আমার কবিতা লেখা
ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
“বাংলা – কবিতা” সাইটে আজ আমার ২৫তম কবিতা (সনেট) প্রকাশিত হল। এই সাইটের মাধ্যমে পেয়েছি অনেক প্রশংসা, শুভেচ্ছা এবং কবি সম্বোধন। তাই সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে “আমার কবিতা লেখা” বিষয়ে কিছু জানাতে চাই।
আমার জন্ম (অক্টোবর, ১৯৭৭) পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার এক অজপাড়াগাঁয়ে। আমার মা নিরক্ষর এবং বাবা ছিলেন (বর্তমানে পরলোকগত) দ্বিতীয় শ্রেণি উত্তীর্ণ। একটি খেতমজুর পরিবারে আমরা চারভাই বড়ো হয়েছি। এককথায় গৃহ পরিবেশে পড়াশোনা বা সাহিত্যপ্রেম কিছুই ছিলনা। তবু জানিনা কবে এবং কীভাবে কবিতার প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মে? স্কুল পত্রিকায় লেখা দিয়ে শুরু। তারপর কলেজে (১৯৯৫) ভরতি হবার পর যেটা হয় সেই নিয়মে কবিতা লিখি। সুন্দরী বান্ধবীদের দেখে কবিতা লেখার ভাষা পেতাম। এই পর্যায় চলেছিল বেশ কিছুদিন। বন্ধুরা এই সময় আমাকে “কবি” বলেই ডাকত। অনেক কবিতা বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায় এই সময় প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলি, আমার যখন ১৮ বছর বয়স তখন পৌরাণিক ঘরানায় আমার লেখা “পাগলাখালির পাঁচালি” (৩২ পাতা) প্রকাশিত হয় এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। অনেক সময় কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনের মধ্যে কাব্যপ্রেম উঁকি দিত। কখনও তার সেই পূর্ণতা আসত না। কবিতার প্রতি প্রেম থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৯৮-২০০০) পড়ার সময় বিভিন্ন স্থানে অনেক কবি সম্মেলনে যোগ দিয়েছি।
রবীন্দ্রনাথ, মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দের পাশাপাশি আমার প্রিয় কবি জসীমুদ্দিন। আমার প্রথম দিকের কবিতাগুলি প্রধানত সেই ঘরানার। আমার বেশ মনে পড়ে, আমাদের বাড়িতে কেউ আসলে আমার বাবার আদেশে আমাকে শোনাতে হত কাহিনি ভিত্তিক দীর্ঘ কবিতা “দাদু ও নাতি”। এই পর্যায়ের অনেক কবিতা আজ আর আমার কাছে নেই। তারপর বাংলা সাহিত্য এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ার পর কবিতার প্রতি প্রেম অনেক বাড়ে এবং কবিতাকে বুঝতে শিখি।
এই সময় আমার অন্যতম শখ হয়ে ওঠে বিভিন্ন সংবাদ পত্রে চিঠি ও প্রতিবেদন লেখা। বহু চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। এখনও অল্প অল্প লিখে থাকি। তারপর পড়াশোনা, গবেষণা, চাকরি, সংসার, ছোটো মেয়েকে (বর্তমানে ৭ বছর) সামলে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি। তবে বিভিন্ন সংবাদ পত্রে, পত্র- পত্রিকায় নিয়মিত চিঠি, প্রতিবেদন, সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে “বাদকুল্লা পরিচয়” এবং ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে “ পায়রাডাঙা নানাপ্রসঙ্গ” নামে নদিয়া জেলার দুটি জনপদের উপর আমার লেখা দুটি ক্ষেত্র গবেষণাকেন্দ্রিক আঞ্চলিক ইতিহাস প্রকাশিত হয়। গত বছর (এপ্রিল, ২০১৫) কলকাতার দীপ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে আমার “নির্মল বিদ্যালয়ের রূপরেখা”
প্রথম দিকে তথাকথিত আধুনিকতার বাঁধনে আধুনিক কবিতা লিখলেও, এই ছন্দ পড়তে ভালোবাসলেও নিজে এই জাতীয় কবিতা লেখার প্রতি আর আগ্রহ দেখাই না। অনেকদিন ভেবেছি, রোজ একটি করে ”সনেট” লিখব। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। এখন “বাংলা- কবিতা “ ওয়েবসাইট (অভিভাবককে অনেক ধন্যবাদ) পেয়ে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। এই সাইটে আমি শুধু “অমিত্রাক্ষর সনেট” লিখে যাব আপনাদের ভালোবাসায়। আর এক ধরনের (১২ লাইনের; ক ক খ- ক ক খ- গ গ ঘ- গ গ ঘ) কবিতা লিখি, কিন্তু সেগুলি এখানে প্রকাশ করব না।
আপনাদের ভালোলাগা, শুভেচ্ছা আমার পাথেয়।
সবাই ভালো থাকবেন।
০১/০৯/২০১৬
পায়রাডাঙা, নদিয়া (পঃবঃ)
PIN-741247.