কবি-কবি ভাব ছন্দের অভাব (ছন্দ ও কবিতার পাঠ) –দশঃ ছন্দের গুরুত্ব ও উপাদান  
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস  
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি রিঙ্কু রায়  মহাশয়াকে।        
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  ছন্দের গুরুত্ব ও উপাদান
------------------------------------------------------------------------------
“কবি-কবি ভাব ছন্দের অভাব” শিরোনামে ‘ছন্দ ও কবিতার পাঠ’ এর  আজ দশমপর্ব। 'ছন্দ' নিয়ে ভূমিকাটি বেশ বড়োই হয়ে গেল। তবু মনে হয়, ছন্দের ভূমিকা নিয়ে আরও কত কথা বলার ছিল। ছন্দের নানাপ্রসঙ্গ জানতে এর কোনো পর্বকেই বাদ দেওয়া চলে না। আজ এই প্রথমপর্বের শেষপাঠ। তাই একবার পিছনে ফিরে দেখে নিই এই পর্বের আগের পাঠে আমরা মূলত কী কী জেনেছি।
একঃ  ছন্দ ছন্দময়তা ও ছন্দপতন  
দুইঃ  কবিতা ও ছন্দ
তিনঃ  ছন্দের সংজ্ঞা
চারঃ  রবীন্দ্রকবিতায় ছন্দ
পাঁচঃ  তালেতালে ছন্দ
ছয়ঃ  কবিতার সংজ্ঞা ও উপকরণ
সাতঃ  ছন্দের সাথে আবৃত্তির সম্পর্ক
আটঃ  ছন্দ কেন প্রয়োজন
নয়ঃ  ছন্দ না জেনেও আমরা কীভাবে কবিতা লিখি
দশঃ  ছন্দের গুরুত্ব ও উপাদান (আজ)
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়- ছন্দের গুরুত্ব ও তার উপাদান। এ বিষয়ে সকল ছন্দ বিষয়ক গ্রন্থে একই উপাদানের উল্লেখ আছে। অধ্যাপক মিহির চৌধুরী কামিল্যার কথায়- “‘ছন্দ’ হল শ্রুতিমধুর শব্দের শিল্পময় বিন্যাস, যা কানে জাগায় ধ্বনি-সুষমা, চিত্তে জাগায় রস।“
এখানে তিনি বলেছেন- পদ্য রচনার এক বিশেষরীতি হল ছন্দ। তা কাব্যের প্রধান বাহন রূপে চিহ্নিত। ছন্দ মানুষের কথার উপর ভিত্তি করেই সৃষ্ট। তা কানে শোনার একটি বিষয়। তা কবির নিজস্ব সৃষ্টি; তা কথার শিল্প। তা ধ্বনির সৌন্দর্য। ছন্দ তাই ‘শিল্পিত বাকরীতি”।
অর্থাৎ এই ছন্দের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলি হল-
ক) ছন্দে থাকবে শ্রুতিমধুর শব্দ;
খ) ছন্দে থাকবে শব্দ সাজানোর কৌশল। যা নির্দিষ্ট নিয়মে ক্রমশ বেগ ও বিরতি নিয়ে তরঙ্গ সৃষ্টি করে চলবে।
গ) ছন্দ তাই, যা শোনা মাত্রই কানে জাগাবে ধ্বনিকল্লোল;
ঘ) ছন্দ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিত্তে জাগাবে রস।

এ যাবৎ আলোচনা থেকে তাই সহজেই বলা যায়, ছন্দের গুরুত্ব সব কালে, সব দেশে, সব পাঠকের কাছে আছে, ছিল, থাকবে। ছন্দ সাধারণ ভাষাকে সরল ও শ্রুতিমধুর করে তোলে কাব্যের আঙিনায়। ফলে, সেই রচনা শ্রুতিনন্দন হয়। তা ভাবকে প্রাণময়, বেগবান ও ব্যঞ্জনাধর্মী করে। ফলে রচনা চিত্তরঞ্জক হয়। কোনো কবিতায় ছন্দ আছে বলেই সেই কবিতা আমরা বহুকাল এমনকি চিরকাল মুখস্ত রাখতে পারি। ছন্দ মনে রসের সঞ্চার করে, তাই ছন্দময় কাব্য পাঠ করে আমরা আনন্দ পাই।
এই ছন্দবিজ্ঞান তাই গড়ে উঠেছে নানা উপাদানের সাহায্যে। ছন্দের সেই সম্মিলিত উপাদানের সাহায্যে তা পেয়েছে পরিপূর্ণ রূপ। সব জিনিসের মতই কাব্যের ছন্দও নানা উপাদানে সৃষ্ট। সেগুলি নিম্নরূপ;
ক) ধ্বনি (বর্ণ,শব্দ)
খ) অক্ষর বা দল
গ) মাত্রা বা কলা
ঘ) ছেদ ও যতি
ঙ) পর্ব ও পর্বাঙ্গ
চ) পদ চরণ পঙক্তি স্তবক
ছ) লয়
জ) অন্ত্যমিল
ঝ) শ্বাসাঘাত
ঞ) অন্যান্য
এই বিষয়গুলিকে নিয়ে পরবর্তী পাঠগুলিতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে।

***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে। পরবর্তী অংশ আগামী পর্বে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা ছন্দঃ রূপ ও রীতি- ড. মিহির চৌধুরী কামিল্যা , কলকাতা।
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এ যাবৎ আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।