ছন্দ ও কবিতার পাঠ –২৯ –  স্বরবৃত্ত ছন্দের ব্যতিক্রম
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি রনজিত মাইতি মহাশয়কে।          
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়-  <পর্ব-৩, ভাগ-২৯> স্বরবৃত্ত ছন্দের ব্যতিক্রম  
------------------------------------------------------------------------------
আজ আমরা স্বরবৃত্ত ছন্দের ব্যতিক্রম নিয়ে আলোচনা করব।
১। শিব ঠাকুরের/ বিয়ে হল/ তিন কন্যে /দান ৪/৪/৩/১
২। বসেছে আজ /রথের তলায়/ স্নান যাত্রার/ মেলা ৪/৪/৩/১
৩। ছেলে ঘুমালো/ পাড়া জুড়াল/ বর্গী এল /দেশে ৫/৫/৪/২
৪। কাঁপিয়ে পাখা/ নীল পতাকা/ জুটলো অলি/ কুল ৫/৪/৪/১
৫। তপ্ত হয়ে /রক্তধারা/ ফুটে কি দেহ/ মাঝে ৪/৪/৫/২
সুতরাং স্বরবৃত্তের নিয়মানুসারে উক্ত উদাহরণ গুলিতে স্বরবৃত্ত ধর্ম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। কিন্তু দ্রুত লয় ও শ্বাসাঘাতের জন্য সে ত্রুটি ধরা যাচ্ছে না। ছন্দপতনও হচ্ছে না।
আরও কিছু ব্যতিক্রম আমরা দেখতে পাই
"কেয়া পাতার/ নৌকা গড়ে/ সাজিয়ে দেব/ ফুলে
তাল দিঘিতে /ভাসিয়ে দেব /চলবে দুলে দুলে"
এখানে 'সাজিয়ে দেব' ও 'ভাসিয়ে দেব' ৫ মাত্রায় এসে গেছে। এখানে যেহেতু এ ব্যাপারটা রয়েছে যেমন সা+জি+এ  বা, ভা+সি+এ। ফলে দেখা গেল যদি শেষে 'এ' মাত্রা থাকে সেখানে শ্রুতিকটুর ব্যাপারটা আসে না। বরং এরমধ্যে একটা মাধুর্য ফুটে ওঠে।
আবার
ক। শ্যাম বাগচি/ খগেনেরই/ মামাশ্বশুর/ জেনো
খ। কানা বগী /কাল পেড়েছে /তিন তিনটে/ ডিম
গ। বাইরে কেবল/ জলের শব্দ/ ঝুপ ঝুপ /ঝুপ
ঘ। কখনো মাসি/ বলে না তো /খই মোয়াটা/ ধর।
এখানে 'শ্যাম বাগচি', 'তিন তিনটে', 'ঝুপ ঝুপ', 'কখনো মাসি' ইত্যাদি স্থানে মাত্রা কম বা বেশি এসে গেছে।
চার মাত্রার কম হলে যেমন টেনে উচ্চারণ করে বাড়িয়ে নিতে হয়, তেমনি চার মাত্রার বেশি হলে গুটিয়ে উচ্চারণ করে এক মাত্রা কমিয়ে হিসেব করতে হয়। আসলে এমনিতেই হয়ে যায়, উচ্চারণের সহজ স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যে।
সুজন বড়ুয়া তার 'ছন্দের সহজ পাঠ'- গ্রন্থে একটি বিশেষ ব্যতিক্রম উল্লেখ করেছেন। এই ছন্দে কোনো পূর্ণপর্বে পরপর তিনটি বদ্ধাক্ষর থাকলে তাকে ৪ মাত্রার মর্যাদা দেওয়া হয়। যেমন- জল টলমল, সব রাত দিন, আজ চারদিক ইত্যাদি।
স্বরবৃত্ত ছন্দে পর্ব গঠনের এসব ব্যতিক্রম ছান্দসিকেরা মেনে নিয়েছেন। তাদের বিবেচনায় পর্বের মাত্রা বাড়লে বা কমলে যদি ছন্দের মূল সুরে বা তালে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তবে তা গ্রহণযোগ্য। তবে এ ধরনের ব্যতিক্রম মাত্রা বিন্যাসের জন্য কবি বা ছড়াকারের সচেতন দক্ষতা অত্যন্ত প্রয়োজন।

***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) লেখালেখি ব্যাকরণ- ফারুক নওয়াজ , ঢাকা।
                   ২) ছড়ায় ছন্দ- প্রণব চৌধুরী, ঢাকা
                   ৩) ছন্দের সহজপাঠ- সুজন বড়ুয়া, ঢাকা।  
----------------------------------------------------------------------------
আসরের কবিদের কাছে আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানাবেন।