আত্মদান
✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য
হে-জননী-জন্মভূমি মোর্
আজি কি দেবো-দান তোমার?
চরণে ঠাই দিয়েছ আমারে
প্রণাম করি তোমারে বারবার!
যাহা কিছু দেখি তোমার
সব সুন্দর -
তব সৃষ্টিতে অমর তুমি,
দান দিয়েছ মোরে অন্তর ভোরে
চির কৃতজ্ঞ আমি।
আজি সেই তুমি আসিলে দ্বারে
পিপাসিত অন্তরে- চাহিতে প্রাণ,
ক্ষত অবয়বে কত বেদনা সহিবে
হে-জননী! আমি করিব রক্ত দান।
করিব যুদ্ধ হইব ক্রুদ্ধ
জাগিবে-জনতা,
কোথায় শত্রু আমি মৃত্যু
করিব অন্যায়ের বিরোধিতা।
বাহিরে আয় ওরে কাপুরুষ
হুশ হইবে কবে তোর,
আজি পীড়িত জননী মোর্-
দহন জ্বলছে তাহার বুকে!
এমন ক্ষণে নিদ্রিত নয়নে
স্বপ্ন দেখিস না সুখে।
যুগ-যুগ ধরে যে জননী তোরে
দিয়েছে দান,
করিয়াছে অমৃত পান -
তাহারে ভুলেছিস তুই!
ওরে ভিতু-আদরের দুলাল
বাহিরে আয় হইয়াছে সকাল,
আজি অপেক্ষিত রুক্ষ তৃষিত ভুঁই।
দিতে হইবে প্রাণ দিতে হইবে রক্ত দান,
সুসজ্জায় সাজিয়া তোল তাহারে!
বাতাসে শোন বেদনাভরা ক্রন্দন
লুকিয়ে কেন আছিস ঘরে?
ভিক্ষার্থিনী বেশে দ্বারে-দ্বারে এসে
‘মা’ ডেকে গেছে তোদের,
বাঁধিয়াছে কোলাহল কম্পিত স্থল
সময় হইয়াছে বিধ্বংসের।
অনেক স্বজন -সন্তান হারিয়েছে
পদাঘাত পেয়েছে বুকে,
ওরে কোথায় মোর্ বীর ভ্রাতা
হইতে-হইবে ঐক্যবদ্ধতা
যেতে হইবে যুদ্ধে মায়ের ডাকে।
প্রাণ যদি যায় যাক না,
কিসের মৃত্যু ভয়? ভয় কেবলি কল্পনা,
আজি অমাবস্যা রাতে প্রদীপ হাতে
করিতে হইবে মাতৃবন্দনা।
আসিবে সকাল বাজিতেছে রুদ্রতাল
অন্তরীক্ষ গর্জিত,
আমি রক্তপিপাসু অমর দিবাবসু
করিব শত্রুদলিত।
আজি কোথায় হে-দেশদ্রোহী তোরা
বহিবে তোদের রক্ত ধারা,
কেড়ে নেবো প্রাণ দেবো গর্দান
করিব সর্ব শান্ত-সর্বহারা।
কেড়েছিস দেশ, চুষছিস রক্ত,
মা আমার ক্ষত-বিক্ষত-
আজি অসহায় জনতা অকালে মরছে
আগুনে পুড়ছে অন্তর ক্ষুধার্ত।
কেহ আছে অট্টালিকায় কেহ রাস্তায়,
কেহ অনাহারে অকালে মরে
কেহ বনে-অরণ্যে ঘুমায়।
মা আমার চূর্ণ-বিচূর্ণ,
আসিয়াছে সংশয় আজি দ্বারে!
সকল সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছে ওরা
মরি এখন পথে-পথে ঘুরে।
তাই তো আসিয়াছে মা
চেয়েছে দান,
আজি হক বিশুদ্ধ বসুন্ধরা
বেজে উঠুক জয়গান।
আত্মদানে আসিবে সকাল
ফুলে-ফুলে সাজিয়া উঠিবে ধরণী,
পাখি গাহিবে গান
আকাশে জুড়ে বাজিবে জয় রাগীনি।
হে-জননী! যুগ-যুগ ধরে
জাগ্রত মম অন্তরে
সঞ্চিত রাখিয়াছি কত ভালোবাসা,
আজি এই দুর্দশা ক্ষণে
ঢালিয়া দেবো প্রেম তব চরণে
মিটাইব সকল পিপাসা।
দিবস-রজনী ছিলেম এহেন প্রতীক্ষায়
আজি জাগিয়াছে সবাই-
স্বাধীন সঙ্গীতে,
এই প্রাণ করিয়াছি দান
তোমারি সেবাতে।
গ্রহণ করিও মোরে আসিব ফিরে-ফিরে
তব বুকে বাঁধিব বাসা,
এ আমার আশা-প্রত্যাশা -
চির ভালোবাসা মোর রহিবে তব প্রতি!
আজি তব ডাকে প্রভাত আলোকে
রক্তে সাক্ষর রহিবে মোর প্রীতি।
কোন এক বসন্তের মাতাল সমীরণে
উড়িবে হরিৎ আঁচল তব বুকে,
থাকিবে সকলে সুখে-
হইবে মধুর প্রেমে মাতোয়ারা!
হিংসা-বিদ্বেষ নয়-নহে যুদ্ধ ক্ষয়
সুগন্ধে মুখরিত হইবে ধরা।
সেদিন অম্বরে রবি উদিত হইলে
ভরিবে তব বুক ফুলে-ফুলে,
তাহা দেখিয়া তোমারে কহিবে
তুমি শ্রেষ্ঠ সুন্দর
হে-জননী! তুমি অমর-
জন্মে জন্মে এসে তোমারে ভালোবেসে
করিতে চাহি আত্মদান,
গ্রহণ করো প্রণাম’ চির শ্রদ্ধা-সম্মান।
রচনাকাল ৯ নভেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
বাংলা ২৩ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, সোমবার।
দাকোপ খুলনা,বাংলাদেশ।