ছন্দ ও কবিতার পাঠ –১৯ - মিল
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি আবু কওছর মহাশয়কে।
------------------------------------------------------------------------------
পূর্বপাঠ
১৬) পর্ব ও পর্বাঙ্গ
১৭) পদ, চরণ, পঙক্তি, স্তবক
১৮) লয়
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়- ১৯) মিল
------------------------------------------------------------------------------
একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত 'মিল' পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে। যেমন-
মুখে দেয় জল ∣ শুধায় কুশল ∣ শিরে নাই মোর ∣ হাত ∣∣
দাঁড়ায়ে নিঝুম ∣ চোখে নাই ঘুম ∣ মুখে নাই তার ∣ ভাত ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এখানে প্রথম চরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের শেষ পদ দুটিতে মিল- [জল # কুশল] আছে; দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষেও মিল আছে [নিঝুম # ঘুম]। আবার দুই চরণের শেষের পদে অন্ত্যমিল হল- ]হাত # ভাত]।
অর্থাৎ এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝি 'মিল' তিন প্রকার।
১) পর্বান্তিক মিল-
পর্বে পর্বে অন্ত্যধ্বনির সাম্য।
যেমন- এ জগতে হায়/ সেই বেশি চায়/ আছে যার ভুরি ভুরি
রাজার হস্ত/ করে সমস্ত / কাঙালের ধন চুরি।
এখানে হায় # চায়; হস্ত # সমস্ত পর্বান্তিক মিলের উদাহরণ।
২) পদান্তিক মিল –
পদে পদে অন্ত্যধ্বনির সাম্য।
প্রেয়সী নারীর নয়নে অধরে -১
আরেকটু মধু দিয়ে যাব ভরে -২
আরেকটু স্নেহ শিশু মুখ পরে -৩
এখানে ১ অধরে # ২ ভরে # ৩ পরে পদান্তিক মিলের উদাহরণ।
৩) চরণান্তিক মিল –
চরণে চরণে অন্ত্যধ্বনির সাম্য।
অ) সাধারণ> ক ক, খ খ, গ গ, ঘ ঘ
আ) পর্যায় সম > ক গ খ ঘ
যেমন-
"আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।"
ই) মধ্যসম ক ঘ খ গ
বিশেষ করে সনেটের মিল।
ঈ) অপ্রত্যাশিত বা অন্যরকম-বাংলা কবিতায় অন্য ভাষার শব্দ।
কবিতায় মিল হল অনেকটা শিল্পধ্রুবক। অবশ্য মিল বর্জিত কবিতাও বর্তমানে লেখা হয়। অমিত্রাক্ষর ও আধুনিক গদ্য কবিতায় মিল থাকে না। বর্তমানের কবিতাকর্মীরা এ জাতীয় কবিতা বেশি চর্চা করছেন।
***মিলের বৈশিষ্ট্য-
ক) মিল হল পর্ব, পদ বা চরণের অন্ত্যধ্বনির সাম্য।
খ) মিল শ্রুতিনির্ভর;
গ) মিল কবিতাকে বৈচিত্র্য ও মাধুর্য দেয়, কবিতা পাঠের একঘেয়েমি থেকে দূর করে।
ঘ) নিকৃষ্ট বিষয়কেও পাঠ বা শ্রুতিযোগ্য করে তোলে;
ঙ) মিল অনুসারে পর্ববন্ধ, পদবন্ধ, চরণবন্ধ ও স্তবকবন্ধ রচনা সহজ হয়।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাংলা ছন্দঃ রূপ ও রীতি – ড মিহির চৌধুরী কামিল্যা , কলকাতা।
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।