ছন্দ ও কবিতার পাঠ –<পর্ব-৫, ভাগ-৪৬> – স্বরাক্ষরিক ও মাত্রাক্ষরিক ছন্দ
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি নরেশ বৈদ্য মহাশয়কে।
----------------------------------------------------------------------------
স্বরাক্ষরিক ছন্দঃ
ছন্দের দিক দিয়ে যে ছড়া /কবিতাকে স্বরবৃত্ত অথবা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে পাঠ করা যায় বা ধরা যায়, সেই ছন্দকে স্বরাক্ষরিক ছন্দ বলে। পুরো কবিতাটা যেন স্বরবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্তের চালে চলে।
উদাহরণঃ
স্বরবৃত্তে-
একটি কথা/ শুনিবারে/ তিনটি রাত্রি/ মাটি (৪/৪/৪/২)
এরপরে/ ঝগড়া হবে/ শেষে দাঁত ক/ পাটি (৪/৪/৪/২)
অক্ষরবৃত্তে-
একটি কথা শুনিবারে/ তিনটি রাত্রি মাটি (৮/৬)
এরপরে ঝগড়া হবে/ শেষে দাঁত কপাটি (৮/৬)
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মাত্রাক্ষরিক ছন্দঃ
ছন্দের দিক দিয়ে যে ছড়া বা কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত অথবা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে পাঠ করা যায় বা ধরা যায়, সেই ছন্দকে মাত্রাক্ষরিক ছন্দ বলে।
উদাহরণঃ
মাত্রাবৃত্তে-
"চিকচিক করে /বালি কোথা নেই/ কাদা (৬/৬/২)
একধারে কাশ/ বন ফুলে ফুলে /সাদা।"(৬/৬/২)
অক্ষরবৃত্তে-
"চিকচিক করে বালি /কোথা নেই কাদা (৮/৬)
একধারে কাশ বন /ফুলে ফুলে সাদা।"(৮/৬)
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আবার,
মাত্রাবৃত্তে-
শাদা শাদা চুল/আর শাদা শাদা/ ভুরু(৬/৬/২)
গাঢ় গাঢ় ভাব/ আর জানা শুনা/ পুরু(৬/৬/২)
অক্ষরবৃত্তে-
শাদা শাদা চুল আর /শাদা শাদা ভুরু (৮/৬)
গাঢ় গাঢ় ভাব আর /জানা শুনা পুরু (৮/৬)
– হাসান রাউফুন
এসব ছন্দের পর্ব স্বাভাবিক ভাবে না দিয়ে জোর করে দিলে মাত্রায় ভাগ করে ছন্দ দেখানো গেলেও অর্থের হেরফের হয়ে যাবে। এভাবে জোর করে পর্ব ভাগ করে ছন্দে ফেলা যায় ঠিকই তবে আবৃত্তির গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) ছন্দ শেখার কলা কৌশল – হাসান রাউফুন
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।