দুর্ভিক্ষ-দুনিয়া
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
অভুক্ত পীড়িত-নিদ্রোত্থিত নয়নে, চেয়ে আছি আজ
এক টুকরো খাদ্যের আশায়।
দুগ্ধজাত-ক্ষুধার্ত শিশুর ক্রন্দিত শব্দে নিদ্রা ভেঙে
গেলেও আহত মা আমার অচল-অসহায়।
এখন-এখানে চলছে মহামারী,
স্বজন হারা বেদনায় বুক থেকে রক্ত ঝরে যায়!
তবুও নিরুপায় হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে,
বিদায়ের গান গেয়ে নিজেকেও কাল যাত্রার যাত্রী করি।
আজ প্রভাত আসে অন্ধকারের খবর নিয়ে,
সুনীল অন্তরীক্ষে পাখি আর করে না গান,
ফুল ফোটে না বনে!
বাতাসে সুগন্ধ নেই, নিঃশ্বাসে বিষ, দহন-দগ্ধ বুকের
পাঁজর জ্বলছে নির্জনে একাকীত্ব শ্মশানে।
এখানে চতুর্দিক কেবল মৃত্যুভয়, কাল যাত্রার ধ্বনি
তাড়িয়ে মারছে, চিৎকার করছে জনতা--
বাঁচাও---বাঁচাও।
তবু অসহায়-বেদনাময় বুক নিয়ে, রুদ্ধ গৃহে থেকে
কেবল করতে হচ্ছে আলোকিত নতুন সকালের প্রার্থনা।
আর কত দেখবো ফুল ঝারা গোধূলি?
আর কতদিন বন্দি হয়ে থাকবো গৃহে?
লক্ষ-কটি লাশ নিয়ে আর কত করবো বিদায়ের খেলা?
প্রিয় স্বজন আজ কেবল আবর্জনা, কাছে যাওয়া নেই,
কথা বলা নেই, পরিচয় নেই, পাশে দাঁড়িয়ে শক্তি
দেবার মত হয়ে উঠিনি নির্ভীক কেউ।
আজ মানুষ-মানুষকে ভয় পায়, এই যুদ্ধ কোন অস্ত্রে
হবেনা প্রতিহত হতে পারে শুধু মানবতার জয়।
যদিও আমার স্বর্ণময় স্বদেশ সূর্যের আলোয় আর
আলোকিত হয় না।
কেবল রিক্ত মন্দির সম্মুখে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে,
আর হারিয়ে যাচ্ছে শুধু দেবতা।
এখন পূজারী নেই, প্রদীপ জ্বলে না, প্রসাদ বিলানো
হয় না কতদিন।
ক্ষুধার যাতনায় ছটফট করছে প্রাণী জগৎ,
রাস্তার কুকুর গুলিও আজ অভুক্ত পেটে লালা ঝরিয়ে,
মহামারী মৃত্যু ভয় পেরিয়ে, ছুটে চলেছে মৃত্যুঞ্জয়ী
হওয়ার লক্ষে।
রচনাকাল, ২১ জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দ,
৭ আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, রবিবার।
দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।