আশ্চর্য পুরুষ
      ✍-উজ্জ্বল সরদার আর্য

টাকায় পুরুষ পুরোহিত সাজে, কেউ বা সাজে ভক্ত
দলবেঁধে ছুটছে মন্দিরে-মন্দিরে সাজসজ্জায় উন্মত্ত।
শিল্পীর মনগড়া আকৃতি নারী মূর্তি, সে মা-মহামায়া!
দেবী, দেখেছি অনন্ত ভক্তি, নারী তার অনুরূপ ছায়া।
তবে কেন তারা সংসারে সর্বহারা, আশ্চর্য পুরুষ!
মাটির পুতুল হয়েছে ভগবান, আর কবে হবে হুঁশ?
রক্ত মাংস বিশিষ্ট বিগ্রহ রূপ যেন নক্ষত্র-গ্রহ,
রূপসী তেজস্বী!
সর্বকালে সংসারের মঙ্গলে, দিয়েছে বলিদান-
তবু এ-সমাজে ওরা কেন দাসী?

কবি,ওরা নারী পুরুষের সহচারী মনোরঞ্জনকারী,
কামনায় পেতে চাই অমৃত সাধনে আলিঙ্গন করি।
রাতের অন্ধকারে বদ্ধ ঘরে ওদের কাছে চেয়েছি,
আলোক সজ্জিত রঙমহলে নর্তকীর নাচ দেখেছি-
করেছি স্পর্শ!
ভোগ-বিলাসের খাদ্য ওরা অহেতুক খুঁজছ রহস্য।
প্রেয়সী-পত্নী সব ওরা দাসী, শরীর ভালোবাসি
তাই পুষেছি,
রূপ-লাবণ্য-যৌবন যতদিন মূল্য আছে ততদিন,
সময়ের অন্তিমে ওদের ভুলেছি।
ফেলেছি কত উচ্ছিষ্টের মত জীবনভর থাকবে নত,
পুরুষের চরণে!
নিয়ম অনুসারে ফুল ফুটবে সুগন্ধ ছড়িয়ে-ঝরে যাবে,
দলিত হবে প্রতিক্ষণে।
আমরা পুরুষ-পতি, ওরা করবে আমাদের ভক্তি,
প্রীতি ওদের জন্য নয়!
আজ্ঞা অনুসারে থাকবে ঘরে অবাধ্য হলে করি বিদায়।
কেউ যাবে কেউ আসবে, ভালবাসবে, আমরা করি
নতুনের সন্ধান,
লালসায় লুটেপুটে খাই,আনন্দ পাই, ক্ষত করি
জীবন-যৌবন।

মূর্খ পুরুষ-পূজারী, জ্ঞানহীন বিষ নাগ ধারি,
সৃষ্টি বিনাশ কারি ধিক্কার তোমায়!
তব জননী সে কি নারী নয়?
একদিন সে-ও ছিল বালিকা-বাল্যকালে,
আজ হয়েছে পত্নী-জননী সংসারের মঙ্গলে।
সৃষ্টির সুখে নারী দেয় বলিদান তুমি ভাগ্যবান
জন্মেছ তাই তার পেটে,
আজ তার সম্মান করছো ক্ষুণ্ণ নারীকে করেছো নগণ্য,
দিনদুপুরে পদাঘাত জোটে।
ওরা দাসী নয় সৃষ্টির সঞ্চালিকা, ত্যাগের মহিমায়
শ্রেষ্ঠ ভূমিকা,পালন করে সমাজ সংসারে!
তোমার দেবী,প্রকৃতি,জননী যে প্রেয়সী-পত্নী সে,
আদ্যাশক্তি মিশে থাকে প্রত্যেক অন্তরে।
রূপ যতই ভিন্নতা হক অভিন্ন সে, শ্রদ্ধায় রেখো অন্তর
আবাসে,নোংরা অভ্যাসে করো না ক্ষয়!
একজন নারী নির্যাতিত হলে পীড়া সকলের প্রাপ্তি হয়।


রচনাকাল, ২৭ অক্টোবর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ,
    বাংলা- ১০ কার্তিক ১৪২৭ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার।
              দাকোপ খুলনা, বাংলাদেশ।