ছন্দ ও কবিতার পাঠ –১৬ - পর্ব ও পর্বাঙ্গ
---ড. সুজিতকুমার বিশ্বাস
------------------------------------------------------------------------------
আজকের পাঠ উৎসর্গ করা হল - আসরের প্রিয়কবি অসিতকুমার রায় (রক্তিম) মহাশয়কে।
------------------------------------------------------------------------------
পূর্বপাঠ
১৩) অক্ষরের শ্রেণিবিভাগ
১৪) মাত্রা বা কলা
১৫) ছেদ ও যতি
------------------------------------------------------------------------------
আজকের বিষয়- ১৬) পর্ব ও পর্বাঙ্গ
------------------------------------------------------------------------------
‘ছন্দ’ জানার জন্য ‘পর্ব’ জানাটা অত্যন্ত জরুরী। ছন্দের একটি অন্যতম উপাদান হল পর্ব। আজ আমরা এই বিষয়ে জেনে নিই।
বাক্য বা পদের এক হ্রস্বযতি হতে আরেক হ্রস্বযতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। যেমন-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
( ∣ - হ্রস্বযতি ও ∣∣ - দীর্ঘযতি)
এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে পর্ব আছে।
পর্বের শ্রেণিবিভাগ
পর্ব তিন শ্রেণির। ক) পূর্ণ পর্ব; খ) অপূর্ণ পর্ব; গ) অতি পর্ব।
ক) পূর্ণ (মূল/ প্রধান) পর্বঃ দুটি বা তিনটি পর্বাঙ্গে গঠিত, কবিতার পঙক্তি চরণের আদি থেকে প্রথম হ্রস্বযতি বা এক হ্রস্বযতি থেকে পরবর্তী হ্রস্বযতি পর্যন্ত খণ্ডিত ধ্বনিপ্রবাহকে বলে পূর্ণপর্ব।
খ) অপূর্ণ (প্রান্তিক/ অন্তিম) পর্বঃ পঙক্তি শেষের পর্বাংশকে অপূর্ণপর্ব বলা হয়। অপূর্ণপর্বের মাত্রা সংখ্যা পূর্ণপর্বের মাত্রা সংখ্যা থেকে সর্বদাই কম হয়।
গ) অতিপর্বঃ পর্বাংশ চরণের শুরুতে থাকলে তাকে অতিপর্ব বলে। যা চরণের গতিবেগ সঞ্চারিত করে।
নীচের চরণদুটিকে পর্বে ভাগ করলে দাঁড়ায়-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣
এখানে প্রতি পঙক্তিতে তিনটি করে পূর্ণপর্ব এবং একটি করে অপূর্ণপর্ব মিলে মোট চারটি পর্ব আছে। প্রত্যেক পর্বে সমান সংখ্যক মাত্রা আছে এবং লক্ষ করলে দেখা যাবে অপূর্ণপর্ব পূর্ণপর্ব থেকে কম সংখ্যক মাত্রা ধারণ করেছে।
একটি উদাহরণে তিনরকম পর্বের বিষয়টি দেখানো হল।
অতি পর্ব পূর্ণপর্ব-১ পূর্ণপর্ব-২ পূর্ণপর্ব-৩ অপূর্ণ পর্ব
১)আমি বিধির বিধান ভাঙিয়াছি আমি এমনি শক্তি মান
২)বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজি দোল
পর্বাঙ্গ
কবিতা পাঠকালে তার প্রতিটি পর্বে কণ্ঠস্বরের যে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, যাতে পর্বে যে দুটি বা তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভাগ অস্পষ্ট অনুভূত হয়, তাদের এক একটিকে পর্বাঙ্গ বলে।
যেমন- রাতপো : হাল। ফর্সা : হল ।।ফুটল :কত ফুল।
একটি মাত্র পর্বাঙ্গে কোনো পূর্ণপর্ব গঠিত হয় না।
স্বরগাম্ভীর্যের উত্থানপতনেই পর্বাঙ্গ সৃষ্টি হয়।
পূর্ণপর্বে পর্বাঙ্গগুলি হয় পরস্পর সমান মাত্রার।
***আজ এই পর্যন্ত। তবে চলবে।
------------------------------------------------------------------------------
সূত্র/ ঋণস্বীকার- ১) বাঙলা ছন্দ – জীবেন্দ্র সিংহরায় , কলকাতা।
----------------------------------------------------------------------------
আমার অনুরোধঃ এই আলোচিত পর্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে নীচে সযত্নে উল্লেখ করুন। তাছাড়া কোনো গঠনমূলক মতামত থাকলে আন্তরিকভাবে জানিয়ে লেখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবেন।