা,
শরীর বাস্তবিক নয় মৃত্যুতে হারিয়ে যায়
সে খুঁজে পায় কর্মযোগী হবার সত্যতা।
‘‘কিন্তু মাধব,কার্যের বন্ধন
যদি সুনিশ্চিত হয়;
তাহলে সংসার ত্যাগ করে
সন্ন্যাস নেওয়া কি উচিত নয়?’’
এই চিন্তা ধারার পরিণাম এই যুদ্ধ
সত্ত্ব গুন বিশিষ্ট ধর্ম জ্ঞানী
যখন করে কার্য ত্যাগ,
তখন অধর্মী ব্যক্তি সংসার চালায়
হয়ে ক্রুদ্ধ-অজ্ঞানে করে ভোগ।
যদিও এটাই সত্য হে-পার্থ
যে সত্ত্ব গুণের ব্যক্তি, করে সংসার ভক্তি,
তবু তারা গ্রহণ করে সন্ন্যাস!
তাই সংসারে, অধর্মী গেছে ভরে,
তুমি নিষ্কাম কার্য করবে আমার বিশ্বাস।
জল বাষ্প হয়ে যায় ভেসে,
আর আবর্জনা মাটিতে থাকে মিশে-
যদি ওরা সংসার ত্যাগ না করতো
তবে সকলের মঙ্গল হত
হত কর্মযোগী!
তবে আলোয় আলোকিত হত ভুবন,
করতো পরমাত্মার গুণগান -
এসো হে-পার্থ আজ জাগি।
কর্মযোগী নিজ স্বজন,সন্তান, প্রজা'র
কাছে করে না আশা!
সে জীবন দিয়ে যায় বিলিয়ে
নির্মল ভালোবাসা।
‘‘মানুষ নিজ সন্তানের লাভ হেতু
কার্য করে,
তাই তো সন্তানের কাছে আশা করে!
তবে তা কি ব্যবসা না প্রেম?
দান দিয়ে আবার চেয়ে নিলেম
লোভী হৃদয় বলে তারে।’’
(প্রেম মাধব)
তাহলে কার্যের প্রতি কিসের আশা?
বাসনা রাখা মানে ব্যবসা,
তা কোন প্রেম নয়!
যদি করা হয় সন্তানের চরিত্র নির্মাণ,
দেওয়া হয় প্রেম ও শিক্ষা দান,
তবে সে সন্তান একদিন সুরক্ষা দেয়।
তাই গভীর মনোনিবেশ করো পার্থ
তবে সত্যতা জেনে যাবে,
যে জীবনে এমন কোন কার্য নেই
যার সাথে আশা- আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হবে।
যখন সৃষ্টি'ই পরমাত্মা
আর মানুষ সেই পরমাত্মার অংশ,
তখন সমস্ত কার্য পরমাত্মা'ই করেন
এটাই বাস্তব সত্যের রহস্য।
তাই তুমি হয়ে ওঠো কর্মযোগী
যুদ্ধে করো অংশগ্রহণ!
অধর্মী'দের দণ্ড-দাও
পরমাত্মার পথ করো অনুসরণ।
সর্ব গুণ পরিত্যাগ করে, নির্গুণ হও এবারে-
মোহমায়া দ্বন্দ্ব থেকে নাও মুক্তি!
সর্বদা সত্যের জয়ে, দাও জীবন বিলিয়ে-
করো কর্তব্য পালন প্রাণে রেখে ভক্তি।
প্রাপ্তি'র আশা অন্তরের লালসা
আজ দূর করো,
স্বতন্ত্র হয়ে যাও এগিয়ে
অপরাধীদের মারো।
মনে রেখো তব অধিকার
কেবল কার্য করা,
ফল দাতা ঈশ্বর সে করবে বিচার
আজ আঁধারে ঢেকেছে ধরা।
তাই হে-পার্থ কর্ম থেকে না পলায়ন,
না তো আশা করা উচিত;
সংসার মঙ্গলে জাগ্রত হলে
রক্তিম রবি উঠবে একদিন সুনিশ্চিত।
‘‘আশা হীন কর্মযোগী কি রূপে যায় চেনা?
হে মাধব,বলুন আমায় দুঃসময়
পূর্ণ করো তৃষিত অন্তরের প্রার্থনা।’’
তবে শোনো হে পার্থ , যে স্বাদ-স্বার্থ
থেকে মুক্তি পেতে আহার কে ত্যাগ করে;
বাস্তবে তার মন স্বাদের লাল-সায় থাকে ভোরে।
আরো দুই প্রকার হানি হয়,
প্রথমতঃ অনাহারে অকালে মরে
হয়ে পড়ে দুর্বল জীর্ণ ক্ষয়-
করতে পারেনা পরমাত্মা প্রাপ্তি'র প্রচেষ্টা;
দ্বিতীয় তার মন লালসায় থাকে সর্বক্ষণ
ভুলে যায় তখন কে আমি, কে স্রষ্টা?
এই হেতু আহার ত্যাগের চেয়ে,
ত্যাগ করা উচিত স্বাদ গ্রহণের লালসা!
কর্মযোগী লালসা করে নিষ্কাশন,
জীবন কার্যে হয় অবতরণ,
ত্যাগ করে ফলের আশা।
অর্থাৎ যে হয়ে বিফল, করে না কোলাহল -
সফল হয়েও করে না অহংকার,
সেই হলো কর্মযোগী, আজ এসো জাগি-
করো অধর্মী সংহার।
মনে রেখো ফলের আশায়
কামনা প্রকট হয়,
আর কামনা করে অসন্তুষ্ট!
অসন্তোষ থেকে ক্রোধ আসে,
ক্রোধ থেকে মোহ মেশে,
মোহ-মিশ্রিত মন হয় লক্ষ ভ্রষ্ট।
কারণ, জ্ঞান ভুলে যায়
হারায় সে বুদ্ধি,
আচার-ব্যবহার ভুলে, থাকে অন্তরালে-
আঁধারে অকর্ম পায় বৃদ্ধি।
এক সময় সমাজের শত্রু হয়ে ওঠে,
অন্তিমে তার পতন ঘটে,
সে রূপেই হচ্ছে যুদ্ধ; মনে আক্ষেপ!
এবার কার্য করো পার্থ, ত্যাগ করো স্বার্থ-
কর্মযোগ ব্রহ্মবিদ্যা'র দ্বিতীয় পদক্ষেপ।
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
রচনাকাল - ২৬ এপ্রিল ২০২০ সাল,
বাংলা -১৩ বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (রবিবার)
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।