১৯৭১ সাল
✍- উজ্জ্বল সরদার আর্য
ওরে আবার এসেছে বিধ্বংস নিয়ে
জনতার প্রাণ নিতে সেই ১৯৭১,
বোমা-বন্দুকের আওয়াজ উঠেছে
কাঁপছে শহর, নগর, সর্ব-চত্বর।
ওরা দেশদ্রোহী,সন্ত্রাসী
করছে অত্যাচার দল ধরে,
সবকিছু লুটেপুটে খাচ্ছে ওরা
রক্ত চুষছে রাতের আঁধারে।
ওরা তো চায় আমাদের মৃত্যু
করতে চায় রাজ্যশাসন,
বোমা বিস্ফারণ হচ্ছে কত
নীরহ নারীকে করছে ধর্ষণ।
জোর-জুলুম করছে হাতাহাতি
জ্বলছে আগুন পুড়ছে দেশ,
রক্ত ধারায় রঞ্জিত মাটি
দেখছি মায়ের বৈধব্য-বেশ।
এখন অনাহারে জনতা মরে
দিচ্ছে কবর জ্বলছে শ্মশান,
এদেশের নারী আজ বস্ত্র হীনা
আমি ধর্ষিত আমি নিষ্প্রাণ ।
তোমার সম্মুখে আমি গৃহ লক্ষ্মী
ধূলায় লুটিয়ে পড়ে আছি আজ,
কত অত্যাচার যে সয়েছি আমি
চিনতে পারবে না দেখে এই সাজ।
ক্ষত-রক্তাক্ত উলঙ্গ দেহ আমার
আরো হারিয়েছি নিজ সন্তান,
জনতার ভিড়ে দলিত হলো সে
মায়ের জন্য দিলো বলিদান।
ভিতু নির্বোধরা পালিয়ে গেলো
পালাতে চাইনি শুধু-সে,
মায়ের রক্ষায় হলো ক্ষয়
বুলেট বিদ্ধ হলো অবশেষে।
হে বীর!কত আর নীরব রবে?
নিথর আজ আমার অশ্রুধারা!
আজ জাগ্রত হও তুমি এবার
আমি অভাগা হয়েছি সর্বহারা।
তাই ক্রন্দনে ক্রোধ জাগাও প্রাণে
গর্জিত মেঘে কম্পিত ধরণী,
বিধ্বংস লীলায় মেতে ওঠো হে
রক্তের হোলি খেলা ওরা ভুলিনি।
শুধু দেখি সেই পুরাতন দুর্ভিক্ষ
আজও আমার সারা বাংলায়,
পান্থ-পথ শিশু ছুটছে পথে-পথে
দু'মুঠো খাদ্যের জন্য করছে লড়াই।
রক্ত, মাংস, শক্তিহীনা কঙ্কাল দেহে
প্রাণ-প্রদীপ জ্বলবে ওরে কতদিন,
সাদাকালোয় আঁকি বীভৎস ছবি
কাক-কুকুরের সাথে খেতে বসে প্রতিদিন।
পৃথিবী জুড়ে চলছে শাসন-শোষণ
দোষ যত সব সামর্থ্য হীন দের,
দু'বেলা পাচ্ছি পদাঘাত ভিক্ষা
এক টুকরো রুটি দাও গো আমাদের?
ভিক্ষার রিক্ত পাত্র রেখেছি ধরে
রোগা-জীর্ণ-ক্ষীণ অচল হাতে,
ওরা করছে আজ রাজ্যশাসন
গনহত্যায় ঘুমিয়ে কেন এই রাতে?
আমার বাংলায় ভোর আসবে কবে?
আসেনা তোমার-আমার গোধূলি,
শঙ্খচিল দেশ ছেড়েছে
আকাশ জুড়ে শুধু ধোয়ার কুণ্ডলী।
রক্ত পিপাসু ভূমি রক্তে-রঞ্জিত
বাতাসে আজ লাশ পচা দুর্গন্ধ
কবির নিশ্বাস হচ্ছে অবরুদ্ধ
রক্তের কালিতে লিখছে ছন্দ।
তবু কবিতা মৃত বসন্ত হীনা নিখিলে
কোকিল ভুলেছে ভৈরবী সুর,
হৈমন্তিক শিশির ঝরে না আর
ঝরা শিউলিরা এখন শান্তি পুর।
ওই হায়নার দল ধরেছে ঘিরে
খেতে রক্ত-মাংস,
কাক-চিল-শকুনি ঝাঁক বেধেছে
আমার দেশ আজ ধ্বংস।
মানুষ শূন্য গৃহ দেবতা হীন মন্দির,
ওরে থাকবে আর কতদিন?
এবার পূজারী সেজে জ্বালাও প্রদীপ
হবে রণক্ষেত্র রক্তে রঙিন।
আলোকিত হক সকল দ্বার
মৃত্যু ভয় যাও ভুলে,
হাতে নিয়ে অস্ত্র করো শত্রু দলন
অমর তুমি হে বীর এই ভূমণ্ডলে।
রক্ত দিয়েছো আরো দাও
সংগ্রামী হও শত্রুনাশে,
টুঁটি চেপে হত্যা করো
স্বাধীন হবো যুদ্ধ শেষে।
নপুংসক যারা দলিত হক তারা
আজ আমরা সানু সৈন্য!
নগণ্য চিত্র দেখেছি অনেক
নয় ক্ষমা ওরা মাংসাশী ওরা বন্য।
যাদের হত্যা শেষে ওঠে রক্তিম সূর্য
আজ তারাই দাঁড়িয়েছে ঘুরে,
আমি বীর! বিধ্বংসের বহ্নি জ্বালি
জাগ্রত আমি ১৯৭১ কে ঘিরে।
রচনাকাল, ১৬ নভেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ
বাংলা ২৯ সে কার্তিক ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
দাকোপ খুলনা বাংলা দেশ।